এই তো মাত্র ক’দিন আগেও কেরোসিনের হারিকেন, কুপিবাতি অথবা লণ্ঠন ছিল বাংলাদেশের পল্লী অঞ্চলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সন্ধ্যা নেমে এলেই অন্ধকারে ডুবে যাওয়া গ্রামগুলোতে হারিকেন বা কুপির আলোতে চলত বাংলার মানুষের জীবন। সূর্য ডোবার সাথে সাথে হারিকেনের চিমনি মুছে বইখাতা নিয়ে পড়তে বসা ছিল আদর্শ ছাত্রদের রীতি। গভীর রাতে মায়েরা সন্তানের পড়ার ঘরে সলতের আঁচ বাড়িয়ে দিতেন একটু পরপর, তেলের শিশি থাকত পাশেই। বিয়ে বা সভা সমাবেশের মতো আয়োজনে রাতের বেলা একমাত্র ভরসা ছিল হ্যাজাক বাতি। তারাশঙ্করের ডাক হরকরার হাত থেকে রেল স্টেশনের সিগন্যালিং ব্যবস্থা, সবখানেই প্রধান অবলম্বন ছিল লণ্ঠন।
কিন্তু যুগ বদলেছে। হারিকেন, কুপি ও লণ্ঠনের অন্ধকারকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করেছে ফ্লোরোসেন্ট, নিয়নের রঙিন উজ্জ্বল বাতি। বিদ্যুতের জাদুর ছোঁয়ায় চাঙ্গা হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি। দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন বঙ্গোপসাগরের মেঘনা নদীর মোহনায় অবস্থিত সন্দীপ কিংবা জেলা-উপজেলা শহর থেকে বিচ্ছিন্ন পদ্মা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্রের বুকে জেগে ওঠা দুর্গম চরাঞ্চল- সব জায়গাতেই এখন বিদ্যুতের ঝলমলে আলো। টমাস আলভা এডিসনের আবিষ্কৃত বিজলি বাতি পৌঁছে গেছে দেশের ৪৬১টি উপজেলার শতভাগ গ্রামে।
একটি পরিবার থেকে যাত্রা শুরু করে দেশের ৯৯ শতাংশ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পাড়ি দিতে হয়েছে ইতিহাসের দীর্ঘপথ। সমুদ্র তীরবর্তী দুর্গম চরাঞ্চল নিয়ে গঠিত পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী কিংবা ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পৌঁছানো বিদ্যুৎবাতির বাংলাদেশে যাত্রা শুরু হয়েছিল আজ থেকে প্রায় সোয়া’শ বছর আগে, গাজীপুর জেলার ভাওয়াল পরগনার রাজবাড়িতে। ব্রিটিশ শাসিত পূর্ববঙ্গের প্রথম বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী ছিলেন ভাওয়াল পরগনার রাজা। ঊনবিংশ শতাব্দীতেই তিনি সর্বপ্রথম বিলাত থেকে আমদানি করা জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে রাজবাড়ি আলোকিত করেন। তেল বা গ্যাস ছাড়া কোনো ‘অলৌকিক’ শক্তিতে বাতি জ্বলছে, এমন দৃশ্য নিঃসন্দেহে সেকালে আধুনিকতার ছোঁয়া থেকে যোজন যোজন দূরত্বে থাকা ভাওয়ালবাসীর কাছে বিস্ময়বোধের উদ্রেক করেছিল।
লন্ডনের পরেই তৎকালীন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ শহর ও ভারতের রাজধানী কলকাতায় বিংশ শতাব্দী শুরুর পূর্বেই বিদ্যুতের আলোর দেখা মিললেও ঢাকায় বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে কয়েক বছর। ১৯০১ সালে প্রথম ঢাকার নবাব আহসানউল্লাহর বাসভবনে একটি জেনারেটর স্থাপন করা হয়। ঐ বছরের ৭ ডিসেম্বর বোল্টন নামে জনৈক ব্রিটিশ নাগরিক আহসান মঞ্জিলে সুইচ টিপে প্রথম বিদ্যুৎ সরবরাহের সূচনা করেন।
নবাব আহসানউল্লাহর অর্থানুকূল্যে অক্টাভিয়াস স্টিল নামক কোম্পানি তৎকালীন ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়ক ও আহসান মঞ্জিলসহ পর্যায়ক্রমে ঢাকার কয়েকটি অভিজাত ভবনকে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার আওতায় এনেছিল। এ কোম্পানির বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা অনেক কম থাকায় তাদের বিদ্যুৎ সরবরাহ শুধু অভিজাত এলাকাতেই সীমাবদ্ধ ছিল।
বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবসাকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে ১৯১০ সালে পাশ হয় ইন্ডিয়ান ইলেকট্রিসিটি অ্যাক্ট, যা দ্বারা ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে বিদ্যুৎ বিতরণের ব্যবসা করার অধিকার প্রদান করা হয়।
১৯১৯ সালে ‘ডেভকো’ নামক ব্রিটিশ কোম্পানির মাধ্যমে ঢাকায় সীমিত আকারে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার প্রথম বাণিজ্যিক বিকাশ শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৩৩ সালে ওই কোম্পানি ঢাকার পরীবাগে প্রায় ছয় মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ‘ধানমন্ডি পাওয়ার হাউজ’ নির্মাণ করে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ বিতরণ শুরু করে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকার অভিজাত বাসিন্দা ছিল এই বিদ্যুতের গ্রাহক।
পাকিস্তান আমলে বিদ্যুৎ সরবরাহ
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বিতরণ বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মাত্র কয়েকটি কোম্পানির হাতে সীমাবদ্ধ ছিল। তখন পাকিস্তানে বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিমাণ ছিল ৭১ হাজার ৩৫৮ কিলোওয়াট। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ ছিল সব মিলিয়ে মাত্র ৭ হাজার ২৮৬ কিলোওয়াট, যা মোট সরবরাহের মাত্র ১০ দশমিক ২১ শতাংশ।
তখন মাত্র ১৭টি প্রাদেশিক জেলা শহরে খুব সামান্য পরিমাণে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। একমাত্র ঢাকা শহর বাদে অধিকাংশ শহরে শুধু রাতেই বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। সেই সময় ঢাকায় ১,৫০০ কিলোওয়াটের দুটি জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। এর পাশাপাশি কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান (চা, চিনি ও বস্ত্র শিল্প) এবং রেলওয়ে ওয়ার্কশপ নিজেদের ব্যবহারের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ঢাকেশ্বরী কটন মিলস্, পাহাড়তলী রেলওয়ে ওয়ার্কশপ, সৈয়দপুর রেলওয়ে ওয়ার্কশপ এবং চিনি কল। সবমিলিয়ে সে সময় দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল মাত্র ২১ মেগাওয়াট। তখন দেশে বিদ্যুতের কোনো সঞ্চালন (ট্রান্সমিশন) ব্যবস্থাও ছিল না। উৎপাদিত বিদ্যুৎ আশেপাশের এলাকাতেই সরবরাহ করা হতো।
বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং এ ব্যাপারে পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য ১৯৪৮ সালে গঠিত হয় ইলেক্ট্রিসিটি ডাইরেক্টরেট। ১৯৫৭ সালে সরকার দেশের সকল বেসরকারি পাওয়ার হাউজ ও বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন অধিগ্রহণ করে। এর ফলে বাজারে সরকারের একচেটিয়া আধিপত্য সৃষ্টি হয়। ১৯৫৪ এবং ১৯৫৫ সালের উপর্যুপরি ভয়াবহ বন্যার পর বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে খাদ্যোৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৫৭ সনে জাতিসংঘের অধীনে গঠিত ক্রুগ মিশনের সুপারিশক্রমে এ অঞ্চলের পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৫৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (ইপিওয়াপদা) গঠন করা হয়। ১৯৫৯ সালে ওয়াটার অ্যান্ড পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (ওয়াপদা) গঠনের পর বিদ্যুৎ খাতে নতুন গতি সঞ্চারিত হয়।
১৯৬০ সালে ইলেক্ট্রিসিটি ডাইরেক্টরেট ওয়াপদার সাথে একীভূত হয়। সে সময় সিদ্ধিরগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও খুলনাতে কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ছিল সিদ্ধিরগঞ্জের ১০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
এখানে পর্যায়ক্রমে ১০ মেগাওয়াট ক্ষমতার তিনটি স্টিম টারবাইন ইউনিট স্থাপন করা হয়। ঢাকার বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে সেসময় এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
একই সময়ে ইরিগেশন ডিপার্টমেন্টের অধীনে চলছিল কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের কাজ। কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দিয়ে সৃষ্ট ৩০০ বর্গ মাইল কৃত্রিম হৃদের পানির শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সেখানে প্রথমে প্রতিটি ৪০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয় ১৯৬২ সালে। সেসময়ে কাপ্তাই ছিল বৃহত্তম বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
পাশাপাশি কাপ্তাই-সিদ্ধিরগঞ্জ ২৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণের মাধ্যমে উভয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে (সিদ্ধিরগঞ্জ ও কাপ্তাই) একক গ্রিডের আওতায় আনা হয়। ১৯৬২ সালে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ এবং কাপ্তাই-সিদ্ধিরগঞ্জ (চট্টগ্রাম-ঢাকা) ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইনের কমিশনিং ছিল দেশে বিদ্যুৎ উন্নয়নের একটি মাইলফলক।
১৯৬২ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিতাস নদীর তীরে বিরাট গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হলে জেলার আশুগঞ্জ উপজেলায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য একটি বিদেশী নির্মাণ কোম্পানির সাথে ১৯৬৬ সালে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। আশুগঞ্জ তিতাস গ্যাস ক্ষেত্রের কাছাকাছি এবং মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত বলে সে সময়ে দেশের সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য উপযুক্ত স্থান হিসেবে নির্ধারিত হয়।
মেঘনা রেলসেতুর উত্তর-পূর্ব দিকের ৩১১ একর জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে ১৯৬৬ সালে জার্মান সরকারের আর্থিক সহায়তায় প্রাথমিকভাবে মোট ১২৮ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন আশুগঞ্জ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ১৯৬৮ সালে প্রধান যন্ত্রপাতি স্থাপন কাজ শুরু হয়। মেঘনা নদীর তীর ঘেষে ১৯৭০ সালের জুলাইয়ে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে দেশের ‘বিদ্যুতের রাজধানী’ খ্যাত আশুগঞ্জ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র।
১৯৬০ থেকে ১৯৭০ সময়ে উৎপাদন ৮৮ থেকে ৪৭৫ মেগাওয়াটে দাঁড়ায়। প্রাকৃতিক গ্যাস, তেল চালিত স্টিম পাওয়ার এবং হাইড্রো প্ল্যান্ট। ঢাকা এবং চট্টগ্রামের মধ্যে ১৩২ কেভি লাইনের মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন করা হয়।মোটের উপর পাকিস্তান আমলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বিদ্যুৎ খাত ছিল একরকম অস্তিত্বহীন। কাপ্তাই ৮০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম ১৩২ কিলোভোল্ট পাওয়ার ট্রান্সমিশন লাইন, ১৯৭০ সালে চালু হওয়া ১২৮ মেগাওয়াটের আশুগঞ্জ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাইরে স্বল্প ক্ষমতার অল্প কিছু তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ছিল প্রধান সম্বল।
স্বাধীন বাংলাদেশে বিদ্যুতের অগ্রযাত্রা
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো)
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর দেশের মাত্র ৩ শতাংশ জনগণ বিদ্যুৎ আওতায় ছিল। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পর দেশ পুনর্গঠনের কাজে বিদ্যুৎ খাত গুরুত্ব পায়। সোভিয়েতের অর্থনৈতিক সহায়তায় ঘোড়াশালে ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ১১০ মেগাওয়াট ঘোড়াশাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। স্বাধীনতার পর ধ্বংসস্তুপের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করা বাংলাদেশ রাশিয়ার সাহায্য নিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর পুনর্বাসন শুরু করে।
১৯৭২ সালের ৩১ মে, রাষ্ট্রপতির আদেশবলে সাবেক ওয়াপদা থেকে পৃথক হয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশকে আলোকিত ও শিল্পায়িত করার দায়িত্ব নিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণের সমন্বিত সংস্থা হিসেবে মাত্র ৫০০ মেগাওয়াট স্থাপিত ক্ষমতাসহ যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো)।
১৯৭৬ সালে ভেড়ামারা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রথম বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। তখন দুটি ইউনিট থেকে মোট ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হতো। প্রতিটি প্ল্যান্টের উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ২০ মেগাওয়াট। চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে ১৯৮০ সালে আরো একটি প্ল্যান্ট এখানে নির্মাণ করা হয়, যার উৎপাদন ক্ষমতা ৬০ মেগাওয়াট। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ছাড়াও উত্তরাঞ্চলে সীমাহীন লোডশেডিং ও বিদ্যুতের ঘাটতি কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে এই কেন্দ্রটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে থাকে।
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড
বাংলাদেশের পল্লী অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্ব অর্পণ করে ১৯৭৭ সালে এক সরকারি অধ্যাদেশবলে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড গঠিত হয় এবং ১৯৭৮ সালের প্রথম থেকেই বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ ও বিদ্যুৎ বিতরণের কাজ শুরু করে। দেশের জনগণকে বৈদ্যুতিক সেবার মধ্যে আনয়নের লক্ষ্যে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি গঠনের মাধ্যমে দেশের সকল উপজেলায় বিদ্যুৎ বিতরণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। এ সংস্থার মোট গ্রাহক সংখ্যা জাতীয় গ্রাহক সংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশ।
যুক্ত হলো দেশের পূর্ব-পশ্চিম
বাংলাদেশের বৃহৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো ছিল সিলেট অঞ্চল থেকে পাওয়া গ্যাসভিত্তিক। এমনকি আশির দশকের জন্য বিপিডিবির পরিকল্পনায় থাকা বৃহৎ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোও ছিল গ্যাসভিত্তিক ও দেশের পূর্বাঞ্চলে তথা আশুগঞ্জ-ঘোড়াশাল বেল্টে অবস্থিত। কারণ গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ খুবই কম। অপরদিকে খুলনা-ভেড়ামারাসহ দেশের অন্যান্য গ্যাস সংযোগবিহীন স্থানে অবস্থিত তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় হচ্ছিল সংরক্ষিত বৈদেশিক মুদ্রা। এসব কারণে পূর্বাঞ্চলে উৎপাদিত অপেক্ষাকৃত সস্তা বিদ্যুৎ দেশের পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলে বিতরণের প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে অনুভূত হয়।
দেশের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের মাঝে বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপনে বড় সমস্যা ছিল দুই অঞ্চলের মাঝে তিনটি বড় নদী, যমুনা-পদ্মা-মেঘনার অবস্থান। এ বাধা অতিক্রম করাটাই ছিল সেসময়ের একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ। যমুনা নদীতে আরিচায় একটি সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়। ১৯৭৯ সালের নভেম্বরে এই রিভার-ক্রসিং স্থাপনের জন্য কন্ট্রাক্ট দেওয়া হয়। সমান্তরালে শুরু হয় নরসিংদীর ঘোড়াশাল থেকে টঙ্গী হয়ে ঈশ্বরদী পর্যন্ত দেশের সর্বপ্রথম ২৩০ কিলোভোল্ট হাইভোল্টেজ ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপনের কাজ।
১৯৮২ সালে ১১টি ফাউন্ডেশনের উপর টাওয়ার বসিয়ে কন্ডাক্টর টানানো শেষ হয়। যদিও ঘোড়াশাল থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত পুরো লাইনই ২৩০ কিলোভোল্ট বিদ্যুৎ পরিবহনে সক্ষম ছিল, কিন্তু শুরুতে ১৩২ কিলোভোল্ট দিয়েই লাইনটি বিদ্যুতায়িত করা হয়। ১৯৮৭ সালে আশুগঞ্জ ১৩২/২৩০ কেভি স্টেশনের কাজ শেষ হলে কার্যকরভাবে চালু হয় বাংলাদেশের প্রথম ২৩০ কিলোভোল্ট সক্ষমতার হাইভোল্টেজ ট্রান্সমিশন লাইন।
বাংলাদেশের সার্বিক বিদ্যুৎ খাতের ইতিহাসে একটি বড় মাইলফলক প্রথম ইস্ট-ওয়েস্ট ইন্টারকানেকশন (EWIC-1) লাইনটি। বহুদিন বাংলাদেশের পাওয়ার ট্রান্সমিশনের মেরুদন্ড হিসেবে কাজ করেছে ৪০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার এই ইন্টারকানেকশনটি।
পরে ২০০৯ সালে এসে যমুনা সেতু দিয়ে আশুগঞ্জ থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ১,০০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার দ্বিতীয় ইস্ট-ওয়েস্ট কানেকশন (EWIC-2) স্থাপন করা হয়। নদীমাতৃক বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলের সাথে পূর্বাঞ্চলের সেতুবন্ধনের প্রথম ধাপ ছিল এই EWIC-1 এর ক্রসিং। একে বলা যায় স্বাধীন বাংলাদেশে নির্মিত প্রথম মেগাস্ট্রাকচার।
আবার ফিরে এলো বেসরকারি খাত
১৯৭২-৯৫ সালের মধ্যে বিপিডিবি তাদের জেনারেশন ২,৮১৯ মেগাওয়াটে উন্নীত করতে সক্ষম হয়। সারাদেশে ২৩০ কেভির ৪১৯ কি.মি. লাইন ও ১৩২ কেভির ২,৪৬৯ কি.মি. লাইন স্থাপন করে। দেশব্যাপী ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে সরকারি সম্পদের সীমাবদ্ধতার দরুন ১৯৯৬ সালে নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেই বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। বিদ্যুৎ খাতে ব্রিটিশ আমলের মতো আবার সুযোগ দেওয়া হয় বেসরকারি মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোকে। করা হয় প্রাইভেট ইনডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার জেনারেশন পলিসি ও ক্যাপটিভ পাওয়ার পলিসি।
যদি ক্যাপটিভ তার উদ্বৃত্ত বিক্রি করতে চায়, তার ব্যবস্থাও করা হয়। সরকারের গৃহীত এসব নীতিনির্ধারণে ভালো সাড়া পাওয়া যায়। দেশী সামিট গ্রুপ এবং ইউনাইটেড গ্রুপের সাথে ফিনল্যান্ডের ওয়ার্টসিলা কর্পোরেশন ও যুক্তরাষ্ট্রের এল পাসো কর্পোরেশনের যৌথ মালিকানায় ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের প্রথম বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানি খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড। এর প্রথম প্ল্যান্টটি (কেপিসিএল ইউনিট-১) খুলনার গোয়ালপাড়ায় নদীতে ভাসমান বার্জের উপর স্থাপন করা হয়। বার্জ মাউন্টেড নামের এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১১০ মেগাওয়াট।
বিদ্যুত সঞ্চালনে নতুন চালক এবং কতিপয় সংস্কার
প্ল্যান্টে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ঘরে ঘরে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার গুরুদায়িত্ব পালন করার জন্য ১৯৯৬ সালে কোম্পানি আইনের অধীনে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অভ বাংলাদেশ (পিজিসিবি) লিমিটেড গঠন করা হয় এবং সঞ্চালন ব্যবস্থার পূর্ণ দায়িত্ব এর উপর ন্যস্ত করা হয়। সেই থেকে কোম্পানিটি দেশব্যাপী ৪০০ কেভি, ১৩২ কেভি, ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন ও গ্রিড উপকেন্দ্র নির্মাণের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিতরণ করছে।
বিউবো-র বিদ্যুৎ সঞ্চালন, উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থার পূর্ণ বা অংশবিশেষ অন্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাছে, যেমন- ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) লিমিটেড, ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) লিমিটেড, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অভ বাংলাদেশ (পিজিসিবি) লিমিটেড, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড (এপিএসসিএল), ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অভ বাংলাদেশ (ইজিসিবি) লিমিটেড, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) লিমিটেড, নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (নওপাজেকো) লিমিটেড, নর্দার্ন ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) লিমিটেডের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এগুলোর মধ্যে আরইবি, ডিপিডিসি, ডেসকো ব্যতীত অন্যান্য কোম্পানি বিউবো-র আওতাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
বিউবো বর্তমানে একক ক্রেতা হিসাবে বিদ্যুতের ক্রয় ও বিক্রয়, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) লিমিটেড, ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) লিমিটেড, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) লিমিটেড, নর্দার্ন ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) লিমিটেডের এলাকা ব্যতীত দেশের অন্যান্য অংশে বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করে।
আলোকিত বাংলাদেশের পথে স্বপ্নযাত্রা
বিদ্যুৎ খাত নানা চরাই-উতরাই পেরোলেও ২০০৮ সাল পর্যন্ত সাধারণ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ ছিল অনেকটাই অধরা। ২০০৯ সালে মহাজোট সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের সময় দেশের ৫৭ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে ছিল। সেসময় বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎ উৎপাদনে হিমশিম খেত বিদ্যুৎ বিভাগ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কারণে জনজীবন ছিল বিপর্যস্ত। মানুষ বলত, “বিদ্যুৎ মাঝে মাঝে আসে”। অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে শিল্প ও বাণিজ্যিক উৎপাদনে স্থবিরতা তৈরি হয়।
২০০৯ সালে সরকার ‘ভিশন-২০২১’- বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করে ২০২১ সালের মধ্যে ২০,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিতকরণকল্পে যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সরকার তেল ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি কয়লা, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি), সৌর, বায়ু, বায়োগ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে উদ্যোগ নেয়। সরকারের ধারাবাহিকতা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী করে তোলে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে শুরু হয় এলএনজি আমদানি। নীতিমালা সহজ করায় বিভিন্ন বেসরকারি কম্পানিও বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ শুরু করে। তা দেশের বিদ্যুৎ খাতকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নেয়।
কাটাতার পেরিয়ে বিদ্যুতের আগমন
একটা সময় ছিল, যখন দেশের এক অঞ্চলের বিদ্যুৎ অন্য অঞ্চলে সরবরাহ করা ছিল দুরূহ ব্যাপার। কিন্তু সময়ের বদলে শুধু নিজ দেশে নয়, পাসপোর্ট-ভিসার বাধা ডিঙিয়ে বিদ্যুৎ এসেছে কাটাতারের অপরপাশ থেকে। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে প্রতিবেশী দেশ থেকে আন্তঃদেশীয় সহযোগিতার মাধ্যমে বিদ্যুৎ আমদানির উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার।
৫ অক্টোবর ২০১৩ সালে শুরু হয় ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি। বর্তমানে প্রতিদিন ভারতের বহরমপুর হতে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা হয়ে ১,০০০ মেগাওয়াট এবং ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পালটানা থেকে কুমিল্লা হয়ে ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। সেই সাথে নেপাল ও ভুটানের সাথে যৌথ মালিকানায় হাইড্রো পাওয়ার প্রকল্প স্থাপন এবং জলবিদ্যুৎ আমদানি করার বিষয় প্রক্রিয়াধীন আছে।
পারমাণবিক বিদ্যুৎ জগতে বাংলাদেশের প্রবেশ
তেল, গ্যাস পুড়িয়ে তো অনেক হলো। এবার স্বপ্নে প্রবেশ করার পালা, যা বাঙালি দেখছে ৫৭ বছর ধরে। প্রাকৃতিক গ্যাস এবং কয়লার মজুদ আমাদের দেশে সীমিত হওয়ার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশকে আমদানি নির্ভর তরল পেট্রোলিয়ামের উপর বহুলাংশে নির্ভর করতে হয়। প্রাকৃতিক গ্যাস জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করার ফলে পেট্রোকেমিক্যাল জাতীয় শিল্পদ্রব্য তৈরিতে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে, কৃষির জন্য সার উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে এবং এলপি গ্যাস আমদানি করতে হচ্ছে। তেল ও কয়লা আমদানিতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ছে বটে, কিন্তু সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। সে সমস্যার সমাধান করতেই ২০২১ সালের মধ্যে দেশে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে উৎপাদনের পরিকল্পনা করে সরকার।
বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে ১৯৬০ সালে প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ জন্য ষাটের দশকে পাবনার রূপপুরে জমিও অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু এরপর নানা সীমাবদ্ধতায় কাজ শুরু করার করার জন্য অপেক্ষা করতে হয় ২০১৩ সাল পর্যন্ত।
২০০৯ সরকার ক্ষমতায় এসে টাকার অঙ্কে দেশের সবচেয়ে বড় এ প্রকল্পকে এগিয়ে নেয়। ২০২৪ সালের মধ্যে পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের ১ম ইউনিটের ১,২০০ মেগাওয়াট ও ২০২৫ সালের মধ্যে ২য় ইউনিটের ১,২০০ মেগাওয়াট মোট ২,৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত হবে।
৪৬১ উপজেলায় বিদ্যুৎ
২০০৯ সালে দেশে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ছিল ২৭। বর্তমানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা ১৪০। মাত্র ১১ বছরে ১১৩টি নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। সরকারি ও বেসরকারি যৌথ উদ্যোগের ফলেই মাত্র ১১ বছরেই বিদ্যুৎ খাতে বড় বিপ্লব ঘটেছে। শতভাগ বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে দেশের ৪৬১ উপজেলায়। পাওয়ার সেলের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বর্তমানে ২৩ হাজার ৫৪৮ মেগাওয়াট (ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ, ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ)। বিদ্যুৎ বিভাগের মতে, চাহিদার চেয়ে এখন উৎপাদন সক্ষমতা বেশি। তাই এখন কারিগরি ত্রুটির কারণে মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ গেলেও দ্রুতই চলে আসে।
বাংলাদেশের বিগত ৫০ বছরে যতগুলো বিশাল অর্জন রয়েছে, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রযাত্রা নিঃসন্দেহে তাদের মধ্যে অন্যতম। ভাওয়াল রাজবাড়ি থেকে আহসান মঞ্জিল হয়ে রাজশাহীর দুর্গম চর বা পটুয়াখালির রাঙাবালি পর্যন্ত ৮৪ হাজার ৮০০ গ্রামের ৩ কোটি ৭০ লাখ গ্রাহকের কাছে এডিসনের বিজলি বাতির এ যাত্রা যেন রূপকথাকেও হার মানায়।