Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ভালোবাসা দিবস যেভাবে এলো: সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন কি সত্যিই ছিলেন?

১৪ই ফেব্রুয়ারি এলেই আমাদের মধ্যে ভালোবাসার জোয়ার বয়ে যায়। সারা বছর জুড়ে যাকে ভালোবেসেছি, তাকে আরও একটু বেশি ভালবাসতে ইচ্ছে করে। দিন দিয়ে ভালোবাসাকে বেঁধে রাখা যায় না। বলে দেওয়া যায় না যে, এই নির্দিষ্টি একটি দিনই ভালোবাসার দিন। তবুও মানুষ ১৪ই ফেব্রুয়ারি, ভালোবাসা দিবসে, আরেকটু বেশি যেন ভালোবাসার সুরে বিভোর হয়ে থাকে। রাস্তায় ফুলের মেলা, সবার পরনে লাল জামা, মুখে হাসি- ভালোবাসা দিবসের চিরাচরিত রূপ যেন এটি।

কিন্তু কীভাবে এলো এই ভালোবাসা দিবস? কে ছিলেন এই ভালোবাসা দিবসের পেছনে? আমরা সাধারণত সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনকেই ভালোবাসা দিবসের জনক হিসেবে জানি। ইতিহাস কম নেই এর পেছনে। আছে ইতিহাসে নানা বিতর্কও। আসলেই কোনটি সত্যি? কে ছিলেন ভালোবাসা দিবসের দূত?

কীভাবে এলো এই ভালোবাসা দিবস? Image Source: frenchtoday.com

ইন্টারনেটে আপনি যেটাই জানতে চান না কেন, সেখানে সব প্রশ্নের কিছু না কিছু উত্তর পাবেন। ভালোবাসা দিবস আর সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন সম্পর্কেও অনেক তথ্য পাবেন আপনি। তবে হ্যাঁ, শুধু একজন নয়, অনেকগুলো গল্প এবং একই গল্পের অনেকগুলো সংস্করণ পাওয়া যাবে। একটি গল্পে সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন ছিলেন রোমান যাজক। তার সময়, তৃতীয় শতকে, পুরুষদের সৈনিক হিসেবে তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং বিয়েকে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। তবুও সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন গোপনে প্রেমিক-প্রেমিকাদের বিয়ে দিতে থাকেন। তার এই কাজের জন্য তাকে বন্দী হতে হয়। বন্দী অবস্থাতেই তিনি কারারক্ষীর অন্ধ মেয়ের চোখ ঠিক করে দেন। এর ফলে খ্রিস্টান ধর্ম ছড়িয়ে দেওয়া তার পক্ষে অনেক বেশি সহজ হয়। এতে করে অবশ্য আরো বেশি নির্যাতন নেমে আসে তার উপরে। মৃত্যুর আগে, ১৪ই ফেব্রুয়ারি, কারারক্ষীর মেয়েকে ‘তোমার ভ্যালেন্টাইন’ লেখা একটি চিঠি পাঠান ভ্যালেন্টাইন।

অন্য একটি গল্প অবশ্য ভিন্ন আরেক ভ্যালেন্টাইনের কথা জানায়। সেখানে ভ্যালেন্টাইন ছিলেন টেরনির বিশপ। আগের ভ্যালেন্টাইনের সময়কালেরই ছিলেন এই বিশপ। তাকেও গোপনে বিয়ে দেওয়ার জন্য এবং দেশভক্তির জন্য ১৪ই ফেব্রুয়ারি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। তবে আপনি যদি ভালোবাসা দিবসের পেছনে খুব মিষ্টি ও সুন্দর কোনো গল্পের খোঁজে থাকেন, তাহলে জেনে কষ্ট পাবেন যে, বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন কোনো গল্পের খুব একটা ভিত্তি নেই। মূলত, ভালোবাসা ও ভালোবাসা দিবস এক হয়েছিল মধ্যযুগে। ইংরেজ কবি জিওফ্রে চসারকে এক্ষেত্রে ধন্যবাদ দিতেই হয়।

আগের ভ্যালেন্টাইনের সময়কালেরই ছিলেন এই বিশপ; Image Source: www.history.com

ধর্মশিক্ষার অধ্যাপক ব্রুস ফোর্বস নিজের মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে জানান, “বিশপ ও যাজককে নিয়ে যে দুটো গল্পের কথা সবাই বলে, এই দুটো এত বেশি মিলে যায় যে, সেটা সন্দেহের উদ্রেক করে।

ভালোবাসা দিবস: প্রেম, নাকি আত্মত্যাগ?

আমরা যে সময়ের সাথে সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনকে মিলিয়ে ফেলি, সেসময় রোমে ভ্যালেন্টাইন বেশ জনপ্রিয় একটি নাম ছিল। আর এই সেইন্টকে নিয়ে এমন প্রায় ৫০টি ভিন্ন ভিন্ন গল্প রয়েছে। তবে ফোর্বসের মতে, এদের মধ্যে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে নিয়ে সবচাইতে পুরনো যে দুটো গল্প রয়েছে, পঞ্চম শতকে যার লেখা শুরু করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে অনেক বেশি মিল খুঁজে পাওয়া যায়। এই দুটি গল্পেই এমন এক ভ্যালেন্টাইনের কথা বলা হয়েছিল, যেখানে তিনি জেলে বন্দী অবস্থায় শিশুর অসুখ সারিয়েছিলেন, যার ফলে ঘরে ঘরে ধর্মীয় নানা বাণী প্রচার করার সুযোগ পান তিনি, আর এই কাজগুলোর ফলাফল হিসেবে একই বছরে তাদেরকে মেরে ফেলা হয়। এই গল্পগুলো যে প্রশ্নটি সবার মনে জাগায় সেটি হলো, এই গল্প কি একজন সেইন্টের? একই মানুষের গল্পই কি দুজন খানিকটা ভিন্নভাবে বর্ণনা করেছিলেন সেই সময়ে? আদৌ কি এই গল্পের কোনো সত্যতা আছে? ভালোবাসা নিয়ে যাদের অনেক বেশি মিষ্টি একটা প্রেমের গল্প মাথায় ঘোরে সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনকে নিয়ে, তাদের জন্য ব্যাপারটি হতাশাজনক। কারণ, এই গল্পের কোথাও প্রেম নেই। এখানে আছে শহীদ হওয়ার গল্প। ভালোবাসার কোনো ছোঁয়া যদি থেকেও থাকে, তাহলে সেটি দেশের জন্য ভালোবাসা।

লুপারক্যালিয়ার সাথে ভালোবাসা দিবসের সম্পর্ককে খন্ডন করে দেন বিশেষজ্ঞরা; Image Source: assets.community.lomography.com

মধ্যযুগ ও রেনেসাঁকালীন সময়ের সাহিত্য নিয়ে কাজ করা হেনরি কেলি বলেন, “এই দুটো গল্পই পৌরাণিক, এবং এই গল্পের সাথে প্রেমের যোগাযোগটাও আরো বেশি পৌরাণিক।” 

ভালোবাসা দিবসের সাথে লুপারক্যালিয়ার সম্পর্ক কী?

সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন ডে বা ভালোবাসা দিবসের পেছনে খ্রিস্টানধর্মের একটা বেশ বড় প্রভাব রয়েছে বলে মনে করা হয়। প্রাচীন ছুটির দিন লুপারক্যালিয়াকে বদলানোর জন্য এই নতুন দিবস প্রচলন করে তারা, এমনটাই মনে করা হয়। এর আগে লুপারক্যালিয়া উদযাপন করা হতো ১৫ই ফেব্রুয়ারি।

লুপারক্যালিয়াতে নারীরা নিজেদের নাম মাটির দলায় লিখে একটি পাত্রে রাখতেন। সেখান থেকে পুরুষদের যার ভাগ্যে যে দলা উঠতো, সেই নারীর সাথেই তার সম্পর্ক স্থাপিত হতো। তবে আরো অনেক কিছুর মতো লুপারক্যালিয়ার সাথে ভালোবাসা দিবসের সম্পর্ককে খন্ডন করে দেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ভালোবাসা দিবস ও লুপারক্যালিয়ার মধ্যে একমাত্র ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল কিছু উদযাপন। একই রকমের এই উদযাপনগুলো বাদে এই দুটো রোমান উৎসবের আরো কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিলো না। প্রাচীন লেখক প্লুটার্কের কথানুসারে, অনেক নারীই ভাবতেন যে, এই উদযাপন সন্তান জন্মদান ও অন্যান্য কাজে সাহায্য করে। তবে এই ছোটখাট যে সম্পর্কই ভ্যালেন্টাইন আর লুপারক্যালিয়ার থাকুক না কেন, এদের মধ্যে খুব বড় কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায় না। মানুষ এ নিয়ে অনেক গল্প বলে থাকলেও ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়েছে এমন লিখিত প্রমাণ প্রথম পাওয়া যায় চসারের লেখনীতেই।

চসারের লেখনীতে ভালোবাসা

১৪০০ শতকের দিকে চসারের কবিতা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে ভালোবাসা দিবস নিয়ে লিখতে শুরু করেন সবাই; Image Source: theslipperbox.com

তো, এখন প্রশ্ন হচ্ছে, চসার কীভাবে আমরা ভালোবাসা দিবস এখন যেভাবে পালন করি সেটাকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন? ১৩৭০ কিংবা ১৩৮০’র দিকে এই কবি পার্লামেন্ট অব ফাউলস (Parliament of Fowls) নামে একটি কবিতা লেখেন। সেখানে তিনি সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন্স ডে কথাটির উল্লেখ করেন। ইউরোপে ঠিক এই নির্দিষ্ট সময়ে অনেক রোমান্টিক ধারণা প্রকাশিত হয়। সাধারণত, সেসময় চসার ও অন্যান্য কবি নাইট ও ধনাঢ্য পরিবারের নারীদের মধ্যকার ভালোবাসার বর্ণনা করতেন, যাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেতো না। বেদনাদায়ক ভালোবাসার পরিণতি নিয়েই রচিত হতো লেখাগুলো। তবে চতুর্দশ শতকের দিকে চসারের কবিতা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে ভালোবাসা দিবস নিয়ে লিখতে শুরু করেন সবাই। আর সেখানেই একটা সময় যুক্ত হতে থাকেন সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন।

ভালোবাসা দিবস পালনের ব্যাপারটি তখন চসার ভেবে থাকলেও, অনেকের মতে, ইংল্যান্ডের আবহাওয়ার কারণে ভালোবাসা দিবস হিসেবে তখন ভাবা হয়েছিল ৩রা মে দিনটিকে। তবে সেসময় অন্যান্য স্থানে ১৪ তারিখকে আরো বেশি পরিচিত করে তোলে সবাই ভালোবাসার দিন হিসেবে। আর যা-ই হোক, ঠান্ডার মধ্যে খানিকটা ভালোবাসার উষ্ণতা পাওয়ার ইচ্ছা তো সবারই হতে পারে, তাই না?

এই তো ভালোবাসার ইতিহাস! এর কোনটা সত্যি, কোনটা নয়, সেটার সিদ্ধান্ত নাহয় আপনিই নিলেন। অবশ্য, ভালোবাসার ইতিহাস তো অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। ভালোবাসা দিবসে ভালোবাসুন প্রিয় মানুষকে। সেটাই সবচাইতে প্রয়োজন!

The article is written in Bengali language. It is on The source of Saint Valentine's Day. All the information sources are hyperlinked inside the article.

Feature Image: http://static1.squarespace.com

Related Articles