সিরিয়াল কিলারদের ইতিহাসে বেশ সুপরিচিত এক নাম জ্যাক দ্য রিপার। অন্যান্য অনেক সিরিয়াল কিলারের তুলনায় তার খুনের সংখ্যা ‘তুলনামূলক’ কমই ছিলো বলতে হবে। আনুমানিক পাঁচজন নারীকে খুন করেছিলো সে। তবে সংখ্যার চেয়ে খুন করার পর মৃতদেহের উপর চালানো বীভৎসতার জন্যই সে অধিক পরিচিতি পেয়েছে। মৃতদেহের গলা থেকে পেট পর্যন্ত চিরে ভেতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সরিয়ে ফেলার মতো মানসিকতাই তাকে বেশি কুখ্যাত করে তুলেছিলো। সেই সাথে কোনোদিন তাকে খুঁজে না পাওয়ার ব্যাপারটি তো ছিলো। তার নামের শেষে থাকা ‘রিপার’ অংশটি এসেছিলো মূলত মৃতদেহ চিরে ফেলার জন্যই।
তবে আজকে এমন কয়েকজন রিপার সম্পর্কে আমরা আলোচনা করতে যাচ্ছি, যাদের সামনে জ্যাককে নিতান্তই অ্যামেচার বলে মনে হবে। পার্থক্য শুধু একটাই। জ্যাকের কোনো সন্ধান পাওয়া যায় নি। আর আজকের সবারই শেষ পরিণতি হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদন্ড কিংবা মৃত্যুদণ্ডের মধ্য দিয়ে।
১. ইপসিলান্তি রিপার
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশটেনাও কাউন্টির একটি শহরের নাম ইপসিলান্তি। শহরটি মূলত ইস্ট মিশিগান ইউনিভার্সিটির জন্যই বেশি পরিচিত। তবে গত শতকের ষাটের দশকে আরেকজন ব্যক্তির কারণে পুরো যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে শহরটি বেশ আলোচিত হয়ে ওঠে। লোকটির নাম জন নরম্যান কলিন্স। ধর্ষণ ও নির্যাতন করে কোনো নারীকে হত্যা করার পর মৃতদেহকে বিকৃতকরণের মতো জঘন্য কাজ করাই ছিলো তার নেশা। আনুমানিক সাতজন নারী তার হাতে খুন হয়েছিলো। তাই একসময় সে সকলের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠে ‘ইপসিলান্তি রিপার’ নামে।
১৯৬৭ সালের ৭ আগস্ট খুঁজে পাওয়া যায় ১৯ বছর বয়সী মেরি ফ্লেসজারের গলিত মৃতদেহ। সে ছিলো কলিন্সের প্রথম শিকার। মেয়েটিকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়েছিলো। তার পা এবং আঙুলগুলোও কেটে নেয়া হয়েছিলো। শুরুতে পুলিশ এটাকে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই দেখেছিলো। কিন্তু পরবর্তী কয়েক মাসের মাঝে আরো তিন নারীর বিকৃত মৃতদেহ খুঁজে পেলে নড়েচড়ে বসে পুরো পুলিশ বিভাগই। সাথে সাথে জনমনে ছড়িয়ে পড়ে তীব্র আতঙ্ক।
কলিন্সের সাত শিকারের প্রত্যেকের গায়েই নির্যাতনের ছাপ ছিলো স্পষ্ট। ধারণা করা হয়, হত্যার আগে সবার উপরই নিজের কু-লালসা চরিতার্থ করেছিলো সে। এরপর মৃতদেহগুলো বিকৃত করায় মনোযোগ দিতো কলিন্স। সে যে জায়গায় কাউকে খুন করতো, সেখানে তাকে কবর দিতো না। বরং বেশ দূরে অন্য কোথাও নিয়ে হতভাগী নারীর দেহকে মাটিচাপা দিয়ে আসতো। ফলে তাকে ধরা আরো কঠিন হয়ে যায় পুলিশের জন্য।
১৯৬৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে জনগণ অধৈর্য হয়ে যায় পুলিশের ব্যর্থতার খবর শুনতে শুনতে। পুলিশ বিভাগও বুঝতে পারছিলো না এমন ধূর্ত একজন সিরিয়াল কিলারকে কী করে ধরা যায়। একসময় হঠাৎ করে তাদের মাথায় এক বুদ্ধি আসে। তারা ভাবলো, কলিন্স সম্ভবত তার ফেলে যাওয়া মৃতদেহগুলো চেক করতে মাঝে মাঝে আসতেও পারে। সেই আশায় তারা একটি ম্যানিকিন কিনে আনলো। ম্যানিকিন চিনতে পেরেছেন? ঐ যে মার্কেটে পোশাকের দোকানগুলোর সামনে যে ভাইয়া-আপুদের মূর্তিকে হরেক রকম পোশাক পরে বিভিন্ন ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়, তাদেরই বলে ম্যানিকিন।
কলিন্সের শেষ শিকারের নাম ছিলো কারেন সু বেইনম্যান। তার মৃতদেহ খুঁজে পেলেও সেই খবর আর জনসমক্ষে প্রকাশ করে নি পুলিশ। বরং মৃতদেহের জায়গায় সেই ম্যানিকিনটি রেখে আসে তারা। এরপর আশেপাশে সতর্ক অবস্থান নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে কলিন্সের আসার জন্য।
দুর্ভাগ্যক্রমে পুলিশের এ কৌশলটি ব্যর্থ হয়। ২৬ জুলাই মধ্যরাতে কলিন্স সেখানে ঠিকই এসেছিলো। কিন্তু যখনই সে অসঙ্গতি টের পেলো, সাথে সাথেই সেখান থেকে ছুটে পালিয়ে যায়। অবস্থানরত পুলিশ সদস্যরা তাই এবারও ব্যর্থ হলেন।
তবে শেষপর্যন্ত বিজয়ের পাল্লা পুলিশের দিকেই ঝুঁকে পড়ে। এর মূল কৃতিত্ব অবশ্য কলিন্সের আঙ্কেলকে দেয়া লাগে। এক ছুটির পর বাড়িতে এসে তিনি বেজমেন্টে রক্তের দাগ দেখতে পান। সাথে সাথেই পুলিশকে এ ব্যাপারে জানান তিনি। পরীক্ষা করে দেখা যায়, এ রক্ত বেইনম্যানের। এরপরেই সব রহস্যের জট খুলে যায়। কলিন্সের পরিচয় ফাঁস হয়ে যায় পুলিশের কাছে, সে ধরাও পড়ে যায়। বিচারে তাকে প্যারোল ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়।
২. গেইনেসভিল রিপার
এবার যাওয়া যাক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে। এখানকার আলাচুয়া কাউন্টির সবচেয়ে বড় শহরটিই হলো গেইনেসভিল। গত শতকের নব্বইয়ের দশকের এ আগস্ট মাসেই সাড়ে তেষট্টি বর্গ মাইলের শহরটির ত্রাস হিসেবে আবির্ভূত হয় এক সিরিয়াল কিলার, নাম তার ড্যানিয়েল হ্যারল্ড রোলিং।
অল্প ক’দিনের ভেতরেই পাঁচজন শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের পর খুন করে রোলিং। ঘটনাগুলো প্রকাশ পাবার সাথে সাথেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো শহর জুড়ে। আতঙ্কিত বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে বাসায় নিয়ে আসেন। বিভিন্ন এপার্টমেন্টে থাকা শিক্ষার্থীরাও আর একা একা থাকার সাহস পেত না, গাদাগাদি করে থাকতো তারা। অস্ত্রের দোকানগুলোতে বেড়ে যায় বন্দুকের চাহিদা, সেই সাথে বাড়ে তালা ও মুগুরের বিক্রি।
সবকিছুর শুরু হয় সনিয়া লার্সন ও ক্রিস্টিনা পাওয়েল নামক দুই কলেজপড়ুয়া তরুণীকে দিয়ে। আগস্টের ২৪ তারিখ রাতে তারা ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় ছিটকিনি ভেঙে ঘরের ভেতর ঢোকে রোলিং। প্রথমেই ছুরিকাঘাতে লার্সনকে খুন করে সে। এরপর পাওয়েলকে হাত-পা বেঁধে ধর্ষণ করে তাকেও খুন করে পালিয়ে যায় রোলিং। পরের রাতে তার হাতে নিহতের তালিকায় যুক্ত হয় ক্রিস্টা হয়ট নামে আঠারো বছর বয়সী এক তরুণীর নাম। হয়টকে খুন করে দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিলো রোলিং। সেই সাথে দেহটিও একেবারে দ্বিখন্ডিত করে চিরে ফেলেছিলো। দু’দিন পর ম্যানি টাবোডা নামে এক তরুণ এবং ট্রেসি পলস নামে এক তরুণীকে খুন করে সে। পলসের ভাগ্য ঠিক আগের নারীদের মতোই হয়েছিলো।
এরপরই গেইনেসভিল ছেড়ে পালিয়ে যায় রোলিং। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে আসা অন্যান্য কিছু অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় তাকে। তখনও পুলিশ জানতো না যে, রোলিংই গেইনেসভিলের সেই কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার। অবশেষে ১৯৯৩ সালের শুরুর দিকে নিজের অতীতের সকল কীর্তিকলাপ রোলিং নিজেই স্বীকার করে নেয়। পরবর্তীতে জানা যায়, ১৯৮৯ সালে লুইজিয়ানায় এক পরিবারের তিন সদস্যকেও সে-ই খুন করেছিলো।
২০০৬ সালের ২৫ অক্টোবর রোলিংয়ের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। অবসান ঘটে গেইনেসভিল রিপার নামক ভয়াবহ এক সিরিয়াল কিলারের।
৩. ইয়র্কশায়ার রিপার
মার্কিন মুল্লুক ছেড়ে এবার ইংল্যান্ডের দিকে নজর ফেরানো যাক। উত্তর ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড় কাউন্টির নাম ইয়র্কশায়ার। ১৯৭৫-৮১ সাল পর্যন্ত ১৩টি খুনের মাধ্যমে এ ইয়র্কশায়ারকেই ভীতসন্ত্রস্ত করে রেখেছিলো পিটার সাটক্লিফ নামক এক ব্যক্তি, লোকে যাকে চেনে ইয়র্কশায়ার রিপার নামে। সাটক্লিফ তার শিকারদের প্রথমে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে নিস্তেজ করে দিতো। এরপর উপর্যুপরি ছুরি কিংবা স্ক্রুড্রাইভার দিয়ে আঘাত করে খুনের কাজটি সারতো।
এমন একজন খুনীকে এতদিনেও খুঁজে না পাওয়ায় পুলিশের উপরও জনতার আস্থা উঠে যাচ্ছিলো। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো, বিভিন্ন সময়ই সন্দেহের বশবর্তী হয়ে পুলিশ সাটক্লিফকে নয়বার জেরা করেছিলো। কিন্তু কোনোবারই তারা তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। শেষপর্যন্ত অতিষ্ট হয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার পর্যন্ত বলতে বাধ্য হন, শীঘ্রই যদি কেসটির কোনো সমাধা না হয়, তাহলে তিনি নিজেই এর দায়িত্ব নেবেন।
প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্য আর সাটক্লিফের হত্যার রহস্য উন্মোচনের দায়িত্ব নেয়া লাগে নি। এর আগেই ১৯৮১ সালে অন্য একটি ছোটখাট অপরাধে পুলিশ বন্দী করে সাটক্লিফকে। পরে আস্তে আস্তে কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে আসা শুরু করে। সাটক্লিফকে যেখান থেকে ধরা হয়েছিলো, সেই জায়গায় অনুসন্ধান চালিয়ে পুলিশ হাতুড়ি, দড়ি আর ছুরি খুঁজে পায়। এমনকি একবার পুলিশ স্টেশনে টয়লেটের ট্যাঙ্কেও একটি ছুরি লুকিয়ে রেখে এসেছিলো সাটক্লিফ। পরবর্তীতে সেটারও সন্ধান পাওয়া যায়।
শাস্তি হিসেবে তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়েছে। ৭১ বছর বয়সী ইয়র্কশায়ার রিপার খ্যাত এ সিরিয়াল কিলার বর্তমানে ইংল্যান্ডের ডারহাম কাউন্টির এইচএম প্রিজন ফ্রাঙ্কল্যান্ডে বন্দী রয়েছে।
৪. জোয়েল দ্য রিপার
১৯৯৩ সালের ২৮ জুন, লাইসেন্স প্লেটবিহীন একটি মাজদা ট্রাককে যেতে দেখে সন্দেহ হয় এক ট্রাফিক পুলিশের। সাথে সাথেই ড্রাইভারকে গাড়িটি থামানোর নির্দেশ দেন তিনি। কিন্তু কে শোনে কার কথা? আসন্ন বিপদ বুঝতে পেরে ড্রাইভার বরং গতি বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু খুব বেশিদূর এভাবে যেতে পারে নি সে। একটু দূরে গিয়েই একটি খুঁটির সাথে ধাক্কা খায় গাড়িটি। ট্রাফিক পুলিশ দৌড়ে যান ট্রাকের কাছে। ভেতরে নজর দিয়েই মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে তার। সেখানে রয়েছে ২২ বছর বয়সী টিফানী ব্রেসিয়ানীর অর্ধগলিত মৃতদেহ!
এরপরই লোকটিকে গ্রেফতার করা হয়। জানা যায়, তার নাম জোয়েল রিফকিন। রিফকিনকে যখন পুলিশ জেরা শুরু করে, তখনই তারা বুঝতে পারে তারা আসলে কত বড় এক সিরিয়াল কিলারকে ধরতে পেরেছে। পুলিশের জেরার মুখে রিফকিন স্বীকার করে যে, বিগত চার বছর ধরে নিউ ইয়র্ক শহরে একের পর এক যেসব পতিতাদের বিকৃত মৃতদেহ পাওয়া যাচ্ছিলো, তার পেছনের মূল কারিগর সে-ই। এভাবে মোট সতেরজনকে খুন করেছিলো সে। ব্রেসিয়ানী ছিলো তার হাতে খুন হওয়া সতেরতম নারী।
প্রথমে গাড়িতে কোনো পতিতাকে তুলে নিতো সে, অর্থের বিনিময়ে তার সাথে মিলিত হতো, এরপরই হাত-পা বেঁধে খুন করে বসতো সেই মেয়েটিকে। তার বাড়িতে অনুসন্ধান চালিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স, অলঙ্কার, অন্তর্বাস এবং তার হাতে নিহত নারীদের দেহের নানা অংশ খুঁজে পাওয়া গিয়েছিলো। ঘরের চালায় রক্তমাখা একটি ঠেলাগাড়ি এবং মানুষের মাংস লাগা একটি করাতের সন্ধানও পায় তারা। বিচারে ২০৩ বছরের সাজা হয় রিফকিনের।
৫. বলাশিখা রিপার
এবার চলুন ঘুরে আসা যাক রাশিয়ার রাজধানী মস্কো থেকে। ১৯৮৮-৯৩, এ পাঁচ বছরে মোট ১৯ জনকে খুন করেছিলো সের্গেই রিয়াখোভস্কি। সাড়ে ছ’ফুট লম্বা এবং প্রায় ১২৭ কেজি ভরের সের্গেইয়ের আক্রমণের ধরণটাও হতো ভয়ানক। গলা টিপে কিংবা ছুরিকাঘাত করে প্রথমে কাউকে খুন করতো সে, এরপর লিপ্ত হতো মৃতদেহের সাথে যৌন সম্পর্কে! পরবর্তীতে মৃতের দেহ বিকৃত করার ব্যাপারটি তো সাথে ছিলোই। বিশাল দেহের কারণে তাকে ‘জলহস্তী’ নামেও ডাকা হতো।
সের্গেই পণ করেছিলো, পৃথিবী থেকে সমকামী আর পতিতাদের চিহ্ন চিরতরে মুছে দেবে সে। বাস্তবে অবশ্য তার হাতে নিহতদের অধিকাংশই এ দু’শ্রেণীর বাইরের মানুষ ছিলো। শৈশবে মারাত্মক মানসিক আঘাত ও সোভিয়েত শিক্ষা ব্যবস্থা তার এমন হাল করেছে- এ অজুহাত তুলে মুক্তি পেতে চেষ্টা করেছিলো সের্গেই। কিন্তু লাভ হয় নি তাতে খুব একটা। বিচারক তাকে ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুর রায় দেন। এটা শুনে সের্গেই চিৎকার করে বলেছিলো, “আমি আবার ফিরে আসবো।” পরে সাজা কমিয়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়।
২০০৫ সালে যক্ষ্মায় ভুগে পরপারে পাড়ি জমায় এ সিরিয়াল কিলার।
৬. রোস্তভ রিপার
আজকে আমরা যতজন রিপার সম্পর্কে জানলাম, তাদের মাঝে সবচেয়ে ভয়াবহ হলো রোস্তভ রিপার খ্যাত সোভিয়েত সিরিয়াল কিলার আন্দ্রেই রোমানোভিচ চিকাতিলো। ১৯৭৮-৯০ পর্যন্ত এক যুগ ধরে বিস্তৃত ছিলো তার সিরিয়াল কিলিংয়ের সময়কাল। এ সময় রেকর্ড সংখ্যক ৫২ জন তার হাতে প্রাণ হারায়। এ ৫২ জনের মাঝে ২১ জন বাচ্চা ছেলে, ১৪ জন বাচ্চা মেয়ে এবং ১৭ জন ছিলো প্রাপ্তবয়স্ক নারী। তার বিচারকার্য পরিচালনার সময় বিচারক বলেছিলেন, “জীবিতাবস্থায় জিহ্বা কামড়ে ছিড়ে ফেলা, জননাঙ্গ কেটে নেয়া এবং পেট চিরে ফেলার মাধ্যমে (চিকাতিলো) তার ভিক্টিমদের উপর নির্যাতন চালাতো।”
তার মার্ক ছিলো খুন করার পর মৃতদেহ থেকে চোখ কেটে নেয়া কিংবা দেহ কুপিয়ে ছিন্নভিন্ন করা ও চিরে ফেলা। খুন হওয়া ব্যক্তির চোখে খুনীর প্রতি শেষ মুহূর্তে যে ঘৃণা, আতঙ্ক ও অনুনয় থাকতো, তা তাকে এক অন্যরকম আনন্দ দিতো বলে জানিয়েছিলো চিকাতিলো।