আধুনিক বিশ্বে রাজপরিবারগুলোর প্রভাব-প্রতিপত্তি আর আগের মতো নেই। অধিকাংশ দেশেই তাদের সম্মানজনক একটি আসনে বসিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু সকল ক্ষমতাই চলে গেছে জনগণের হাতে। কিছু কিছু দেশে রাজপরিবারগুলো একেবারেই বিলীন হয়ে গেছে। কিছু রাজপরিবার এখনো টিকে থাকার লড়াই করে যাচ্ছে।
এদিক থেকে ব্রিটিশ রাজপরিবার বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পরিধি এখন অনেক ছোট হয়ে আসলেও তাদের রাজপরিবারকে নিয়ে মানুষের আগ্রহের কোনো কমতি নেই। এখনো রানী এলিজাবেথকে পুরো বিশ্বেই অত্যন্ত সম্মান করা হয়। এমনকি ব্রিটিশ রাজপুত্রদেরও সমাদরের কোনো কমতি হয় না।
কিন্তু বর্তমানে ব্রিটিশ রাজপরিবারের আসলে কতটুকু ক্ষমতার অধিকারী? তাদের আয়ের উৎসই বা কী? কীভাবে যাত্রা শুরু হয়েছিল প্রতাপশালী এই রাজপরিবারের? তাদের সিংহাসনের উত্তরাধিকার নির্বাচিত করা হয় কীভাবে? এই রাজপরিবারের টিকে থাকার রহস্যই বা কী? চলুন এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা যাক।
যেভাবে শুরু হয়েছিল ব্রিটিশ রাজপরিবারের
ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু ইংল্যান্ড, যা একসময় রোমান সাম্রাজ্যের অন্তুর্ভুক্ত ছিল। ভূখণ্ডটি যে সে সময় একেবারে অজ্ঞাত ছিল সকলের কাছে, তা নয়। তবে দেশটিতে সকলের যাওয়া-আসার সুযোগ তখনও হয়ে ওঠেনি।
খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের শুরুর দিকে গ্রিক, ফিনিশিয়ান ও কার্থেজিয়ানরা ইংল্যান্ডের সাথে বাণিজ্য করত। গ্রিকরা এই ইংল্যান্ডকে ক্ষুদ্র এক দ্বীপ হিসেবে উল্লেখ করেছে, যা ইউরোপের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত।
ধারণা করা হয়, কার্থেজিয়ান নাবিক হিমিলকো খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকে প্রথম এই দ্বীপে আসেন। অন্যদিকে গ্রিকদের দাবি, তাদের দেশীয় পরিব্রাজক পাইথিয়াস খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে সর্বপ্রথম এই দ্বীপে আসেন। কিন্তু অধিকাংশ ইতিহাসবেত্তা গ্রিক ও কার্থেজিয়ানদের দাবিকে অগ্রাহ্য করেছেন।
সেসব ইতিহাসবেত্তাদের বিশ্বাস, সর্বপ্রথম ইংল্যান্ড আবিষ্কৃত হয়েছিল জুলিয়াস সিজারের সময়। খ্রিস্টপূর্ব ৫৫ এবং ৫৪ সালের দিকে দুইবার অভিযান চালান তিনি। প্রতিবারই ব্যর্থ হবার পাশাপাশি সমস্ত সৈন্যও হারাতে হয়েছিল তাকে। পরবর্তীতে আরেক রোমান যোদ্ধা আউলাস প্লাওটিয়াস খ্রিস্টাব্দ ৪৩ সালের দিকে ইংল্যান্ড জয় করেন। তার হাত ধরেই ইংল্যান্ড রোমান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।
৪১০ খ্রিস্টাব্দের দিকে ইংল্যান্ডে রোমান সাম্রাজ্যের অবসান ঘটে। তখন সেখানে সত্যিকার অর্থে রাজতন্ত্র গড়ে ওঠে। যার নেতৃত্ব ছিলেন অ্যাংলো-স্যাক্সনরা। তারা ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই নতুন এক ধরনের শাসনব্যবস্থা চালু করে, যার নাম ছিল ‘হেপ্টারকি’। এই শাসনব্যবস্থায় ইংল্যান্ডকে সাতটি স্বাধীন রাষ্ট্রে বিভক্ত করা হয়। এগুলো হলো: কিংডম অব নর্থামব্রিয়া, ওয়েসেক্স, মার্সিয়া, ইস্ট-অ্যাংলিয়া, এসেক্স, কেন্ট এবং সাসেক্স।
পরবর্তী ৪০০ বছর হেপ্টারকি শাসনব্যবস্থা চালু ছিল। এই সময়ে স্বাধীন সাত রাজ্যের রাজা পর্যায়ক্রমে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু এদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী ছিলেন ওয়েসেক্সের রাজা এগবার্ট। তিনি ওয়েসেক্স ছাড়াও কেন্ট, সাসেক্স ও সারে (ছোট এক রাজ্য) নিয়ন্ত্রণ করতেন। তিনি তার ছেলে ইথেলওয়াফকে সারের দায়িত্ব দিয়ে তাকে উপ-রাজা বানান।
১০৬৬ সালে হেপ্টারকি ব্যবস্থার অবসান ঘটে। তখন উইলিয়াম দ্য কনকারার নিজেকে পুরো ইংল্যান্ডের একক রাজা হিসেবে ঘোষণা করেন। ইংল্যান্ডের ছোট ছোট রাজতন্ত্রগুলো উচ্ছেদ করে তিনি একক রাজতন্ত্র সৃষ্টি করেন।
অবশ্য উইলিয়ামের আগে ইথেলওয়াফ ইংল্যান্ডে একক কর্তৃত্ব সৃষ্টি করেছিলেন। ৯২৭ সালে তাকে ইংল্যান্ডের প্রথম রাজা হিসেবে অন্য রাজারা মেনে নিয়েছিলেন। তার শাসনকাল ইংল্যান্ডের রাজনীতি ও ইতিহাসের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। একসময় পুরো বিশ্বে যে সুবিশাল ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ছিল, তার বীজ বপন করেছিলেন তিনি।
ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের ভিত্তি রচনার শেষ কাজটুকু করে নরম্যানরা। ১০৬৬ সালে নরম্যানরা ইংল্যান্ড-জয় করলে উইলিয়াম দ্য কনকারার ইংল্যান্ডের একক রাজা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। ইংল্যান্ড বিজয়ের পর তিনি সাতটি রাজ্য নিজের নিয়ন্ত্রণে আনেন, যা এখনো ইউনাইটেড কিংডম বা যুক্তরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত।
উইলিয়াম দ্য কনকারারের শাসনকালের ১০০ বছর পর ইংল্যান্ডের ক্ষমতায় আসে টুডররা। তার সময়ে ইংল্যান্ড, ওয়েলস এবং আয়ারল্যান্ডকে নিয়ে সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে। এরপর বিভিন্ন রাজ্যের রাজাদের মধ্যে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রাজা হওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়।
এই প্রতিযোগিতা থেকেই স্কটল্যান্ডের রাজা প্রথম জেমস ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রাজা হন, যিনি ষষ্ঠ জেমস নামেও পরিচিত। ১৭১৪ সালে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য হ্যানোভারিয়ানদের অধীনে চলে যায়।
এর পাঁচ প্রজন্ম পর রানী ভিক্টোরিয়ার জন্ম হয়। তিনি ছিলেন স্যাক্সে কোবার্গ রাজপরিবারের প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়া এবং ডিউক অব কেন্ট এডওয়ার্ডের মেয়ে। রানী ভিক্টোরিয়া তার চাচাতো ভাইকে বিয়ে করার ফলে হাউজ অব স্যাক্সে কোবার্থের সৃষ্টি হয়, যা ‘স্যাক্সে কোবার্থ গথা’ নামে পরিচিত।
পরবর্তীকালে ১৯১৭ সালে জার্মানির সাথে যুদ্ধে জড়ানোর পর রাজা পঞ্চম জর্জ রাজপরিবারের নাম পরিবর্তন করে হাউস অব উইন্ডসর রাখেন। ইংল্যান্ডের উইন্ডসর শহরের নামানুসারে এমন নামকরণ। বর্তমান ব্রিটিশ রাজপরিবারের সরকারি নামও হাউস অব উইন্ডসর।
ব্রিটিশ রাজপরিবারের ক্ষমতা
ব্রিটেনে প্রকৃতভাবে সকল ক্ষমতাই রাষ্ট্রের জনগণের হাতে। তবে ব্রিটিশ রাজপরিবারের সিংহাসনে যিনি থাকেন, তিনি রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বও পালন করেন। তার বাইরে রাজপরিবারের অন্যান্য সদস্যরা সাধারণত সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে থাকেন। পাশাপাশি তারা বিভিন্ন দাতব্য কাজে অংশ নেন। এর বাইরে তাদের তেমন কোনো কাজ নেই। তারা কোনো রাজনীতির সাথে যুক্ত হতে পারেন না এবং রাজনৈতিক কোনো মতামতও প্রদান করতে পারেন না। একমাত্র ফুটবল ক্লাবের প্রতি তারা প্রকাশ্যে সমর্থন প্রকাশ করতে পারেন।
রাজনৈতিক কোনো ক্ষমতা না থাকলেও সম্মানের দিক থেকে রানী তথা রাজপরিবারই ব্রিটেনে সবার ওপরে। রানী এলিজাবেথ প্রতিবছর পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরু ও শেষ করে থাকেন। পাশাপাশি তিনি পার্লামেন্টে পাস হওয়া বিলে স্বাক্ষর করে আইনে পরিণত করে থাকেন। তবে ব্রিটিশ রাজপরিবারের ক্ষমতায় যিনি থাকেন, তিনি দেশের সংকটকালে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা করে থাকেন। বিশেষ করে যুদ্ধ কিংবা রাজনৈতিক কোনো সংকটে।
ক্ষমতার পালাবদলের নিয়মকানুন
ব্রিটিশ রাজপরিবারের ক্ষমতা মূলত রাজা থেকে রাজার সন্তানের কাছে বর্তায়। অর্থাৎ কোনো রাজা বা রানি যদি মারা যান, তাহলে তার সন্তানের মধ্যে যিনি বড় তিনি ক্ষমতায় বসবেন।
রাজা ষষ্ঠ জর্জের মৃত্যুর পর তার মেয়ে দ্বিতীয় এলিজাবেথ সিংহাসনে বসেন। এর আগে রাজা ষষ্ঠ জর্জ তার বাবা পঞ্চম জর্জের পর রাজা হন। এর আগে সিংহাসনে ছিলেন রাজা পঞ্চম জর্জের মা রানী ভিক্টোরিয়া।
বাবা-মায়ের ছেলে সন্তান না থাকায় রানী ভিক্টোরিয়া ও দ্বিতীয় এলিজাবেথ সিংহাসনে বসতে পেরেছেন। কারণ পূর্বে রাজপরিবারের নিয়মানুসারে, উত্তরসূরীদের মধ্যে যদি ছেলে-সন্তান থাকে এবং সে যদি বয়সে মেয়েদের চেয়ে ছোটও হয়, এরপর তিনিই সিংহাসনে বসবেন!
কিন্তু ২০১৫ সালে প্রিন্স উইলিয়ামের মেয়ে প্রিন্সেস শার্লোটের জন্মের পর এই আইনের পরিবর্তন করা হয়েছে। এর ফলে প্রিন্সেস শার্লোট তার ভাই প্রিন্স লুইসের আগে সিংহাসনে বসতে পারবেন, যদি তার তেমন সুযোগ হয়।
বর্তমানে ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকারীদের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে রয়েছে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের বড় ছেলে এবং প্রিন্স উইলিয়ামের বাবা প্রিন্স চার্লস। তার পরেই সিংহাসনে বসতে পারবেন প্রিন্স উইলিয়াম। প্রিন্স উইলিয়ামের পরে সিংহাসনের দাবিদার তার ছেলে প্রিন্স জর্জ, প্রিন্সেস শার্লোট এবং প্রিন্স লুইস। সেই হিসেবে প্রিন্স হ্যারির ব্রিটিশ সিংহাসনে বসার কোনো সম্ভাবনা নেই।
রাজপরিবারের পদবি যেভাবে কাজ করে
যারা উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের ভক্ত তারা মধ্যযুগে ব্রিটিশ রাজপরিবারের বিভিন্ন সদস্যের পদবি কীভাবে দেওয়া হয়, সে সম্পর্কে জানেন। তখন ইংল্যান্ডের বিভিন্ন শায়ারের নাম থেকে রাজপরিবারের সদস্যরা পদবি গ্রহণ করতেন। যেমন- ইয়র্ক, ল্যানচেস্টার, গ্লচেস্টার, কর্নওয়াল ইত্যাদি। বর্তমান সময়েও একইভাবে রাজপরিবারের সদস্যরা পদবি গ্রহণ করে থাকেন। যেমন- প্রিন্স চার্লসকে ডিউক অব কর্নওয়াল, প্রিন্স অ্যান্ড্রুকে ডিউক অব ইয়র্ক এবং প্রিন্স এডওয়ার্ডকে ইয়ার্ল অব ওয়েক্স বলা হয়।
তাদের পরের প্রজন্মের প্রিন্স উইলিয়ামের পদবি ডিউক অব কেমব্রিজ এবং তার ভাই প্রিন্স হ্যারির পদবি ছিল ডিউক অব সাসেক্স। তবে মর্যাদার দিক থেকে কর্নওয়ালের গুরুত্ব সবার উপরে। যারা সিংহাসনের পরবর্তী উত্তরাধিকার, তাদের অধীনে থাকে এই জমিদারি। বর্তমান প্রিন্স চার্লস যখন সিংহাসনে বসবেন, তখন ডিউক অব কর্নওয়ালের দায়িত্ব পালন করবেন প্রিন্স উইলিয়াম।
রাজপরিবারের আয়ের উৎস
ব্রিটিশ রাজপরিবারের জৌলুস দেখে তাদের যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে ধনী পরিবার মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবিকভাবে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ অর্থ সম্পদের দিক থেকে সেরাদের তালিকায় অনেক অনেক পেছনের সারিতে। রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সম্পদের মোট অর্থমূল্য ৪৫০ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। তিনি মূলত দুই ধরনের উৎস থেকে আয় করেন থাকেন।
প্রথমত, রানী প্রতিবছর প্রাসাদের পরিচালনা ব্যয়বহন করার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের জন্য করদাতাদের থেকে প্রাপ্ত অর্থের একটি অংশ পেয়ে থাকেন। ২০১৯ সালে যার পরিমাণ ছিল প্রায় ১০৭ মিলিয়ন ডলার।
দ্বিতীয়ত, রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ বিভিন্ন ব্যক্তিগত সম্পদ থেকে অর্থ আয় করে থাকেন। ল্যানচেস্টারে রানীর জমিদারি রয়েছে। সেখান থেকে থেকে গত বছর মোট আয় ছিল ২৭ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া তার বিভিন্ন দামি রত্ন রয়েছে। যেখানে থেকে তার কোনো আয় না থাকলেও, এর আর্থিক মূল্য অনেক বেশি।
কর্নওয়ালে রাজপরিবারের জমিদারি রয়েছে, যা থেকে আয়কৃত অর্থ পান প্রিন্স চার্লস ও তার সন্তানরা। অর্থাৎ কর্নওয়াল থেকে প্রিন্স চার্লস যে অর্থ আয় করেন, তার একটা অংশ প্রিন্স উইলিয়াম ও হ্যারির পরিবার পেয়ে থাকেন। কর্নওয়ালের আর্থিক মূল্য প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে ২০১৯ সালে প্রিন্স চার্লসের আয় ছিল ২৮.১ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্য থেকে ৬.৫ মিলিয়ন তিনি তার সন্তানদের দিয়েছেন।
ব্রিটিশ রাজপরিবারের যে সকল সদস্য বিভিন্ন পূর্ণকালীন দায়িত্বে থাকেন, তারা অন্য কোনো উপায়ে অর্থ আয় করতে পারেন না। যদি তারা সেটি করতে চান, তাহলে তাদের রাজপরিবারের পদবি ত্যাগ করতে হবে।
ব্রিটিশ রাজপরিবারের সকল সদস্যদের আয়ের প্রধান উৎস তাদের অধীনে থাকা জমিদারিগুলো। এছাড়া আছে জনগণের দেওয়া কর। কিন্তু সাধারণ মানুষ তাদের জন্য যে কর প্রদান করেন, তা অতি সামান্য। এর বিপরীতে ব্রিটিশ রাজপরিবার যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি বড় অঙ্কের অর্থ ফেরত দিয়ে থাকেন। প্রত্যক্ষভাবে নিজেদের পকেট থেকে অবশ্য নয়, বরং পর্যটকদের পকেট থেকে!
প্রতি বছর ব্রিটিশ রাজপরিবারের বিভিন্ন প্রাসাদ দেখতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ পর্যটক আসেন। ২০১৬ সালে ব্রিটিশ রাজপরিবারের বিভিন্ন নিদর্শন দেখার জন্য ২৭ লাখ পর্যটক যুক্তরাজ্য ভ্রমণ করেছেন। যাদের থেকে ব্রিটেন আয় করেছে ৫৫০ মিলিয়ন ডলার। তবে গত বছর এই পর্যটকের সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ।
ব্রিটিশ রাজপরিবারের টিকে থাকার রহস্য
ব্রিটিশ রাজপরিবারকে নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। যেমন- রাজপরিবারের কোনো সদস্য সেনাবাহিনীতে যোগদান করলে তারা সরাসরি বড় কর্মকর্তার মর্যাদা লাভ করেন, যা সাধারণ সৈনিকদের অনেক সময় ক্ষুব্ধ করে। এছাড়া যারা রাজপরিবারের ব্যয়বহন করার জন্য কর প্রদান করছেন, তাদের জন্য ব্রিটেনের রানী তেমন কিছু করছেন বলে মনে করা হয় না।
এর বাইরে আধুনিক বিশ্বে রাজপরিবার থাকার যৌক্তিকতাও খুঁজে পান না অনেকে। যেহেতু তাদের রাষ্ট্র পরিচালনা করার কোনো ক্ষমতা নেই, এরপরও তাদের পেছনে কেন এত বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করা হবে- তা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন। তাদের খবরকে অতি গুরুত্বের সাথে প্রকাশ করার কারণে দেশের অনেক জরুরি বিষয়গুলো চাপা পড়ে যায় বলেও মনে করেন অনেকে।
কিন্তু এত সব প্রশ্নের মাঝেও ব্রিটিশ রাজপরিবারের টিকে থাকার পেছনে কারণ হলো তাদের খোলামেলা ও নমনীয় আচরণ এবং সিংহাসনে বসা নিয়ে কোনো গোলযোগ না থাকা। পাশাপাশি ব্রিটিশ রাজপরিবার সবসময়ই গণতন্ত্রকে সমর্থন করে আসছে। অন্যদিকে তাদের একসময়ের প্রতিদ্বন্দ্বী ফরাসি রাজপরিবার ১৭৯০ সালেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কারণ তারা সমাজের কঠোর ও অত্যাচারী অভিজাত শ্রেণীর সাথে জোট বেঁধেছিল, যা সাধারণ মানুষ পছন্দ করেননি।
ব্রিটিশ রাজপরিবারের টিকে থাকার পেছনে আরেকটি কারণ হলো তারা সব শ্রেণীর মানুষের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখে। তারা যেমন ব্যবসায়ীদের সহায়তা করে থাকে, তেমনি বিজ্ঞানের উৎকর্ষতার জন্য কাজ করে থাকে। পাশাপাশি প্রভাবশালী পরিবার হিসেবে জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে রাজনীতি থেকে নিজেদের সরিয়ে রেখেছে।
ব্রিটিশ রাজপরিবারের বিলুপ্তি হলে কী হবে?
আপাতদৃষ্টিতে খুব শীঘ্রই ব্রিটিশ রাজপরিবারের বিলুপ্তি ঘটবে না। কেননা এখনো যুক্তরাজ্যের মানুষ তাদের ভালোবাসে এবং তাদেরকে ঐতিহাসিক গরিমার অংশ হিসেবে বিবেচনা করে। ২০১৯ সালেও ব্রিটেনে নারীদের মধ্যে জনপ্রিয়তার দিক থেকে সবার উপরে রয়েছেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
এছাড়া ব্রিটেনের পর্যটন, শিল্প, বাণিজ্য ও গণমাধ্যমে বড় অবদান রাখছে ব্রিটিশ রাজপরিবার। ২০১৭ সালে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ব্রিটিশ অর্থনীতিতে রাজপরিবার প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের অবদান রেখেছে। ফলে তাদের এ সকল অবদানের কথা ভেবে তাদের বিলুপ্তি কেউ চাইবে না।
তবে যদি কখনো রাজপরিবারের বিলুপ্তি হয়, তাহলে তাদের জীবনযাপন আর দশজন সাধারণ মানুষের মতোই হবে। তারা তখন নিজেদের জমিদারি ছাড়াও স্বাধীনভাবে অর্থ আয়ের চেষ্টা করবেন। হতে পারে কেউ মিডিয়ায় নাম লেখাবেন, আবার কেউ পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী হয়ে যাবেন। কেউ কেউ আবার চাকরিবাকরিও করতে পারেন।