বহুকাল ধরে জার্মানিতে অস্ট্রিয়ার প্রভাবই ছিল সবচেয়ে বেশি। নেপোলিয়নিক যুদ্ধের পর তারা অস্ট্রিয়ান নেদারল্যান্ডসসহ জার্মানিতে প্রায় সমস্ত এলাকা ত্যাগ করে। এদিকে পোল্যান্ডের অঞ্চলগুলো রাশিয়ার কাছে ছেড়ে দিয়ে প্রশিয়া জার্মানির যে বিস্তীর্ণ এলাকা লাভ করেছিল তার ফলে সচেতন বা অচেতন যেভাবেই হোক না কেন ইউরোপে তাদের উপস্থিতি আগের থেকে অনেক শক্তিশালী হয়ে অঠে। উত্তর জার্মানিতে প্রুশিয়ার দুটি নতুন প্রদেশ তৈরি হয়, প্রুশিয়ান স্যাক্সোনি আর প্রুশিয়ান ওয়েস্টফ্যালেয়া। এদের মাঝে ছিল স্বাধীন হ্যানোভার, ব্রান্সউইক আর হেসে-কেসেল।
জার্মান কনফেডারেশন
ভিয়েনা কংগ্রেসে প্রুশিয়ার চাওয়া ছিল জার্মান রাষ্ট্রগুলো একটি কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংস্থার আওতায় চলে আসবে। অস্ট্রিয়ার বিরোধিতা আন্দাজ করতে পেরে তারা প্রস্তাব দিয়েছিল যে এই নির্বাহী বিভাগে অস্ট্রিয়া এবং প্রুশিয়ার সমান প্রাধান্য থাকবে। অস্ট্রিয়া ঠিকই বুঝতে পারে এর ফলে একীভূত যে জার্মান রাষ্ট্রের পত্তন হবে তা ইউরোপে অস্ট্রিয়ান আধিপত্য খর্ব করতে পারে। সুতরাং তারা দাবি করল জার্মান রাষ্ট্রগুলোর একটি কনফেডারেশন, যেখানে কেন্দ্রীয় কমিটির ক্ষমতা হবে খুব সীমিত। রাষ্ট্রগুলো নিজেদের মতোই চলবে। তাদের মতামতই গৃহীত হলে ১৮১৫ সালের ৫ জুন জার্মান কনফেডারেট ট্রিটি স্বাক্ষরিত হয়, যা ১৮২০ সালে আরো পরিমার্জিত হলো।
কনফেডারেশনে প্রথমে ছিল আটত্রিশটি রাজ্য, পরে আরো একটি যোগ দেয়। তাদের কেন্দ্রীয় সংস্থার নাম ছিল ফেডারেল ডায়েট বা কনফেডারেট ডায়েট ((Bundesversammlung)। এদের সভা হতো ফ্রাঙ্কফুর্টে। এজন্য প্রতিটি সদস্য দেশের একজন করে কূটনীতিবিদ মোটামুটি স্থায়ীভাবে সেখানে ছিলেন। একীভূত জার্মানির যে স্বপ্ন প্রুশিয়া দেখেছিল কনফেডারেশন তার সিকিভাগও পূরণ করতে পারেনি। সুতরাং প্রুশিয়ান মন্ত্রী এবং রাজা সব জার্মান রাজ্যগুলোকে প্রুশিয়ার ছাতার তলে নিয়ে আসতে শুল্ক এবং নিরাপত্তাকে ইস্যু করলেন।
জার্মান শুল্ক অঞ্চল
বাভারিয়া আর ভুর্তেমবার্গ সর্বপ্রথম জার্মান দুটি রাষ্ট্রের মাঝে একটি অভিন্ন শুল্ক অঞ্চল তৈরি করে। প্রথমদিকে বার্লিন একে আমলেই নেয়নি। ১৮২৫ সালের জুনে হেসে-ডার্মাস্টাড রাজ্য থেকে তাদের সাথে অর্থনৈতিক সম্মিলনের প্রস্তাব আসলে তাই বার্লিন তা নাকচ করে দেয়। কিন্তু দ্রুতই রাজার উপদেষ্টারা উপলব্ধি করলেন একটি অভিন্ন শুল্ক অঞ্চলের মাধ্যমে ছোট ছোট জার্মান রাষ্ট্রকে অর্থনৈতিকভাবে প্রুশিয়ার উপর নির্ভরশীল করে ফেলা যাবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও চাপ দেয়া হলো শুল্কমুক্ত সুবিধাসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক ছাড়কে আলোচনার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার। হেসে-ডার্মাস্টাড আবার ১৮২৭ সালে একই আবেদন করলে এবার প্রুশিয়া সাথে সাথে তা অনুমোদন করে।
অস্ট্রিয়ার কাছে মতিগতি ভাল ঠেকল না। তাদের চ্যান্সেলর মেটেরনিখ বুঝতে পারলেন অর্থনৈতিক পেশিশক্তি দিয়ে প্রুশিয়া অন্যান্য জার্মান রাজ্যকে কোণঠাসা করার ক্ষমতা রাখে। তিনি আশঙ্কা করলেন হেসে-ডার্মাস্টাড আর প্রুশিয়ার এই অভিন্ন শুল্ক অঞ্চলে আরো অনেক জার্মান রাষ্ট্র যোগ দিতে পারে। তা যাতে না হয় সেজন্য তিনি উঠে-পড়ে লাগলেন। তার মদদে স্যাক্সোনির স্বাধীন অংশ, হ্যানোভার, হেসে আর নাসাউ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী একটি কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক সংস্থা গড়ে অঠে (Central German Commercial Union)। কিন্তু প্রুশিয়া রাজনীতির মাঠে দক্ষ খেলোয়াড়। ভয়-ভীতি আর প্রলোভন দেখিয়ে তারা পার্শ্ববর্তী অনেক রাজ্যকেই নিজেদের দলে ভিড়িয়ে নেয়। অবশেষে ১৮২৯ সালের ২৭ মে অস্ট্রিয়ার সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে বাভারিয়া এবং ভুর্তেমবার্গের সাথে সম্পাদিত চুক্তি প্রুশিয়ার শুল্ক অঞ্চলে কেন্দ্রীয় জার্মান বাণিজ্যিক সংস্থার কয়েকটি ছোট ছোট দেশকে প্রবেশাধিকার দেয়, ফলে দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থার একত্রীকরণের রাস্তা খুলে গেল।
১৮৩৪ সালের পয়লা জানুয়ারি অভিন্ন জার্মান শুল্ক অঞ্চল/যল্ভায়ান (The German Customs Union/Zollverein) আত্মপ্রকাশ করে। এদের মধ্যে বেশিরভাগ জার্মান রাজ্যই অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৮৩৫ সালে ব্যাডেন, নাসাউ আর ফ্রাঙ্কফুর্ট এতে যোগ দেয়। ১৮৪১ সালে ব্রান্সউইক এবং ল্যুনবার্গও এই স্রোতে গা ভাসাল।এই পর্যায়ে জার্মান জনগোষ্ঠীর শতকরা ৯০ ভাগই যল্ভায়ানের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
শুল্ক অঞ্চলের মাধ্যমে মূলত প্রুশিয়ার অর্থনৈতিক প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায়। জার্মান রাষ্ট্রগুলির কাছে তাদের শুল্ক বিষয়ক নীতি এবং অর্থনীতিকে আধুনিকীকরণের প্রচেষ্টা সমাদৃত হলো। একটি প্রগতিশীল রাজ্য হিসেবে প্রুশিয়ার মর্যাদা অনেক বেড়ে যায়।
জার্মান নিরাপত্তা
১৮১৮-১৯ সালেই প্রুশিয়া জার্মানিতে একটি ফেডারেল মিলিটারি বাহিনী গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছিল, যেখানে সমস্ত জার্মান রাষ্ট্রের অংশগ্রহণে একটি অভিন্ন জার্মান বাহিনী বহিঃশত্রুর বিরুদ্ধে জার্মানির প্রতিরক্ষার কাজ করবে। স্বাভাবিকভাবেই তাদের চাওয়া ছিল এই বাহিনীর নেতৃত্ব নেবেন প্রুশিয়ার হনজোলার্ন রাজা। এখানে বহিঃশত্রু হিসেবে ফ্রান্সের সাথে সাথে অস্ট্রিয়ার কথাও যে প্রুশিয়ানদের মাথায় ছিল না তা হলফ করে বলা যাবে না। মেটেরনিখ তা জানতেন। ফলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কিছু জার্মান রাষ্ট্র তার প্রচ্ছন্ন সমর্থনে এই প্রস্তাবের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যায়। তাদের তথা অস্ট্রিয়ার যুক্তি ছিল এর মাধ্যমে একটি সার্বভৌম দেশের নিরাপত্তায় সেই দেশের ক্ষমতা হ্রাস করা হচ্ছে। ফলে এবারের মতো এই চেষ্টা থমকে গেল।
এদিকে ফ্রান্সে বুর্বন বংশীয় রাজা দশম চার্লসের কাজকর্মে তার জনপ্রিয়তায় ভাটার টান লাগে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ১৮৩০ সালের জুলাই মাসে বিপ্লবের দ্বারা তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হলো। এর সাথেই ফ্রান্সে বুর্বনদের সমাপ্তি, কারণ সিংহাসনে বসেন অরলিয়েন্স বংশের লুই ফিলিপ, যিনি চার্লসের দূরসম্পর্কের আত্মীয় ছিলেন।
এদিকে ফরাসি বিপ্লব আর নেপোলিয়নের ঘা জার্মানিতে তখনো শুকোয়নি। চার্লসের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ সেখানে নতুন করে শঙ্কার সৃষ্টি করে। অনেক জার্মান রাষ্ট্র ভয় পেতে থাকে এই গণ্ডগোলের ছলে হয়তো ফ্রান্স আবার পশ্চিম জার্মানিতে আগ্রাসন চালাবে। বার্নস্টফ নামে এক প্রভাবশালী প্রুশিয়ান কূটনীতিক ফ্রেডেরিক উইলিয়ামকে সে বছরের ৮ অক্টোবর চিঠি দিলেন। তার মূল কথা ছিল দক্ষিণের রাজ্যগুলির সাথে আলোচনার সূচনা করা যার উদ্দেশ্য হবে জার্মানির জন্য অভিন্ন একটি নিরাপত্তা নীতি প্রণয়ন। এর সূত্র ধরে ১৮৩১ সালের বসন্তে প্রুশিয়ান জেনারেল লিলিয়েনস্টার্ন দক্ষিণ জার্মানিতে সরকারি সফরে বের হন।বাভারিয়ার রাজা প্রথম লুডউইগ আঞ্চলিক সহযোগিতার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন, কিন্তু সম্মিলিত জার্মান বাহিনীতে প্রুশিয়ার সর্বময় ক্ষমতার ব্যাপারে তিনি খোলাখুলিভাবে নিজের আশঙ্কা প্রকাশ করলেন। বাভারিয়ার মতো এতটা উৎসুক না হলেও ভুর্তেমবার্গ আর ব্যাডেন ফেডারেল বাহিনী গঠন এবং প্রশিয়ার সাথে সহযোগিতার ব্যাপারে একমত হলো।
অস্ট্রিয়া এবারো বাগড়া বাধাল। জার্মানিতে প্রুশিয়ার ক্রমবর্ধমান প্রভাব প্রথম থেকেই দক্ষিণের রাজ্যগুলোর কাছে উদ্বেগের বিষয় ছিল। ফ্রান্সে গোলযোগ তাদের ফ্রেডেরিক উইলিয়ামের কাছাকাছি নিয়ে আসলেও লুই ফিলিপের সময়ে পরিস্থিতি ঠাণ্ডা হয়ে আসে। ফলে ফ্রান্সকে সামনে রেখে প্রুশিয়ার প্রস্তাবিত ফেডারেল বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা হ্রাস পায়। ১৮৩১ সালের সেপ্টেম্বরে বার্লিনে আগত অস্ট্রিয়ান রাষ্ট্রদূত ক্ল্যাম-মার্টিনিটজ এই বাহিনীর আত্মপ্রকাশ রুখতে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করেন। জার্মান রাজ্যগুলোর মাঝে সামরিক সহযোগিতার বিষয়ে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ ছিল বার্নস্টফ, লিলিয়েনস্টার্ন আর এইখহর্নের। এরা ছিলেন প্রগতিশীল প্রুশিয়ান লিবারেল। কিন্তু রক্ষণশীলরা রাজনৈতিক কারণে তাদের বিরোধিতা করছিল। এই রক্ষণশীলদের মধ্যে রাজার অন্যতম উপদেষ্টা অ্যানসিলনও ছিলেন। দুই দলের রেষারেষিকে কাজে লাগিয়ে ক্ল্যাম-মার্টিনিটজ রাজা অবধি পৌঁছে যান এবং নানাভাবে তাকে প্ররোচিত করে এবারো ফেডারেল বাহিনী গঠনের পরিকল্পনা ধামাচাপা দিয়ে দিলেন।
অস্ট্রো-প্রুশিয়ান দড়ি টানাটানি কিন্তু বন্ধ হয়নি। ১৮৪০-৪১ সালে রাজনৈতিক উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে ফরাসি প্রধানমন্ত্রী অ্যাডলফ থিয়ের বেফাঁস বলে বসলেন রাইনের দক্ষিণ তীর বরাবর ফ্রান্সের প্রাকৃতিক সীমানা এবং প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করে হলেও তার দেশ সেখানে নিজ অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে। ভিয়েনা কনভেনশনের মাধ্যমে এই অঞ্চল থেকে ফ্রান্সকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল, যেখানে প্রুশিয়ার এলাকা ছাড়াও বেশ কিছু জার্মান রাজ্য বর্তমানে বিরাজমান। থিয়েরের এই হঠকারী মন্তব্যে সূচনা হয় রাইন ক্রাইসিসের। জার্মান সকল রাষ্ট্রই নিজেদের বিভেদ ভুলে একত্রিত হলো নতুন এই ফরাসি হুমকির বিরুদ্ধে। প্রুশিয়া থেকে আবার দূত ছুটে গেল দক্ষিণ জার্মানি, উদ্দেশ্য সম্মিলিত একটি জার্মান বাহিনী গঠন। দক্ষিণ জার্মানির রাষ্ট্রগুলো এবারঅ মুখে মুখে একমত হলো, ফলে অস্ট্রিয়ান কূটনীতিকেরা সক্রিয় হয়ে উঠলেন। প্রুশিয়ান মিশনের সাথে তাদের লোক যুক্ত হয়ে যায়।
দক্ষিণ জার্মান রাজ্যগুলো দুই নৌকাতেই পা রেখেছিল। প্রুশিয়ানদের তারা বলত অস্ট্রিয়ানরা বিশ্বাসযোগ্য নয়, আবার অস্ট্রিয়ান দূতদের কাছে জানাতো প্রুশিয়াকে ভয় পায় বলে তারা সরাসরি না করতে পারছে না। ফলে প্রুশিয়ার চেষ্টা আরো একবার ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। প্রত্যেকবারই অস্ট্রিয়া প্রুশিয়ার উন্নত সমরশক্তির বিষয়ে দক্ষিণ জার্মানির উদ্বেগকে কাজে লাগাতে পেরেছিল।
জার্মান রাষ্ট্রগুলো ভয় পেত যদি প্রুশিয়ার অধীনে কোনো সামরিক বাহিনী গঠিত হয়, তার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণই প্রুশিয়ান জেনারেলরা নিয়ে নেবেন, ফলে তাদের সার্বভৌমত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। প্রুশিয়া সবই জানত, কিন্তু তখন পর্যন্ত ভিয়েনার সাথে সরাসরি কোনো সংঘাতে জড়ানোর ইচ্ছা তাদের ছিল না, কারণ অন্যান্য ক্ষেত্রে অস্ট্রো-প্রুশিয়ান সহযোগিতা তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ছিল। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ১৮৩২ সালে যখন ফেডারেল জার্মান বাহিনী গঠনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, উগ্রপন্থি কিছু উপদল দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানিতে বিক্ষোভ শুরু করে। অস্ট্রিয়া এবং প্রুশিয়া যৌথভাবে তখন জার্মান কনফেডারেশনের মাধ্যমে কড়া পুলিশি নজরদারি এবং তথ্য প্রকাশে বিধিনিষেধ আরোপের নতুন ক্ষমতা প্রয়োগ করে।
প্রুশিয়ার রাজনীতির অভ্যন্তরীণ বিভেদও বারবার তার একীভূত জার্মানির চিন্তাকে বাধা দিচ্ছিল। রক্ষণশীল গোষ্ঠী, এমনকি তৎকালীন রাজাও ভিয়েনার সাথে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার পক্ষে ছিলেন। বছরের পর বছর রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর ইউরোপে তুলনামূলকভাবে শান্তি বিরাজ করছিল। প্রুশিয়া তার নীতির সাথে সঙ্গতি রেখে একে বিঘ্নিত করবার পক্ষপাতী ছিল না। বার্লিনের ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত ১৮৩৭ সালে দেশে লিখে পাঠিয়েছিলেন যে প্রুশিয়ার পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি আলোচনার মাধ্যমে সবার সাথে সমঝোতা করে ইউরোপের শান্তি বজায় রাখা।
রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক
নেপোলিয়নিক যুদ্ধের সময় থেকেই সব ব্যাপারে রাশিয়ার মন যুগিয়ে চলবার যে নীতি প্রুশিয়া গ্রহণ করে, তা বজায় ছিল ভিয়েনা কনভেনশনের পরেও। ছোটখাট মনোমালিন্য থাকলেও প্রুশিয়া কখনোই রাশিয়াকে ঘাঁটাতে চায়নি। কেন তা-ও পরিস্কার, নেপোলিয়নের সাথে সর্বাত্মক যুদ্ধে রাশিয়া এক মিলিয়ন সেনাকে মাঠে নামিয়েছিল। যুদ্ধের পর দৈত্যাকৃতি এই রাষ্ট্র নিজেকে পূর্ব ইউরোপিয়ান নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদানকারী হিসেবে দাবি করে। শক্তির প্রশ্নে আর কেউ তার ধারেকাছেও ছিল না।
১৮১৭ সালে তৃতীয় ফ্রেডেরিক উইলিয়ামের মেয়ে শার্লটের সাথে রাশান সিংহাসনের উত্তরাধিকারী রোমানভ বংশীয় গ্র্যান্ড ডিউক নিকোলাসের বিয়ের মাধ্যমে রুশ-প্রুশিয়ান মিত্রতা আরো শক্ত করাই ছিল মূল লক্ষ্য। ১৮২৫ সালে অভিষেকের পর থেকে স্ত্রীর দিকে প্রুশিয়ান আত্মীয়দের মধ্য দিয়ে প্রুশিয়াতে জারের রাজনৈতিক প্রভাব প্রচুর বৃদ্ধি পায়। প্রুশিয়ার কোনো নীতির বিষয়ে তার নেতিবাচক মনোভাব প্রুশিয়ান আইন প্রণয়নকারীদের জন্য ছিল সতর্ক সংকেত।