অমরত্বের খোঁজে মধ্যযুগীয় ফরাসি আলকেমিস্ট নিকোলাস ফ্লামেল, মহাবিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন যেমন কাজ করে গেছেন, তেমনই ইতিহাসের সুদূর পানেও দেখাশোনা মেলে নানা ব্যক্তির নানা উপকথা, আর হরেক রকমের অভিযানের গল্প। যদি সেটা পরশমণির সন্ধানে না হয়ে থাকে, তবে সেটা হয় অমিয় সুধার সন্ধানে। আর তা হলো অমরত্বের ঝর্ণা। এ নিয়ে আছে নানা রকম গল্প, উপকথা ইত্যাদি। তবে উপমহাদেশে এ নিয়ে এককালের সবচেয়ে জনপ্রিয় ঘটনাটি ছিল আবে হায়াত আর খাজা খিজিরের (الخضر) ঘটনা।
আমরা এ পর্বে সে ঘটনাই তুলে ধরব, আর কথা বলব খিজির (আ)-কে নিয়েই। তার আগে বলে রাখা দরকার, কোনো ঘটনাই এখানে নূতন করে বানানো নয়, বরং সহস্রাধিক বছর ধরে প্রচলিত, কেবল একত্র করে তুলে ধরা হচ্ছে। খিজির (আ)-কে নিয়ে বর্ণিত হাদিসগুলোর কোনটার বিশুদ্ধতা আছে কি নেই সেটাও উল্লেখ করা হবে ঘটনা উল্লেখ শেষে। ততটা সময় বরং সাথেই থাকুন, আর জেনে নিন ঘটনাটি!
খিজির আসলে কে ছিলেন সেটা নিয়ে নির্ভেজাল কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না আদৌ, কেউ বলতেন নবী, কেউ বলতেন রাসুল, কেউ বলতেন দাস, কেউ বা ফেরেশতাও বলেছেন। তবে ইসলামি বিশারদগণ সকলে এ ব্যাপারে একমত ছিলেন যে, খিজির আল্লাহর কাছের একজন মানুষ ছিলেন। তাই তাকে ওলীই বলা হয়।
কাহিনীটার মূল মূল উৎস তাবারি’র ইতিহাস গ্রন্থ (تاريخ الطبري)। লেখক পারস্যের আবু জাফর মুহাম্মাদ আল জারির তাবারি (أبو جعفر محمد بن جرير بن يزيد الطبري), যিনি ছিলেন একজন প্রখ্যাত ইসলামি ইতিহাসবিদ ও তাফসিরকারক (৮৩৯-৯২৩ খ্রিস্টাব্দ)। তাছাড়া কবিতা, ব্যাকরণ, গণিত, ওষুধ ইত্যাদি নানা বিষয়েই ছিল তার লেখা। এছাড়াও আরও অনেক উৎসেই কাহিনীটি আছে, তবে একে ইসলামি উপকথা বলার কারণে অতিরঞ্জন আছে। কাহিনীটি এরকম-
পারস্যের বাদশাহ জুল্কারনাইনের রাজত্বকাল, যাকে তাবারি ডেকেছেন ‘আফ্রিদুন’ নামে। (অনেকে আগে ভাবতেন এবং এখনও মনে করেন, দিগবিজয়ী অ্যালেক্সান্ডারই বুঝি জুলকারনাইন ছিলেন। পারস্যে তাকে সিকান্দার নামে ডাকা হতো। তবে আরেকটি তত্ত্ব হলো তিনি রাজা সাইরাস হতে পারেন। তার পরিচয় নিয়ে পরে কথা হবে কোনো এক পর্বে।)
দিগবিজয়ী জুলকারনাইন বিভিন্ন রাজ্য জয় করে উত্তরের খুব ঠাণ্ডা এক দেশে আসলেন। অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় তার অনেক লোক মারা গেল। অবশেষে, তিনি নিকটের এক শহরে পৌঁছালেন, যেখানে তাকে স্বাগতম জানানো হলো। তিনি আর তার লোকেরা সেখানে জায়গা পেল কিছু দিনের জন্য।
এক দিন এক লোক এলো তার কাছে আর বললো, “বাদশাহ! আমি শুনেছি ঐ সমুদ্রের ওপারে একটি অন্ধকারের দেশ আছে। সেখানে সারাক্ষণ আঁধার থাকে। সেখানে এ গুহায় নাকি আবে হায়াতের ঝর্ণা আছে। এ পানি খেলে কেউ নাকি মারা যায় না।”
আবে হায়াত মানে “জীবন-বারি” বা “জীবন পানি”। এটি ‘Water of Life’, ‘Fountain of Youth’, ‘Fountain of Eternity’, ‘River of Life’ ইত্যাদি অনেক নামেই পরিচিত।
জুলকারনাইন সিদ্ধান্ত নিলেন সেই পানির খোঁজে যাবেন। তিনি সাথে প্রায় ৪,০০০ যুবক নিলেন। এবং বলে দিলেন, ৪০ বছরের উপরে বয়স এমন কেউ যেন তার সাথে এ অভিযানে না যায়। তিনি তার উজির বালিয়া আর তার আরেক সভাসদ ইলিয়াসকেও (তার কথা কোনো কোনো বর্ণনায় নেই, তবে বেশিরভাগ উৎসেই আছে) বললেন তার সাথে যেতে। সাথে অনেক দিনের খাদ্য মজুদ হিসেবে নেয়া হলো।
তবে, যাবার আগে তাদের সতর্ক করা হলো, সেই মানববিহীন এলাকাতে তারা যেন কোনো আগুন বা সেরকম আলো নিয়ে না যান। কারণ, কোহেকাফ জিনদের রাজধানী শহর। (কোহেকাফের বিস্তারিত উপকথা আসবে পরের কোনো এক পর্বে)
তারা সমুদ্র পাড়ি দিয়ে সেই আঁধারে প্রবেশ করলেন। কোহেকাফ নগরীর বিশালতা অনুভব করে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। এ পার্বত্য এলাকার মাঝে সেই নির্দিষ্ট গুহা খুঁজে বের করা খড়ের গাদায় সুঁই খোঁজার মতোই।
জুলকারনাইন দলে দলে ভাগ হয়ে খোঁজা শুরু করতে বললেন আবে হায়াত। আর তিনি নিজে একা যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু, বালিয়া আর ইলিয়াস দুজন একসাথে যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন।
যাবার আগমুহূর্তে, বালিয়া ইলিয়াসকে বললেন, “আমার কাছে এখানে দুটো রত্ন আছে। এটা ভালো আলো দিতে পারে। তুমি একটা নাও, আমি একটা নিই। এই আঁধারে আমরা তাহলে অন্তত একটু আলো পাব। হয়ত ঝর্ণা খুঁজেও পেতে পারি।”
যেমন কথা তেমন কাজ। রত্ন দুটো নিয়ে তারা কোহেকাফে পা রাখলেন।
জুলকারনাইন একদিকে আর তারা অন্যদিকে গেলেন। বাকিরাও (যাদের খোঁজার ইচ্ছা ছিল) বিভিন্ন দিকে গেল।
আনুমানিক এক সপ্তাহ সময় পার হয়ে গেল, বিভিন্ন রাত তারা বিভিন্ন গুহায় কাটালেন। আর কোনো দলের সাথে দেখাও হলো না।
একদিন ক্লান্ত হয়ে এক গুহায় আশ্রয় নিলেন তারা দুজন। এরপর খাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলেন। শুকনো মাছ বের করলেন। বালিয়া পাশের ঝর্ণায় হাত ধুয়ে আসলেন, এরপর মাছটা দু’ভাগ করতে হাতে নিলেন। যেই তার হাতের পানি মাছের গায়ে লাগলো, সাথে সাথে সেই মরা মাছ জ্যান্ত হয়ে উঠলো।
বালিয়া বুঝলেন, তিনি অমরত্বের ঝর্ণা খুঁজে পেয়েছেন। ঝর্ণাটি দেখতে ভিন্ন কিছু নয়, একদমই স্বাভাবিক, পানিটাই কেবল অতিপ্রাকৃত। তিনি সেখান থেকে হাত দিয়ে পানি পান করলেন। এরপর ইলিয়াসকে ডেকে তাকেও পান করালেন। (কাহিনীর যে সংস্করণগুলোতে ইলিয়াসের কথা উল্লেখ আছে আর কী)
তখন দৈবজ্ঞানে তাদের জানানো হলো, তাদের আয়ু কিয়ামত পর্যন্ত। তারা যেন এখন থেকে লোকচক্ষুর আড়ালে থাকেন। আর, জুলকারনাইন বাদশাহ এ পানি পান করতে পারবেন না।
বালিয়ার নতুন নাম হল খিজির (আ); অর্থ ‘চিরসবুজ’। (তাবারি অবশ্য জানান, খিজির যে সাদা পশমের কাপড়ের উপর বসতেন, সেটি তখন সবুজ দ্যুতি দিত, তাই তার নাম হয় ‘সবুজ’ বা খিজির। আর বুখারি রহঃ জানান, তিনি যেখানে বসতেন সে জায়গাটা সবুজ হয়ে গিয়েছিল দেখে এ নাম।)
তিনি সেখান থেকে চলে গেলেন। এরপর থেকে তার অবস্থান কেউ জানত না। তাকে এরপর দেখা যায় মুসা (আ) এর সময়। সে ঘটনা পবিত্র কুরআনের সুরা কাহাফে (১৮:৬৫-৮২) বর্ণিত আছে, সাথে উপস্থিত ছিলেন আরেকজন নবী ইউশা (আ)। তবে ইউশা তখনও নবী হননি, আরেকটু পরে হন। মজার ব্যাপার, সেই ঘটনাতেও মুসা (আ) খিজিরের উপস্থিতি টের পেয়েছিলেন যখন তার মরা মাছ হঠাৎ জ্যান্ত হয়ে ওঠে।
যা-ই হোক, জুলকারনাইনের কী হল? তিনি এক সপ্তাহ নয়, বরং আরও অনেকদিন পর সেই গুহা আর সেই ঝর্ণা আবিষ্কার করেন। এরপর সাথে আনা পেয়ালাতে করে তিনি পানি উঠিয়ে পান করতে গেলেন। কিন্তু পান করতে পারলেন না। তার মনে হলো, “আমি একা এ পৃথিবীতে বেঁচে থেকে কী হবে? আমার স্ত্রী-পুত্র-কন্যার সাথেই যদি না বাঁচলাম, তাহলে এ জীবনের অর্থ কী? আমি বেঁচে থাকব, আর আমার স্ত্রী-পুত্র-কন্যা আমার চোখের সামনে মারা যাবে, এ হতে পারে না। আমরা সবাই একসাথে এ পানি পান করব।”
এ কথা ভেবে তিনি সেই ঝর্ণা থেকে পানি ভরলেন তার মশকে। এরপর ফিরতি যাত্রা শুরু করলেন, অন্ধকার রাজ্যে পথ ফিরে পেতে অনেক কষ্ট হলো। যখন তীরে ফিরে এলেন তখন দেখলেন অনেকেই ফিরতে পারেনি এত লম্বা সময়েও। হয়তো খাদ্যের অভাবে অনেকে মারাও গেছে যারা আঁধারে প্রবেশ করেছিল।
এরপর যারা বাকি আছে তার বাহিনীর তাদের নিয়ে তিনি সমুদ্রপথে সরাসরি নিজের দেশে ফিরলেন। তার আগমনের খবর শুনে তাকে স্বাগতম জানাতে তার স্ত্রী-পুত্র-কন্যারা অপেক্ষা করছিল দোরগোড়ায়।
তিনি মশক থেকে পুরো পানি একটা সুন্দর পেয়ালায় ভরলেন। এরপর সেই পেয়ালা নিয়ে দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলেন পরিবারের দিকে।
ঘরের দরজার চৌকাঠে হোঁচট খেলেন, আর হাত থেকে ছিটকে পড়ে গেল তার পেয়ালা, আর উত্তপ্ত মেঝে শুষে নিল সব পানি। তিনি তাকিয়েই রইলেন সেদিকে। তার ভাগ্যে ছিল না আবে হায়াতের পানি।
কাহিনী এটুকুই।
এ উপকথা অনুযায়ী, খিজির (আ) এখনও বেঁচে আছেন, আর পৃথিবী ঘুরে বেড়ান। বেঁচে থাকবেন কিয়ামত পর্যন্ত। তবে তখন তিনি মৃত্যুবরণ করবেন। সেই হিসেবে ‘অমর’ (যে মরবেই না) কথাটা খাটে না। বরং দীর্ঘজীবী খাটে। তবে সাহাবিগণ অনেকেই ধারণা করতেন, খিজির (আ) কিয়ামত পর্যন্ত বাঁচবেন। অবশ্য বর্তমানে ইসলামি স্কলারদের বিশুদ্ধ মত তাই এ-ই যে, খিজির (আ) এখন আর বেঁচে নেই। তিনি মারা গিয়েছিলেন কোনো এক সময়। কারণটা একটু পর উল্লেখ করা হবে নিচে।
এর বাইরে কিছু হাদিস আছে, যেমন ‘আহমাদ’ গ্রন্থের এক হাদিস বলছে, ইলিয়াস আর খিজির প্রতি বছর হজের সময় দেখা করেন এবং রমজান মাসেও দেখা করেন, সারা রমজান তারা জেরুজালেমে কাটান।
মুসলিম আলেম এবং মুহাদ্দিস আবু জুরা আল কবির আল রাজি (আনুমানিক ৮০০ সাল) একটি বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে জীবনে দুবার খিজির (আ) এর দেখা পেয়েছেন, একবার তরুণ থাকতে, আরেকবার বৃদ্ধ বয়সে, তবে খিজিরের কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করেননি।
সবচেয়ে চমকপ্রদ বর্ণনা দেখা যায় ‘বায়হাকি’ হাদিস গ্রন্থ থেকে। নবী হযরত মুহাম্মাদ (স) এর জানাজার সময় খিজির (আ) উপস্থিত হয়েছিলেন এবং আবু বকর (রা) আর আলি (রা) তাঁকে চিনতে পারেন। তিনি তাদেরকে সান্ত্বনা দিতে এসেছিলেন।
হাদিসটি এমন-
“একজন শক্ত সামর্থ্য সুদর্শন সাদা শ্মশ্রুর লোক পিছন থেকে এগিয়ে আসলেন সামনে, এরপর পবিত্র লাশের কাছে দাঁড়ালেন। তার চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল। তিনি সাহাবীদের দিকে ফিরলেন এরপর সান্ত্বনা বাণী শোনালেন। সাহাবিরা তাকে চিনতে পারেননি। কিন্তু,আবু বকর আর আলী বললেন, ইনিই খিজির।” [বায়হাকি]
কুরআনের মুসা (আ) এর ঘটনারও প্রায় দেড় হাজার বছর পরের ঘটনা এটা। এখানেও অস্তিত্ব পাওয়া যায় খিজির (আ) এর।
বলা হয়ে থাকে, ইসলামে যে ভবিষ্যৎবাণীতে এক লোক দাজ্জালের সাথে তর্কে যাবে বলে উল্লেখ রয়েছে, সেই লোকটিই হবেন খিজির। (অথবা, যে লোকটিকে দাজ্জাল পুনঃ পুনঃ হত্যা করতে সচেষ্ট হবে।)
আলী (রা) একবার কাবার কাছে খিজিরের দেখা পেয়েছিলেন বলে বর্ণনা করেছিলেন। হযরত আব্দুল কাদির জিলানির সাথেও রয়েছে খিজির (আ) এর কিছু কাহিনী। আবার শিয়া বর্ণনা অনুযায়ী, ইমাম জাফর সাদিক হাসান (রা) ও হুসাইন (রা) এর সাথে খিজির (আ) এর দেখা হবার কথা উল্লেখ করেন কাবা প্রাঙ্গণের একটি ঘটনাতে।
আরও একটা কাহিনী পাওয়া যায়, কীভাবে খিজির (আ) এত জ্ঞানের অধিকারী হলেন। সেটি এমন-
আল্লাহ্র অনুসন্ধানে রত খিজিরের কাছে এক লোক আসলেন। বৃদ্ধ দরবেশ। তিনি বললেন, খিজির যেটার অনুসন্ধানে আছে, তিনি সেটা জানাতে পারবেন। তবে এর আগে তার সাথে তাকে যেতে হবে, আর কোনো প্রশ্ন করতে পারবেন না খিজির। কোনো প্রতিবাদ করতে পারবেন না। এরপর ঠিক যেভাবে খিজির (আ) মুসা (আ)-কে শিখিয়েছিলেন ঠিক সেভাবে সেই বৃদ্ধ লোক খিজিরকে শেখালেন, এখানেও খিজির বারবার তার প্রশ্ন না করবার ওয়াদা ভঙ্গ করে প্রতিবাদ করতে লাগলেন। শেষে সেই বৃদ্ধ তাকে পুরো ঘটনা ব্যাখ্যা করলেন- কী কী কারণে তিনি কী কী করেছিলেন। এরপর খিজিরকে জ্ঞান দান করা হলো। নিজের পরিচয় প্রকাশ করলেন সেই বৃদ্ধ, “আমি আসলে ফেরেশতা জিবরাঈল।” এই বলে তিনি উধাও হয়ে গেলেন। সেই থেকে তিনি হন জ্ঞানী খিজির।
খিজির (আ) কোথায় কোথায় গিয়েছিলেন, থেকেছিলেন বা দাঁড়িয়েছিলেন- এমন বেশ কিছু তথাকথিত জায়গা রয়েছে, যেগুলোকে ‘মাকামে খিজির’ বলা হয়। এর মাঝে সিরিয়ার ইদলিবে থাকা এমন একটি মাকামে খিজির আইসিস ধ্বংস করে দেয়।
তবে যে দুটি কারণে বর্তমান স্কলাররা খিজির (আ) এর এখনও জীবিত থাকবার সম্ভাবনা নাকচ করেন, সেগুলো হলো, কুরআনের একটি আয়াত, আর একটি বিশুদ্ধ হাদিস।
আয়াতটি হলো, “(হে মুহাম্মাদ!) আপনার পূর্বেও কোন মানুষকে আমি অনন্ত জীবন দান করিনি। সুতরাং আপনার মৃত্যু হলে তারা কি চিরঞ্জীব হবে?” (সুরা আম্বিয়া ২১:৩৪)
আর হাদিসটি হলো বুখারি শরিফের। সেখানে আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা) তার জীবনের শেষ দশায় এক রাত্রে ইশার নামাজ পড়ানোর পর বললেন, “আজ রাতের ব্যাপারটা জানো তোমরা? আজকে দুনিয়ার বুকে যে যারা জীবিত আছে, আজ থেকে ঠিক ১০০ বছর পরের এই রাতে কেউ বেঁচে থাকবে না।” (সহিহ বুখারি ১:১০:৭৫) ফলে, যদি খিজির (আ) বেঁচেও থাকতেন সে মুহূর্তে, এর একশ বছর বাদে তার বেঁচে থাকবার কথা নয় এ হাদিস মতে।
খিজির (আ) বেঁচে থাকুন আর নাই থাকুন- সে বিতর্কটা গুরুত্বপূর্ণ নয় এখানে। আমরা কথা বলছিলাম অমরত্বের সুধার খোঁজে প্রচলিত উপকথা আর ঘটনাগুলো নিয়ে। আবে হায়াত আর খিজির (আ) নিয়ে ছোটখাট আরও কিছু কথাও আছে, যেগুলো আসবে পরের কোনো পর্বে। কিন্তু কেবল ইসলামি ঘটনা নয়, আরও অনেক উৎসেই আছে অমর পানীয়ের গল্প। স্প্যানিশ ও অন্যান্য উপকথাতেও গড়ে উঠেছে Fountain of Youth নিয়ে নানা কাহিনী। সাথেই থাকুন পরের পর্বের জন্য!
আগের পর্বগুলো পড়তে ক্লিক করুন:
অতিপ্রাকৃতের সন্ধানে-১: আলকেমি আর পরশমণি
অতিপ্রাকৃতের সন্ধানে-২: পরশমণির খোঁজে আলকেমিস্ট নিকোলাস ফ্লামেল
অতিপ্রাকৃতের সন্ধানে-৩: নিকোলাস ফ্লামেলের রহস্যময় জীবন
অতিপ্রাকৃতের সন্ধানে-৪: নিকোলাস ফ্লামেলের ‘রহস্যময়’ অন্তর্ধান
অতিপ্রাকৃতের সন্ধানে-৫: যুগের শেষ ‘জাদুকর’ স্যার আইজ্যাক নিউটন
অতিপ্রাকৃতের সন্ধানে-৬: স্যার আইজ্যাক নিউটনের বাইতুল মুকাদ্দাস গবেষণা