যদিও প্রাচীন সভ্যতাগুলোর মধ্যে রোমান সভ্যতা নিয়ে অগণিত অনুসন্ধান ও গবেষণা রয়েছে, তদুপরি আলোচনার স্বার্থে এই পর্যায়ে বলে নেয়া আবশ্যক যে, যথাযথ প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্য-প্রমাণের অভাবে প্রাথমিক কালের রোমান ইতিহাসের ব্যপারে আধুনিক ইতিহাসবিদেরা সম্পূর্ণভাবে অতীত ইতিহাসবেত্তা, যেমন- লিভি, ডাইনোসিয়াস, প্লুটার্ক এদের উপর নির্ভরশীল।
এখানে উল্লেখ করা জরুরি যে, অতীতের এই খ্যাতিমান ইতিহাসবেত্তারা যখন ইতিহাস রচনা করেছেন, তাদের অনেক সূত্রের মধ্যে যুগ যুগ ধরে চলে আসা কিংবদন্তী একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। এবং স্বাভাবিকভাবেই তাদের লেখা পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও তখনকার বিরাজমান ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। এ কারণে অনেক ক্ষেত্রেই তাদের ইতিহাসে বাস্তবতা ও মিথোলজির সংমিশ্রণ দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, রোমুলাসকে রোমের প্রতিষ্ঠাতা রাজা হিসেবে ঐতিহাসিকগণ স্বীকার করে নিলেও তার সাথে ইনিয়াসের সম্পর্ক অথবা দেবতা মার্সের সাথে তার যোগাযোগ মিথ বা পুরাকাহিনী বলেই বিবেচনা করেন। রোমের উত্থানের কাহিনী বর্ণনার সময় বাস্তব ও কল্পনার মধ্যে পার্থক্য করার চেষ্টা এখানে করা হয়নি। সুতরাং পুরাকাহিনীর আবরণ ছাড়িয়ে বাস্তবতার নির্যাসটুকু বের করে নেবার ইচ্ছা আগ্রহী পাঠকের উপর।
গত পর্বে আমরা রোমুলাস কর্তৃক রোমের পত্তনের ঘটনা বলেছি। রোম এখন বাড়ন্ত এক শিশু, যার দরকার খাদ্য ও পুষ্টি। রোমের সেই খাদ্য ও পুষ্টি হলো এর মানবসম্পদ। চতুর্দিকে শত্রুনগর পরিবেষ্টিত শিশু রোমকে টিকে থাকতে হলে নিজেকে রক্ষার সক্ষমতা তৈরি করতে হবে। তার জন্য দরকার যোদ্ধা ও সেনাপতি, আর সেজন্য প্রয়োজন যত বেশি সম্ভব নাগরিক।
প্রথমাবস্থায় প্যালাটাইন ও ক্যাপিটোলিন পাহাড়ের উপর রোমবাসীদের ঘরবাড়ি ছিল। পাহাড়ি ও রুক্ষ হবার কারণে খুব বেশি মানুষ এখানে বসতি করতে চাইত না। যারা আসতো তাদের মধ্যেও পুরুষই ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। রোমের জনসংখ্যা বাড়ানোর লক্ষ্যে রোমুলাস নগরের দুয়ার সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিলেন। আশেপাশের গোত্রের দলত্যাগি সদস্য, নির্বাসিত অপরাধী, বহিষ্কৃত মানুষ সবাইকে সাদরে স্থান দিতে লাগলেন রোমে। দেখতে দেখতে রোমের জনবসতি বাড়তে লাগল। তবে তাদেরও বেশিরভাগই পুরুষ, নারীর সংখ্যা অত্যন্ত কম।
জনসংখ্যার অসমতা ও রোমের স্থায়িত্বের হুমকি
পুরুষের সংখ্যা অত্যধিক হবার কারণে রোমানদের মধ্যে নারী পুরুষের বড় ধরনের অসমতা দেখা দিল। ফলে নাগরিকদের একটা বিশাল অংশ বিবাহযোগ্য মেয়ে খুঁজে পাচ্ছিল না। রোমুলাস একে সুস্পষ্ট ধ্বংসের চিহ্ন হিসেবে দেখতে পেলেন। একটি জাতির টিকে থাকার অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে শক্তিশালী ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, আর তার জন্য প্রথমে প্রয়োজন রোমান শিশু। কিন্তু যদি রোমান পুরুষরা আইবুড়ো থেকে যায় তাহলে কীভাবে রোমের ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্ম হবে? তবে কি পত্তনের প্রথম প্রজন্মের মধ্যেই রোমান সভ্যতা হারিয়ে যাবে? রোমুলাস তা হতে দিতে পারেন না।
পার্শ্ববর্তী গোত্রের সাহায্যপ্রার্থনা
এমন পরিস্থিতিতে রাজা রোমুলাস আশেপাশের সব গোত্রের কাছে দূত পাঠিয়ে রোমান পুরুষদের সাথে তাদের মেয়েদের বিয়েকে বৈধতা দিয়ে মৈত্রী অনুরোধ করলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রোমুলাসের এই কাজ প্রমাণ করে রোমকে সবাই আলাদা একটি জাতি হিসেবে বিবেচনা করত, ল্যাটিয়ামের কোনো জাতির কলোনি হিসেবে নয়। কলোনি হলে রোমান পুরুষরা কোনো বিধিনিষেধ ছাড়াই অন্যান্য গোত্রের মেয়েদের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারত।
রোমুলাসের অনুরোধ সমস্ত গোত্রই দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করল। তারা জানিয়ে দিল, রোমকে তারা দেখে সমাজের নিকৃষ্টতম লোকদের আবাসভূমি হিসেবে। কাজেই তাদের বোন ও কন্যাদের সেখানকার কারো সাথে বিয়ের অনুমতি দেয়ার প্রশ্নই আসে না। সবদিক থেকে ব্যর্থ হয়ে অপমানিত রোমুলাস এবার অন্য পরিকল্পনা ফাঁদলেন।
উৎসব ও স্যাবিন মেয়েদের অপহরণ
রোমুলাস মাটির গভীরে দেবতা কন্সুলিয়ার উদ্দেশ্যে নিবেদিত একটি বেদির সন্ধান পেয়েছিলেন। কিছু মত অনুযায়ী, কন্সুলিয়া ছিলেন গোপন পরামর্শের দেবতা। অন্য মতে, তিনি রোমান ও ল্যাটিনদের কাছে অশ্বের দেবতা নেপচুনের প্রতিনিধিত্ব করেন। প্লুটার্কের জবানীতে রোম তৈরির চতুর্থ মাসে রাজা রোমুলাস কন্সুলিয়ার সম্মানে এক বিশাল উৎসবের আয়োজন করেন এবং আশেপাশের সকল গোত্রকে, যেমন- স্যাবিন, সাইনেন্সেস, ক্রাস্টামিনি এবং অ্যান্টেমনেটদের আমন্ত্রন জানান। এ সমস্ত ধর্মীয় উৎসব রীতি মোতাবেক নিরাপদ জায়গা বলে পরিগণিত হত। কাজেই এরা সকলেই নিরস্ত্র অবস্থায় উৎসবে যোগদান করতে আসে। তবে এদের মধ্যে স্যাবিনরাই সবচেয়ে বেশি পরিবারপরিজন নিয়ে হাজির হয়। রোমে প্রবেশ করে এর দুর্ভেদ্য প্রাচীর, দুর্গ, ঘরবাড়ি ও ঘন জনবসতি দেখে উপস্থিত অন্যান্য গোত্রের মধ্যে রোমের প্রতি সমীহ জেগে ওঠে।
এদিকে রোমান যুবকেরা কিন্তু তাদের অস্ত্রশস্ত্র নিয়েই উৎসবে এসেছিল। তারা অপেক্ষা করছিল রাজার পক্ষ থেকে সংকেতের। উৎসবের একপর্যায়ে বিভিন্ন ক্রীড়াকৌশল দেখানো শুরু হলে সবার দৃষ্টি সেদিকে নিবদ্ধ হয়। ইত্যবসরে রাজা রোমুলাস, যিনি জনসাধারণের সম্মুখে বসে ছিলে, তিনি উঠে দাঁড়ান এবং তার বেগুনি রঙের রাজকীয় আলখাল্লা গায়ে চাপিয়ে নেন। এটাই ছিল ইশারা।
অবিলম্বে রোমান যুবকেরা যার যার পছন্দমত কুমারিদের টেনে নিয়ে যেতে থাকে। যেহেতু এদের মধ্যে প্রায় সবাই ছিল স্যাবিন, তাই এই ঘটনা ‘রেপ অফ দ্য স্যাবিন উইমেন’ নামে পরিচিত। তবে অনেক ঐতিহাসিকের মতে, একে ‘রেপ’ না বলে “অ্যাবডাকশন অফ দ্য স্যাবিন উইমেন” বলাই শ্রেয়। তৎকালীন সময়ে পছন্দমত নারীকে জোর করে তুলে নিয়ে বিয়ে করার চল ছিল, রোমানরা তারই সুযোগ গ্রহণ করেছিল। কতজন স্যাবিন নারীকে রোমানরা অপহরণ করেছিল তা নিয়ে ভিন্নমত দেখা যায়। লিভির সূত্র ধরে প্লুটার্ক ৩০ জনের কথা বলেছেন। তবে তিনি অ্যান্টিয়াসের বর্ণনায় ৫২৭ এবং জুবার কথামতে ৬৮৩ জনের অপহৃত হবার কথাও উল্লেখও করেছেন। এরা সবাই ছিল স্যাবিন কুমারি। একমাত্র ব্যতিক্রম হার্সেলিয়া, বিবাহিত হলেও ভুল করে রোমানরা তাকে অপহরণ করেছিল। হার্সেলিয়া পরে কাকে বিয়ে করেছিল তা নিয়ে দ্বিমত আছে। কেউ বলে থাকেন, তার স্বামী ছিলেন স্বয়ং রোমুলাস, আর কারো মতে তার স্বামী রোমান বীর হোস্টিলিয়াস যিনি রোম ও স্যাবিনদের সংঘর্ষের সময় নিহত হন।
উপস্থিত অন্যান্য জাতির লোকেরা বাধা দেয়ার চেষ্টা করলেও নিরস্ত্র থাকায় তারা বিশেষ সুবিধা করে উঠতে পারেনি। তাদের অনেককে রোমানরা হত্যা করে এবং বাকিদের শহর থেকে তাড়িয়ে দেয়।
অপহরণের পরবর্তী সময়
বাবা, ভাই ও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন স্যাবিন মেয়েদের আশ্বস্ত করার জন্য রোমুলাস প্রতিশ্রুতি দেন যে, তারা তাদের পছন্দ মোতাবেক রোমান পুরুষদের মধ্য থেকে স্বামী বেছে নিতে পারবে, তারা স্বামীর সম্পত্তির অংশীদার হবে এবং রোমান নাগরিকের সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করবে। অধিকন্তু তাদের ঘরে জন্ম নেয়া সকল শিশুই জন্মসূত্রে রোমান নাগরিকত্ব প্রাপ্ত হবে। ধীরে ধীরে স্যাবিন নারীরা রোমান স্বামীদের ঘরে মানিয়ে নেয় এবং রোমান পুরুষেরাও তাদের স্ত্রীদের মন জয় করে নিতে সমর্থ হয়।
এদিকে এই অপমানের সমুচিত জবাব দিতে সাইনেন্সেস, ক্রাস্টামিনি এবং অ্যান্টেমনেটরা প্রত্যেকেই আলাদা আলাদাভাবে রোম আক্রমণ করে। কিন্তু রোমুলাস তাদের সবাইকে পরাজিত এবং নেতৃস্থানীয় লোকদেরকে হত্যা করেন। ইতোমধ্যে স্যাবিনরা তার কাছে উপযুক্ত মুক্তিপণের বিনিময়ে তাদের মেয়েদের ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব পাঠায়। কিন্তু রোমুলাসের ইচ্ছা ছিল অন্যরকম। তিনি মেয়েদের ফিরিয়ে দেবার পরিবর্তে তাদের রোমানদের স্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়ে মৈত্রী সম্বন্ধ স্থাপনের প্রস্তাব করেন। বলা বাহুল্য, স্যাবিনরা তা প্রত্যাখ্যান করে এবং তাদের প্রতাপশালী রাজা টাইটাসের অধীনে যুদ্ধের জন্য একত্রিত হয়।
এর পূর্বে রোমানরা যাদের সাথে যুদ্ধ করেছিল তাদের তুলনায় স্যাবিনরা ছিল অনেক বেশি শক্তিশালী আর কৌশলী। কাজেই রোমুলাস সম্মুখ সমর এড়াতে চাইলেন। তিনি প্যালাটাইন পাহাড়ে রোমান প্রাচীরের অভ্যন্তরে অবস্থান নেন আর ক্যাপিটোলাইন পাহাড়ের দুর্গকে শক্তিশালী করে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে গড়ে তোলেন। টাইটাস দুর্গ দখল করতে চাতুর্যের আশ্রয় নিলেন। সেই সময় স্যাবিনরা সকলেই সোনার অলঙ্কার পরিধান করত। তারা বাম হাতে পরতো ভারি ব্রেসলেট এবং সেই হাতেই ঢাল ব্যবহার করত। ডান হাতে থাকতো সোনা ও মূল্যবান পাথরে খচিত ছোট ছোট অলঙ্কার।
টাইটাস দুর্গের নেতা টার্পিয়াসের কুমারি কন্যা টার্পিয়া যখন দুর্গের বাইরে এসে পানি নিচ্ছিল তখন তাকে এই অলঙ্কারের লোভ দেখালেন। স্যাবিন যোদ্ধাদের বাম হাতে যা আছে তা তাকে দিতে হবে, এই শর্তে টার্পিয়া বিশ্বাসঘাতকতা করে দুর্গের দ্বার খুলে দিলে স্যাবিন সেনারা ঝড়ের বেগে দুর্গ দখল করে নেয়। শর্ত মেনে নিয়ে তারা তাদের বাম হাতের ঢাল ও ব্রেসলেট টার্পিয়ার উপর ছুঁড়ে দিতে থাকলে এর ভারে চাপা পড়েই তার মৃত্যু হয়।
এদিকে ক্যাপিটোলাইন দুর্গের পতনের পর প্যালাটাইন পাহাড়ে অবস্থিত রোম নগরী স্যাবিনদের সামনে উন্মুক্ত হয়ে যায়। দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী আয়তাকার স্থান ফোরাম তখন দুই বাহিনীকে আলাদা করে রেখেছিল। এই ফোরাম পরবর্তীতে রোম নগরী বর্ধিত হলে এর অন্যতম অংশে পরিণত হয়। আজকের দিনের প্লাজা বা স্কয়ারের মতো ছিল এই স্থান। একে ঘিরে তৈরি হয় গুরুত্বপূর্ণ রোমান প্রশাসনিক ভবন। ফোরামে জমায়েত হয়ে রোমানরা পালন করত যুদ্ধজয়ের আচার, বিভিন্ন উৎসব, আলোচনা, বিতর্ক ইত্যাদি। যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে তখনও রোম নগরীর সীমা এই পর্যন্ত পৌঁছেনি।
ফোরামের দুই প্রান্তে দুই সেনাবাহিনী লড়াইয়ের সাজে সজ্জিত। স্যাবিন বাহিনীর অগ্রভাগে তাদের সেনাপতি মেটিয়াস কার্টিস, আর রোমান বাহিনীর সেনাপতি হোস্টিলিয়াস, যাকে কোনো কোনো ঐতিহাসিক হার্সেলিয়ার স্বামী বলে থাকেন। তুমুল যুদ্ধে হোস্টিলিয়াস নিহত হন এবং স্যাবিন সেনারা রোমের দরজা পর্যন্ত চলে আসে। তখন দেবতাদের মধ্যে রোমের পরিণতি নিয়ে তর্ক হতে থাকে। জুপিটারের স্ত্রী এবং মার্সের মা দেবী জুনোর আগে থেকেই ট্রোজানদের উপর বিরাগ ছিল, তাই ইনিয়াসের উত্তরসূরি রোমানদের তিনি দেখতে পারতেন না। তার ইশারায় শহরের দরজা খুলে গেলে বিপুল বিক্রমে স্যাবিন বাহিনী সেদিকে অগ্রসর হয়। কিন্তু দেবতা জ্যানাসের নির্দেশে, যাকে রোমানরা আরম্ভ ও শেষ এবং দুয়ারের দেবতা হিসেবে পূজা করত, দরজার ঠিক সামনে ফুটন্ত পানির এক প্রস্রবণের উৎপত্তি হলে স্যাবিনরা সেদিনের মতো পিছু হটে যায়।
পরদিন রোমুলাস নিজেই সেনাবাহিনীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। বিপুল বিক্রমে আক্রমণ করলেও একসময় স্যাবিনদের পাল্টা আঘাতে রোমান সেনারা পিছিয়ে যেতে থাকে। এমন সময় পাথরের আঘাতে রোমুলাস মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। নিজেকে সামলে উঠে দাঁড়িয়ে তিনি তার বাহিনীকে দিগ্বিদিকজ্ঞানশূন্য হয়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে যেতে দেখেন। রোমুলাস তাদের পাল্টা আক্রমণের আহবান করলেও কেউ তার ডাকে সাড়া দিল না। চরম বিপর্যয়ের এই সময়ে তিনি আকাশের দিকে হাত তুলে দেবতা জুপিটারের কাছে সাহায্যের আবেদন করলেন এবং তার জন্য একটি মন্দির স্থাপনের অঙ্গীকার করলেন। এবার কিছু দুঃসাহসী রোমান তরুণ তার ডাক শুনতে পেল এবং তাদের নিয়ে রোমুলাস স্যাবিনদের পিছিয়ে যেতে বাধ্য করলেন। ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত দুই বাহিনী কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে চূড়ান্ত মোকাবেলার প্রস্তুতি নিল।
স্যাবিন নারীদের হস্তক্ষেপ ও যুদ্ধের সমাপ্তি
দুই বাহিনী শেষ সংঘর্ষের জন্য তৈরি। তখন এক আশ্চর্য ব্যাপার ঘটলো। হার্সেলিয়ার নেতৃত্বে স্যাবিন নারীরা দুই দলের মাঝখানে এসে দাঁড়ালো। এই যুদ্ধে তাদের অনেকেই একদিকে স্বামী, অন্যদিকে বাবা বা ভাই হারিয়েছে। তারা কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো কাউকে মরতে হলে তারাই মরতে চায়, কারণ তাদের কারণেই এই যুদ্ধ। তাদের করুণ আহাজারিতে রোমান ও স্যাবিন দুই বাহিনীর সেনারাই অস্ত্র নামিয়ে রাখল, এবং একে অপরের সাথে শত্রুতার অবসানের অঙ্গীকার করল।
স্যাবিনদের রোমুলাস রোমান নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিলেন, যা তার অনেক আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল। এর ফলে রোমান সেনাবাহিনী আরো শক্তিশালী হয়ে উঠল। এছাড়াও স্যাবিনদের রোমের অংশ হয়ে যাওয়ার ফলে সাময়িকভাবে দ্বৈত শাসনের উদ্ভব ঘটলো। রোমের পক্ষে রাজা রোমুলাস এবং স্যাবিনদের পক্ষে টাইটাস শাসনকাজ চালিয়ে যেতে থাকলেন। তবে কিছুকাল পরে অন্যান্য ল্যাটিন গোত্রের সাথে শত্রুতার জের ধরে টাইটাস আততায়ীর হাতে নিহত হলে সম্পূর্ণ শাসনভার আবার রোমুলাসের হাতে ন্যস্ত হয়। তার পর রোমের রাজা নির্বাচিত হন স্যাবিনদের মধ্যে থেকে নুমা, যিনি রোমের দ্বিতীয় রাজা। এভাবে সাতজন রাজার রাজত্বের পর সপ্তম ও সর্বশেষ রাজা রোম থেকে বিতাড়িত হন এবং রোম রাজকীয় ধরন ছেড়ে প্রজাতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় প্রবেশ করে।