গত দশকের সর্বাধিক আলোচিত ১০টি ঘটনা

অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া গত দশকের সমাপ্তি ঘটেছে একজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের অভিশংসন প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মধ্য দিয়ে। সুদীর্ঘ এই দশ বছরে বিশ্ববাসী অনেক নতুন নতুন ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যাপক জনপ্রিয়তা, বৈশ্বিক নানারকম সমস্যায় একতাবদ্ধ আন্দোলন, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংকট, কয়েকটি দেশ কর্তৃক সমকামিতা বৈধতা দেয়ার মতো ঘটনাগুলো এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। রাজনীতি থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও অন্যান্য সকল বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করলে দশকের আলোচিত ঘটনাগুলো নিরূপণ করা সম্ভব।

তারই ধারাবাহিকতায় আজ সদ্যবিদায়ী দশকের সর্বাধিক আলোচিত ১০টি ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিষয়বস্তু, দুর্যোগ, আন্দোলন, সাংস্কৃতিক বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।

ওয়াল স্ট্রিট দখল করো আন্দোলন

নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটন ব্রডওয়ে থেকে শহরের সাউথ স্ট্রিট পর্যন্ত বিস্তৃত অর্থনৈতিক এলাকাকে বলা হয় ওয়াল স্ট্রিট। গত দশকের সর্বাধিক আলোচিত আন্দোলন সংগঠিত হয় একে ঘিরে। ২০১১ সালের অক্টোবরে পুঁজিবাদ বিরোধী হাজার হাজার মার্কিন নাগরিক ‘ওয়াল স্ট্রিট দখল করো’ ব্যানারে নিউ ইয়র্ক সিটির অর্থনৈতিক অঞ্চলের রাস্তাঘাট বন্ধ করে আন্দোলন শুরু করেন। ধনীদের কর প্রদানে অপারগতা, দিন দিন আরও ধনী হওয়া এবং বেকারত্ব বেড়ে যাওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একতাবদ্ধ হয়ে রাজপথে নামেন কতিপয় যুবক।

আন্দোলনের দৃশ্য; Image Source: Notevenpast.org

অর্থনীতিবিদদের মতে, সে সময় মার্কিন সরকার সামরিকখাতে ব্যয় বৃদ্ধি করতে গিয়ে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি ও যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যাপারে সমন্বয়হীন হয়ে পড়ে। পাশাপাশি ধনীদের স্বার্থ হাসিল করে অর্থনৈতিক বিপর্যয় এড়াতে একতরফা সরকারি ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করে। কিন্তু গণতান্ত্রিক সমাজে মানুষ অন্যায়, অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধাচরণ করবে এটাই স্বাভাবিক। তেমনিভাবে পুঁজিবাদীদের বিরুদ্ধে তিলে তিলে গড়ে ওঠা ক্ষোভ একসময় বিশাল স্ফুলিঙ্গে পরিণত হয় সচেতন মার্কিনীদের মাঝে।

নিউ ইয়র্কের রাস্তায় আন্দোলনকারীরা; Image Source: Emmanuel Dunand/AFP/Getty Images

যদিও প্রথমদিকে এই আন্দোলনের গতিপথ এবং উদ্দেশ্য নিয়ে ব্রিটিশ পত্রিকাগুলোয় বেশ সমালোচনা হয়। কিন্তু মাসখানেকের মধ্যেই যখন বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় পুঁজিবাদ বিরোধী আন্দোলন শুরু হয় তখন সবার সামনে আন্দোলনকারীদের দাবির যৌক্তিকতা স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়। পুঁজিবাদী শ্রেণী বাদে অধিংকাংশ মার্কিন নাগরিকই এই আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় নিজেদের কাজকর্ম বাদ দিয়ে দূরদূরান্তের রাজ্য থেকে অনেকে নিউ ইয়র্ক সিটিতে এসে আন্দোলনে শামিল হন। তরুণ প্রজন্মের হাত ধরে শুরু হওয়া এই আন্দোলনে একসময় ছেলে-বুড়ো সবাই একাত্মতা প্রকাশ করেন। আর এভাবেই কয়েক মাস ধরে নিউ ইয়র্ক সিটিতে পুঁজিবাদ বিরোধী ঐতিহাসিক এই আন্দোলনের পটভূমি রচিত হয়।

ব্রেক্সিট

নিঃসন্দেহে গত দশকের অন্যতম আলোচিত বিষয় এই ব্রেক্সিট। ২০১৬ সালে অভিবাসী সংকট চলাকালে ব্রিটেনে অনুষ্ঠিত গণভোটের মাধ্যমে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে ইংল্যান্ডের আলাদা হওয়ার পক্ষে রায় আসে। ব্রেক্সিটের পক্ষে ৫২% ভোট পড়ায় সে সময় পদত্যাগ করেন ব্রেক্সিট বিরোধী প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। মূলত এই ভোটের পরেই ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক পরিবেশ পুরোপুরি পাল্টে যায়। ক্যামেরনের বিদায়ের পর ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন থেরেসা মে। কিন্তু ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে সমস্ত কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়া সহজ ব্যাপার নয়। থেরেসা মে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের চেষ্টা করলেও বার বার পেছাতে থাকে এর সময়সীমা।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করার পর বরিস জনসনের উদযাপন; Image Source: Ben Stansall/Pool via REUTERS

ব্যর্থতার দায় নিয়ে গত বছর পদত্যাগ করেন থেরেসা মে। অতঃপর নতুন প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হয়ে বরিস জনসন ব্রেক্সিট বাস্তবায়নে বেশ তড়িঘড়ি শুরু করেন। তার তৎপরতায় ইতোমধ্যেই ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে একমত হয়েছে ব্রিটেন। গত ২৪ জানুয়ারি ৬০০ পৃষ্ঠার চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে উভয় পক্ষ। মূলত এই চুক্তির সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইউরোপের অন্যান্য দেশে বসবাসকারী ব্রিটিশ নাগরকিদের ভবিষ্যৎ, দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। এখন দেখার বিষয় এই বিচ্ছেদের পর ব্রিটিশদের অগ্রযাত্রা কেমন হয়।

ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী আফ্রিকানদের গড়া আন্তর্জাতিক সংগঠন ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার। কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি বৈষম্যের প্রতিবাদের লক্ষ্যে ২০১৩ সালে শুরু হয় এর কার্যক্রম। তবে বৈষম্যের প্রতিবাদ করেই ক্ষান্ত নয় সংগঠনটি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও কয়েকটি দেশে কৃষ্ণাঙ্গ শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধদের নাগরিক অধিকার অর্জনের ব্যাপারে সোচ্চার তারা। গত দশকের মাঝামাঝি সময়ে গড়ে ওঠা এই সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাকালীন পটভূমি অবশ্য খুবই বেদনাদায়ক।

আন্দোলনে এক কৃষ্ণাঙ্গ শিশু; Image Source: Chip Somodevilla/Getty Images

২০১২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় মার্কিন নাগরিক জর্জ জিমারম্যানের গুলিতে খুন হয় ১৭ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ কিশোর ট্রায়ভন বেঞ্জামিন মার্টিন। অতঃপর ২০১৩ সালে তিনজন কৃষ্ণাঙ্গ নারী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে #BlackLivesMatter নামক একটি প্রতিবাদ কার্যক্রম শুরু করেন। অ্যালিসিয়া গার্জা, প্যাট্রিস কুলার ও ওপাল তোমেটির সমন্বয়ে যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হওয়া সেই প্রতিবাদী সংগঠনটি বর্তমানে প্রায় ৪৪টি দেশে সক্রিয়ভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

সংগঠনের ৩ প্রতিষ্ঠাতা; Image Source: Blacklivesmatter.com

সংগঠনটি কার্যক্রম শুরু করার পরের বছর ফার্গুসনের শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা ড্যারেন উইলসনের হাতে খুন হয় ১৮ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ কিশোর মাইক ব্রাউন। এই হত্যাকাণ্ডের পর নিহতের স্বজনেরা ঐ তিন বিপ্লবী নারীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। খবর পেয়েই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবারো আন্দোলনের ডাক দেন তারা। মাত্র ১৫ দিনের মাথায় ৬০০ জন লোকের সমন্বয়ে ফার্গুসন ও সেন্ট লুইসে আন্দোলন শুরু করে সংগঠনটি। অতঃপর আরও ১৮টি শহরে ছড়িয়ে পড়ে এই আন্দোলন। আর এভাবেই ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার হ্যাশট্যাগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন ঐ তিনজন নারী।

হাইতিতে ভূমিকম্প

গত দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংগঠিত হয়েছিল ২০১০ সালের জানুয়ারিতে। উত্তর আমেরিকার দ্বীপরাষ্ট্র হাইতিকে নিঃস্তব্দ করে দেয়া ভূমিকম্পের রিখটার স্কেলের মাত্রা ছিলো ৭.০। ১২ জানুয়ারি স্থানীয় সময় বিকেল ৪:৫৩ মিনিটে হাইতির রাজধানী পোর্ট প্রিন্সে ১৫ কিলোমিটার জুড়ে এটি সংগঠিত হয়। এর ক্ষয়ক্ষতি জানার আগে ২০ জানুয়ারি আবারও ৫.৯ মাত্রার ভূমিকম্পের সম্মুখীন হয় দেশটি। তবে দ্বিতীয়বারের ভূমিকম্পটি আগের চেয়েও দ্বিগুণ এলাকাজুড়ে ক্ষতি সাধন করে। এই ভূমিকম্পে তছনছ হয়ে যায় দেশটির রাজধানীসহ একাধিক উপশহর। মানুষজন যে যেরকম অবস্থায় ছিলো সেরকম অবস্থাতেই ক্ষতিগ্রস্ত হন।

ভূমিকম্পের ধ্বংসলীলা; Image Source: Gregory Bull — AP

২০১১ সালে হাইতি সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ৩,১৬,০০০ লোক নিহত হয়েছে বলে বিবৃতি দেয়। ইন্টারনেট ও সকল প্রকার টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা অকেজো হয়ে পড়া দেশটির প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল জাতিসংঘ ও বিশ্বের আরও অনেক দেশ। তবে এই ধ্বংসলীলা কাটিয়ে উঠতে এখনও সংগ্রাম করে যাচ্ছে হাইতি। ২০১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী তখনও প্রায় ২ লক্ষ নাগরিক বাসস্থানহীন জীবনযাপন করছে। আর সংবাদমাধ্যমের মতে, ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার। ঘটনার দ্বিতীয় দিন ১৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ২০ জন ডাক্তার ও ১০ জন সহযোগীর সমন্বয়ে ৩০ সদস্যের মেডিকেল টিম পাঠানোর ঘোষণা দেয়া হয়।

সন্ত্রাসী হামলা

মধ্যপ্রাচ্যের সহিংসতাকে কেন্দ্র করে বিশ্বজুড়ে চলমান জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে গত দশকের মাঝামাঝি সময়ে। আইসিস এর পৃষ্ঠপোষকতায় যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ব্রিটেনসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসী হামলা চালায় কতিপয় বিপথগামী ব্যক্তি। ২০১৩ সালে বোস্টনে বোমা হামলার মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই সন্ত্রাসী হামলা। এরপর ক্রমান্বয়ে প্যারিস, লন্ডন ব্রিজ, বার্সেলোনা, ফ্লোরিডা, টেক্সাসের মতো উন্নত শহরেও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে।

প্যারিস হামলার একটি নমুনা; Image source: The Independent

যদিও মধ্যপ্রাচ্যে ন্যাটোর চলমান সামরিক অভিযানের প্রতিশোধ হিসেবে একের পর এক সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে বলে দাবি হামলাকারীদের। হঠাৎ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা এই সন্ত্রাসী কার্যক্রম পুরো বিশ্বে উদ্বেগের জন্ম দেয়। স্বয়ং বাংলাদেশকেও ছাড়েনি সন্ত্রাসীরা। ২০১৬ সালের ১লা জুলাই রাজধানী ঢাকার হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে কয়েকজন দেশী-বিদেশী নাগরিককে জিম্মি করে হত্যা করে কয়েক জঙ্গি সদস্য। এর ছয়দিন পর কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাতেও জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর আরও অর্ধশত দেশে ঘটা এসব সন্ত্রাসী হামলা মোকাবিলা করাটা ছিলো গত দশকের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যু

২০১১ সালের ২রা মে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করে মার্কিন বাহিনী। পাকিস্তানের এবোটাবাদে পলাতক অবস্থায় বিন লাদেনকে হত্যা করা হয়। নাইন ইলাভেনের এক দশক পর তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে প্রতিশোধের ইঙ্গিত দিয়েছিল তৎকালীন ওবামা প্রশাসন। এছাড়াও বিন লাদেনের সংগঠন আল কায়েদা যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে একাধিক সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলো।

পত্রিকার পাতায় ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যু সংবাদ; Image Source: Jewel Samad/AFP/Getty Images

মার্কিন সেনারা তাকে হত্যার পর ২৪ ঘন্টার মধ্যেই সমুদ্রে সমাহিত করে। বিন লাদেনের নিহত হওয়ার সংবাদে গোটা বিশ্বে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। হামলা সম্পর্কিত কোনো ফুটেজ প্রকাশ না করায় তার মৃত্যুর সংবাদটি অনেকে বিশ্বাস করতে চায়নি। পরবর্তীতে অবশ্য ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে তার মৃত্যুর খবরটি প্রমাণ করা হয়েছিল। মার্কিনীদের হাতে বিন লাদেন নিহত হওয়ার পর আল কায়েদার কার্যক্রম ধীরে ধীরে সীমিত হয়ে আসে।

সমকামী বিবাহের বৈধতা

গত দশকে আর্জেন্টিনা, গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড, জার্মানি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ প্রায় ১৮টি দেশে সমকামী বিবাহকে বৈধ ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘদিন যাবত চলা বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে কতিপয় দেশে বৈধতা দেয়ার মধ্য দিয়ে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে ধারণা এটি নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর।

সমকামীদের অধিকারের জন্য আন্দোলনরত মানুষ; Image Source: Twitter

অন্যদিকে চীন ও রাশিয়া পুরুষ সমকামিতা নিষিদ্ধ করে আইন প্রণয়ন করেছে। এতে করে সমকামী বিবাহের বৈধতার জন্য কাজ করা সংগঠনগুলো বিশ্বব্যাপী নিজেদের কার্যক্রম বৃদ্ধি করার জন্য আরও বেশি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখনও হিজড়াদের বিবাহ বৈধতা নিয়ে আইনি লড়াই চলছে। সামরিক বাহিনীতে যোগদানের ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসন তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল রেখেছে।

বন্দুকধারীদের দৌরাত্ম্য

ইতোমধ্যেই আমরা সন্ত্রাসী হামলা সম্পর্কে জেনেছি। এতে করে বুঝতে পেরেছি গত দশকে সন্ত্রাসী হামলা কতটা ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল। কিন্তু ভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী হামলা নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে সারা বিশ্বে। আর এটি হচ্ছে বন্দুকধারী কর্তৃক জনসম্মুখে কিংবা বিদ্যালয়ে অতর্কিত হামলা। পরিসংখ্যান বলছে, শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই গত এক দশকে এমন ঘটনা ঘটেছে বহুবার।

ক্রাইস্টচার্চে হামলাকারী শ্বেতাঙ্গের কাছ থেকে পাওয়া বন্দুক; Image Source: mazainside.com

নিউটনের স্যান্ডি হুক এলিমেন্টারি স্কুল, পার্কল্যান্ডের ম্যার্জরি স্টোনম্যান ডগলাস হাই স্কুলের হামলা এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এসব হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অবশ্য মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক কোনো সন্ত্রাসবাদী সংগঠন জড়িত থাকার খবর পাওয়া যায়নি। বরঞ্চ ব্যক্তিগত জীবনে হতাশ হয়ে উগ্র শ্বেতাঙ্গবাদী সংগঠনের মদদে সন্ত্রাসীরা এমন হত্যাকাণ্ডে জড়িত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। গত বছর নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের একটি মসজিদে একজন বন্দুকধারীর গুলিতে ৪৯ জন নামাজরত মুসলমান নিহত হন। এখনও বন্দুকধারীদের হামলার আতঙ্ক রয়েছে গোটা বিশ্ব।

ইবোলা ভাইরাস

২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিশ্বকে ভয়াবহভাবে নাড়া দিয়ে যায় ইবোলা ভাইরাস। শুধুমাত্র পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতে ২ বছরের ব্যবধানে ২৮,৬৫২ জন এই রোগে আক্রান্ত হয়, যাদের অর্ধেকের বেশি তখন মৃত্যুবরণ করেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ১৯৭৬ সালে কঙ্গোতে সর্বপ্রথম এই সংক্রামক ব্যধি দেখা যায়। এরপর সময়ের পরিক্রমায় বিভিন্ন সময় এটি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে গোটা আফ্রিকায়।

ইবোলা ভাইরাসে মৃত্যুবরণ করা একজন; Image Source: WorldVision.com

একসময় আফ্রিকা থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়েছিল এই ইবোলা ভাইরাস। এর ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হলেও আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্য থেকে সুস্থ হয়ে বেঁচে ফেরার হার খুবই কম। আর এই কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতিবছর কঙ্গো এবং এর পাশ্ববর্তী দেশগুলোতে ইবোলার ভ্যাকসিন বিতরণ করে যাচ্ছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০১৬

এযাবতকালের সবচেয়ে আলোচিত ও সমালোচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিঃসন্দেহে ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০১৬ সালে রিপাবলিক পার্টি থেকে মনোনয়ন পাওয়ার পর তাকে নিয়ে বেশ হৈচৈ পড়ে গিয়েছিল। আন্তর্জাতিক পত্রপত্রিকায় ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে থাকলেও নির্বাচনের দিন অবধি বোঝার উপায় ছিলো না যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ দৃশ্যপট সে সময় কেমন ছিলো। অনেকে ধরেই নিয়েছিলেন ওবামা প্রশাসনের পরিচিত মুখ হিলারি ক্লিনটনই নির্বাচনে জয়লাভ করবেন। কিন্তু নির্বাচনে ঘটলো একেবারেই উল্টো ঘটনা।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আয়োজিত বিতর্ক অনুষ্ঠানে হিলারি ও ট্রাম্প; Image Source: Doug Mills/The New York Times

২০১৬ সালের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনকে পরাজিত করে ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনের পূর্বে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত করার পাশাপাশি অভিবাসী এবং বহিরাগতদের জন্য কঠোর আইন প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দেন। ডেমোক্রেটদের শাসনামলে ২০১১ সালে ওয়াল স্ট্রিটের আন্দোলনের মতো ঘটনা ঘটার পর ট্রাম্পের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি রিপাবলিকানদের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে দেয়।

ডোনাল্ড ট্রাম্প; Image Source: ERIC THAYER / THE NEW YORK TIMES

ট্রাম্প নির্বাচনে জয়লাভের পর মার্কিন অর্থনীতিকে চাঙ্গা করেছেন। সেই সাথে নাগরিকত্ব প্রত্যাশী বহিরাগতদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেন। প্রকৃতপক্ষে মার্কিন নাগরিকরা মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের সামরিক শক্তিমত্তা প্রকাশ করার জন্য বিনিয়োগের চেয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নটুকু বেশি প্রত্যাশা করেন। অন্তত ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল বিশ্বকে এমনটাই ইঙ্গিত প্রদান করে।

In this article we wrote about 10 major events of 2010s. We talked about Political, Economical, Cultural and Social events specially.

Featured Image Source: Illustration by Max-o-matic; Photos: AP/Getty

Related Articles

Exit mobile version