দুনিয়ায় ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ের ইতিহাস বেশ পুরনো। সেই আদিকাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সারা বিশ্বজুড়ে চলছে সেই লড়াই, চলবে অনাগত ভবিষ্যতেও। অতীতে সারা পৃথিবীব্যাপী যখন রাজপরিবারভিত্তিক শাসনব্যবস্থা প্রচলিত ছিলো, তখন এমন লড়াই বেঁধেছে নিয়মিতভাবেই। পিতা-পুত্র, আপন ভাই, এমনকি স্বামী-স্ত্রীর মতো সম্পর্কের মাঝেও গড়াতো সেই লড়াইয়ের বিষবাষ্প।
রাজপরিবারে গুপ্তহত্যার এমনই কিছু রোমহর্ষক, বেদনাদায়ক ঘটনা নিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে আমাদের সিরিজ – ‘রাজপরিবারে গুপ্তহত্যা’। আজ থাকছে তারই প্রথম কিস্তি।
পঞ্চম এরিক
১২৫৯ থেকে ১২৮৬ সাল পর্যন্ত ডেনমার্কের রাজার দায়িত্ব পালন করে গেছেন পঞ্চম এরিক ক্লিপিং। ১২৮৬ সালে রহস্যজনকভাবে খুন হন এরিক।
কথিত আছে যে, এরিকের প্রণীত বিভিন্ন নীতিমালায় তার উপর চটে গিয়েছিলেন উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তারা। তারা তাকে খুনের জন্য শপথ গ্রহণ করেন! ষড়যন্ত্রকারীদের মাঝে মার্শাল স্টিগ অ্যান্ডারসন ও হালান্ডের কাউন্ট (হল্যান্ড না কিন্তু) জ্যাকব নিয়েলসন ছিলেন শীর্ষস্থানীয়। তারা রাজার সাথে বিভিন্ন সময় ঘুরতে যাওয়া রেন জনসনকে কিছু অর্থের বিনিময়ে হাত করে নিয়েছিলেন। রেনের কাছ থেকে রাজা কখন, কোথায় যেতেন সে ব্যাপারে নিয়মিত আপডেট পেত ষড়যন্ত্রকারীরা।
১২৮৬ সালের নভেম্বরে সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে শিকারে বের হয়েছিলেন রাজা। ২২ নভেম্বরের কথা; সারাদিন শিকার করে সন্ধ্যায় আর নিজেদের তাবুতে ফেরার পথ খুঁজে পেল না রাজার লোকজন। রেনের পরামর্শে রাজার লোকজন নিকটবর্তী একটি গির্জার গোলাঘরে রাতের মতো আশ্রয় নেয়। ওদিকে রাজার চলাফেরার ব্যাপারে ঠিকই তার কাছ থেকে নিয়মিত তথ্য পেয়ে আসছিলো তার বিরোধী পক্ষ। সেদিন রাতেও তারা রাজার অবস্থানের কথা জানতেন। তাই চুপিসারে অপেক্ষা করছিলেন সবাই ঘুমিয়ে যাওয়ার জন্য।
সারাদিনের ক্লান্তি শেষে তাড়াতাড়ি খাওয়াদাওয়ার পাট চুকিয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়ে, ঘুমিয়ে যান স্বয়ং রাজাও। আফসোস, বেচারা রাজা বুঝতে পারেন নি যে, সারাদিনের শিকার শেষে সেদিন রাতে তিনি নিজেও কারো শিকারে পরিণত হতে যাচ্ছেন! ফ্রান্সিস্কান ভিক্ষুদের ছদ্মবেশে ঝড়ের বেগে লুকোনোর জায়গা থেকে বেরিয়ে আসে ষড়যন্ত্রকারীরা। এরপর উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে রাজা এরিককে হত্যা করে তারা।
মোট ছাপ্পান্নবার ছুরিকাঘাত করা হয়েছিলো রাজাকে। স্টিগ অ্যান্ডারসন যখন রাজার সেনাবাহিনীর সাথে ছিলেন, তখন তার স্ত্রীর সাথে গোপনে মিলিত হতেন এরিক। এ খবর আবার জেনে গিয়েছিলেন স্টিগ। তাই আগে থেকেই রাজার উপর ক্ষোভ ছিলো তার। এজন্য আঘাতের শুরুটা তিনিই করেছিলেন বলে জানা যায়। পরদিন সকালে রাজার ক্ষত-বিক্ষত লাশ খুঁজে পায় তার লোকজন।
আল্বোইন
ষষ্ঠ শতকে ইউরোপের অন্যতম উল্লেখযোগ্য এক ব্যক্তিত্ব ছিলেন রাজা আল্বোইন। পিতার মৃত্যুর পর লম্বার্ডের সিংহাসনে বসেন তিনি। তার শাসনামলেই ইতালীর উত্তরাঞ্চল জয় করে লম্বার্ড। ৫৭২ খ্রিষ্টাব্দে নিহত হন আল্বোইন। তার মৃত্যুর ঘটনার পেছনের ইতিহাস শুনলে অবশ্য হত্যাকারীর প্রতিই সমর্থন যাবে অনেকের!
রণাঙ্গনে আল্বোইনের জুড়ি মেলা ছিলো ভার। সেই সাথে নৃশংসতায়ও সবাইকে ছাড়িয়ে যেতেন রাজা। আর শেষ পর্যন্ত এ নৃশংসতাই কাল হয়েছিলো তার জন্য। পূর্ব জার্মানির জেপিড গোত্রের বিপক্ষে জয়ের পর তাদের রাজা কুনিমুন্ডকে হত্যা করেন তিনি। তবে জয়ের আনন্দকে পরিপূর্ণতা দিতে কুনিমুন্ডের মৃতদেহকে ব্যবহার করেন তিনি, আরো ভালো করে বলতে গেলে কুনিমুন্ডের মাথাকে। কুনিমুন্ডের খুলিকে নিজের মদ্যপানের পাত্র হিসেবে ব্যবহার করতেন আল্বোইন!
কুনিমুন্ডের মেয়ে রোজামুন্ডকে জোরপূর্বক বিয়ে করেছিলেন আল্বোইন। অবশ্য সেই বিয়েও যেন ছিলো কুনিমুন্ডের প্রতি রাগ মেটানোর আরেক উপায়। কারণ প্রতিনিয়তই স্ত্রীর সাথে খারাপ ব্যবহার করতেন তিনি। পিতৃহারা রোজামুন্ড নীরবে সহ্য করে যেতেন সব। এক রাতের কথা। সেদিন ভালোই মেহমানদারির আয়োজন করা হয়েছিলো রাজদরবারে। সেখানেই ঘটে যায় এক দুঃখজনক ঘটনা। সেই রাতে তাকে জোর করে নিজের বাবার খুলি দিয়ে বানানো কাপ থেকে ওয়াইন পানে বাধ্য করেন আল্বোইন।
এ ঘটনাটি ভীষণ নাড়া দেয় রোজামুন্ডকে। এতদিন সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করে গেলেও এবার সব কিছু একেবারে সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিলো। তাই এরপর রাজাকে খুন করার পরিকল্পনা আঁটতে থাকেন তিনি।
রাজা আল্বোইনের ভাই হেলমেকিসের সাথে মনের লেনদেন চলছিলো রোজামুন্ডের। এ সুযোগকেই কাজে লাগান তিনি। আপন ভাইকে হত্যার জন্য হেলমেকিসকে রাজি করান তিনি। কিন্তু কাজটি তারা নিজেরা সরাসরি না করে বরং অন্য কাউকে দিয়ে করাতে চাচ্ছিলেন। এ লক্ষ্যে চাকরাণীর ছদ্মবেশে রাজার দেহরক্ষী পেরেদিওর সাথে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন রোজামুন্ড। এরপর তাকে ফাঁদে ফেলে এ সম্পর্ককে পুঁজি করে রাজাকে হত্যার জন্য বাধ্য করা হয়।
এরপর একদিন আসে আল্বোইনের জীবনের অন্তিম সেই দিন। সারা সকালের রাজকার্জ শেষে দুপুরে খাওয়ার পর একটু বিশ্রামের জন্য নিজের ঘরে গিয়ে শুয়েছিলেন রাজা। এমন সময়ই তার উপর আক্রমণ করে বসেন হেলমেকিস ও পেরেদিও। ওদিকে রোজামুন্ডের নির্দেশে আগে থেকেই পেরেদিও রাজার তলোয়ারটি বিছানার সাথে বেধে রেখেছিলো যাতে রাজা আত্মরক্ষার্থে সেটি ব্যবহার করতে না পারেন। শেষ পর্যন্ত নিজের ভাই আর দেহরক্ষীর মতো বিশ্বস্ত লোকের হাতেই মৃত্যু হয় আল্বোইনের।
প্রিন্স অ্যান্ড্রু
হাঙ্গেরির রাজা প্রথম চার্লসের তৃতীয় স্ত্রীর দ্বিতীয় পুত্রসন্তানের নাম ছিলো অ্যান্ড্রু। ১৩৩৪ সালে নেপল্সের রাজা রবার্টের নাতনী জোয়ানার সাথে অ্যান্ড্রুর বাগদান সম্পন্ন হয়। অ্যান্ড্রু ও জোয়ানা সম্পর্কে ছিলেন আত্মীয়। অতীতের সম্পর্কের জের ধরে অ্যান্ড্রুর আশা ছিলো যে, ভবিষ্যতে হয়তো নেপল্সের সিংহাসনে তিনিই বসতে যাচ্ছেন। কিন্তু ১৩৪৩ সালে রাজা রবার্ট মৃত্যুর আগে নাতনী জোয়ানার হাতেই নেপল্সের ভবিষ্যত নেতৃত্বের ভার তুলে দিয়ে যান। জোয়ানা রাজ্য পরিচালনায় অ্যান্ড্রুকে তার পাশে চান নি। বরং তিনি চেয়েছিলেন যে, অ্যান্ড্রু যাতে শুধু তার স্বামী হিসেবেই থাকে। ওদিকে অ্যান্ড্রুর উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিলো সিংহাসন পর্যন্ত বিস্তৃত। ফলে এখান থেকেই শুরু হয় ক্ষমতা নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সম্পর্কের টানাপোড়েন।
জোয়ানা ও অ্যান্ড্রুর দ্বন্দ্বে পরিপূর্ণ সময় কেটে যেতে থাকে দিনের পর দিন। নেপল্সের জনগণের পছন্দের তালিকাতেও ছিলেন কেবলই জোয়ানা। অ্যান্ড্রু তাদের কাছে ছিলো কেবলই এক ভিনদেশী রাজপুত্র। ১৩৪৪ সালের আগস্টে পোপ ষষ্ঠ ক্লিমেন্টের স্বীকৃতিও পেয়ে যান জোয়ানা। ফলে সিংহাসনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নিজেকে উপস্থাপনের আর কোনো ভিত্তিই অবশিষ্ট রইলো না অ্যান্ড্রুর।
নিজের জীবনের উপর হুমকির আশঙ্কা করে তাই অ্যান্ড্রু চিঠি লিখেন তার মাকে, জানান শহর ছেড়ে পালিয়ে যাবার ইচ্ছার কথা। কিন্তু তার মা এলিজাবেথ তাকে এমন কাজ করতে নিষেধ করে বরং নিজেই আসেন নেপল্সে। হাঙ্গেরী ফিরে যাবার আগে তিনি গোপনে পোপকে ঘুষ দিয়ে যান এই শর্তে যে, অ্যান্ড্রুই যে নেপল্সের সিংহাসনের প্রকৃত উত্তরাধিকারী সেই ব্যাপারটি তাকে ঘোষণা দিতে হবে। সেই সাথে বিষপ্রয়োগে কিংবা তলোয়ারের আঘাতে মৃত্যু থেকে বাঁচার জন্য মাতৃসুলভ মমতায় অ্যান্ড্রুকে একটি আংটিও দিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। আফসোস এলিজাবেথ জানতেও পারেন নি যে, তার ঘুষ প্রদানের বিষয়টি জেনে গিয়েছিলেন নেপল্সের উচ্চপদস্থ বেশ কিছু সামরিক কর্মকর্তা। তাই অ্যান্ড্রুকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে তারা আর দেরি করলেন না।
১৩৪৫ সালের ১৮ সেপ্টেম্বরের কথা। অ্যান্ড্রুর তখন কেবলই ১৭ বছরের এক যুবক। সেদিন রাতে তিনি ঘুমোবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমন সময় হঠাৎ করেই দরজা খুলে তার রুমে ঢুকে যায় একদল সশস্ত্র লোক। তারা নির্দয়ভাবে পিটিয়ে মারাত্মক আহত করে অ্যান্ড্রুকে। এরপর মৃতপ্রায় অ্যান্ড্রুকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যায় ব্যালকনিতে। সেখান থেকেই ঝুলিয়ে দেয়া হয় বেচারাকে। এভাবেই অতি অল্প বয়সে জীবন প্রদীপ নিভে গিয়েছিলো রাজপুত্র অ্যান্ড্রুর। তাকে হত্যার পেছনে যে জোয়ানার পরোক্ষ মদদ রয়েছে তা বুঝতে পেরেছিলো সবাই। তবে তিনি সেই অভিযোগ একেবারেই অস্বীকার করে জানান যে, তখন তিনি পাশের রুমে ঘুমিয়ে থাকায় ধ্বস্তাধস্তির কিছুই কানে যায় নি তার!
জোয়ানা
নামটি ঠিকই পড়েছেন। এতক্ষণ ধরে ষড়যন্ত্র করে স্বামীকে হত্যার ব্যবস্থা করা যে জোয়ানার কথা বলছিলাম, তিনি সেই একই নারী। স্বামীকে ঘাতকদের হাতে খুন করিয়েছিলেন তিনি। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস। বেচারি রাণীকেও পরবর্তীকালে সেই একই পরিণতি বরণ করতে হয়।
অ্যান্ড্রুর মৃত্যুর পর তার সাথে আসা হাঙ্গেরিয়ান সেবিকা আইজোল্ড লাশটি নিয়ে যান গীর্জায়। সেখানেই পরদিন সকাল পর্যন্ত লাশের পাশে বসে বিলাপ করতে থাকেন তিনি। একসময় হাঙ্গেরীয় নাইটরা এসে পৌঁছায়। তিনি তাদের কাছে পুরো ঘটনা খুলে বলেন, তবে হাঙ্গেরিয়ান ভাষায়, যাতে আশেপাশে থাকা নেপল্সের লোকেরা সেগুলো বুঝতে না পারে। এরপরই আর দেরি না করে তারা রওনা দেন হাঙ্গেরির উদ্দেশ্যে। সেখানে পৌঁছে রাজাকে জানানো হয় বিস্তারিত ঘটনা।
এরপর শুরু হয় হাঙ্গেরীয়দের প্রতিশোধের পালা। অ্যান্ড্রুর বড় ভাই প্রথম লুইস বেশ কয়েকবার হামলা চালান নেপল্সে। তবে জোয়ানাও এত সহজে দমে যাবার পাত্রী ছিলেন না। তাই শত আক্রমণ ও ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও সিংহাসনে টিকে থাকেন তিনি।
তবে এর মাঝেই আসলে প্রতিপক্ষ যে অন্য এক প্রতিশোধের ছক এঁকে ফেলেছে, তা বুঝতে পারেন নি জোয়ানা। জোয়ানার দূর সম্পর্কের আত্মীয় তৃতীয় চার্লসকে হাত করে ফেলেছিলো হাঙ্গেরিয়ান রাজ পরিবার। তাদেরই প্ররোচনায় ১৩৮০ সালে নেপল্সে আক্রমণ করে জোয়ানাকে বন্দী করেন চার্লস। সেই সাথে চার্লসের পক্ষে ছিলেন গীর্জার বিবাদমান দুই পোপের একজন। এ ব্যাপারটিও তাকে প্রেরণা যুগিয়েছিলো এমন দুঃসাহসিক কাজ করতে।
বন্দী জোয়ানাও হাল ছেড়ে দেন নি। মুক্তি পাবার বিভিন্ন উপায় প্রতিনিয়তই খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন তিনি। একসময় মাথার মাঝে বিচিত্র এক বুদ্ধি আসে তার। পরিকল্পনা মোতাবেক তিনি ঘোষণা দেন যে, ফ্রান্সের রাজপুত্র লুইসকে তিনি দত্তক নিচ্ছেন এবং লুইসই হবেন নেপল্সের পরবর্তী রাজা!
নতুন মায়ের এমন বিপদ এবং সাম্রাজ্যের আশায় লুইসও আর দেরি করলেন না। বিরাট এক ফরাসী বাহিনী জড়ো করে ছুটলেন নেপল্সের উদ্দেশ্যে, উদ্দেশ্য মাকে মুক্ত করা। কিন্তু আফসোস! এর আগেই চার্লসের লোকেরা খুন করে বসে জোয়ানাকে (১৩৮২)। অবশ্য কীভাবে তাকে খুন করা হয়েছিলো সেই ব্যাপারে মতভেদ আছে ঐতিহাসিকদের মাঝে। সবচেয়ে প্রচলিত দুটি মতবাদ হলোঃ
১) জোয়ানা যখন মুরো দুর্গের গির্জায় হাঁটু গেড়ে প্রার্থনারত অবস্থায় ছিলেন, তখনই হাঙ্গেরীয় সৈন্যরা পেছন থেকে এসে তার গলায় সিল্কের দড়ি দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে টান দেয়। ফলে সেখানেই মারা যান তিনি। এ কথাটি বলেছিলেন পোপ ষষ্ঠ আরবানের কর্মচারী থমাস।
২) ওদিকে ফ্রান্সের রাজপুত্র লুইসের স্ত্রী মেরির বর্ণনা কিছুটা ভিন্ন। তার ভাষ্যমতে, জোয়ানাকে খুন করতে এসেছিলো চারজন হাঙ্গেরীয় সেনা। তারা প্রথমেই তার হাত-পা বেঁধে ফেলে। এরপর দুটো তোষকের মাঝখানে চেপে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় জোয়ানাকে।
অবশ্য হত্যার সময় কোনো প্রত্যক্ষদর্শী না থাকায় কোন বর্ণনা যে সঠিক তা যাচাইয়ের কোনো উপায় নেই।
মৃত জোয়ানার শেষ পরিণতিও ভালো হয় নি। নেপল্সে তার দেহটি কয়েকদিনের জন্য প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে রাখা হয় যাতে জনগণ তার মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারে। পোপ ষষ্ট আরবান জোয়ানাকে গীর্জা থেকে বহিষ্কৃত করায় গীর্জায় রাজকীয়ভাবে তার শেষকৃত্যানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় নি। বরং সান্তা কিয়ারা গীর্জার গভীর কুয়োর মাঝে ছুঁড়ে ফেলা হয় তার লাশ।
এভাবেই ৫৪ বছর বয়সে স্বামীর মতোই গুপ্তঘাতকদের হাতে প্রাণ হারান রাণী জোয়ানা। স্বামীর সাথে কৃতকর্মের ফলাফল? হতেও পারে!
রাজপরিবারে গুপ্তহত্যার রোমহর্ষক কিছু ঘটনা নিয়ে আজ ছিলো প্রথম পর্ব। পরবর্তী পর্ব পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে আজকের মতো এখানেই বিদায় নিচ্ছি।