ফিরে দেখা
স্বাভাবিক নিয়মানুযায়ী ওরহান গাজীর পর ওসমানী সাম্রাজ্যের দায়িত্ব হাতে নেয়ার কথা ছিলো তার বড় ছেলে সুলায়মান পাশার। কিন্তু ১৩৫৭ সালে ঘোড়া থেকে পড়ে গিয়ে মারা যান সুলায়মান। ফলে ওরহান গাজীর মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া বিশাল ওসমানী সাম্রাজ্যের পরিচালনার হাল ধরেন সুলতান প্রথম মুরাদ।
ব্যক্তি মুরাদ
১৩৬২ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ থেকে শুরু হয় প্রথম মুরাদের শাসনকাল। অক্ষরজ্ঞানহীন হলে কী হবে? প্রতিভার দিক থেকে কোনো কমতি ছিলো না তার। রাজনৈতিক বিভিন্ন পরিস্থিতির চমৎকার বিচার-বিশ্লেষণ করে সেই অনুযায়ী ভবিষ্যতের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণে তিনি ছিলেন অতুলনীয়। ধার্মিক এ সুলতান অন্যান্য ধর্মের প্রতিও ছিলেন যথেষ্ট সহনশীল।
রাজ্য জয়ের অভিযান
আদ্রিয়ানোপল বিজয়
প্রথম মুরাদের নেতৃত্বাধীন ওসমানীয় বাহিনী ১৩৬২ সালে আদ্রিয়ানোপল দখল করে নেয়। কনস্টান্টিনোপল ও থেসালোনিকার পর এটি ছিলো বাইজান্টাইনদের তৃতীয় বৃহত্তম শহর। ফলে এর দখল নিতে পারা ছিলো ওসমানীয়দের জন্য বিশেষ কিছু। পরবর্তীতে শহরটির নাম পাল্টে রাখা হয় এডার্ন।
সির্প সিন্দীর যুদ্ধ
পূর্বকথা: আদ্রিয়ানোপল ওসমানী সাম্রাজ্যের অধীনে চলে আসার ফলে কনস্টান্টিনোপল থেকে ইউরোপ যাবার একটি গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক বন্ধ হয়ে যায়। বিপুল সংখ্যক তুর্কী অভিবাসী তখন থ্রেসে বসতি গড়তে শুরু করে দেয়। সাম্রাজ্য বিস্তারের কার্যক্রম থেকে ওসমানীয়রাও থেমে থাকে নি। সার্বিয়া, বুলগেরিয়া ও বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যে তাদের অভিযান চলতে থাকে। তাদের এ ক্রমশ বিস্তৃতি বেশ ত্রাসের সঞ্চার করেছিলো বলকান অঞ্চলের রাজ্যগুলোতে।
১৩৬৩ সালে বুলগেরিয়ার শহর প্লভ্দিভ চলে আসে ওসমানী সাম্রাজ্যের আওতায়। প্লভ্দিভের একটি দুর্গের কমান্ডার কোনোক্রমে জীবন নিয়ে সার্বিয়ায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। এরপরই তিনি ক্রমবর্ধমান ওসমানী সাম্রাজ্যের বিস্তার ঠেকাতে সার্বিয়ান ও বুলগেরিয়ান কর্তৃপক্ষের কাছে জোর মিনতি জানাতে থাকেন। নাহলে যে অচিরেই দেশ দুটি ওসমানীয়দের অধীনে চলে যাবে, এ বিষয়ে সতর্ক করতেও ভোলেন নি সেই কমান্ডার।
কমান্ডারের এমন সতর্কবার্তায় কাজ হলো। দুটি দেশই একটি মিত্রশক্তি গঠন করে বলকান অঞ্চল থেকে ওসমানীয়দের হটিয়ে দিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হলো। তখন পোপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন পঞ্চম আরবান। তার উৎসাহে ওয়ালাশিয়া ও বসনিয়া এ মিত্রশক্তিতে তাদের কিছু সেনা পাঠাতে রাজি হয়। অপরদিকে বলকান অঞ্চলে ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার জন্য লড়তে থাকা হাঙ্গেরিও তাদের রাজা প্রথম লুইসের নেতৃত্বে এ অভিযানে শামিল হয়।
যুদ্ধ: ৩০,০০০-৬০,০০০ সেনা সদস্যের বিশাল এক বাহিনী রওনা হয়ে গেলো আদ্রিয়ানোপলের উদ্দেশ্যে। সুলতান প্রথম মুরাদ তখন বাইজান্টাইন সেনাবাহিনীর কাতালান সৈন্যদের সাথে বিগাতে যুদ্ধরত ছিলেন। ওসমানীয়দের অধিকাংশ সৈন্যই তখন ছিলো এশিয়া মাইনরে। রুমেলিয়ার সর্বাধিনায়ক লালা শাহিন পাশা সুলতানের কাছে তাই কিছু সেনার জন্য সাহায্য চেয়ে দূত পাঠালেন। একই সময়ে তিনি হাসি ইল্বেকে একটি বাহিনীর অধিনায়ক নিযুক্ত করলেন যাদের কাজ ছিলো সেই মিত্রবাহিনীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা এবং প্রয়োজন মতো আক্রমণ করে তাদের অগ্রযাত্রার গতিকে ধীর করে দেয়া।
এত চেষ্টা করেও দমানো যায় নি মিত্রবাহিনীকে। বলতে গেলে কোনো রকম বাধা ছাড়াই তারা মারিৎসা নদীটি পার হয়ে যায় এবং সারায়াক্পিনার গ্রামে ক্যাম্প স্থাপন করে। আদ্রিয়ানোপলের খুব কাছেই তারা এসে গিয়েছিলো। এত দূর এসেও কোনো প্রতিরোধের সম্মুখীন না হয়ে তাদের নেতারা ভেবেছিলো যে, আদ্রিয়ানোপল দখল করা হয়তো খুব একটা কঠিন কিছু হবে না। তাই সেই রাতে তারা তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়লো। এমনকি ক্যাম্পের প্রতিরক্ষার জন্য তেমন কোনো ব্যবস্থাও তারা নেয় নি। এটিই ছিলো মিত্রবাহিনীর মস্ত বড় ভুল। কারণ দূর থেকে তাদের গতিবিধি ঠিকই নজরে রেখে চলেছিলো হাসি ইল্বের নেতৃত্বাধীন বাহিনী।
শত্রুকে এতটা অরক্ষিত অবস্থায় পেয়ে আর তর সইছিলো না হাসি ইল্বের। সুলতানের কাছ থেকে সাহায্য আসার জন্য তাই আর অপেক্ষা করতে চাইলেন না তিনি। বরং রাতের আঁধার ঘনিয়ে আসার সাথে সাথেই আকিঞ্জিরা (অনিয়মিত, হালকা অস্ত্রসজ্জিত অশ্বারোহী বাহিনী) আক্রমণ করে বসলো মিত্রবাহিনীর ক্যাম্পে। মিত্রবাহিনীর বিশাল সেনাবাহিনীর বিপরীতে ওসমানীয়দের পক্ষে ছিলো মাত্র ১০,০০০ এর মতো সেনা। তাই কিছুটা কৌশলের আশ্রয় নিলেন হাসি ইল্বে। তিনি তার বাহিনীকে দুটো মশাল বহন করে আক্রমণ করতে বললেন যাতে করে শত্রুরা ভাবে যে, ওসমানীয়রা বুঝি দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে আক্রমণ করেছে। আশ্চর্যজনকভাবে অধিনায়কের এ কৌশলটি কাজে লেগে গেলো। ভরপেটে, তন্দ্রাচ্ছন্ন চোখে এমন মারাত্মক আক্রমণ দেখে ভয় পেয়ে গেলো মিত্রবাহিনীর সৈন্যরা। তারা ভেবেছিলো যে, সুলতান মুরাদ বুঝি বিশাল বড় এক বাহিনী নিয়ে তাদের আক্রমণ করেছেন। এ ভয়ে তারা যে পথ ধরে এসেছিলো, সেই পথ ধরেই আবার পালাতে শুরু করলো। পলায়নপর সৈন্যদের এক বড় অংশ মারিৎসা নদীতে ডুবে মারা যায়, যাদের অধিকাংশই ছিলো সার্বিয়ান।
ফলাফল: হাসি ইল্বের অসাধারণ রণকৌশলে এ যুদ্ধে জয়লাভ করে ওসমানীয় বাহিনী। তাদের প্রায় ১,০০০ সেনা নিহত হয় এ যুদ্ধে। অপরদিকে মিত্রবাহিনীর প্রায় ৮,২৫০ জন সেনা নিহত হয়েছিলো। কিন্তু আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো, অসাধারণ রণনৈপুণ্য প্রদর্শনের পরও এরপর মাত্র এক বছরের মতো পৃথিবীর আলো-বাতাস গ্রহণ করতে পেরেছিলেন হাসি ইল্বে। কারণ তার এ দক্ষতায় ঈর্ষান্বিত হয়ে লালা কামাল পাশা বিষ প্রয়োগ করে তাকে হত্যা করেন। আদ্রিয়ানোপলকে এ যুদ্ধের পরই ওসমানীয় সাম্রাজ্যের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
মারিৎসার যুদ্ধ
পূর্বকথা: সির্প সিন্দীর যুদ্ধ শেষ হয়েছে প্রায় সাত বছর হতে চললো। কিন্তু সার্বিয়ানদের মনের মাঝে থাকা সেই হারের ক্ষত ততদিনেও বিন্দুমাত্র শুকায় নি।
সার্বিয়ার রাজা ভুকাশিন মৃন্য়াভ্চেভিচ চাইছিলেন স্কাডারকে (বর্তমান শ্কোডার) আবারো সার্বিয়ার সাম্রাজ্যভুক্ত করতে। এজন্য ভুকাশিন এবং তার ছেলে মার্কোর নেতৃত্বে সার্বিয়ান বাহিনী ১৩৭১ সালের জুন মাসে স্কাডারে পৌঁছে। সেখানে গিয়ে তারা জানতে পারেন যে, বিশাল এক ওসমানীয় বাহিনী পূর্ব দিক থেকে অগ্রসর হচ্ছে। এ খবর পেয়ে তারাও পূর্ব দিকে মারিৎসা নদীর দিকে যাত্রা করেন।
যুদ্ধ: ১৩৭১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ২০,০০০-৭০,০০০ সদস্যের বিশাল এক সেনাবাহিনী নিয়ে মারিৎসার তীরে জড়ো হয় সার্বিয়ান বাহিনী। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন রাজা ভুকাশিন মৃন্য়াভ্চেভিচ এবং তার ভাই ডেস্পট জোভান উগ্লয়েশা। সেই তুলনায় ওসমানীয় বাহিনী ছিলো একেবারেই ছোট। অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মতে, ওসমানীয় বাহিনীতে সেদিন মাত্র আটশোর কাছাকাছি সেনা সদস্য ছিলো। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন লালা শাহিন পাশা এবং গাজী এভ্রেনস।
সংখ্যালঘু হলেও ওসমানীয়দের রণকৌশলের কাছেই শেষ পর্যন্ত হার মানতে বাধ্য হয় সার্বিয়ানরা। শাহিন পাশার নেতৃত্বে ওসমানীয় বাহিনী রাতের আঁধারে অতর্কিত আক্রমণ চালালে পরাজিত হয় সুবিশাল সার্বিয়ান সেনাবাহিনী। যুদ্ধে রাজা ভুকাশিন এবং তার ভাই উগ্লয়েশা দুজনই নিহত হন। হাজার হাজার সার্বিয়ান সেনা সেদিন মারা পড়েছিলো সুলতান প্রথম মুরাদের বাহিনীর হাতে। মারিৎসা নদীতে ডুবেও মারা গিয়েছিলো অনেকে। হ্যারল্ড উইলিয়াম ভাজেইলের ‘হিস্টোরি অফ সার্বিয়া’ বই থেকে জানা যায় যে, মারিৎসা নদীর পানি সেদিন টকটকে লাল বর্ণ ধারণ করেছিলো।
ফলাফলঃ এ যুদ্ধের ফলে মেসিডোনিয়া এবং গ্রীসের কিছু অংশ ওসমানীয় সাম্রাজ্যের অধীনে চলে আসে। আধুনিক গ্রীসের ড্রামা, কাভালা ও সের্রাই শহরও কালক্রমে এ সাম্রাজ্যভুক্ত হয়।
প্লচনিকের যুদ্ধ
পূর্বকথা: ১৩৮১ সালের কথা। ওসমানীয় সেনাবাহিনী সার্বিয়ার পোমোরাভ্লয়ে ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহে অভিযান চালায়। সেখানে তারা হত্যা ও লুন্ঠনের লীলাখেলায় মেতে উঠেছিলো। পরবর্তীতে তারা দুব্রাভ্নিকাতে হামলা চালালে তৎকালীন সার্বিয়ান শাসক লাজার রেবেল্য়ানোভিচ তাদের পরাস্ত করেন। পরবর্তীতে আরো বড় বাহিনী নিয়ে ১৩৮৬ সালে সুলতান প্রথম মুরাদ সার্বিয়ায় আক্রমণ চালান এবং নীস শহর জয় করে নেন। কারামানিদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধেও ভাগ্য তার পক্ষে ছিলো।
এসব যুদ্ধে সার্বিয়ান বেশ কিছু সামন্ত রাজ্যের রাজারা সুলতানের বাহিনীতে তাদের সেনাদের প্রেরণ করেছিলেন। কিন্তু তার আদেশ অমান্য করে সেনারা জনসাধারণের সম্পদ লুটপাট করায় বেজায় ক্ষেপে গিয়েছিলেন সুলতান মুরাদ। বেশ কিছু সেনাকে এ অপরাধে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয় যাদের মাঝে সামন্ত রাজ্যগুলো থেকে আসা সার্বিয়ান সেনারাও ছিলো। নিজেদের সেনাদের এভাবে হারানো ব্যাপারটি সহজভাবে নিতে পারেন নি সেসব রাজ্যের রাজারা। তাই তারা নিজেদের পক্ষ পরিবর্তন করে লাজারের আনুগত্যতা মেনে নিলেন।
ওদিকে একই সময়ে শ্কোডারের এক সামন্তরাজ মুরাদকে উদ্দেশ্য করে একটি চিঠি লিখেছিলেন। চিঠিতে তিনি সুলতানের আনুগত্য মেনে নেয়ার ব্যাপারে নিজের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এমনকি তার প্রতিরক্ষার্থে সুলতান বাহিনী পাঠালে তাদের সহায়তার আশ্বাসও দিয়েছিলেন তিনি। এমন চিঠি পেয়ে সুলতান চুপ থাকতে পারলেন না। তাই আকিঞ্জি কমান্ডার কুলা শাহিন বে-কে তিনি তার দল নিয়ে সেই সামন্ত রাজ্যের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যেতে বললেন।
যুদ্ধ: শাহিন বে ২০,০০০ আকিঞ্জি সেনাকে নিয়ে সার্বিয়ায় প্রবেশ করলেন। কিন্তু সেখানে পৌঁছেই তিনি খবর পেলেন যে, তার বাহিনীকে আক্রমণ করতে একত্রিত হয়েছে সার্বিয়ার সামন্তরাজগণ। এ খবর শুনে তিনি প্লচনিকের দিকে এগিয়ে গেলেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে কোনো সৈন্য সমাবেশ দেখতে না পেয়ে তিনি ভাবলেন যে, খবরটা হয়তো গুজব ছাড়া আর কিছুই ছিলো না। ওদিকে শাহিন বে’র সাথে আসা সৈন্যদের ততক্ষণে ধৈর্যচ্যুতি ঘটে গেছে। ফলে নেতার আদেশ অমান্য করে প্রায় ১৮,০০০ সেনা পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে লুটপাট শুরু করে দিলো। শাহিন বে তার অনুগত ২,০০০ সেনাসহ রয়ে গেলেন। এখানেই মস্ত বড় ভুলটি করেছিলো ওসমানীয় সেনাবাহিনী। কারণ দূর থেকে ঠিকই তাদের উপর নজর রেখে চলেছিলো শত্রুপক্ষ।
হঠাৎ করেই ঝড়ের বেগে ৩০,০০০ শত্রু সেনা এসে চড়াও হলো ওসমানীয় বাহিনীর উপর। তাদের অধিকাংশই ছিলো অশ্বারোহী নাইট এবং তীরন্দাজ সেনা। প্রথমেই তারা চড়াও হয় শাহিন বে’র সাথে থাকা ২,০০০ সেনার উপর। শুরুতে সামান্য প্রতিরোধ গড়তে পারলেও অল্প সময়ের মাঝেই ওসমানীয়দের সেই প্রতিরোধ তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়তে থাকে। যুদ্ধে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে কোনোক্রমে জীবন নিয়ে পালাতে সক্ষম হন শাহিন বে। এরপর সার্বিয়ান বাহিনী চড়াও হয় লুটপাটে ব্যস্ত থাকা সেই ১৮,০০০ সেনার উপর। নেতৃত্বহীন, অগোছালো সেই বাহিনী কোনোকিছু বুঝে ওঠার আগেই কচুকাটা হতে শুরু করে সার্বিয়ান বাহিনীর হাতে। শেষ পর্যন্ত ২০,০০০ থেকে মাত্র ৫,০০০ ওসমানীয় সেনা প্রাণ নিয়ে বাড়ি ফিরতে পেরেছিলো। সার্বিয়ান বাহিনীর ক্ষতির পরিমাণ ছিলো খুবই কম।
প্লচনিকের এ যুদ্ধটি ঠিক কবে সংঘটিত হয়েছিলো তা নিয়ে অবশ্য ঐতিহাসিকদের দ্বিমত আছে। সিমা চির্কোভিচের মতে ১৩৮৫, জোভাঙ্কা কালিচ ও মার্কো শুইচার মতে ১৩৮৬ এবং কামাল নামিকের মতে ১৩৮৭ সালে যুদ্ধটি হয়।
ফলাফল: এ যুদ্ধের ফলে সার্বিয়ান বাহিনী তাদের আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছিলো। বলকান অঞ্চলে ওসমানীয়দের অগ্রযাত্রাতেও এর ফলে সাময়িক ছেদ পড়ে। এ অঞ্চলে এটিই ছিলো তাদের প্রথম বড় রকমের পরাজয়। এমনকি এর ফলে মুরাদ বলকান অঞ্চলে তার অভিযান বাতিল করার কথাও ভেবেছিলেন।
ওসমানীয় বাহিনীর পরবর্তী অভিযান ছিলো বসনিয়ার বিরুদ্ধে, ১৩৮৮ সালে। এখন আসছি সেই অভিযানের কথাতেই।
বিলেচার যুদ্ধ
বসনিয়ার বিলেচা শহরে ১৩৮৮ সালের ২৭ আগস্ট বসনীয় ও ওসমানীয় বাহিনীর মাঝে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধে বসনীয় বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন ভ্লাত্কো ভুকোভিচ ও রাদিচ স্যাঙ্কোভিচ। অন্যদিকে ওসমানীয় বাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন লালা শাহিন পাশা।
যুদ্ধে সেনা সংখ্যার বিচারে পিছিয়ে ছিলো বসনীয়রাই। তাদের পক্ষে ছিলো প্রায় ৭,০০০ সৈন্য। অপরপক্ষে ওসমানীয় বাহিনীতে ছিলো প্রায় ১৮,০০০ সৈন্য। কিন্তু সৈন্য সংখ্যার আধিক্যও ওসমানীয়দের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনতে পারে নি। বরং প্লচনিকের যুদ্ধের পর এ যুদ্ধেও তারা পরাজিত হয়। শাহিন পাশা পালিয়ে জীবন রক্ষা করেন। যুদ্ধে বসনীয়দের ক্ষতির পরিমাণ নগণ্য ছিলো বলেই উল্লেখ করেছেন ঐতিহাসিকগণ।
ততদিনে বলকান অঞ্চলের অনেক এলাকাই এসে গিয়েছিলো ওসমানী সাম্রাজ্যের অধীনে। উত্তর সার্বিয়া ও বুলগেরিয়ার শাসকেরা, এমনকি জন পঞ্চম পালাইয়োলোগোসও তখন ওসমানীয়দের কর দিতে বাধ্য হন। শাসনকার্যে সুবিধার জন্য সুলতান তার সাম্রাজ্যকে আনাতোলিয়া (এশিয়া মাইনর) ও রুমেলিয়া (বলকান) এ দুটি প্রদেশে ভাগ করেছিলেন।
সুলতান প্রথম মুরাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বলা হয় ‘কসোভোর যুদ্ধকে’ । এ যুদ্ধের সৈন্য সংখ্যা, সৈন্য সমাবেশ, রণকৌশল তথা পুরো যুদ্ধ নিয়েই বিস্তারিত লেখা থাকছে ওসমানী সাম্রাজ্য নিয়ে আমাদের পরবর্তী পর্বে। ততদিন পর্যন্ত সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করে আজকের মতো এখানেই বিদায় নিচ্ছি।