সদ্য পাশ করা তরুণী ডাক্তার ওয়াসানের কর্মস্থল ছিল ইরাকের মসুলের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত জুমহুরিয়া হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে। কিন্তু ২০১৪ সালের জুনের প্রথম সপ্তাহে আইএস যখন প্রথমবারের মতো মসুল আক্রমণ করে, তখন তিনি সবকিছু ছেড়ে ছুটে গিয়েছিলেন হাসপাতালের জরুরী বিভাগে। আইএসের দফায় দফায় আত্মঘাতী বোমা হামলা এবং এলোপাথাড়ি গুলিতে আহত বেসামরিক জনগণের আর্ত চিৎকারে হাসপাতালের জরুরী বিভাগের বাতাস যখন ভারী হয়ে উঠছিল, তখন কোনো অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও তাদের সেবায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তার দায়িত্ববোধ থেকে। অভিজ্ঞতার ঘাটতিটুকু পূরণ করে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন তার আন্তরিকতা এবং ভালোবাসা দিয়ে।
মসুল রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল ইরাকি সেনাবাহিনীর অন্তত ৩০,০০০ সেনা। আর বিপরীত দিকে আক্রমণকারী আইএস জঙ্গীদের সংখ্যা ছিল মাত্র ১,৫০০। কিন্তু তাদের একের পর এক আত্মঘাতী বোমা হামলার কাছে অসহায় হয়ে পড়েছিল ইরাকি বাহিনী। আইএসের সামনে তারা তেমন কোনো বাধাই সৃষ্টি করতে পারেনি। অসহায়ভাবে একের পর এলাকা ছেড়ে দিয়ে পিছু হটে আসতে থাকে তারা। তাদের আহত সেনাদের এবং বেসামরিক জনগণের ভীড়ে পরিপূর্ণ হয়ে উঠতে থাকে হাসপাতালের প্রতিটি কোণা। ইমার্জেন্সি ওয়ার্ড ছাড়িয়ে মুমূর্ষু রোগীদের স্থান হতে থাকে অন্যান্য ওয়ার্ড এবং করিডোরে।
হাসপাতালে ওয়াসান এবং তার সহকর্মীদের বিন্দুমাত্র বিশ্রাম নেওয়ার অবকাশ ছিল না। তার দুশ্চিন্তাগ্রস্ত বাবা বারবার তার মোবাইলে ফোন করতে থাকেন। তাকে বাসায় ফিরে আসার জন্য অনুরোধ করতে থাকেন। কিন্তু যুদ্ধাহত রোগীদেরকে মৃত্যুর মুখে ফেলে রেখে বাসায় যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। অন্যান্য ডাক্তার এবং নার্সদের মতো তিনিও হাসপাতালেই রাত কাটাতে শুরু করেন। দিন-রাত ২৪ ঘন্টা পালা করে ডিউটি করতে থাকেন তারা।
বেশিদিন তাদের পক্ষে হাসপাতালে থাকা সম্ভব ছিল না। শীঘ্রই আইএস হাসপাতালের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। তাদের নিক্ষেপ করা মর্টার শেলগুলো যখন এলোপাথাড়ি হাসপাতালের আশেপাশে এসে পড়তে শুরু করে, তখন হাসপাতাল ছেড়ে পালানো ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না। ডাক্তার, নার্স এবং রোগীরা একসাথে গাদাগাদি করে অ্যাম্বুল্যান্সে চড়ে ব্রিজ পার হয়ে শহরের পূর্ব প্রান্তে গিয়ে আশ্রয় নেয়। সেখানে পৌঁছে, জুনের ১০ তারিখে তারা শুনতে পায় অবিশ্বাস্য সংবাদটি। মসুলের গভর্নর এবং উচ্চপদস্থ জেনারেলরা সবাই মসুল ছেড়ে পালিয়ে গেছে। মাত্র ৬ দিনের যুদ্ধে পতন ঘটেছে ইরাকের তৃতীয় বৃহত্তম শহর মসুলের।
তার বাবা আবার ফোন করলেন। তিনি পরিবারের সবাইকে নিয়ে মসুল ছেড়ে কুর্দি স্বায়ত্বশাসিত শহর ইবরিলে চলে যেতে চান। কিন্তু ওয়াসান তার রোগীদেরকে ফেলে পালাতে চাইলেন না। তিনি উত্তর দিলেন, “তোমরা চলে যাও। শুধু আমার পাসপোর্টটা রেখে যেও। আমি রোগীদের জীবন বাঁচানোর শপথ নিয়েছি। বিপদের সময় তাদেরকে ফেলে চলে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না।” বাধ্য হয়ে তার বাবা শহর ছাড়ার পরিকল্পনা বাদ দিয়ে পরিবারের সবার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শহরেই রয়ে গেলেন।
ইরাকি সেনাবাহিনী পালিয়ে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে শহরের পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসতে থাকে। ওয়াসানরা পুনরায় হাসপাতালে ফিরে আসেন। তিনদিন পর হাসপাতালে প্রবেশ করে মেশিনগান হাতে, কালো আলখাল্লা পরা, কালো কাপড়ে মুখ ঢাকা একদল লোক। হাসপাতালের নিয়ন্ত্রণ নেয় তারা। আইএসের দিওয়ান আল-সাহ্হা তথা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে নতুন জীবন শুরু হয় ওয়াসান এবং সহকর্মী ডাক্তার-নার্সদের।
আইএসের অধীনে ওয়াসানের জীবনযাপনের বর্ণনা উঠে আসে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের একটি প্রতিবেদনে। গার্ডিয়ানের ইরাকি সাংবাদিক গেইথ আব্দুল আহাদকে ওয়াসান জানান, হাসপাতালে দুই ধরনের ব্যবস্থা ছিল। যারা আইএসের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করত, শপথ গ্রহণ করে তাদের সাথে যোগদান করত, তাদের জন্য ছিল সেরা চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং সব ধরনের ওষুধের নিশ্চিত সরবরাহ। আর সাধারণ নাগরিক, যাদেরকে বলা হতো ‘আওয়াম’, তাদেরকে কালোবাজার থেকে ওষুধ কিনতে হতো চড়া মূল্যে।
“First thing Wassan did when Iraqi soldiers entered was to go to the house of one of her cancer patients, an 8-year-old boy suffering leukaemia and drive him to Erbil to save his life: he hadn’t taken medication for 3 weeks. A week later child died.” https://t.co/JEPV1IREXu
— Ivan M. García (@ivanmgarcia77) February 1, 2018
ওয়াসান নিজের পরিবারের সাথে শহর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে পেছনে রয়ে গিয়েছিলেন মানবতার সেবা করার জন্য। তার নৈতিকতা তাকে শিক্ষা দিয়েছিল সব রোগীকে সমান চোখে দেখতে। কিন্তু আইএসের অধীনে শুধু আইএসের যোদ্ধাদেরকেই সেরা চিকিৎসা সেবা দিতে তাদেরকে বাধ্য করা হতো। এমন চিকিৎসকের জীবন ওয়াসান কখনো চাননি। তার জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠতে থাকে। তিনি সিদ্ধান্ত নেন শহর ছেড়ে বেরিয়ে যাবেন।
কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। শহরের সর্বত্র আইএসের নিয়ন্ত্রণ জেঁকে বসেছে। বিভিন্ন সরকারী চাকরিজীবি, শহরটিকে চালু রাখার জন্য যাদের সেবা অপরিহার্য, তাদের শহর ত্যাগের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে। ওয়াসান এক স্মাগলারের সাথে যোগাযোগ করলেন টাকার বিনিময়ে তাকে নিরাপদে শহর থেকে বের করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু সে স্মাগলার আইএস সদস্যদের হাতে ধরা খেয়ে যায়। আইএসের হিসবা তথা নৈতিক বিভাগের নারী পুলিশরা ওয়াসানের বাসায় অভিযান চালায়। তারা তার মোবাইল ফোন জব্দ করে নিয়ে যায় এবং তাকে জানায়, তিনি তাদের নজরদারিতে আছেন।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও ওয়াসানকে অবরুদ্ধ মসুল নামক কারাগার সদৃশ শহরে থেকে যেতে হলো। পরপর তিনদিন কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকলেই সেটাকে পলায়ন হিসেবে ধরে নেওয়া হতো, যার শাস্তি ছিল বন্দীত্ব বরণ। কাজেই হাসপাতালের চাকরি অসহ্য মনে হলেও নিয়মিত হাজিরা দিয়ে চাকরি করে যেতে হলো তাকে। এর মধ্য দিয়েই ওয়াসানদের দুর্বিষহ জীবন বয়ে যেতে লাগলো।
জীবন যেন অসহনীয় না হয়ে যায়, সেজন্য ওয়াসান এবং তার সহকর্মীরা সুযোগ পেলেই পূর্বের মতো স্বাভাবিক জীবনযাপনের চেষ্টা করতেন। তারা তাদের নারী সহকর্মীদের জন্মদিন বা বিয়ে উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন। ডিজে পার্টিরও আয়োজন করতেন মাঝে মাঝে, কিন্তু অত্যন্ত সাবধানে এবং নিচু শব্দে গান বাজাতেন, যেন আইএসদের কানে না যায়। হাসপাতালের সিকিউরিটি ক্যামেরার চোখ এড়িয়ে অধিকাংশ সময়ই তারা পার্টিগুলোর আয়োজন করতেন ক্যানসারে আক্রান্ত শিশুদের বিভাগে। হাসপাতালের সেই ক্যানসারে আক্রান্ত শিশুদের সাথে ওয়াসানদের একধরনের আত্মীক বন্ধন তৈরি হয়ে যেতে থাকে ধীরে ধীরে।
প্রচুর মানুষ পালিয়ে যাওয়ায় শহরের অনেক দোকানপাটই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু একদিন ওয়াসানের চোখে পড়ল, একটি কেকের দোকান তখনও খোলা ছিল। তিনি দোকানে গিয়ে তার ক্যানসারে আক্রান্ত ক্ষুদে বন্ধুদের জন্য ‘স্পঞ্জ বব’ এর আকারের একটি কেকের অর্ডার দিলেন। স্পঞ্জ বব হচ্ছে জনপ্রিয় একটি কার্টুন চরিত্র, যে টার্মিনাল ক্যানসারে আক্রান্ত। কিন্তু দোকানদার তাকে জানালো, কেকের উপরেও যেকোনো ধরনের প্রাণীর চিত্র আঁকা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
প্রতিবাদ করার কোনো উপায় ছিল না। ওয়াসান দোকানদারের ধরিয়ে দেওয়া চারকোণা সাদামাটা একটি কেক নিয়েই ফিরে এলেন এবং শিশুদের সাথে ভাগাভাগি করে তা খেলেন। শিশুদের সামনে তার মুখে ছিল কৃত্রিম হাসি, কিন্তু অন্তরে ছিল তীব্র হতাশা। তার সেই হতাশা ধীরে ধীরে ক্ষোভে রূপ নিতে শুরু করে, যখন ওষুধের অভাবে এই শিশুরা একে একে মৃত্যুবরণ করতে শুরু করে। আইএসের দুঃশাসন শেষ হওয়া পর্যন্ত ক্যানসার ওয়ার্ডের অর্ধেক শিশুরই মৃত্যু ঘটেছিল। ওয়াসান সিদ্ধান্ত নিলেন, এভাবে জীবন চলতে পারে না। তাকে বিদ্রোহ করতে হবে, নীরব বিদ্রোহ।
শহরের চিকিৎসার সুযোগ বঞ্চিত স্থানীয় জনগণের জন্য ওয়াসান তার নিজের বাড়িতে একটি বিকল্প ক্লিনিক গড়ে তুলতে শুরু করেন। তার পরিচিত ডাক্তার-নার্সদের মাধ্যমে এবং বিশ্বস্ত কিছু ফার্মাসিস্টের মাধ্যমে তিনি ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল যন্ত্রপাতির একটি সংগ্রহ গড়ে তোলেন। একপর্যায়ে তার ক্লিনিকটি চেতনানাশক ব্যবহার করে ছোটখাট অপারেশন করার মতো উপযোগী হয়ে ওঠে।
ওয়াসানের বিকল্প হাসপাতালের কথা ধীরে ধীরে, অত্যন্ত সাবধানে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। মসুলের অন্য প্রান্ত থেকেও মানুষ তার বাসায় আসতে থাকে চিকিৎসার জন্য। ফলে তার ওষুধের সংগ্রহও ফুরিয়ে আসতে থাকে দ্রুত। হাসপাতালের ওষুধের স্টোরে তখনও ওষুধের বেশ ভালো সংগ্রহ ছিল, কিন্তু স্টোর ছিল আইএসের নিয়ন্ত্রণে।
আইএসের অধীনস্থ শহরগুলোতে চুরি করার শাস্তি ছিল হাত কাটা। আর গোপন হাসপাতাল পরিচালনার জন্য আইএসের ভান্ডার থেকেই ওষুধ চুরি করলে তার শাস্তি হয়তো মৃত্যুদন্ডও হতে পারত। কিন্তু সেই ঝুঁকি নিয়েও ওয়াসান তার ক্লিনিকের জন্য কৌশলে আইএসের স্টোর থেকে ওষুধ হাতিয়ে নিতে শুরু করেন। তিনি আইএস যোদ্ধাদের চিকিৎসার সময় একটি ওষুধের প্রয়োজন হলে তার পরিবর্তে পাঁচটি করে ওষুধ নিয়ে আসতে শুরু করেন। কিন্তু শীঘ্রই আইএস আরো কড়াকড়ি আরোপ করে। তারা ডাক্তারদের স্টোর রুমে যাওয়াই নিষিদ্ধ করে দেয়।
২০১৬ সালের শেষের মাঝামাঝি সময় থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মসুলে বিমান হামলা জোরদার শুরু করলে আইএসের সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে আসতে শুরু করে। অক্টোবর মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় ইরাকি সেনাবাহিনী এবং কুর্দি পেশমার্গা বাহিনী মসুল মুক্ত করার অভিযান শুরু করে। নিজেদের আহত সৈন্যদের চিকিৎসা করার জন্য আইএস হাসপতালটি থেকে বেসামরিক জনগণকে সরিয়ে দিয়ে সম্পূর্ণ নিজেদের জন্য ব্যবহার করা শুরু করে।
এরকম পরিস্থিতিতে ওয়াসানের গোপন হাসপাতালটি স্থানীয় জনগণের শেষ ভরসাস্থলগুলোর একটিতে পরিণত হয়। তিনি তার দুই ভাইকে তাদের রুম থেকে বের করে দিয়ে সেটিকে একটি অপারেশন থিয়েটারে পরিণত করে ফেলেন। তার বৃদ্ধা মা, যিনি এক সময় নার্স ছিলেন, তিনি হয়ে ওঠেন ডাক্তার ওয়াসানের প্রধান সহকারী। তাদের ডাইনিং টেবিলে তারা এক ডজনেরও বেশি ইরাকি নারীর সন্তানের জন্ম দেওয়ান।
ইরাকি যৌথবাহিনীর মসুল মুক্তকরণ অভিযান এগোতে থাকে অত্যন্ত ধীরে ধীরে। প্রতি সপ্তাহে তারা দুই-একটা করে এলাকা মুক্ত করতে থাকে। আইএসদেরকে হটিয়ে যেদিন ইরাকী বাহিনী ওয়াসানদের এলাকায় প্রবেশ করে, সেদিনই ওয়াসান ছুটে যান তার এক প্রতিবেশীর বাড়িতে, যাদের আট বছর বয়সী ছেলেটি ছিল হাসপাতালের ক্যানসারে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে একজন।
ছেলেটি ছিল লিউকেমিয়ার রোগী, কিন্তু হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়ার পর শেষ তিন সপ্তাহ ধরে তার কোনো চিকিৎসা হয়নি। ওয়াসান তাকে গাড়িতে বসিয়ে ড্রাইভ করে নিয়ে যান ৮৫ কিলোমিটার দূরের ইবরিল শহরে। কিন্তু এত চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচাতে পারেননি ওয়াসান। এক সপ্তাহ পরে মৃত্যু হয় ছেলেটির।
ওয়াসান ফিরে আসেন তার নিজের শহরে। ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ মসুল আইএস মুক্ত হয়। তিনি যোগদান করেন তার পুরানো জুমহুরিয়া হাসপাতালে। যুদ্ধের আগে ওয়াসান তার পড়া শেষ করেছিলেন, কিন্তু তখনও সার্টিফিকেট পাননি। তিনি বাগদাদের সাথে যোগাযোগ করেন তার সার্টিফিকেটের জন্য। কিন্তু জানতে পারেন, তাকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে তাকে জানানো হয়েছে, তার গত তিন বছরের চাকরি ‘সক্রিয় সেবা’ হিসেবে পরিগণিত হবে না এবং তারা তাকে সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্সও দিবে না। কারণ তিনি চাকরি করেছিলেন আইএসের অধীনে!
ওয়াসানের মতে, আইএস বিরোধী যুদ্ধ শেষ হয়েছে, কিন্তু শহরে চলছে নতুন ধরনের গৃহযুদ্ধ। এ গৃহযুদ্ধ যারা আইএসের অধীনে শহরে রয়ে গিয়েছিল এবং যারা শহর ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল, তাদের মধ্যে। ওয়াসানের ভাষায়,
তারা আমাদেরকে বলে, তোমরা আইএসের সহযোগী। আমরা আমরা তাদেরকে বলি, তোমরা তো পালিয়ে গিয়েছিলে, তোমাদের কোনো কষ্টই করতে হয়নি! আমরা সবাই চাই আবার ২০১৪ সালে ফিরে যেতে এবং জীবন আবার নতুন করে শুরু করতে।
২০০৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন ইরাক দখল করেছিল, তখন সাদ্দাম হোসেনের বাথ পার্টিকে নিষিদ্ধ করেছিল। নিরাপত্তা বাহিনীতে চাকরি করা লক্ষ লক্ষ যুবককে এক রাতের মধ্যে বেকার করে দিয়েছিল। পরবর্তী এক দশক ধরে মার্কিন মদদপুষ্ট নূরি আল-মালিকির সরকারের দ্বারা নানাভাবে শোষণ, নিপীড়ন এবং প্রবঞ্চনার শিকার হয়েছিল তারা এবং সরকারের প্রতি তাদের অবদমিত ক্ষোভেরই সুযোগ নিয়েছিল জঙ্গী সংগঠনগুলো। ইরাকে আইএসের উচ্চপদস্থ কমান্ডারদের অনেকেই ছিল সাবেক বাথ পার্টির জেনারেল।
ইরাকে আইএস পরাজিত হয়েছে। কিন্তু ইরাক কি আবারও একই ভুল করছে? ওয়াসানের মতো হাজার হাজার ইরাকি, যারা আইএসের অধীনে থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়েও এলাকার মানুষের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেছে, তাদেরকেও যদি যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বৈষম্য এবং বঞ্চনার শিকার হতে হয়, তাহলে ভবিষ্যতে যে আবারও ভিন্নরূপে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটবে না, তার নিশ্চয়তা কী? কবে ইরাকিরা নিজেদের মধ্যে হানাহানি ভুলে সমঝোতার পথে ফিরে আসবে?
ফিচার ইমেজ- Khalid al-Mousily/ Reuters (প্রতীকি ছবি)