উত্তর মঙ্গোলিয়ার খেনতী পর্বতমালা থেকে উৎপন্ন হয়ে বয়ে চলেছে এক নদী, নাম তার অনোন। আজ থেকে প্রায় সাড়ে আটশ বছর আগেকার কথা। এই অনোন নদীর তীরেই এক গোত্রে জন্ম নেয় এক ছেলে। বাচ্চা ছেলেটিকে দেখে বাবা ইয়েসুগেই আর মা হৈলুনের আনন্দ যেন বাঁধ মানে না! শখ করে তারা ছেলেটির নাম রাখলেন ‘তেমুজিন’।
মঙ্গোলীয় ভাষায় ‘তেমুর’ শব্দের অর্থ ‘লৌহ নির্মিত’, আর ‘জিন’ অর্থ ‘সংগঠন’। ফলে তেমুজিন শব্দের অর্থ দাঁড়ালো ‘কামার’। আচ্ছা, তেমুজিনের বাবা-মা কি অতটুকু বাচ্চার মুখ দেখেই বুঝতে পেরেছিলেন একদিন তাদের সন্তান আসলে লৌহের মতো দৃঢ় হস্তেই শাসন করতে যাচ্ছে তৎকালীন বিশ্বের বিশাল বড় এক এলাকা?
ক্ষুদে তেমুজিনের শৈশব কিন্তু মোটেই স্মরণীয় কিছু ছিলো না। বরং সেই বয়সেই জীবনের নানা নিষ্ঠুরতার মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে। মাত্র নয় বছর বয়সে প্রতিপক্ষের দেয়া বিষের প্রভাবে নিজের বাবাকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে দেখেছে সে। এরপর স্বীয় গোত্রও তার পরিবারের বিরুদ্ধে লেগে যায়। তাদেরকে বের করে দেয়া হয় গোত্র থেকে। সাতটি এতিম সন্তানকে নিয়ে শুরু হয় তেমুজিনের মা হৈলুনের বেঁচে থাকা সংগ্রাম, সন্তানদের মানুষের মতো মানুষ করবার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা।
জীবনের নানা রঙ দেখতে দেখতে বড় হতে থাকে তেমুজিন। কথিত আছে, বয়ঃসন্ধিকালে খাবার নিয়ে সৎ ভাইয়ের সাথে ঝগড়াঝাটির এক পর্যায়ে তাকে নাকি খুনও করে ফেলেছিলো তেমুজিন। তরুণ বয়সে তাকে একবার ধরে নিয়ে গিয়েছিলো প্রতিপক্ষ গোত্রের লোকেরা। কিছুদিন ক্রীতদাস হিসেবে কাটানোর পর সেখান থেকে পালিয়ে আসে সে। তার এই পালিয়ে আসার কাহিনী তাকে রাতারাতি বিখ্যাত করে তুললো।
এভাবে মাত্র বিশ বছর বয়সেই তেমুজিনের মাঝে অসাধারণ রণকুশলী যোদ্ধা ও স্বপ্নদ্রষ্টা এক নেতার দেখা পেয়ে যায় তার গোত্রের লোকেরা। ধীরে ধীরে তার অনুসারীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। তরুণ তেমুজিনও মন দেয় তার ক্ষমতার পরিধি বিস্তৃতির দিকে। পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোর গোত্রপতিরা ধীরে ধীরে তেমুজিনের স্বপ্নের সাথে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে, আসতে থাকে তার আনুগত্যের পতাকাতলে। ১২০৬ সাল নাগাদ বড়সড় এক সেনাবাহিনীকে তার জন্য যুদ্ধে যেতে প্রস্তুত অবস্থায় দেখতে পায় তেমুজিন।
১২০৬ সালের কথাটা মনে রাখুন। কারণ এ বছরই পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যায় তেমুজিন, জেগে ওঠে এক ‘খান’, এক ‘চেঙ্গিস খান’! সেই বছর বিভিন্ন গোত্রপতিদের এক সম্মেলনে তেমুজিন নিজেকে ‘চেঙ্গিস খান’ হিসেবে ঘোষণা করেন। ‘খান’ শব্দের অর্থ ‘নেতা’ বা ‘শাসক’। তবে ‘চেঙ্গিস’ শব্দটি কোথা থেকে এলো সেই ব্যাপারে ইতিহাসবিদগণ দ্বিধান্বিত। অনেকেই মনে করেন এর অর্থ ‘মহাসমুদ্র’ কিংবা ‘ন্যায়পরায়ণ’। তবে সব মিলিয়ে অনেকে তার নামের অর্থ দাঁড় করেন ‘বিশ্বজনীন শাসক’।
এরপর চেঙ্গিস খান শুরু করেন তার বিশ্বজয়ের অভিযান। একে একে বিভিন্ন রাজ্য শক্তিশালী মঙ্গোল বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে থাকে। যে রাজ্যেই মঙ্গোলদের ছায়া পড়তো, সেখানেই হত্যা-লুন্ঠন-খুলির স্তুপ তৈরী হতো, বয়ে যেত রক্তের নদী। ১২২৭ সালে ‘গ্রেট খান’ নামে পরিচিত চেঙ্গিস যখন হঠাৎ করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন, তখন তার প্রতিষ্ঠিত মঙ্গোল সাম্রাজ্য সারা পৃথিবীর কাছে দুঃস্বপ্নের নামান্তর। প্রায় ১.২ কোটি বর্গ মাইল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ছিলো মঙ্গোলদের বিশাল সেই সাম্রাজ্য।
আচ্ছা, কখনো কি আপনার মনে প্রশ্ন জেগেছে- কোনো বিশেষ অস্ত্রের সাহায্যে কি চেঙ্গিস খান এভাবে একের পর এক জয় পেয়ে যাচ্ছিলেন? যদি এমন কোনো অস্ত্র থেকেই থাকে, তবে সেটা কী? আর সেই অস্ত্র তার কাছে এসেছিলোই বা কীভাবে?
যুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে ঘাটাঘাটি করলে আপনার অবশ্যই জানা আছে কোনো যুদ্ধে জিততে হলে সৈন্যসংখ্যা, অস্ত্রশস্ত্র, বুদ্ধিদীপ্ত সৈন্য পরিচালনার মতো বিষয়গুলোর পাশাপাশি প্রকৃতিরও বিশাল ভূমিকা রয়েছে। যুদ্ধক্ষেত্রে এক পক্ষ কোথায় অবস্থান নিচ্ছে, সেই বিষয়ের উপরও তার যুদ্ধে জয় অনেক ক্ষেত্রে নির্ভরশীল। পাশাপাশি আরেকটি জিনিসও সমান গুরুত্ব বহন করে। সেটি হলো আবহাওয়া।
অতীতের বিভিন্ন যুদ্ধের ইতিহাস পর্যালোচনা করলেই দেখা যাবে কখনো কখনো যুদ্ধে একপক্ষ সৈন্যসংখ্যা, অস্ত্রশস্ত্রের দিক থেকে এগিয়ে থাকলেও মার খেয়ে গেছে আবহাওয়ার কাছে। ১৮১২ সালে সম্রাট নেপোলিয়নের নেতৃত্বাধীন ফরাসী বাহিনী আক্রমণ চালায় রাশিয়ায় এবং হেরে যায়। যুদ্ধে নেপোলিয়নের বাহিনীর হেরে যাওয়ার উল্লেখযোগ্য একটি কারণ ছিলো আবহাওয়া, আরো নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে কনকনে ঠান্ডা আবহাওয়া। তার বাহিনী প্রস্তুতি নিয়ে গিয়েছিলো গ্রীষ্মকালীন যুদ্ধের জন্য। তাই তাদের সাথে গরম জামা-কাপড় ছিলো না। নেপোলিয়ন ভেবেছিলেন রাশিয়াকে ২০ দিনেই হারানো সম্ভব। তাও ভেবে-চিন্তে ১ মাসের রসদ নিয়ে যান তিনি। সেখানে তাদের যুদ্ধাভিযান স্থায়ী হয় প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস। ফলে মারাত্মক খাদ্য সংকট দেখা দেয়। একদিকে দুর্বল শরীর, অন্যদিকে হাইপোথার্মিয়ার ধকল সইতে না পেরে অনেক সৈন্যই মারা যায়। বরফাচ্ছাদিত ভূমি দিয়ে ঘোড়াগুলোর চলতেও বেশ অসুবিধা হচ্ছিলো।
ঠিক এমন এক ঘটনা ঘটেছিলো চেঙ্গিস খানের সাথেও। তাও আবার একবার-দু’বার না, শত শত বার, এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। এটা ছিলো এমনই এক ঘটনা যা বিগত হাজার বছর ধরে মঙ্গোলিয়া দেখে নি। আর এই ঘটনাকেই আধুনিক কালের ইতিহাসবিদগণ বলছেন অস্ত্র, ‘চেঙ্গিস খানের গোপন অস্ত্র’!
খান সাহেব নিজেও কিন্তু জানতেন না যে তার উপর আশীর্বাদ হিসেবে এসেছে এক গোপন অস্ত্রের শক্তি। সেটা জানতে আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে ২০১৪ সাল পর্যন্ত। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ল্যামন্ট-ডোহার্টি আর্থ অবজার্ভেটরি এবং ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক ট্রি রিং (Tree Ring) বা গ্রোথ রিং (Growth Ring) নামে পরিচিত গাছের প্রস্থচ্ছেদের বৃত্তাকার দাগগুলো নিয়ে গবেষণা করে এই অস্ত্রের সন্ধান পেয়েছেন।
ডেন্ড্রোক্রোনোলজি (Dendrochronology) হলো বিজ্ঞানের সেই শাখা যেখানে গাছের এই রিংগুলোকে নিয়ে গবেষণা করা হয়, খুঁজে বের করা হয় সেই সময়কাল যখন রিংগুলো গড়ে উঠেছিলো। রিংয়ের গড়ে ওঠা সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ের আবহাওয়া সম্পর্কে চমৎকার ধারণা পাওয়া সম্ভব। সেই সময়ে আবহাওয়া কেমন ছিলো, এর পরিবর্তনের ধারা কেমন ছিলো- এমন সব বিষয় নিয়ে সম্যক ধারণা পাওয়া সম্ভব ডেন্ড্রোক্রোনোলজির সাহায্যে।
মঙ্গোলিয়ার হ্যাঙ্গে (Hangay) পর্বতমালার পাইন গাছগুলোকে বিজ্ঞানীরা বেছে নিয়েছিলেন গবেষণার জন্য। সেই গাছগুলোর রিং পর্যবেক্ষণ করে তারা দেখতে পেয়েছেন যে, মঙ্গোলিয়ার সেই শুষ্ক, অনুর্বর, ঠান্ডা অঞ্চলে চেঙ্গিস খানের উত্থানকালীন সময়ে একনাগাড়ে ১৫ বছর প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। তাছাড়া সেই সময়ের আবহাওয়াও ছিলো বেশ শান্ত প্রকৃতির। ‘Pluvials, droughts, the Mongol Empire, and modern Mongolia’ নামে এ সংক্রান্ত একটি গবেষণাপত্র তারা প্রকাশ করেছিলেন ‘Proceedings of the National Academy of Sciences’ জার্নালে।
১২১১ থেকে ১২২৫ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত সময়টি ছিলো চেঙ্গিস খান এবং একইসাথে মঙ্গোল সাম্রাজ্যের বিকাশকাল। বিজ্ঞানী দলের এ গবেষণা থেকে জানা যায় যে, ঠিক এ সময়কালেই মধ্য মঙ্গোলিয়ায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। ফলে সেই অঞ্চলের আবহাওয়ায় অনেক পরিবর্তন আসে। চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার বদলে মঙ্গোলিয়ার অধিবাসীরা বেশ বন্ধুভাবাপন্ন এক আবহাওয়া ঘেরা পরিবেশে নিজেদের আবিষ্কার করে।
কেন শুধুমাত্র প্রচুর বৃষ্টিপাত আর চমৎকার আবহাওয়াকে চেঙ্গিস খানের গোপন অস্ত্র বলা হচ্ছে? এ কথার তাৎপর্য বোঝাতে একটি তথ্যই যথেষ্ট- “এই ১৫ বছরের আগে বিগত প্রায় ১,১০০ বছর এমন চমৎকার আবহাওয়া আর বৃষ্টিপাত দেখেনি মঙ্গোলিয়ার জনগণ!”
পাঠকের মনে এখন প্রশ্ন আসতেই পারে, “আচ্ছা, বুঝলাম হাজার বছরের মাঝে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত আর চমৎকার আবহাওয়া পাইছিলো খান সাহেব। কিন্তু এইটার সাথে তার যুদ্ধ জয়ের সম্পর্কটা কই?” বেশ চমৎকার এক প্রশ্ন, উত্তরটাও তাহলে একটু গুছিয়ে দেয়া যাক।
অনুকূল আবহাওয়ার সাথে চেঙ্গিস খানের নেতৃত্বাধীন মঙ্গোল বাহিনীর একের পর এক জয়ের সম্পর্ক এতটাই চমৎকার যে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলে আপনি বেশ কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে যেতে বাধ্য।
বৃষ্টিপাত কীসের জন্য ভালো? উত্তর অবশ্যই গাছপালা। প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলে তৎকালে সেই অঞ্চলের গাছপালাগুলো বেশ উপকৃত হয়েছিলো, সেই সাথে জন্মাচ্ছিলো প্রচুর পরিমাণে ঘাস। এখন বলুন তো, “ঘাস কারা খায়?” বোকার মতো প্রশ্ন করে ফেললাম। আমাদের পরিচিত প্রাণীদের মাঝে গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ, ঘোড়ার মতো তৃণভোজী প্রাণীরাই তো ঘাস খায়। এটা তো সবারই জানা। কিন্তু তারপরও আরেকবার প্রাণীগুলোর নামের দিকে খেয়াল করে দেখুন তো। আপনার গবাদি পশুগুলো যদি প্রচুর পরিমাণে ঘাস পায়, তাহলে তারা স্বাস্থ্যবান হয়ে উঠবে। তারা স্বাস্থ্যবান হওয়া মানে আপনি তাদের দিয়ে ভালোমতো নিজের আর্থিক চাহিদা মেটাতে পারবেন। সেই সাথে পশুগুলোর মাংস, দুধ এবং দুধ দিয়ে তৈরী বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য যে আপনার শরীরে পুষ্টির বিশাল বড় যোগানদাতা হতে পারে, তা তো না বললেও চলে।
এবার আসা যাক ঘোড়ার কথায়। মঙ্গোল বাহিনীর প্রতিটি যুদ্ধে অপরিহার্য অংশ ছিলো তাদের ঘোড়াগুলো। অত্যন্ত দ্রুততার সাথে ছুটতে পারতো মঙ্গোল ঘোড়া। দিনে প্রায় ১০০ মাইল পথ পাড়ি দেয়া সম্ভব ছিলো তাদের দ্বারা। ফলে পদাতিক বিশাল বিশাল বাহিনী এদিকে পিছিয়ে পড়তো মঙ্গোলদের চেয়ে। এই ঘোড়াগুলো ছিলো তুলনামূলক ছোট আকারের। তবে তাদের শক্তি ছিলো চোখে পড়ার মতো। দীর্ঘ সময় ধরে একটানা দৌঁড়ে যেতে পারতো ঘোড়াগুলো। ফলে মঙ্গোল বাহিনীর ঝড়ের বেগে গিয়ে কোথাও আক্রমণ হানার পেছনে অন্যতম মূল চালিকাশক্তি হিসেবে যে দ্রুতগামী এ ঘোড়াগুলো কাজ করতো, তা বোধহয় না বললেও চলে। এছাড়া ঘোড়ার দুধ থেকে তৈরী করা হতো দই, পনির ও আইরাগ নামক একপ্রকার উত্তেজক পানীয়। আবার খুব বেশি দরকার হলে সৈন্যরা ঘোড়ার রক্ত পান করতো, খেত ঘোড়ার মাংস।
বারো শতকের আশি ও নব্বইয়ের দশকে মঙ্গোলিয়ায় বেশ খরার প্রাদুর্ভাব ঘটে। তখন মঙ্গোল গোত্রগুলোর মাঝে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়, নিয়মিত বিরতিতে ঘটতে শুরু করে হানাহানির ঘটনা।
এবার তাহলে দুইয়ে দুইয়ে চার মেলানো যাক। একদিকে হাজার বছরের চিরচেনা প্রকৃতির হঠাৎ রুপ বদল উর্বরা করে তুললো অনুর্বর ভূমিকে, জন্মাতে থাকলো প্রচুর ঘাস। সেই ঘাস খেয়ে তরতাজা হলো গবাদিপশু ও ঘোড়াগুলো। ওদিকে কাছাকাছি সময়ে আবির্ভাব ঘটলো চেঙ্গিস খান নামক এক নেতার, যিনি তার কথার মোহনীয় জালে সবাইকে আটকাতে পেরেছিলেন, তাদেরকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন মঙ্গোলীয়রাও পৃথিবীর ইতিহাস নতুন করে লিখতে সক্ষম। তার সেই জ্বালাময়ী, অনুপ্রেরণাদায়ক ভাষণে মুগ্ধ হলো হাজার হাজার গোত্রবাসী। বন্ধুভাবাপন্ন আবহাওয়ার আশীর্বাদে তখন বিভিন্ন গোত্রের মাঝে হানাহানিও কমে এসেছিলো। এমন সময়ে চেঙ্গিস খানের উদাত্ত আহ্বান তাদের সবাইকে এক মঞ্চে জড়ো করতে লাগলো।
ধীরে ধীরে দ্য গ্রেট খানের নেতৃত্বে শুরু হলো মঙ্গোল বাহিনীর বিজয়াভিযান, পতন ঘটতে লাগলো একের পর এক রাজ্যের, ধুলোয় মিশে যেতে শুরু করলো অগণিত শহর-জনপদ। পৃথিবীবাসী জানলো এ ধরায় আগমন ঘটেছে রক্তপিয়াসী এক জাতির, নাম তাদের মঙ্গোল, যারা বিজয়ের পর শত্রুর মনে চিরস্থায়ী ত্রাস জন্ম দিতে বানায় খুলির পিরামিড, গর্ভবতী মায়ের পেট চিরে বের করে আনে সন্তানকে, নির্বিচারে খুন করে পরাজিত জনপদের সকলকে।
১২২৭ সালে চেঙ্গিস খান যখন পরপারে পাড়ি জমান, তার নিজ হাতে চারাগাছ থেকে যাত্রা শুরু করা মঙ্গোল সাম্রাজ্য ততদিনে মহীরুহে পরিণত হয়েছে। কালক্রমে তার বংশধরদের হাত ধরে ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে এ সাম্রাজ্যের। কোরিয়া, চীন, রাশিয়া, সাইবেরিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, পূর্ব ইউরোপ, ভারতীয় উপমহাদেশ সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া চলে আসে তাদের হাতের মুঠোয়।
পাঠক, এখন আপনারাই বলুন, বৃষ্টিপাত ও বন্ধুভাবাপন্ন আবহাওয়াকে যদি চেঙ্গিস খানের গোপন অস্ত্র বলা হয়, তবে সেটা অত্যুক্তি হয়ে যাবে কি? হয়তো তিনি জেনেশুনে কখনোই এ অস্ত্রটি ব্যবহার করেন নি। তবে সেই অস্ত্রের সুফল তিনি ভোগ করেছেন পুরোপুরিই, ভোগ করেছে পরবর্তী কয়েকশ বছর তার শত শত বংশধর।