চেঙ্গিস খানের মঙ্গোল সাম্রাজ্য নিয়ে আমাদের আগ্রহের কোনো শেষ নেই। ভয়ঙ্কর এ বিজেতার প্রতিষ্ঠিত মঙ্গোল বাহিনীর যুদ্ধ-বিগ্রহের করুণ ইতিহাস এখনও আমাদের মনকে ভরিয়ে তোলে বিষণ্ণতায়। তবে আজকে চেঙ্গিস খানের কোনো যুদ্ধের গল্প করতে এ লেখাটি না, বরং তার প্রতিষ্ঠিত সেই মঙ্গোল সাম্রাজ্যের দৈনন্দিন জীবনের বিচিত্র কিছু দিক আলোচনার উদ্দেশ্যেই এ লেখার অবতারণা।
অপরিচ্ছন্নতা
চেঙ্গিস খানের সময়কালীন মঙ্গোলীয়রা বিশ্বাস করতো যে, কোনো কারণে পানি অপবিত্র করলে সৃষ্টিকর্তা তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে ধ্বংস করে দিবেন তাদের ঘরবাড়ি। এজন্য গোসল করা কিংবা কাপড় ধোয়া ছিলো নিষিদ্ধ। অধিকাংশ মঙ্গোলীয় যোদ্ধাই তাদের কাপড় ধোয়ার নাম মুখে আনতো না। খুব বেশি হলে একটু ঝেড়ে ওটা থেকে উকুনগুলো সরিয়ে তারপর আবার গায়ে দিত। এভাবে যতদিন না কাপড়টা গায়ে দেয়ার অনুপযুক্ত হতো, ততদিন তারা এভাবেই সেগুলো ব্যবহার করতো।
খাওয়াদাওয়ার পর থালা-বাসন ঠিকমতো ধোয়ার নামও তারা মুখে আনতো না। এজন্য তারা সর্বশেষ যে পানি দিয়ে তরকারি সিদ্ধ করা হয়েছে, সেটাই ব্যবহার করতো। ধোয়া শেষে সেই পানি দিয়ে আবার পরেরবার রান্নার কাজ চালাতো!
মাত্র তিন বছর বয়সে অশ্বচালনা
ধনী-গরীব নির্বিশেষে প্রতিটি মঙ্গোলীয় পরিবারেই ঘোড়ার উপস্থিতি দেখা যেত। ফলে খুব ছোটবেলা থেকেই তাদের সন্তানেরা ঘোড়া চালাতে শিখতো।
বাচ্চাদের জন্য বিশেষ ধরনের জিন বানিয়ে নিতো তারা। সেখানে অনভিজ্ঞ সেসব অশ্বচালকদের জন্য থাকতো বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা। একটি বাচ্চার হাঁটাহাঁটি ও দৌড়াদৌড়ির মতো ঘোড়া চালাতে শেখাও ছিলো তাদের কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাদের এমন দক্ষতা দেখে একবার ইউরোপীয়রা চিঠি লিখে জানিয়েছিলো যে, মঙ্গোলীয়ার বাচ্চা মেয়েরাও ইউরোপের অধিকাংশ পুরুষের তুলনায় ভালো ঘোড়া চালাতে পারে। পাশাপাশি ছোটবেলা থেকে তীর-ধনুকের ব্যবহারও শিখতো তারা।
ঘোড়ার রক্ত পান
মঙ্গোলীয় সেনারা একদিনে সর্বোচ্চ ১২৯ কিলোমিটার পর্যন্ত পথও পাড়ি দিতে পারতো যা তাদের সময়ে কেউ কল্পনাও করতে পারতো না। দীর্ঘ এ যাত্রাপথে ক্ষুধা নিবারণের জন্য তারা ঘোড়ার পিঠে কাচা মাংস বয়ে নিয়ে যেত।
মার্কো পোলোর মতে, কুখ্যাত এ যোদ্ধারা একটানা দশদিন পর্যন্ত অত্যন্ত অল্প বিরতি দিয়ে চলতে পারতো। কখনো যদি পিপাসা পেত, তবে কেটে ফেলতো ঘোড়ার গলাটাই। এরপর ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে আসা রক্তই হতো তাদের তৃষ্ণা নিবারণের মাধ্যম! এছাড়া ঘোড়ার দুধ থেকে গাজন প্রক্রিয়ায় মদ বানানোর রীতি তো চালু ছিলোই।
বিচিত্র নিয়মে পশু জবাই
তৎকালে মঙ্গোলীয়দের প্রধান খাবার ছিলো মূলত পশুর মাংস ও দুধ। তবে তাদের পশু জবাইয়ের নিয়ম শুনলে আঁতকে উঠবে যে কেউ।
প্রথমেই পশুটিকে বেঁধে মাটিতে ফেলে দিতো তারা। এরপর ছুরি দিয়ে বুক চিরে হৃৎপিণ্ড বের করে আনা হতো। এবার সেই হৃৎপিণ্ডটি চিপে মৃত পশুর সারা গায়ে ছড়িয়ে দেয়া হতো রক্ত! এরপর সেই মাংস সিদ্ধ করে কিংবা কাবাব বানিয়ে খাওয়া হতো। বিশেষ উপলক্ষ্যে কখনো কখনো ঘোড়াও আসতো তাদের খাদ্যতালিকায়। এমনকি সদ্যোজাত ঘোড়ার ছানাও বাদ যেত না সেই তালিকা থেকে।
বহুবিবাহ
বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের ব্যাপারে বেশ কড়াকড়ি ছিলো প্রাচীন মঙ্গোল সমাজে। বেশ ঘৃণার চোখেই দেখতো তারা এ ব্যাপারটিকে।
যদি একজন পুরুষকে স্ত্রী ব্যাতীত অন্য কোনো বিবাহিতা নারীর সাথে দেখা যেত, তাহলে সেই লোকটির ঠোঁট কেটে নেয়া যেত। যদি সেই সম্পর্ক বিছানা পর্যন্ত গড়াতো, তাহলে সেই লোকটিকে খুনের বিধান ছিলো। আর যদি সেই লোকটিকে কোনো অবিবাহিতা নারীর সাথে দেখা যেত, তাহলে দুজনকেই চলে যেতে হতো পরপারে! এতই যখন কড়াকড়ি, সমাধান তো তাহলে একটাই, বিয়ে করা, তাই না? মঙ্গোলীয়রা যত খুশি তত বিয়ে করতে পারতো। এতে তাদের কোনো বিধি-নিষেধ ছিলো না। অবশ্য এজন্য একজন পুরুষকে কিছুটা যৌতুক দেয়া লাগতো। সেই সাথে স্ত্রীর জন্য আলাদা একটি তাবুর ব্যবস্থা করে দেয়ার আর্থিক সঙ্গতিও থাকা লাগতো।
বিয়ের এ স্বাধীনতায় কোনো কোনো মঙ্গোল পুরুষের ত্রিশজন করে স্ত্রীও থাকতো। ওদিকে তাদের নেতা খানদের তো থাকতো শতাধিক স্ত্রী!
সৎমায়ের সাথে বিয়ে
যখন কোনো মঙ্গোলীয় মারা যেত, তখন তার রেখে যাওয়া সব সম্পত্তি ভাগ করে দেয়া হতো তার ছেলেদের মাঝে। তবে সবচেয়ে বেশি ভাগ পেত ছোট সন্তান। বাবার বাড়ি ও দাস-দাসীদের পাশাপাশি সকল স্ত্রীর দায়িত্বও এসে পড়তো তার ঘাড়েই।
যদিও কখনোই সে তার নিজের মায়ের সাথে বৈবাহিক সম্পর্কে জড়াতো না, কিন্তু তার বাবার অন্যান্য সকল স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব এসে পড়তো তার ঘাড়েই! তাদের সমাজে এমন কোনো বাঁধাধরা নিয়ম না থাকলেও, একজন মঙ্গোলীয় পুরুষ চাইলেই তার সৎমায়েদেরই নিজের স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে পারতো। আর এ ঘটনা প্রায়ই দেখা যেত সেই সময়!
মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধকৌশল
মঙ্গোলীয়রা যে এককালে পৃথিবীর এত বিশাল অঞ্চল নিজেদের দখলে আনতে পেরেছিলো, এর পেছনে তাদের শারীরিক যুদ্ধকৌশলের পাশাপাশি মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধকৌশলও বিরাট ভূমিকা রেখেছিলো।
প্রতিপক্ষের সৈন্য সংখ্যা যদি তাদের চেয়ে বেশি হতো, তাহলে তারা বাড়তি ঘোড়ার উপর বসিয়ে রাখতো ডামি, রাতের বেলায় আগুন জ্বালাতো প্রয়োজনের চেয়ে বেশি যাতে করে তাদের সংখ্যা বেশি বলে মনে করে শত্রুপক্ষ। আবার মাঝে মাঝেই শত্রুকে পথভ্রান্ত করে দিতে ঘোড়ার লেজে গাছের শাখা বেঁধে দিতো তারা। তখন পেছনে উড়তে থাকা ধুলোর প্রভাবে কমে যেত প্রতিপক্ষের গতি।
একবার শুধুমাত্র তাদের তাঁবুর রঙ দিয়েই দেয়ালঘেরা সুরক্ষিত এক নগরীর অধিবাসীদের ভয় পাইয়ে সক্ষম হয়েছিলো তারা। প্রথমে তারা ক্যাম্প স্থাপন করেছিলো সাদা রংয়ের তাঁবু ব্যবহার করে। তখন নগরবাসীকে তারা জানায় যে, যদি তারা আত্মসমর্পন করে, তাহলে তাদের ছেড়ে দেয়া হবে। এরপরও যদি তারা আত্মসমর্পন না করে, তবে তারা লাল রঙের তাঁবু খাটাবে, যার অর্থ হলো শুধু পুরুষদের হত্যা করা হবে। আর তারপরও যদি নগরবাসী মঙ্গোলদের অধীনত্ব মেনে না নেয়, তাহলে খাটানো হবে কালো রংয়ের তাঁবু, যার অর্থ হত্যা করা হবে সবাইকে!
গণহত্যা
এই ব্যাপারে মঙ্গোলরা যে নজির স্থাপন করেছে, তার জন্য পৃথিবীবাসী আজীবন তাদের কথা মনে রাখতে বাধ্য। ক্রমাগত গণহত্যা তাদের শত্রুদের মনে এমন এক ভীতির সঞ্চার করে দিতো যা পরবর্তীতে তাদের যুদ্ধজয়ের ব্যাপারে বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করতো।
যদি কোনো শহরের বাসিন্দারা তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতো, তাহলেই আর নিস্তার থাকতো না তাদের। একে একে খুন করা হতো নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর সহ সকল বয়সের মানুষদেরই। মাঝে মাঝে এ আক্রমণ থেকে বাদ যেত না কুকুর-বিড়ালের মতো প্রাণীও। হত্যার পর মৃতদেহগুলোর শিরোচ্ছেদ করে তারা বানাতো বিশাল পিরামিড, যাতে করে এ পথ দিয়ে যাবার সময় শত্রুরা তাদের কথা স্মরণ করে ভয়ে কেঁপে ওঠে।
মঙ্গোলদের এ নৃশংসতা থেকে বাদ যেত না কোনো গর্ভবতী নারীও। এক আরব ঐতিহাসিকের বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, তারা মায়ের পেট চিরে বের করে আনতো সেই শিশুকে। এরপর খুন করতো তাকেও!
অসুস্থ মৃতদেহ নিক্ষেপ
যখন মঙ্গোলীয়রা ইউরোপে আক্রমণ চালিয়েছিলো, তখন সেখানে চলছিলো ব্ল্যাক প্লেগের মহামারী। আর এ অসুস্থতাকেও মারাত্মকভাবে নিজেদের পক্ষে কাজে লাগানোর এক কৌশল বের করেছিলো দুর্ধর্ষ মঙ্গোল বাহিনী।
যখন তারা কাফ্ফা নগরী দখল করতে গিয়েছিলো, তখন সময়মতো নগরবাসী প্রধান ফটক আটকে দিয়ে নিজেদের আপাতত রক্ষা করতে সমর্থ হয়েছিলো। অল্প কিছুদিনের মাঝে ব্ল্যাক প্লেগের কবলে পড়ে যায় তারাও। মঙ্গোলীয়রাও এর থেকে নিরাপদ থাকতে পারে নি। যখন তারা বুঝতে পারে যে, এ অবরোধ বেশিদিন চালিয়ে নেয়া যাবে না, তখনই তারা বের করে বিচিত্র এক উপায়।
যখনই কোনো মঙ্গোল সেনা প্লেগের কারণে মারা যেত, তখনই তারা সেই মৃতদেহটি ক্যাটাপুল্টে বেঁধে ছুঁড়ে মারতো নগরের ভেতরে। নগরবাসী এসব মৃতদেহকে বোকার মতো ফেলে দিতো নিকটবর্তী সাগরে। এর ফলে যা হবার তা-ই হলো, দূষিত হয়ে গেলো তাদের পানি সরবরাহ ব্যবস্থা। ফলে কিছুদিনের মাঝে প্লেগের কবলে পড়ে পুরো নগরবাসীই। কিছু লোক অবশ্য দেয়াল টপকে পালিয়ে গিয়েছিলো আরো পশ্চিমে। কিন্তু এতে লাভ আসলে কিছুই হয় নি। ততদিনে তারাও প্লেগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছিলো। ফলে উল্টো তাদের কারণে পরবর্তীতে ইউরোপের আরো অনেক জনপদেই এ রোগ ছড়িয়ে যায়।
মঙ্গোল নারী
অধিকাংশ ঐতিহাসিকের বর্ণনায় মূলত মঙ্গোল পুরুষদের বীরত্বের কথাই ঘুরে-ফিরে এসেছে। কিন্তু তাদের নারীদের কথা ভোলার কোনো উপায় নেই। কারণ পুরুষেরা যখন যুদ্ধ-বিগ্রহে ব্যস্ত থাকতো, তখন ঘরবাড়ি, ব্যবসা-বাণিজ্য সামলানোর পুরো দায়িত্ব থাকতো নারীদের কাঁধেই। তাদের ওঝা ভিত্তিক ধর্মব্যবস্থায় নারীরাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলো। এমনকি চেঙ্গিস খানের মৃত্যুর পর কয়কজন নারী শাসকও পেয়েছে মঙ্গোলীয়রা।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় মান্ধুহাইয়ের কথা। রাণী হিসেবে তিনি যেসব ছিলেন বেশ বিচক্ষণ, তেমনই যোদ্ধা হিসেবেও ছিলেন অসাধারণ কুশলী। চেঙ্গিসের মতো তিনিও বিভিন্ন মঙ্গোল গোত্রকে একত্রিত করে যুদ্ধের পর যুদ্ধ জয় করে গেছে। ত্রিশ বছর বয়সের তিনি হঠাৎ অনুভব করলেন যে, তার উত্তরাধিকারী দরকার যারা প্রজন্মান্তরে বয়ে নিয়ে যাবে তার বংশের নাম। ভাবামাত্রই সতের বছর বয়সী এক ছেলেকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। সেই ঘরে তার আটটি সন্তানের জন্ম হয়। তবে তার যুদ্ধাভিজানও তখন চলেছিলো সমান মাত্রায়।
ডাকবিভাগ
বিশাল বড় মঙ্গোলীয় সাম্রাজ্য পরিচালনার জন্য এর বিভিন্ন অংশের মাঝে নিয়মিত যোগাযোগের দরকার হতো। আর এজন্য তারা অসাধারণ এক ডাক বিভাগ চালু করেছিল যার নাম ‘ইয়াম’।
অনেক পর্যটকই এই ইয়ামের বিশালতা ও নির্ভরযোগ্যতা দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন। ২৪-৬৪ কিলোমিটার দূরত্বে স্থাপন করা হতো সেসব পোস্ট অফিস। সবসময়ই তাতে কর্মচারীরা থাকতো। চিঠিপত্র, গোয়েন্দা সংবাদ ও রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তারা সবসময় নিষ্ঠার সাথে বহন করতো। একসময় শুধু চীনেই এমন ইয়াম ছিলো প্রায় ১,৪০০টি। আর কাজ চালানোর জন্য ছিলো প্রায় ৫০,০০০ এর মতো ঘোড়া।
সিল্ক রোড
চেঙ্গিস খানের শাসনামলে সিল্ক রোড ছিলো এশিয়া ও ইউরোপের মাঝে সংযোগ স্থাপনকারী একমাত্র সড়ক। আর এটি পুরোপুরি নিজের অধীনে নিয়ে আসা ছিলো মঙ্গোলীয়দের জন্য অনেক বড় সাফল্য। কারণ এই সড়ক থেকে আসা ট্যাক্স ও টোল পরবর্তীকালে মঙ্গোলীয় সাম্রাজ্যের আয়ের অন্যতম উৎসে পরিণত হয়েছিলো।
যখন চেঙ্গিস খান বুঝতে পারেন যে, তা বিশাল সেনাবাহিনীও প্রায় ৬,৪৩৭ কিলোমিটার দীর্ঘ বিশাল এ সড়ক পুরোপুরি দখলে আনতে পারে নি, তখনই তিনি বেছে নেন ধ্বংসের অন্য এক মাত্রা। তার বাহিনী পথের প্রতিটি আরব ও তুর্কী উপনিবেশ ধ্বংস করে এগোতে শুরু করে যতদিন না তারা পরাজয় কিংবা আত্মসমর্পনের যেকোনো একটিকে বেছে নিয়েছিলো। এভাবে একসময় পুরো সিল্ক রোডই এসে যায় মঙ্গোল সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে। চেঙ্গিস খান অবশ্য এ বিজয় দেখে যাওয়ার আগেই পরপারে পাড়ি জমিয়েছিলেন।
অস্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি
মঙ্গোলীয়দের দৃষ্টিশক্তি সম্পর্কে বেশ কিছু কথা প্রচলিত আছে। অবশ্য সেগুলো যে অতিরঞ্জিত তা শুনলেই বোঝা যায়। তাদের ব্যাপারে এক সময় এ কথা প্রচলিত ছিলো যে, মঙ্গোলীয়রা নাকি খোলা প্রান্তরে হালকা ঝোপের আড়ালে লুকনো শত্রুকে ৪ মাইল দূর থেকেও দেখতে পায়! আবার ১৮ মাইল দূর থেকেও তারা একজন মানুষ আর একটি পশুকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করতে পারে!
সৈনিকদের খাবার
দুর্ধর্ষ এ সেনারা খাবার হিসেবে পেত দই যা পানির সাথে মিশিয়ে ঘোলের মতো বানিয়ে খেত, লবণ দিয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে সংরক্ষিত মাংস এবং কুমিস নামক এক ধরনের মদ যা ঘোড়ার দুধ থেকে বানানো হতো। তবে যদি কোনো কারণে তাদের নিয়মিত এ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেত, তবে তারা খেত কুকুর, নেকড়ে, ইঁদুর, এমনকি সদ্যজাত অশ্বশাবকও!
এমনকি এ সেনাদের মানুষের মাংস খেতেও নাকি দেখা গিয়েছে, যদিও এটা বেশ দূর্লভ। পোপ চতুর্থ ইনোসেন্টের নির্দেশে ফ্রান্সিস্কান ফ্রায়ার জিওভান্নি কার্পিনি একবার এক কূটনৈতিক মিশনে গিয়েছিলেন মঙ্গোল সাম্রাজ্যে। তিনি সেইবার এমন এক ঘটনার কথা উল্লেখ করেছিলেন যেখানে প্রতি দশজন সেনার একজনকে হত্যা করতে হয়েছিলো খাদ্যের চাহিদা মেটাতে!