সিনেটাস পপুলাস্ক রোমানাস: রোমান রাষ্ট্র এবং জনগণ (Senātus Populusque Rōmānus: “The Roman Senate and People)। সোশ্যাল ওয়ারের আগপর্যন্ত এই রোমান জনগণের মধ্যে তার লাতিন ও ইতালীয় মিত্ররা পরিগণিত হতো না।
ইতালিয়ান পেনিনসুলায় রোমের একাধিপত্য ছিল প্রশ্নাতীত। লাতিন ও ইতালীয় অন্যান্য জাতিকে নিয়ে রোম গঠন করতে পেরেছিল একটি স্থায়ী কনফেডারেশন, যেখানে রোমের চাহিদা অনুযায়ী তার মিত্ররা যুদ্ধের জন্য সৈন্য ও রসদপত্র সরবরাহ করতে বাধ্য ছিল। রোমের প্রতিটি সামরিক অভিযানে রোমান সেনাদের সাথে মিত্রবাহিনীর সেনারাও যুক্ত হতো, এবং ধীরে ধীরে অশ্বারোহী বাহিনীর প্রায় পুরো অংশই তাদের নিয়ে গঠিত হতে শুরু করে। রোমের সাথে তাদের অভিন্ন জাতিগত সম্পর্ক ছিল, সভ্যতা-সংস্কৃতির দিক থেকেও রোম ও তার প্রতিবেশী ইতালীয়রা ছিল সাদৃশ্যপূর্ণ। কিন্তু বিভিন্ন কারণে রোমের এই মিত্রদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়।
পটভূমি
রোমান কনফেডারেশনের বাসিন্দাদের মোটা দাগে তিনভাগে ভাগ করা যায়:
সিটিজেন: রোমান নাগরিক, যাদের ভোটাধিকার ছিল। এর মধ্যে রোমে বসবাসকারী থেকে ইতালি এবং রোমের অধিকৃত অঞ্চলসমূহে স্থাপিত রোমান উপনিবেশের অধিবাসীরাও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
ল্যাটিনি: এরা ছিল বিলুপ্ত লাতিন লিগের অংশ। এদের ভোটাধিকার ছিল না, তবে অন্যান্য নাগরিক সুবিধা এরা ভোগ করত, যেমন অবাধে রোমান এলাকাতে চলাচল, ব্যবসা বাণিজ্য এবং সামাজিক সম্পর্ক স্থাপন।
সোশি: ইটালিয়ান পেনিনসুলার অন্তর্গত স্বায়ত্তশাসিত নগররাষ্ট্রের লোকেরা ছিল সর্বশেষ স্তরে। এদের ভোটাধিকার তো ছিলই না, উপরন্তু, নাগরিক সুবিধা ছিল ন্যূনতম। কিন্তু রোমের সাথে চুক্তির শর্ত মোতাবেক তাদের যুদ্ধের প্রয়োজনীয় সৈন্য ও মালামাল যোগান দিতে হতো।
মূলত ইতালীয়দের মধ্যেই প্রথমে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। তাদের সহায়তার বিপরীতে রোম থেকে তারা যথোপযুক্ত প্রতিদান পাচ্ছে না বলে তারা অনেকদিন থেকে অভিযোগ জানিয়ে আসছিল। রোমের জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে ভোট দেয়ার দাবি তাদের অনেকদিন থেকে ছিল। ১২২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গাইয়াস গ্র্যাকাস সিনেটের বিরোধিতা সত্ত্বেও সেই লক্ষ্যে আইন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রোমান জনগণের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এবং এর জের ধরে তাকে প্রাণ দিতে হয়।
ইতালীয়দের অনেকেই এরপর থেকে নিজেদের রোমান নাগরিক হিসেবে দাবি করে নানা সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করত। এর মধ্যে অনেক ধনবান ও সম্ভ্রান্ত ইতালীয়ও ছিল। ৯৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে কন্সাল ক্রাসুস এবং স্ক্যাভিওলা ভুয়া রোমান নাগরিকদের শাস্তির জন্য আইন পাশ করেন। ফলে, মিত্রদের সাথে রোমের সম্পর্কে চিড় ধরে।
এদিকে রোমানদের মাঝেও মিত্রদের প্রতি সহানুভূতিশীল লোক ছিল। ট্রিবিউন ড্রুসাস ছিলেন সেরকম একজন। ৯১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তিনি গাইয়াসের করা নাগরিকত্ব আইন পুনরায় পাশ করার চেষ্টা করেন। ইতালীয়দের সাথে ড্রুসাসের সখ্যতা ছিল। এরকম একজন ইতালীয় ছিলেন পপ্পিডিয়ুস সাইলো, পরবর্তী সময়ে রোমের বিপক্ষে বিদ্রোহের প্রথম সারির একজন নেতা।
ড্রুসাসের সমর্থনে ১০,০০০ সঙ্গী নিয়ে পপ্পিডিয়ুস রোমের দিকে মার্চ করার সংকল্প করেছিলেন। রোমের তৎকালীন কন্সাল ফিলিপি এবং সিজারকে, যিনি পরবর্তী রোমান একনায়ক সিজার থেকে ভিন্ন) হত্যা করার পরিকল্পনা করা হয়। ড্রুসাসের কানে সেই কথা পৌঁছলে তিনি ফিলিপিকে জানিয়ে দেন, ফলে সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। কিন্তু ড্রুসাস নিজেকে রক্ষা করতে পারলেন না। তার বিভিন্ন পদক্ষেপে সিনেট তার প্রতি অসন্তুষ্ট ছিল, নাগরিকত্ব আইনের প্রস্তাব করে ড্রুসাস তাদের ক্রোধের আগুনে ঘি ঢেলে দিলেন। তাকে ওই বছরই গুপ্তহত্যার শিকার হতে হয়। তার মৃত্যুর পর ইতালীয়রা বুঝতে পারে, সিনেট কোনোমতেই তাদের ভোটাধিকার প্রদান করবে না, সুতরাং তারা সরাসরি বিদ্রোহের চিন্তা করে।
অনেক ঐতিহাসিকের মতে, ভোটাধিকারের দাবিতে সূচনা হলেও এই সংঘাত পরে আরো সুদূরপ্রসারী রূপ লাভ করে। লড়াই শুরু হলে ইতালীয় জোট নিজেদের জন্য আলাদা রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রবর্তন করে। ইতিহাসবেত্তারা মনে করেন, এটি প্রমাণ করে যে, জোটের অনেক সদস্য রোমকে পরাভূত করে ইতালীয় উপদ্বীপে ক্ষমতার নতুন মেরুকরণের প্রত্যাশা করছিল। উদ্দেশ্য যা-ই হোক, রোম নতুন করে আরো একটি লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে, যা ইতিহাসে সোশ্যাল ওয়ার বা সামাজিক যুদ্ধ নামে পরিচিত। ভৌগোলিক দিক থেকে একে অবশ্য ইতালীয় যুদ্ধও বলা যায়। আবার ইতালীয় জোটের অন্যতম মার্শি জাতি, যাদের বসবাস ছিল অ্যাপেনাইনের পার্বত্য এলাকার কেন্দ্রে, তাদের নামানুসারে একে মার্শিক লড়াইও বলা হয়।
প্রস্তুতিপর্ব
ইতালীয় রাষ্ট্রগুলোর সম্পদ ও লোকবল রোমের তুলনায় কম হলেও একেবারে কম ছিল না। তাছাড়া রোমান সেনাবাহিনী ছিল এর প্রদেশগুলোতে ছড়ানো। কাজেই তারা দ্রুত আক্রমণ করে রোমকে পদানত করার ছক কষতে থাকে। অ্যাপিয়ানের মতানুসারে, তারা প্রায় এক লাখের অধিক সৈন্য জড়ো করতে সমর্থ হয়। এদিকে রোমানরা ক্রমেই তাদের ইতালীয় মিত্রদের ব্যবহারে শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা পরিস্থিতি যাচাই করতে বিভিন্ন শহরে তাদের লোক পাঠায়। সেই সূত্র থেকে রোমান প্রিটর সার্ভিলিয়াসের কাছে খবর আসে যে, পিসেনামের অস্কালাম শহর থেকে আরেক শহরে জিম্মি পাঠানো হচ্ছে। তৎকালীন প্রথা অনুসারে, এই আদান-প্রদান গোপন যোগসাজশের দিকে ইঙ্গিত করে। সহকারি ফন্টেয়াসকে সাথে নিয়ে তিনি তৎক্ষণাৎ অস্কালামে এসে উপস্থিত হয়ে জবাবদিহি চাইলেন। নগরের অধিবাসীরা তাকে ও তার সহকারীকে সাথে সাথেই হত্যা করে। এই গোলযোগের জেরে আশেপাশের এলাকায় থাকা সাধারণ রোমানরাও নিহত হয়। এই কাজ ছিল রোমের সাথে স্বাক্ষরিত চুক্তির সরাসরি বরখেলাপ। ফলে, সামরিক সংঘর্ষ অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে।
যুদ্ধ ঘোষণা
প্রথমে যুদ্ধ ঘোষণা করে মার্শি, পেলিগ্নি, ভেস্টিনি এবং ম্যারুসিনিরা। মার্শিদের থেকে অ্যাপেনাইনের পার্বত্য এলাকাতে আর অন্য জাতিগুলোতে অ্যাড্রিয়াটিক উপকূল জুড়ে বিদ্রোহের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এর পরপরই মার্শিদের প্রতিবেশী পিসেন্টাইন, ম্যারুসিনিদের প্রতিবেশী ফ্রেন্টানি, হিরপিনি, পম্পেইয়ান, অ্যাপুলিয়ান এবং লুকানিয়ানরা এদের সাথে যুক্ত হয়। রোমের পুরনো শত্রু স্যামনাইটরাও ইতালীয়দের সাথে যোগ দিল। লাতিন শহরগুলো রোমের প্রতি আনুগত্য বহাল রাখে। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল ভেনুশিয়া, তারা ইতালীয় লিগের সাথে গাঁটছড়া বাঁধল। ইট্রুরিয়া আর আম্ব্রিয়াও বিদ্রোহীদের সাথে যোগ দিল না।
বিদ্রোহীরা পেলিগ্নিদের এলাকায় কর্ফিনিয়ামে তাদের মূল ঘাঁটি স্থাপন করে এর নতুন নাম দিল ইটালিয়া। সরকার চালাতে রোমের অনুকরণে তারা দুজন কন্সাল নিযুক্ত করল- মার্শিদের ভেতর থেকে পপ্পিডিয়ুস সাইলো এবং স্যামনাইটদের প্রতিনিধি মিউটিলাস। তাদের সহায়তা করবে ১২ জন প্রিটর আর ৫০০ সিনেটর। এরা নিজেদের জন্য আলাদা রৌপ্যমুদ্রা প্রচলন করে, যার এক পিঠে অঙ্কিত ছিল একটি ষাঁড় কর্তৃক মাদি নেকড়েকে পদতলে পিষে ফেলার চিত্র। ঐতিহাসিকমতে, ষাঁড় ইতালীয় আর মাদি নেকড়ে রোমের প্রতিরূপ।
বিদ্রোহীরা রোমে দূত পাঠিয়ে তাদের দাবি-দাওয়া জানাল। এর মধ্যে অন্যতম ছিল রোমের সকল নির্বাচনে অংশ নেয়া এবং তাতে ভোট দেবার অধিকার। কিন্তু রোমান সিনেট এই দাবি প্রত্যাখ্যান করল।
যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি
৯০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ
বিদ্রোহীরা রোমের প্রতি অনুগত শহরগুলো আয়ত্তে নেবার পরিকল্পনা করে। তারা মূলত অ্যাপেনাইন অঞ্চল আর ক্যাম্পানিয়াতে মনোনিবেশ করল। স্যামনিয়ামের অন্তর্গত অ্যাসারনিয়া ও ভেনাফ্রাম দখল করতে সেনাদল অগ্রসর হলো। এছাড়া নোলা, স্ট্যাবিয়া, মিনার্ভিয়াম এবং ক্যাম্পানিয়ার স্যালের্নাম অভিমুখেও সেনা অভিযান পাঠানো হয়।
রোমানরা দ্রুত সেনা সমাবেশ করল। সিসাল্পাইন গল ও নুমিডিয়া থেকে অতিরিক্ত সৈন্য চেয়ে পাঠানো হলো। রোমের অবশিষ্ট ইতালীয় ও লাতিন মিত্ররাও তাদের সাথে যোগ দিল। রোমান বাহিনী দুই থিয়েটারে ভাগ করা হলো। সে বছরের কন্সাল ছিলেন সিজার ও লুপাস। সিজার পেলেন ক্যাম্পানিয়া আর লুপাস মধ্য ইতালির দায়িত্ব। লুপাসের পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করছিলেন বর্ষীয়ান রোমান জেনারেল মারিয়াস, আর তার এককালের সহকারি সুলা এবং ভবিষ্যতের নামকরা রোমান জেনারেল পম্পেই দ্য গ্রেটের পিতা পম্পেই স্ট্র্যাবো ছিলেন সিজারের সাথে।
রোমান সিনেটের ভয় ছিল, বিদ্রোহীরা কর্ফিনিয়াম থেকে রোমের সংযোগকারী রাস্তা ভিয়া ভ্যালেরিয়া ধরে সরাসরি আক্রমণ চালাতে পারে। সে কারণে এই এলাকাতে লুপাসের অধীনে প্রচুর সেনা জড়ো করা হয়। কিন্তু, লুপাসের সেনারা অনেকেই ছিল নতুন ও স্বল্প প্রশিক্ষিত। অভিজ্ঞ মারিয়াস পরামর্শ দিলেন, তাদের আগে প্রশিক্ষণ দিয়ে তারপর সরাসরি লড়াইয়ে নামার জন্যে। কিন্তু লুপাস তার কথা শুনলেন না। টলেনাস নদীর কাছে স্কাটোর অধীনে ইতালীয় সেনাদল তাকে পরাজিত ও হত্যা করে।
এরপর সিনেটের নির্দেশে দায়িত্ব চলে যায় যৌথভাবে মারিয়াস ও কেপিওর কাছে। শত্রুপক্ষের অ্যামবুশে কেপিও নিহত হলে মারিয়াস পুরো সেনাদায়িত্ব একাই বুঝে নেন। ক্যাম্পানিয়া থেকে সুলা তার সাথে যোগ দিলেন। তাদের মিলিত সেনাদল মার্শিদের একটি বাহিনীকে তাদের নিজ বাসস্থানের কাছে ফিউসিন হ্রদের পাড়ে শোচনীয়ভাবে পরাস্ত করেন। এর ফলে সরাসরি ভিয়া ভ্যালেরিয়া ধরে রোমে আক্রমণের সম্ভাবনা রহিত হয়ে যায়। এর সাথে অ্যাপেনাইন অঞ্চল এবং ক্যাম্পানিয়াতে অবস্থানরত বিদ্রোহী সেনাদের মাঝে রোমান বাহিনী একটি বাধা তৈরি করতে সমর্থ হয়।
এদিকে স্কাটো সিজারকে পরাজিত করে অ্যাসারনিয়া দখল করে নিলেন। ইটালিয়ানরা আপুলিয়া আর ক্যাম্পানিয়াতে থাকা অন্যান্য রোমান সেনানায়কদের বিরুদ্ধেও সাফল্য অর্জন করে। এর সূত্র ধরে ভেনাফ্রামও তাদের হাতে চলে আসে। পিসেনামে থাকা রোমান কম্যান্ডার পম্পেই ইতালীয়দের হাতে পরাস্ত হয়ে বাধ্য হন ফিরমাম শহরে আশ্রয় নিতে।
বিদ্রোহীদের কন্সাল মিউটিলাস নোলা, স্ত্যাবিয়া, সেরেন্টাম আর স্যালের্নাম অধিকার করে নেন। তার সেনারা পম্পেই শহরের দক্ষিণে নুসেরিয়াতে ব্যাপক লুটপাট চালাল। এরপর মিউটিলাস নোলা আর নেপলসের মধ্যবর্তী অ্যাকিরা অবরোধ করলেন। সিজার অবরোধ তুলে নিয়ে তাকে বাধ্য করতে চেয়েও ব্যর্থ হলেন। তিনি ক্যাম্পানিয়াতে ফিরে গেলে পাহাড়ি এক গিরিখাদে অতর্কিত হামলার শিকার হন। সেখান থেকে পালিয়ে সিজার টিয়েনাম চলে যান। এখানে নতুন করে সেনা সাহায্য এসে পৌঁছে। তিনি ফিরমামে পম্পেইয়ের সহায়তায় অগ্রসর হলেন।
এদিকে ফিরমামে পম্পেই লেফ্রেনিয়াসের অধীনে ইতালীয় সেনাদলকে পরাজিত করেন। তিনি তার সহকারী সাল্পিসিয়াসকে পাঠান শত্রুদের পেছন থেকে আঘাত করতে আর নিজে হামলা করেন সামনে থেকে। দু’দিক থেকে আক্রান্ত হয়ে ইতালীয়রা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। লেফ্রেনিয়াস যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হন। পালিয়ে যাওয়া সেনারা অস্কালামে আশ্রয় নেয়। পম্পেই অস্কালামের দিকে এগিয়ে এসে শহর অবরোধ করল। আপুলিয়া থেকে ভিদাসিলিউস তাকে মুক্ত করতে এলেন। তিনি কিছু সেনা নিয়ে শহরে প্রবেশ করতে সক্ষম হন, কিন্তু অবরোধ ভাঙতে পারলেন না।
এদিকে পরবর্তী বছরের কন্সাল নির্বাচনের জন্যে পম্পেই রোমে ফিরে গেলে অবরোধের দায়িত্ব নিলেন সিজার। অ্যাপিয়ানের মতে, তিনি রোগাক্রান্ত হয়ে মারা গেলে বেবিয়াস নেতৃত্ব নিলেন। মনে করা হয় এসব ঘটনা ৮৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দের শুরুর দিকে ঘটে, যখন পম্পেই রোমে ব্যস্ত। তবে শিগগির তিনি ফিরে এসে অবরধে কঠোর করলেন। ভিদাসিলিউস শহরে থাকা বিভিন্ন পক্ষকে একত্র করতে চেয়ে ব্যর্থ হন। তিনি আত্মহত্যা করলে অস্কালামের পতন ত্বরান্বিত হলো।
রোমান আইন পরিবর্তন
এদিকে ৯০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের শরতে ইট্রুস্কান ও আম্ব্রিয়ানদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। পূর্ণ নাগরিকত্বের দাবিতে তারাও অস্ত্রধারণ করার হুমকি দেয়। রোমান সিনেট নতুন করে আরেক ফ্রন্টে যুদ্ধ পরিচালনা করতে অনিচ্ছুক ছিল। কাজেই তারা আইন প্রণয়ন করে যেসব গোত্র রোমের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করেনি, তাদের পূর্ণ নাগরিকত্ব প্রদান করে। স্থানীয়দের অনুমোদন সাপেক্ষে এই আইনের ভিত্তিতে পুরো কমিউনিটিকে রোমান নাগরিক হিসেবে গ্রহণ করা হয়। তবে রোমের মিত্র নিয়াপোলিস এবং হেরাক্লিয়া এই সুযোগ গ্রহণে অসম্মতি জানায় এবং নিজেদের স্বায়ত্তশাসিত চরিত্র বজায় রাখে। এই আইনে নতুন রোমান নাগরিকদের দশটি আলাদা গোত্রে, বা কিউরিয়াতে ভাগ করা হয়, যারা বিরাজমান অন্যান্য রোমান কিউরিয়ার সাথে মিলে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবে।
তবে এই আইন ছিল ব্যক্তির জন্য নয়, পুরো এলাকার জন্য। ব্যক্তির জন্য কয়েকমাস পরেই ৮৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দের প্রথমদিকে নতুন আইন প্রণীত হয়। এতে বলা হয়, কোনো আইন পাশের ষাটদিনের মধ্যে যেকোনো ইতালীয়, সে অস্ত্রধারণ করে থাকুক আর না থাকুক, কোনো রোমান সরকারি কর্মকর্তার সামনে উপস্থিত হয়ে নাগরিকত্বের শপথ নিতে পারবে। আগের আইনের দশটি কিউরিয়া বিলুপ্ত করে নতুন নাগরিকদের বিরাজমান রোমান আটটি গোত্রের মাঝে ভাগ করে দেয়া হলো। এর ফলে ইট্রুরিয়া ও আম্ব্রিয়াতে উত্তেজনাতে ভাঁটা পড়ল, এছাড়া বিদ্রোহীদের মধ্যে যারা নাগরিকত্ব প্রাপ্তির আশায় লড়াইতে যোগ দিয়েছিল, তারাও পৃথক হয়ে এই সুযোগ গ্রহণ করতে থাকল।
৮৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দ
ইট্রুস্কান ও আম্ব্রিয়ানদের মধ্যে ৯০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের শেষদিকে ক্ষোভ দেখা দিলে ইতালীয় লিগ একে কাজে লাগাতে মনস্থ করেছিল। তারা ইট্রুস্কান ও আম্ব্রিয়ানদের সাথে যোগাযোগ করে ৮৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দের শুরুতে মার্শিদের এক বাহিনী প্রেরণ করে। কিন্তু শীতের মধ্যে অ্যাপেনাইন পর্বত পার হতে গিয়ে এই বাহিনী প্রচুর বাধাবিপত্তির সম্মুখীন হয়। এদিকে নাগরিকত্ব নিশ্চিত হলে ইট্রুস্কান ও আম্ব্রিয়ানরা বিদ্রোহ করতে আর আগ্রহ দেখায়নি। ইতালীয়দের প্রেরিত সেনাদলকে নতুন কন্সাল পম্পেই বাধা দেন। ১৫,০০০ সেনার মধ্যে ৫,০০০ তার হাতে নিহত হয়, বাকিরা পর্বতের উপর দিয়ে পিছু হটে যায়।
মধ্য ইতালিতে মারিয়াসের কাছ থেকে অপর কন্সাল কাটো দায়িত্ব বুঝে নিলেন। তিনি মার্শিদের আবাসস্থলের কাছ থেকে তাদের হটিয়ে দেন। কয়েকমাসের মধ্যে বিদ্রোহীদের মূল ঘাঁটি কর্ফিনিয়াম রোমের হাতে চলে আসে। মার্শি, পেলিগ্নি এবং ভেস্টিনিরা আত্মসমর্পণ করল। অবশিষ্ট বিদ্রোহীরা তাদের সদর দপ্তর ক্যাম্পানিয়ার অন্তর্গত বভিয়ানামে সরিয়ে নেয়।
স্যামনাইটদের বিপক্ষে রোমান সেনাদায়িত্ব ছিল সুলার হাতে। তিনি ক্যাম্পানিয়াতে পম্পেই শহরের কাছে এসে তাঁবু ফেললেন। ইতালীয়দের অধিনায়ক ছিলেন ক্লুন্টিয়াস। সুলার সাথে প্রথম সংঘর্ষে তিনি জয়ী হন। কিন্তু সুলা দ্রুত তার বাহিনী পুনর্গঠন করে আবার হামলা করেন। এবার ক্লুন্টিয়াস হেরে গেলেন। তিনি পিছিয়ে এসে নতুন পাঠানো সেনাদের সাথে যুক্ত হলেন। এবার তিনি পুনরায় সুলার সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হন। প্রচণ্ড লড়াইয়ে ক্লুন্টিয়াসসহ তার ২,০০০ এর অধিক সেনা হতাহত হয়। পম্পেই সুলা অধিকার করে নিলেন।
সুলা আর আরেক রোমান অফিসার দিদিয়াসের মিলিত সেনাদল ভিসুভিয়াস পর্বতের নিকটে অবস্থিত আরেক শহর হারকিউলেনিয়াম এবং স্ট্যাবিয়া দখল করে নেয়। স্ট্যাবিয়া মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হলো।
সুলা এরপর হিরপিনিদের এলাকায় প্রবেশ করেন। তার কাছে এক্লেনামের পতন ঘটলে তারা অস্ত্রসমর্পণে বাধ্য হয়। এরপর সুলা ইতালীয়দের কন্সাল মিউটিলাসের মুখোমুখি হন। পরাজিত হয়ে মিউটিলাস অ্যাসারনিয়াতে পালিয়ে গেলেন। সুলা এবার বিদ্রোহীদের নতুন রাজধানী বভিয়ানাম অবরোধ করেন। শহরের পতন হলে সুলা পরবর্তী কন্সাল নির্বাচনের জন্যে রোমে ফিরে যান।
আপুলিয়াতে কস্কোনিয়াস ও মেটেলাস অভিযান পরিচালনা করতে থাকেন। মেটেলাস ভেনুশিয়া পুনর্দখল করেন। বিদ্রোহীদের উল্লেখযোগ্য নেতা হিসেবে অবশিষ্ট ছিলেন পপ্পিডিয়ুস, টেলেসিনাস আর ল্যাম্পোনিয়াস।
৮৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দ
আগের বছরই মোটামুটি যুদ্ধ শেষ হয়ে গিয়েছিল। এ বছর রোমানরা বিদ্রোহী যে গোষ্ঠীগুলো বাকি ছিল, তাদের একে একে পরাস্ত করে।
- পম্পেই ম্যারুসিনিদের দমন করেন।
- কস্কোনিয়াস উত্তর আপুলিয়াতে সালাপিয়া এবং কান্নে নগর কব্জা করে ক্যানুসিয়াম অবরোধ করেন। এখানে স্যামনাইটরা প্রথমে তাকে পরাজিত করতে পারলেও ক্যানুসিয়াম আর কান্নের মাঝামাঝি আরেকটি লড়াইতে তারা কস্কোনিয়াস জয়লাভ করেন। এরপর কস্কোনিয়াস পুরো আপুলিয়াতে রোমের নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন।
- টিনাস নদীর কাছে মেটেলাসের সাথে সংঘর্ষে বিদ্রোহীদের শেষ শক্তিটুকুও নিঃশেষ হয়ে যায়। পপ্পিডিয়ুস এখানে নিহত হন।
সোশ্যাল ওয়ারের প্রভাব
রোম ও তার ইতালীয় প্রতিবেশীদের এই যুদ্ধের মাধ্যমে ইতালীয় পেনিনসুলার রোমানকরণের পথ প্রশস্ত হয়। রোমের পূর্ণ নাগরিকত্ব প্রাপ্তির সুবাদে এর রাজনৈতিক সংস্কৃতির সাথে ইতালীয়দের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক তৈরি হয়। রোমান সরকারি প্রতিষ্ঠান আর নির্বাচন ব্যবস্থাতে সাধিত হয় পরিবর্তন। ইতালির প্রায় সব জাতি এক হয়ে পরিণত হলো একটি জাতিতে- রোমান।