উনিশ শতকের একদম মাঝামাঝি সময়। ১৮৫৭ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর ‘এস এস সেন্ট্রাল আমেরিকা’ নামের একটি জাহাজ পানামার কোলন বন্দর থেকে নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছে। আমেরিকায় বাষ্পীয় ইঞ্জিন দ্বারা চালিত আর দশটা জাহাজের মধ্যে এস এস সেন্ট্রাল আমেরিকা এমন একটি জাহাজ, যেটি উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময় অবধি আমেরিকার পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চলে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে নিয়োজিত ছিল।
কাঠনির্মিত জাহাজ, সাথে এর মস্ত বড় একটি পাল ও প্রকাণ্ড দুটি কাঠের চাকা। তাই গঠনে একে অতি সাধারণ বলে মনে হলেও আশ্চর্যের বিষয় হলো, জাহাজটি সেই যাত্রায় পূর্ণ ছিল প্রায় ৯.১ টন কাচা স্বর্ণ ও স্বর্ণের তৈরি বিভিন্ন দ্রব্যাদি দিয়ে, যার বর্তমান সময়ের মূল্য প্রায় চারশ থেকে পাঁচশ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমান। তবে দুর্ভাগ্যবশত সেই যাত্রায় জাহাজটি আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে যায়।
কিন্তু জাহাজটি ডুবে যাওয়াতে কী এমন প্রভাব পড়েছিল, যার জন্য আমেরিকার সাথে পুরো বিশ্ব প্রথম কোনো অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়?
ঘটনার সূত্রপাত উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার এক দুর্গম অঞ্চলের নদীতে স্বর্ণের খনি আবিষ্কারের পর থেকে। যার ফলে আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ, ছেলে থেকে বুড়ো, ছুটে আসে স্বর্ণ খোঁজার উদ্দেশ্যে। একে ‘ক্যালিফোর্নিয়া গোল্ড রাশ’ বলে অভিহিত করা হয়।
দীর্ঘ খোঁজাখুঁজি শেষে তারা যেটুকু স্বর্ণ পেতেন, সেগুলো স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দিতেন, নয়তো ব্যাংকে জমা দিয়ে তার সমমূল্যের অর্থ ব্যাংকে জমা রাখতেন। এই যখন অবস্থা, তখন আমেরিকার পূর্বাঞ্চলে একের পর এক ব্যাংক সেখানে তাদের বিনিয়োগ বাড়াতে থাকে। কিন্তু আচমকাই একসময় সেখানে স্বর্ণ দুর্লভ হয়ে ওঠে। যার ফলে সেখানকার মানুষের উপার্জন বহুলাংশে কমে যায়। এর প্রভাব পড়ে সেই অঞ্চলের ব্যাংকগুলোর উপর। কারণ ততদিনে অনেকেই অর্থাভাবের জন্য তাদের ব্যাংকে জমাকৃত অর্থ তুলতে শুরু করে দিয়েছে। একসময় আমেরিকার পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলের শেয়ার বাজারেও নামে বড় ধস।
এবার এর প্রভাব পড়ে আমেরিকার দেশী-বিদেশী বিভিন্ন বিনিয়োগের উপর। ফলস্বরূপ ‘ওহাইও লাইফ ইনস্যুরেন্স অ্যান্ড ট্রাস্ট কোম্পানি’ তাদের নিউ ইয়র্ক অফিসে বিনিয়োগ পুরোপুরি বন্ধের ঘোষণা দেয়। তা কাল হয়ে দাঁড়ায় নিউ ইয়র্কের ছোট-বড় সবধরনের ব্যাংকের জন্য। তবে সেসময় ওহাইওর সবচেয়ে প্রভাবশালী এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতার পেছনে মূলত তাদের লোকজনের অর্থ আত্মসাৎ এবং অবাধে সুদহীন ঋণ দেওয়াকেই দায়ী করা হয়। এর ফলে আমেরিকার পূর্বাঞ্চলীয় ব্যাংকগুলোয় মূলধন ঘাটতির শঙ্কা দেখা দেয়। এ অবস্থায় নিউ ইয়র্কের ব্যাংকগুলো তাদের অর্থের ভারসাম্য বাজায় রাখতে ধাতব মুদ্রা সংগ্রহের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং এ মুদ্রা হিসেবে তারা তাদের মোট মূলধনের সমমূল্যের ‘স্বর্ণ ও স্বর্ণের তৈরি দ্রব্যাদি’ সংগ্রহের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তাদের ঘোষণানুযায়ী, নিউ ইয়র্কের ব্যাংকগুলো স্বর্ণের সেসব দ্রব্য ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নিউ ইয়র্কে পরিবহনের জন্য সেদিন যে জাহাজের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন, সেটিই ছিল ‘এস এস সেন্ট্রাল আমেরিকা’।
জাহাজটির মর্মান্তিক পরিণতি
যাত্রা শুরুর এক সপ্তাহ পর এস এস সেন্ট্রাল আমেরিকা যখন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব সমুদ্রতটের কাছাকাছি কোনো জায়গায় অবস্থান করছিল, তখন আচমকাই কালো মেঘে ছেয়ে গেল পুরো আকাশ। ইতোমধ্যে শান্ত সমুদ্র হয়েছে অশান্ত। আটলান্টিকের বুকে ফুলেফেঁপে ওঠা বিশাল বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়তে লাগল জাহাজের বুকে। ঘণ্টা দেড়েক আগে সৃষ্ট ঝড়ই হঠাৎ রূপ নিল ক্যাটাগরি-২ হ্যারিকেনে! ঘটনার প্রেক্ষাপটে বলে রাখা ভালো, আমাদের দেশে যাকে আমরা বলি ঘূর্ণিঝড়, সেটাই উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর ও উত্তর-পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ‘হারিকেন’ নামে পরিচিত। আবার একই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ উত্তর-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্টি হলে তার নাম হয়ে যায় ‘টাইফুন’। আর দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর ও ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়কে বলা হয় ‘সাইক্লোন’।
একদিকে প্রচণ্ড বাতাস, অন্যদিকে এভারেস্টের মতো উঁচু উঁচু ঢেউ। এসবের মাঝে পড়ে এস এস সেন্ট্রাল আমেরিকার নাবিকেরা দিশেহারা হয়ে কেবল জীবনরক্ষার জন্য শেষ চেষ্টায় লেগে গেলেন। ইতোমধ্যে জাহাজের পাল ভেঙেছে, বিভিন্ন অংশ একেবারে দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে। সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনাটি ঘটল ১২ সেপ্টেম্বর, ১৮৫৭ তারিখে। জাহাজের বয়লার একেবারে অকার্যকর হয়ে পড়ল। বিশাল জাহাজটি সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কোনো আশাই আর অবশিষ্ট রইল না।
ক্যাপ্টেন উইলিয়াম লুইস হার্নডোন অনুধাবন করতে পেরেছিলেন, হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যেই তার জাহাজটি ডুবতে চলেছে। তাই তিনি সাহায্যের জন্য একেবারে মরিয়া হয়ে উঠলেন। জাহাজের লোকজনকে তিনি নির্দেশ দিলেন নিরাপত্তা নির্দেশক পতাকা যেন একেবারে নামিয়ে ফেলা হয়। ইতোমধ্যে দুটি জাহাজও এলো তাদের সাহায্যার্থে। কিন্তু এরই মাঝে বেশ দেরি হয়ে গিয়েছিল। ১৫৩ জন যাত্রীকে যদিও তারা বাঁচাতে সক্ষম হন, কিন্তু অবশিষ্ট ৪২৫ জন যাত্রী ও বিপুল পরিমাণ স্বর্ণের দ্রব্য নিয়ে জাহাজটি সেদিন আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে যায়।
ক্যাপ্টেন উইলিয়াম লুইস হার্নডোন তার এই ব্যর্থতা একদমই মেনে নিতে পারেননি। অপমান, লজ্জা আর ক্ষোভে জাহাজের সঙ্গে তিনিও সেদিন আত্মাহুতির পথই গ্রহণ করেন। এই মর্মান্তিক ঘটনাকে আজও আমেরিকার ইতিহাসে অন্যতম সমুদ্র বিপর্যয় হিসেবে স্মরণ করা হয়ে থাকে।
কিছুদিন পর সংবাদপত্রের বদৌলতে যখন চারদিকে রটে গেল যে এস এস সেন্ট্রাল আমেরিকা নামের একটি জাহাজ বিপুল পরিমাণ স্বর্ণের দ্রব্য নিয়ে সমুদ্রে ডুবে গিয়েছে, তখন অনেক সাধারণ মানুষই এর পুনরুদ্ধারের বিষয়ে বেশ আগ্রহী হয়ে ওঠে। ঘটনাটি অনেকটাই পুরনো দিনের জলদস্যুদের গল্পের মতো শোনালেও এমন একজনকেও সেসময় পাওয়া গেল না, যিনি জাহাজটি উদ্ধারে সঠিক কোনো পন্থা কিংবা নির্দেশনা দিতে পারেন। তাই সকলে একরকম ধরেই নিয়েছিল, হয়তো এস এস সেন্ট্রাল আমেরিকাকে আর কখনোই উদ্ধার করা সম্ভব নয়।
একটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বিপর্যয়
যদিও অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেছিলেন যে, ব্যাংকিং খাতের এ বিপর্যয় হয়তো অল্প সময় স্থায়ী হবে। কিন্তু ঘটনা ঘটল উল্টো। আমেরিকার ব্যাংকগুলোয় তখন তাদের মজুদকৃত মোট স্বর্ণের সমমূল্যের মূলধনের বিপরীতেই ঋণ দেবার একটি আইন চালু ছিল। যেহেতু স্বর্ণ নেই, তাই ধীরে ধীরে আমেরিকার ছোট-বড় ব্যাংকগুলো ঋণ প্রদানের কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে লাগল।
সেই বছর আবার আমেরিকার তুলনায় ইউরোপে কৃষিতে ব্যাপক ফলন হয়েছিল। এর দরুণ আমেরিকার কৃষিনির্ভর অর্থনীতি সেবার বৈশ্বিক রপ্তানিতে তেমন সুবিধাও করতে পারেনি। এদিকে স্বর্ণ সংগ্রহের কোনো আশানুরূপ সাফল্য আমেরিকার সরকার ততদিনেও করতে পারেনি। অক্টোবরের মধ্যেই এ শঙ্কা একদম চরমে পৌঁছাল। পরবর্তী কয়েকমাসে যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্ব ও দারিদ্র্য ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ল।
এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকিং খাতের ব্যর্থতার প্রভাব ব্রিটেন অবধি পৌঁছে গেল। এই দুই দেশের ব্যাংকিং কার্যক্রম ‘দ্য ব্যাংক অ্যাক্ট অভ ১৯৪৪’ দ্বারা পরিচালিত হতো। তাই, ব্রিটেন এবার সঙ্কটের তীব্রতা সমাধানের জন্য, ১৮৪৪ সালের ব্যাংকিং আইন স্থগিত করে কার্যকরভাবে স্বর্ণের মান ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয়। ফলস্বরূপ ব্রিটিশ ব্যাংকগুলো ধাতব মুদ্রার (স্বর্ণ) বিপরীতে ঋণ প্রদান বন্ধ করে দেয়। ব্রিটেনের এমন আচমকা সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যাংক, যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করেছিল, সেগুলো আর প্রত্যাহার করতে পারে না। এতে করে দক্ষিণ আমেরিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং সুদূর মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতিতেও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। এমনিভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যাংকিং খাতের এমন বিপর্যয়ে সেসব দেশের স্থানীয় বিনিয়োগেও ভাটা পড়ে এবং ব্যাংকিং খাত দিন দিন গ্রাহকদের আস্থা হারাতে থাকে।
যে বিপর্যয়ের সূচনা হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, সে দেশের প্রতিটি ক্ষেত্র এর দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়। বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের কৃষক সম্প্রদায় ও কৃষি অর্থনীতি, সেদেশের বুনিয়াদি গোষ্ঠী অপেক্ষা ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে থাকে। তাই অনেক ইতিহাসবিদই মনে করেন, ১৮৬১ সালে আমেরিকায় যে গৃহযুদ্ধ হয়েছিল, তার পেছনে ব্যাংকিং খাতের এই বিপর্যয় অনেকাংশেই দায়ী।
জাহাজের পুনরুদ্ধার
ইতোমধ্যে জাহাজ ডুবে যাবার প্রায় ১২৩ বছর অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে। সময়টা ১৯৮০ সাল। টমি থম্পসন নামের এক আমেরিকান প্রকৌশলী নতুন উদ্যমে আগ্রহী হলেন কী করে এস এস সেন্ট্রাল আমেরিকার মধ্যকার গুপ্ত স্বর্ণের দ্রব্যাদি পুনরুদ্ধার করা যায় সেই ব্যাপারে।
সমুদ্রে খোঁজাখুঁজির ব্যাপারটি মোটেই কোনো সহজ কাজ নয়। এজন্য আবার দরকার বিপুল পরিমাণ অর্থ। কিন্তু এ অর্থের জন্য টমিকে বেশি বেগ পোহাতে হয়নি। ১৯৮৭ সালের মধ্যেই তিনি অন্তত ১৬১ জন ব্যক্তিকে যোগাড় করতে সক্ষম হন, যারা জাহাজটি খোঁজাখুঁজির এই কর্মযজ্ঞে অর্থ বিনিয়োগে আগ্রহী। টমি তখন অনুভব করলেন, কেবল একা তার পক্ষে পুরো কাজের দেখভাল করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই এ অনুসন্ধানী কর্মযজ্ঞে তার একজন দক্ষ ও পূর্ব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন, যিনি তার পরিপূরক হতে পারবেন। অনুসন্ধানের একপর্যায়ে লরি স্টোন নামের এক ব্যক্তি তার নজরে পড়েন এবং স্টোনের কাজকর্মের পূর্ব অভিজ্ঞতা ঘাঁটাঘাঁটি করে তিনি বুঝতে পারেন, তিনিই তার কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি।
লরি স্টোন ছিলেন মূলত একজন গণিতবিদ। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনার পাট চুকিয়েই তিনি ইউএস নেভিতে যোগদান করেন সমুদ্রে হারিয়ে যাওয়া জাহাজ, সাবমেরিন ইত্যাদি খুঁজে বের করা দলের একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে। এছাড়াও পরবর্তীকালে স্টোনের একক প্রচেষ্টায় বায়াসিয়ান অনুসন্ধান তত্ত্বের গোড়াপত্তন ও উন্নতি সাধিত হয়। তত্ত্বটি তিনি মূলত তার সমুদ্রে অনুসন্ধানের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েই উন্নত করতে থাকেন।
পরবর্তীকালে থম্পসনের কাছে পুরো পরিকল্পনাটি শুনে স্টোন আশ্বাস দেন, তিনি থম্পসনের দলের হয়ে কাজ করতে আগ্রহী। ইতোমধ্যে থম্পসন ও স্টোনের দলটি খুব দ্রুততার সাথেই জাহাজটি ডুবে যাওয়ার সময়কালে উপস্থিত বিভিন্ন মানুষজনের মাধ্যমে নানান তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে লাগলেন। স্টোন তাদের সংগ্রহকৃত সমস্ত তথ্য-উপাত্তকে একত্র করে কম্পিউটার সিমুলেশন ব্যবহার করে আটলান্টিক মহাসাগরে ১,৪০০ বর্গ মাইলের একটি সম্ভাব্য ক্ষেত্র নির্ধারণ করলেন। খোঁজার সব পরিকল্পনা যখন মোটামুটি প্রস্তুত, তখন থম্পসন ও স্টোনের দল আটলান্টিক মহাসাগরের এই চিহ্নিত স্থানের তলদেশ পর্যবেক্ষণের জন্য ‘নিমো’ নামের একটি রোবট ব্যবহার করেন।
সমুদ্রের তলদেশ খোঁজাখুঁজির কাজ চলছে পুরোদস্তুর। কিন্তু প্রথমদিকে তারা কোনো আশার আলোই দেখতে পাচ্ছিলেন না। দিন যতই গড়াতে থাকল, তাদের হতাশা ততই কমতে শুরু করল। ইতোমধ্যেই নব্বই শতকের কিছু চিনামাটির তৈরি জিনিস, শিশুদের খেলনার তারা সন্ধান পেয়েছেন। টমি ও স্টোন এখন বেশ নিশ্চিন্ত, তারা হয়তো সঠিক গন্তব্যের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছেন। সময়টা ১১ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৮। হঠাৎই নিমোর ক্যামেরায় বিশেষ কোনো বস্তুর উপস্থিতি ধরা পড়ে। কম্পিউটারের পর্দায় থম্পসন ও স্টোনের দৃষ্টি নিবদ্ধ। সাথে সাথে নিমোর ক্যামেরার লেন্সও বস্তুটিকে ফোকাসে রেখে ধীরে ধীরে এগোতে লাগল। যখন পরিষ্কার ছবি তাদের হাতে এলো, তখন তাদের বুঝতে দেরি হলো না, এটিই তাদের কাঙ্ক্ষিত এস এস সেন্ট্রাল আমেরিকার ধ্বংসাবশেষ!
এস এস সেন্ট্রাল আমেরিকা খুঁজে পাওয়ার পর প্রায় পঞ্চাশ মিলিয়ন ডলার মূল্যের স্বর্ণ উদ্ধার করা হয় এবং সেগুলো তারা বিক্রিও করেন। কিন্তু টমি থম্পসন ছাড়া অন্য কেউ এক কানাকড়িও পায়নি। এমনকি এ অনুসন্ধানে যারা বিনিয়োগ করেছিলেন, তাদেরকেও কোনো অর্থ না দিয়েই থম্পসন এই বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়ে গা ঢাকা দেন। বহু বছর এভাবে গা ঢাকা দিয়ে থাকার পর অবশেষে ২০১৫ সালে তাকে ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের একটি হোটেল থেকে আটক করা হয় এবং সমস্ত বিচার প্রক্রিয়া শেষে স্থানীয় আদালত তার বিপক্ষে রায় ঘোষণা করে।