আজকে আমরা যে আমেরিকা, অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দেখি, সেই আমেরিকা কিন্তু সবসময় আজকের মতো আগ্রাসী, আধিপত্যকামী ছিল না। একটা সময় ছিল, যখন আমেরিকাকে বিবেচনা করা হতো বিশ্বরাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন, নিরীহ একটি দেশ হিসেবে।
কিন্তু উনিশ শতকের শেষ দিকে একটি যুদ্ধের পর থেকে আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতির ধরন পাল্টে যায়, নিরীহ একটা দেশ থেকে আমেরিকা হয়ে ওঠে আধিপত্যকামী সাম্রাজ্যবাদী দেশ। ১৮৯৮ সালে সংঘটিত হওয়া এই যুদ্ধের পর থেকে আমেরিকা ল্যাটিন আমেরিকায় নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের পাশাপাশি বিশ্বরাজনীতির মঞ্চে নিজেদের সগর্ব উপস্থিতি জানান দেয়।
১৮৯৮ সালে স্পেন ও আমেরিকার মধ্যে যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়, তা আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের ইতিহাসে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটি ঘটনা। গৃহযুদ্ধের ধকল কাটিয়ে ওঠার পর ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির জন্য আমেরিকার বাইরের দেশের দিকে নজর দেওয়া তখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের সূচনা হয় স্প্যানিশ-আমেরিকান যুদ্ধের মাধ্যমে। এক সময়ের পরাক্রমশালী উপনিবেশবাদী স্পেনের গৌরব মাটিতে লুটিয়ে দিয়ে বিশ্বরাজনীতিতে নিজেদের আবির্ভাবের বার্তা দেয় আমেরিকা।
উনিশ শতক ছিল স্পেনের উপনিবেশবাদী শাসনের জন্য চরম হতাশাজনক একটি অধ্যায়। ঐ শতকের শুরুর দিকে নেপোলিয়ন যখন পুরো ইউরোপ জয়ের বাসনা নিয়ে স্পেনে আক্রমণ করেন, লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় যায় প্রবল পরাক্রমশালী দেশটি। ধ্বসে পড়ে দেশটির আর্থসামাজিক ব্যবস্থা। একের পর এক উপনিবেশ হারিয়ে স্পেন তখন ল্যাটিন আমেরিকায় তার উপনিবেশবাদী শাসনের শেষ দিনগুলো পার করছিল।
অপরদিকে আমেরিকা তখন উদীয়মান শক্তি। গৃহযুদ্ধের পর শিল্পায়নের ধাক্কায় আমেরিকার উৎপাদিত শিল্পপণ্যের পরিমাণ তখন হু হু করে বাড়ছিল। কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় উৎপাদিত পণ্যের বাজার খোঁজা নিয়ে।
শিল্পায়নের প্রাথমিক শর্ত হিসেবে কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব হয়। কৃষিতে পূর্বের তুলনায় বহুগুণে উৎপাদন বাড়ে। বিপুল কৃষি উৎপাদনের ফলে শিল্পপণ্যের পরিমাণ বাড়লেও ক্রেতা-সংকট দেখা দেয়। দেখা যাচ্ছিল, শিল্পপণ্য প্রচুর উৎপাদিত হলেও আমেরিকায় সেগুলো কেনার মতো লোক পাওয়া যাচ্ছিল না। ফলে অর্থনীতিতে মন্দা নেমে আসে।
এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে ব্যবসায়ীরা সরকারকে বাইরের বিশ্বের দিকে নজর দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। ১৮৯৮ সালে স্টেট ডিপার্টমেন্টের দেওয়া এক স্মারকলিপিতে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, “আমরা এখন আর আন্তর্জাতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা উপেক্ষা করতে পারি না, যেহেতু আমরা নিজেরাই ব্যবসার জন্য বিশ্বব্যাপী লড়াইয়ের সামর্থ্য অর্জন করে ফেলেছি।”
গৃহযুদ্ধের পর আমেরিকা তার নৌশক্তির সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দেয়। গৃহযুদ্ধের সময় যেখানে আমেরিকার নৌবাহিনী সক্ষমতায় পুরো পৃথিবীতে ১২তম অবস্থানে ছিল, সেখানে উনিশ শতকের শেষ দিকে শীর্ষ পাঁচের মধ্যে চলে আসে। এর কারণ তৎকালীন উপনিবেশবাদী দেশগুলোর সাথে টেক্কা দিতে হলে নৌশক্তিতে ভালো অবস্থান নিশ্চিত করা আমেরিকার জন্য আবশ্যিক শর্ত ছিল।
তাই আমেরিকা অনুধাবন করল, নৌশক্তির কার্যকর উন্নতি ছাড়া তার প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোকে ডিঙিয়ে বাইরের বিশ্বের দিকে নজর দেওয়া বৃথা প্রচেষ্টা ছাড়া কিছু নয়। সেই অনুসারে গৃহযুদ্ধের পর খুব দ্রুত গতিতে আমেরিকা তার নৌবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে থাকে।
ওদিকে ১৮৯৫ সালে তৎকালীন উপনিবেশ কিউবায় প্রবল জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মুখোমুখি হয় স্পেন। এই আন্দোলন থামানোর জন্য স্পেন শরণাপন্ন হয় ক্যাপ্টেন জেন ভ্যালেরিয়ানো ওয়েলারের কাছে। ক্যাপ্টেন ওয়েলার আন্দোলন দমনের জন্য অত্যন্ত কঠোর পন্থা অবলম্বন করেন। আন্দোলনরত বিপ্লবী কিউবানদের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে ধরে ধরে বন্দীশিবিরে পাঠান।
এই বন্দীশিবিরগুলোতে বন্দীদের চরম নোংরা পরিবেশে রাখা হয়। ফলে সহজেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতো বন্দীরা। কিন্তু স্প্যানিশ কর্তৃপক্ষ বন্দীদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা কিংবা ওষুধপত্রের ব্যবস্থা করেনি। বেশিরভাগ বন্দীই রোগশোকে ভুগে মারা যায়।
আমেরিকান মিডিয়া স্প্যানিশদের এই অমানবিকতার সুযোগ গ্রহণ করে। নিউইয়র্ক জার্নাল কিংবা নিউইয়র্ক ওয়ার্ল্ডের মতো খ্যাতনামা মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো তাদের কাটতি বাড়ানোর তাগিদে সত্য-মিথ্যার মিশেলে স্পেনের এরকম কঠোরভাবে বিপ্লব দমনকে জনগণের সামনে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করে। স্পেনকে চরম আধিপত্যকামী নিষ্ঠুর উপনিবেশবাদী শাসকগোষ্ঠী ও কিউবান বিপ্লবীদের অত্যন্ত মানবতাবাদী হিসেবে দেখানো হয়।
সংবাদপত্রের সেসব প্রোপাগাণ্ডা সংবাদ পাঠের ফলে আমেরিকান জনগণের মনে কিউবান বিপ্লবীদের জন্য সহানুভূতি জেগে ওঠে। একসময় মার্কিন সমাজ থেকেই কিউবায় স্পেনের অমানবিক কার্যকলাপ বন্ধের জন্য আমেরিকান হস্তক্ষেপের দাবি উঠতে থাকে।
কিউবার গোলযোগ দ্রুত নিরসনের জন্য আমেরিকা স্পেনকে বারবার চাপ দিতে থাকে। স্পেন নির্মমভাবে কিউবান বিপ্লবীদের দমনে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে মীমাংসার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। বিপ্লবীরা কিউবার স্বাধীনতা ছাড়া অন্য কিছু মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়।
কিউবায় আমেরিকার পুঁজিপতিরা সুগারমিল ও খনিগুলোতে প্রচুর বিনিয়োগ করেছিল। কিন্তু কিউবান বিপ্লবীদের গেরিলা যুদ্ধনীতির কারণে আমেরিকার এই একচেটিয়া বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। ধারণা করা হয়, কিউবায় এই গোলযোগের কারণে আমেরিকার ৫০ মিলিয়ন ডলারের মতো আর্থিক ক্ষতি সাধিত হয়।
আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ম্যাককিনলি যুদ্ধ এড়িয়ে আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উপায়ে কিউবার এই সমস্যার সমাধান করতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু কিছু ঘটনা আর প্রেসিডেন্টকে আর এই পথে সন্তুষ্ট থাকতে দেয়নি।
১৮৯৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমেরিকায় নিযুক্ত স্প্যানিশ রাষ্ট্রদূত এনরিক ডি লুম তার একজন সহকর্মীকে একটি পত্র লেখেন। ডি লুমের সহকর্মী কিউবায় স্পেনের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। পত্রটি সহকর্মীর হাতে পৌঁছানোর পূর্বেই একদল কিউবান বিপ্লবী পত্রটি চুরি করে আমেরিকার হাতে হস্তান্তর করে।
স্প্যানিশ ভাষায় লেখা এই পত্র নিউইয়র্ক জার্নাল ইংরেজিতে অনুবাদ করে জনগণের সামনে উন্মুক্ত করে দেয়। এই পত্রে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ম্যাককিনলিকে একজন নিচু মনমানসিকতাসম্পন্ন, দুর্বল এবং জনগণের মতের উপর নির্ভরশীল ‘ব্যক্তিত্বহীন’ রাজনীতিবিদ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই মার্কিন জনতা নিজেদের প্রেসিডেন্ট সম্পর্কে এমন অপমানজনক কথাবার্তা শোনার পর ক্ষোভে ফুঁসতে থাকে।
কিউবার বিপ্লবীদের সহিংস কর্মকাণ্ডে আমেরিকান পুঁজিপতিদের নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়ে যায়। ১৮৯৭ সালের ডিসেম্বরে কিউবার হাভানায় দাঙ্গা শুরু হয়। কিউবায় অবস্থানরত আমেরিকান পুঁজিপতি ও তাদের সম্পদের নিরাপত্তা প্রদানের ইস্যুকে সামনে রেখে আমেরিকা রণতরী ইউএসএস মেইন-কে হাভানা উপকূলে প্রেরণ করে।
হাভানা উপকূলে পৌছানোর নয় দিনের মাথায় বিস্ফোরণের কারণে এই রণতরী ডুবে যায় এবং ২৬০ জন মার্কিন নাবিক নিহত হয়। স্প্যানিশ কর্তৃপক্ষ দাবি করে যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য রণতরী বিস্ফোরিত হয়, কিন্তু আমেরিকা তরী ডোবার পেছনে সম্পূর্ণভাবে স্পেনকে দায়ী করে। স্প্যানিশ রাষ্ট্রদূত ডি লুমের পত্রের কারণে মার্কিন সমাজে যে জনরোষ সৃষ্টি হয়েছিল, রণতরী ডোবার ঘটনা তাতে বারুদ সংযোগ করে।
মার্কিন পার্লামেন্টে কিউবার এই গোলযোগ নিয়ে বেশ বিতর্ক হয়। অপরদিকে চলমান ঘটনাবলির কারণে স্পেনের সাথে আমেরিকার কূটনৈতিক সম্পর্ক দিন দিন খারাপ হতে থাকে। অবশেষে স্পেন ১৮৯৮ সালের ২৪ এপ্রিল যুদ্ধের যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়াই আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। পরের দিন ২৫ এপ্রিল আমেরিকান কংগ্রেসও স্পেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। কয়েকটি ফ্রন্টে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
স্পেনের বড় ভুল ছিল, তারা যুদ্ধের জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেওয়ার আগেই যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। আমেরিকাও যুদ্ধের জন্য তেমন প্রস্তুত ছিল না। কারণ অপ্রস্তুত ক্ষুদ্র নৌশক্তি নিয়ে স্পেন আমেরিকার বিশাল নৌবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবে,এটি আমেরিকার চিন্তায়ও ছিল না।
মে মাসের প্রথম দিনেই কমোডর জর্জ ডেভির নেতৃত্বে আমেরিকান নৌবাহিনী ফিলিপিন্সের ম্যানিলায় অপ্রস্তুত স্প্যানিশ নৌবহরের ওপর প্রথম আঘাত হানে। সকালবেলার এই হামলায় আমেরিকান নৌবাহিনী খুব সহজেই স্প্যানিশ নৌবহরকে পরাজিত করে ফেলে। স্পেনের প্রতিটি জাহাজকেই হয় আটক করা হয়, নয়ত বোমা মেরে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, এ দফায় আমেরিকার কোনো সৈন্য এতে মারা যায়নি।
ম্যানিলা উপসাগর দখল করার পর মার্কিন সেনাবাহিনী পুরো ম্যানিলা দখল করার জন্য অভিযান শুরু করে। জুলাই মাসের শেষ নাগাদ আমেরিকান সৈন্যরা ফিলিপিন্সে প্রবেশ করে এবং ১৩ আগস্ট এগার হাজার সৈন্যসহ মার্কিন মেজর জেনারেল ওয়েসলে মেরিট পুরো ম্যানিলা দখল করে নেন।
এখানে একটি ব্যাপার না বললেই নয়, কিউবার মতো ফিলিপিন্সেও স্পেন বিপ্লবী আন্দোলনের মুখোমুখি হয়েছিল। তাই ফিলিপিন্সের বিদ্রোহীরা আমেরিকার আক্রমণকে স্বাগত জানায়।
কিউবা ফ্রন্টে অ্যাডমিরাল প্যাসকেল কারভেরার নের্তৃত্বে স্পেনের নৌবহর কিউবার সান্তিয়াগো সাগরে আমেরিকান নৌবাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করে। কিন্তু স্পেনের সব প্রচেষ্টার ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
কমোডর উইনফিল্ড স্কটের নের্তৃত্বে আমেরিকান নৌ-বাহিনী সান্তিয়াগোসহ কিউবার প্রধান বন্দরগুলো দখল করে নেয়। জুলাই মাসের প্রথম দিন থেকে আমেরিকার স্থল বাহিনী সান্তিয়াগো শহরের উত্তর দিক থেকে আক্রমণ করা শুরু করে।
কিছু খণ্ড খণ্ড যুদ্ধের পর আমেরিকা স্প্যানিশদের সান্তিয়াগোর পার্বত্য এলাকা থেকে পিছু হটতে বাধ্য করে। কিন্তু স্প্যানিশরা আমেরিকার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করতে সমর্থ হয়। ১৭ জুলাইয়ে সান্তিয়াগোর পতন হয়।
আমেরিকার যেসব ইউনিট স্পেনের মধ্যে লড়াই করেছিল, তার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিল ‘রাফ রাইডার্স’। এই ইউনিটের নেতা ছিলেন থিওডর রুজভেল্ট, যিনি পরবর্তীতে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। রাফ রাইডার্স গঠিত হয়েছিল আমেরিকান আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, খনি শ্রমিক, পোলো খেলোয়াড়, কাউবয় ও কলেজ অ্যাথলেটদের মতো স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে।
দুটো গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে রাফ রাইডার্স চমৎকার ভূমিকা পালন করে। প্রথম যুদ্ধটির নাম ছিল ‘লা গসিমা’র যুদ্ধ, যেটিতে স্প্যানিশদের বিতাড়িত করা হয়। এটি সংঘটিত হয় ২৪ জুন। আর দ্বিতীয় যুদ্ধ সংঘটিত হয় পয়লা জুলাই, যেটিকে রুজভেল্ট বর্ণনা করেছিলেন ‘জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিন’ হিসেবে।
সান জুয়ান পাহাড়ের সেই যুদ্ধ আমেরিকার ইতিহাসে কিংবদন্তি হয়ে আছে। রাফ রাইডার্সের সৈন্যরা দুধর্ষ গতিতে আক্রমণ করে সান জুয়ান পাহাড়ের স্প্যানিশ সৈন্যদের প্রতিরোধ-ব্যূহ লন্ডভন্ড করে দেয়। আমেরিকার গণমাধ্যম রুজভেল্ট ও তার ইউনিটের প্রশংসাসূচক বিভিন্ন প্রতিবেদন ছাপায়।
১৭ জুলাই সান্তিয়াগোর পতনের পরই স্পেন আমেরিকার কাছে পরাজয় স্বীকার করে নেয়। ১৮৯৮ সালের শীতের শেষের দিকে স্পেন ও আমেরিকার প্রতিনিধিরা প্যারিসে আলোচনার টেবিলে বসে। সেখানে দুই পক্ষের মাঝে চুক্তি হয়।
চুক্তি অনুসারে, স্পেন কিউবাকে স্বাধীনতা দিয়ে দেয় এবং পুয়ের্তো রিকো ও গুয়াম দ্বীপপুঞ্জ আমেরিকার কাছে হস্তান্তর করে। বিশ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ফিলিপিন্সকেও আমেরিকার কাছে হস্তান্তর করা হয়। তবে কিউবাকে স্বাধীনতা দেওয়া হলেও কিউবার কোনো প্রতিনিধিকে প্যারিসে ডাকা হয়নি।
স্বাধীনতার পর কিউবার নতুন প্রণীত সংবিধানে আমেরিকার নিজের প্রভাব খাটায়। কুখ্যাত ‘প্লেট সংশোধনী’র দ্বারা কিউবাকে কার্যত আমেরিকার ওপর নির্ভরশীল করে ফেলা হয়। এই সংশোধনীর দ্বারা আমেরিকা কিউবায় কূটনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক হস্তক্ষেপ করার অধিকার লাভ করে। এছাড়াও এ চুক্তির বলে আমেরিকা কিউবার গুয়ান্তানামো বে ইজারা নিতে সমর্থ হয়।
ফিলিপিন্সে বিপ্লবীরা স্বাধীনতার জন্য স্পেনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করলেও যুদ্ধের পরে আমেরিকার আধিপত্যের কাছে অসহায় হয়ে পড়ে। এই যুদ্ধের ফলে তাদের শাসকের পরিবর্তন হয় মাত্র, স্পেনের বদলে আমেরিকা প্রতিস্থাপিত হয়। তাই তাদেরকে যুদ্ধের পর প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জনের জন্য আবার নতুন করে আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের বিপক্ষে সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হয়।
এই যুদ্ধের ফলে আগের আমেরিকা ও পরের আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতির মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য সূচিত হয়। যুদ্ধের পূর্বে আমেরিকা পরিচিত ছিল এমন একটি দেশ হিসেবে, যারা ইউরোপ ও বিশ্বরাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন । কিন্তু এই যুদ্ধের মাধ্যমে আমেরিকা বিশ্বরাজনীতির মঞ্চে নতুন খেলোয়াড় হিসেবে আবির্ভূত হয়। অপরদিকে উপনিবেশ হারিয়ে স্পেন নিজের দেশের দেশের অভ্যন্তরে দৃষ্টি নিবন্ধ করে,যা পরবর্তীতে স্পেনের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিপ্লব সাধিত করে।
আমেরিকার ইতিহাস নিয়ে জানতে পড়তে পারেন এই বইগুলোঃ
১) কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের কথা
২) আমেরিকার ইতিহাস ও রাজনীতি