১
১৫৪০ সালের ১৭ মে।
এই দিনটিতে কনৌজের যুদ্ধে খুব সহজেই মুঘল সম্রাট হুমায়ুনকে হারিয়ে দিলেন সুরি বংশের শের শাহ সুরি। একেবারে হঠাৎ করেই পতন ঘটলো পরাশক্তি মুঘল সাম্রাজ্যের। মুঘল সাম্রাজ্যের ধ্বংসস্তুপের উপরে হাসতে হাসতে আফগান পতাকা ওড়ালেন শের শাহ সুরি।
কনৌজের যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর সম্রাট হুমায়ুন কোনোমতে বেঁচে রাজধানী আগ্রায় ফিরলেন।
এদিকে কনৌজের এ ঐতিহাসিক জয়ের পর শের শাহের আফগান যোদ্ধারা হিন্দুস্তানের নানা প্রান্তে ছুটোছুটি করতে শুরু করে দিলো। কনৌজের প্রান্তর থেকে সম্রাট বেঁচে পালিয়ে গেছেন, এই তথ্যটি শের শাহ পেয়েছেন। অবশ্য সম্রাটকে হত্যা করার কোনো ইচ্ছাই তার ছিলো না। তবে তিনি চাচ্ছিলেন সম্রাট যেন কোথাও স্থির হয়ে বসতে না পেরে দৌড়ের উপর থাকে। তাই শের শাহ বরমজীদ গৌড়কে সম্রাট হুমায়ুনকে তাড়া করতে পাঠিয়ে দিলেন। সম্রাট হুমায়ুনকে এখন শান্তিমতো বসতে দেয়া মানেই নিজের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে সম্রাটের মুখে তুলে খাইয়ে দেয়া। শের শাহ এই ব্যাপারটা ভালোই জানেন।
এদিকে বিহার আর রোহতাসের ফৌজদার শুজায়ত খান ছুটলেন গোয়ালিয়র দুর্গ দখল করতে। অন্যদিকে নসীর খান ছুটলেন সম্ভলের দিকে। কনৌজের যুদ্ধে শুজায়ত খানের পুত্র মুহাম্মদ খান নিহত হয়েছিলেন। এই তথ্যটি তাকে জানানো হলো না। পাছে যদি তিনি আবার অভিযানে যাওয়ার ব্যাপারে বেঁকে বসেন!
এদিকে বরমজীদ গৌড়কে সম্রাটের পিছু পিছু তাড়া করতে পাঠিয়ে কিছুদিন পর শের শাহ নিজেই ছুটলেন আগ্রার দিকে।
চৌসার যুদ্ধে রাজকীয় মুঘল সেনাবাহিনী সম্পূর্ণরুপে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো। আগ্রায় ফিরে সম্রাট হুমায়ুন দেখলেন শের শাহের হাত থেকে আগ্রাকে রক্ষা করার মতো কোনো সৈন্যই তার হাতে মজুদ নেই। উপায় না পেয়ে তিনি দিল্লি হয়ে লাহোরের দিকে পালিয়ে গেলেন। আফগানরা কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই দিল্লি আর আগ্রা দখল করে নিলো।
সম্রাট হুমায়ুন লাহোরের দিকে পালিয়ে গেছেন শুনে শের শাহ লাহোর অভিমুখে আরেকটি অভিযান প্রেরণ করলেন। এ অভিযানের দায়িত্ব দেয়া হলো খাওয়াস খান আর বরমজীদ গৌড়কে। অন্যদিকে শের শাহ নিজে আগ্রা হয়ে গেলেন দিল্লিতে। দিল্লি থেকে তিনি মসনদ আলী ঈশা খানকে প্রেরণ করলেন সম্ভলের দায়িত্ব নেয়ার জন্য। একইসাথে তাকে কান্ত আর গোলার দায়িত্ব দেয়া হলো। এরপর শের শাহ মেওয়াতের শাসনভার হাজী খানের হাতে অর্পণ করে লাহোরের দিকে যাত্রা করলেন। সম্রাট হুমায়ুন এ সময় লাহোরে অবস্থান করছিলেন।
২
শের শাহ দ্রুত অগ্রসর হচ্ছিলেন। তিনি সিরহিন্দ দখল করে শতদ্রু নদী অতিক্রম করে ফেললেন। এরপর সিরহিন্দ থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দূরের সুলতানপুর দখল করলেন। এদিকে শের শাহ সুলতানপুর দখল করে নিলে লাহোরে অবস্থানরত মুঘলরা পালাতে শুরু করলো।
১৫৪০ সালের ৩১ অক্টোবর কামরান মির্জা, আসকারি মির্জা, হিন্দাল মির্জা, আমির আর নিজের হেরেম নিয়ে সম্রাট হুমায়ুন লাহোর ত্যাগ করলেন। সম্রাট রাভি নদী আর চেনাব নদী পাড়ি দিয়ে হাজারা হয়ে খুশাবে গিয়ে পৌছালেন।
খুশাব থেকে কামরান মির্জা আসকারি মির্জাকে নিয়ে কাবুলের দিকে চলে গেলেন। অন্যদিকে সম্রাট হুমায়ুন ১৫৪০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঝিলাম নদী পাড়ি দিয়ে উছ এবং পরে উছ থেকে সিন্ধুর দিকে যাত্রা করলেন।
এদিকে শের শাহ দ্রুত খুশাব অধিকার করে নিলেন। খুশাব থেকে কুতুব খান, খাওয়াস খান, বরমজীদ গৌড়, হাবিব খান, হাজী খান, সরমস্ত খান, জালাল খান জালোয়ী, ঈশা খান নিয়াজী প্রমুখ আফগান জেনারেলদের অধীনে একটি বিশাল আফগান বাহিনী প্রেরণ করলেন সম্রাট হুমায়ুনকে তাড়া করার জন্য। তবে এই বাহিনীকে নির্দেশ দিয়ে দিলেন তারা যেন সম্রাটের সঙ্গে কোনো সংঘর্ষে না জড়ায়। বরং তাদের উদ্দেশ্য হবে সম্রাটকে সীমানার বাইরে বের করে দেয়া।
এদিকে শের শাহ যখন খুশাবে অবস্থান করছিলেন তখন একে একে ইসমাইল খান, ফতেহ খান, গাজী খান বালুচিসহ স্থানীয় বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ শের শাহের আনুগত্য স্বীকার করে নিলো। তবে গাক্কার উপজাতির নেতা সারঙ্গ গাক্কার শের শাহের আনুগত্য স্বীকার না করে বিদ্রোহ ঘোষণা করলো। গাক্কারদের দমন করতে রোহতাসে নতুন একটি দুর্গ নির্মাণ করা হলো। এরপর তড়িৎ গতিতে অভিযান চালিয়ে গাক্কার বিদ্রোহ সমূলে উৎপাটন করা হলো।
৩
গাক্কারদের বিরুদ্ধে অভিযান চলাকালেই শের শাহ সংবাদ পেলেন বাংলায় তার নিয়োজিত প্রাদেশিক শাসক খিজির খান বাংলার সাবেক শাসক সুলতান গিয়াস উদ্দিন মাহমুদ শাহের কন্যাকে বিয়ে করে ফেলেছেন। এমনকি তিনি চালচলনেও রাজকীয় ভাবভঙ্গী অনুকরণ করতে শুরু করে দিয়েছিলেন। শের শাহ খিজির খানের এসব কর্মকান্ডে চরম বিরক্ত হলেন। তিনি খিজির খানের কাজকর্মকে সুপ্ত বিদ্রোহ হিসেবে বিবেচনা করলেন। আর তাই বিদ্রোহ পূর্ণরুপে মাথাচারা দিয়ে উঠার আগেই তিনি খিজির খানকে একটি শিক্ষা দিতে চাইলেন।
গাক্কার অভিযান চালিয়ে যাওয়ার জন্য খাওয়াস খান, হয়বত খান নিয়াজী, ঈশা খান নিয়াজীকে রোহতাস দুর্গে রেখে ১৫৪১ সালের জুনের শেষের দিকে শের শাহ বাংলা অভিমুখে যাত্রা করলেন।
শের শাহ দ্রুত বাংলায় পৌঁছালেন। খিজির খান বৈরাক শের শাহকে রাজকীয় সম্মান প্রদান করলেন। তবে তাতে শের শাহের মন গললো না। তিনি খিজির খানের কর্মকান্ডের ব্যাখ্যা চাইলেন। খিজির খান সন্তোষজনক কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারলেন না। খিজির খানকে বন্দী করে খিজির খানের স্থলে কাজী ফজিলতকে বাংলার শাসক হিসেবে নিয়োগ দিলেন।
শের শাহ এ সময় প্রায় চার মাস বাংলায় অবস্থান করেছিলেন। এ সময় তিনি বাংলার প্রশাসন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজালেন। সেই সাথে বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কাজ করলেন।
শের শাহ প্রথমেই বাংলাকে বেশ কয়েকটি অংশে বিভক্ত করে প্রতিটি অংশের জন্য একজন করে প্রশাসক নিয়োগ করলেন। নদীমাতৃক বাংলার পূর্ণ নিরাপত্তা পদাতিক বাহিনী দিয়ে করা সম্ভব নয় এটা বুঝে তিনি একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী গঠনের উদ্যোগ নিলেন। যাতায়াতের জন্য নির্মাণ করালেন প্রয়োজনীয় রাস্তাঘাট। রাজস্ব আদায়ে সকল অনিয়ম আর দুর্নীতি রোধ করতে ভূমি জরিপের ব্যবস্থা করলেন। সেই সাথে নতুন অনেক জমিদারী সৃষ্টি করে তাতে পাঠান আর রাজপুতদের নিয়োগ দিলেন। উদ্দেশ্য ছিলো পূর্বের হিন্দু জমিদারদের ক্ষমতা হ্রাস করা। কারণ তারা যেকোনো মুহূর্তেই সংঘবদ্ধ হয়ে বাংলার নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলে দিতে সক্ষম ছিলো।
৪
প্রায় চার মাস বাংলায় অবস্থান করার পর ১৫৪২ সালের জানুয়ারি মাসের দিকে শের শাহ বাংলা ত্যাগ করে আগ্রা অভিমুখে যাত্রা করেন। আগ্রায় এসেই তিনি সুজায়ত খানের নিকট থেকে একটি জরুরী পত্র পেলেন।
পত্রে সুজায়ত খান জানিয়েছেন, মুহাম্মদ কাসিম গোয়ালিয়র দুর্গ শের শাহের নিকট সমর্পণ করতে রাজি হয়েছে। তবে গোয়ালিয়র দুর্গের এই মুঘল জেনারেল কিছু শর্ত দিয়েছেন। এক, তিনি স্বয়ং শের শাহের হাতে দুর্গ সমর্পণ করবেন। দুই, গোয়ালিয়রের মুঘল সৈন্যদের হত্যা করা যাবে না। দুর্গ সমর্পণের পর তাদের অবশ্যই মুক্তি দিতে হবে। উপরন্তু যেসব মুঘল সৈন্য শের শাহের অধীনে সেনাবাহিনীতে চাকরি করতে ইচ্ছুক হবে, তাদের শের শাহের বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করে নিতে হবে।
শের শাহ সুজায়ত খানকে জানালেন, তিনি মালব অঞ্চলে অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেদিকে যাওয়ার পথে তিনি গোয়ালিয়র হয়ে যাবেন।
৫
শের শাহ যখন মালব অঞ্চলে অভিযানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন, তখন মালব অঞ্চল বিভিন্ন রাজ্যে বিভক্ত হয়ে ছিলো। এ সময় উজ্জয়নী, সারঙ্গপুর আর মান্ডু শাসন করছিলেন কাদির শাহ, ভূপত শাহের শিশুপুত্র রাজা পরাবতের রাজপ্রতিনিধি হিসেবে রাইসিন আর চান্দেরী শাসন করছিলেন পূরণ মল। সিকান্দার খান মিয়ানা ছিলেন সিওয়াসের মসনদে।
মালব অভিযানে বের হয়ে শের শাহ প্রথমেই গেলেন গোয়ালিয়রে। সম্রাট হুমায়ুনের আমির মুহাম্মদ কাসিম শের শাহের আনুগত্য স্বীকার করে দুর্গ সমর্পণ করলেন। তবে এতে কোনো সন্দেহ নেই, কোনো উপায় না পেয়ে নিজের জীবন আর সঙ্গে থাকা মুঘল যোদ্ধাদের জীবন রক্ষার্থেই তিনি কাজটি করলেন।
গোয়ালিয়র ত্যাগ করে শের শাহ প্রথমেই গেলেন গাগরুনে। এখান থেকে পূরণ মলকে রাজকীয় ফরমান পাঠালেন শের শাহ, পূরণ মল যেন দ্রুত তার সাথে দেখা করেন। পূরণ মল ছুটে আসলেন। শের শাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে উন্নতমানের একশত ঘোড়া আর রাজকীয় খেলাত প্রদান করলেন।
শের শাহ এরপর গেলেন সারঙ্গপুরে। সারঙ্গপুর, উজ্জয়নী আর মান্ডুর শাসক কাদির শাহ ছুটে এসে শের শাহের আনুগত্য স্বীকার করলেন। অবশ্য শের শাহের আনুগত্য স্বীকার করা ছাড়া কারো কোনো উপায়ই ছিলো না।
আনুগত্য স্বীকারের পর কাদির শাহকে আফগান সেনাবাহিনী পরিদর্শন করার সুযোগ দেয়া হলো। আফগান বাহিনীর আকার, নিয়মানুবর্তীতা, কষ্টসহিঞ্চুতা, শৃঙ্খলা আর আনুগত্য দেখে তিনি বিস্ময়াভিভূত হয়ে পড়লেন। নিজ মুখেই স্বীকার করলেন, এমন সুশৃঙ্খল আর অনুগত সেনাবাহিনী তিনি জীবনেও দেখেননি। কাদির শাহ যখন আফগান বাহিনীর এমন প্রশংসা করছিলেন, তখন শের শাহের কী অনুভূতি হয়েছিলো কে জানে!
সারঙ্গপুরের কাজ শেষে শের শাহ তাবু ফেললেন উজ্জয়নীতে। সিওয়াসের শাসক সিকান্দার খান মিয়ানার ছুটে এসে শের শাহের আনুগত্য স্বীকার করা ছাড়া আর কোনো উপায় রইলো না।
এভাবে একে একে সমগ্র মালব অঞ্চল শের শাহের সামনে মাথা নিচু করতে বাধ্য হলো। মালব অঞ্চলের দায়িত্ব অনুগত জেনারেলদের হাতে দিয়ে ফিরতি পথ ধরে ১৫৪২ সালে আগ্রায় ফিরলেন শের শাহ।
৬
আগ্রায় গিয়ে শের শাহ পেলেন আরেক দুঃসংবাদ। কয়েক মাস আগে যোধপুরের রাজা রাঠোর মালদেব নাকি সিন্ধুতে নির্বাসিত মুঘল সম্রাট হুমায়ুনকে যোধপুরে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সম্রাট হুমায়ুন সেই আমন্ত্রণ রক্ষা করে নাকি এখন যোধপুরে এসে ঘাঁটিও গেড়ে বসে আছেন। ঝানু রাজনীতিবিদ আর সময়ের অপ্রতিদ্বন্দ্বী জেনারেল শের শাহের বুঝতে কোন অসুবিধা হলো না যে মালদেব আসলে কী খেলাটা খেলতে চাচ্ছেন। রাঠোর মালদেব তার এক চালেই নবগঠিত সুরি সাম্রাজ্যের ভিত্তিকে দুর্বল করে দিতে চাচ্ছেন।
দিল্লি থেকে যোধপুরের দুরত্ব মাত্র ৬০০ কিলোমিটারের মতো। দিল্লি থেকে ৬০০ কিলোমিটার দূরে সম্রাট হুমায়ুন কেন এসেছেন তা পাগলেও বুঝবে।
শের শাহ কোনো কূটনীতি বা দূত প্রেরণের ধারে কাছে দিয়ে না গিয়ে আগ্রা থেকে সেনাবাহিনীসহ সাড়ে চারশ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে নাগৌরে গিয়ে উপস্থিত হলেন। যোধপুর থেকে নাগৌরের দূরত্ব মাত্র দেড়শ কিলোমিটার। শের শাহ মালদেবের নাকের ডগায় এসে উপস্থিত হলেন মাত্র। নাগৌড় থেকে এবার শের শাহ মালদেবের নিকটে পত্র লিখলেন। পত্রে তিনি সোজাসাপ্টাভাবেই বললেন, হয় আপনি হুমায়ুনকে যোধপুর থেকে বিতাড়িত করুন। নয়তো আফগানরা তাকে বিতাড়িত করবে। আর আপনি নিজে যদি সম্রাটকে বিতাড়িত করেন, তাহলে নাগৌড় আর আলোয়ার আপনাকে দিয়ে দেয়া হবে।
শের শাহের এমন হুমকি ধামকি আর সামরিক তৎপরতার পর সম্রাট হুমায়ুন আর যোধপুরে অবস্থান করতে পারলেন না। শীঘ্রই তাকে যোধপুর ছেড়ে অন্যত্র যাত্রা করতে হলো। জটিল এক রাজনৈতিক আর সামরিক সমস্যার খুব সহজ সমাধান করে ফেললেন শের শাহ।
৭
এদিকে শের শাহ মালব অঞ্চল ত্যাগ করার পরেই অঞ্চলটি আবারো অশান্ত হয়ে উঠলো। শের শাহ মালবে থাকতেই তো কাদির শাহ শের শাহকে ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। যদিও প্রথমে তিনি শের শাহের আনুগত্য স্বীকার করেছিলেন।
অন্যদিকে, শের শাহ আগ্রায় চলে যাওয়ার পর সিকান্দার খান মিয়ানাও বিদ্রোহ করার চেষ্টা করতে যেয়ে বন্দী হন। সিকান্দার খান মিয়ানার ছোট নাসির খান ভাইকে মুক্ত করতে প্রায় ৬,০০০ সৈন্য নিয়ে নীলগড় নামক স্থানে সুজায়ত খানের উপর ঝাপিয়ে পড়লেন।
তবে নাসির খান যুদ্ধে শোচনীয় পরাজয় বরণ করলেন। তার বাহিনীর প্রায় ২০০টি রণহস্তী সুজায়ত খানের হাতে চলে এলো। সুজায়ত খান এ যুদ্ধে জয়ী হলেন বটে, তবে যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি মারাত্মক আহত হলেন।
নাসির খানের পরাজয়ের পর খেলায় ময়দানে উদয় ঘটলো পলাতক কাদির শাহের। উজ্জয়নী, মান্ডু আর সারঙ্গপুর উদ্ধার করতে প্রথমেই তিনি মান্ডু দুর্গে হাজী খানকে অবরোধ করলেন। কাদির শাহের অবরোধের কথা শুনে আহত অবস্থাতেই সুজায়ত খান মান্ডুর দিকে ছুটলেন।
যুদ্ধের ময়দানে সুজায়ত খান আর কাদির শাহ মুখোমুখি হলেন। দুর্ধর্ষ আফগান বাহিনী তাদের সামর্থ্যের সবটুকু ঢেলে দিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনলো। পরাজিত হয়ে কাদির শাহ আবারো পালালেন। এবার তিনি গেলেন গুজরাটের দিকে।
আগ্রায় বসে মালবের এসব খবর পাচ্ছিলেন শের শাহ। তিনি সুজায়ত খানের আন্তরিকতা আর সক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে সমগ্র মালবের শাসনভার তার উপর অর্পণ করলেন। এর কিছুদিন পরেই পূরণ মলের বিদ্রোহের সংবাদ পেলেন শের শাহ।
শের শাহ বুঝলেন তাকে আরেকবার মালব অঞ্চল থেকে ঘুড়ে আসতে হবে!
মুঘল সিরিজের পূর্বে প্রকাশিত সবগুলো পর্ব একসাথে পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
তথ্যসূত্র
১। তারিখ-ই-শের শাহ; মূল: আব্বাস সারওয়ানী, অনুবাদ গ্রন্থের নাম: শের শাহ, অনুবাদক: সাদিয়া আফরোজ, সমতট প্রকাশনী, প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারী ২০১৫
২। মোগল সম্রাট হুমায়ুন, মূল (হিন্দি): ড হরিশংকর শ্রীবাস্তব, অনুবাদ: মুহম্মদ জালালউদ্দিন বিশ্বাস, ঐতিহ্য প্রকাশনী, প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারী ২০০৫
৩। হুমায়ুননামা, মূল: গুলবদন বেগম, অনুবাদ: এ কে এম শাহনাওয়াজ, জ্ঞানকোষ প্রকাশনী, প্রকাশকাল: জানুয়ারী ২০১৬
ফিচার ইমেজ: Wikimedia Commons