রোম-দ্য ইটার্নাল সিটি।
রোমে প্রতিষ্ঠার মিথ কবিতার আকারে বর্ণনা করতে গিয়ে টিবুলাস রোমকে আখ্যায়িত করেন Urbs Aeterna (Eternal City) বলে। অগাস্টাসের সময় রোমের এই নামকরণ কবি ভার্জিল আর অভিডের হাতে এমনই জনপ্রিয়তা পায় যে অনেক সরকারি কাগজপত্রেও ইটার্নাল সিটি লেখা হয়। রোমের ইতিহাস রচনা করার সময় লিভিও এই শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করেন। ইটার্নাল সিটি পত্তনের পর অনেক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। রাজতন্ত্রের ইতি ঘটিয়ে রোমান রিপাবলিক দোর্দণ্ড প্রতাপে টিকে ছিল শতাব্দীর পর শতাব্দী। কিন্তু হায়, ক্ষমতার কুৎসিত কামড়াকামড়িতে প্রজাতান্ত্রিক কাঠামো দুর্বল হতে থাকে। তিন তিনটি গৃহযুদ্ধের পর রোম আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে সেনানায়কদের উপর। চলমান অভ্যন্তরীণ সংঘাত রোমের নিরাপত্তাকে ঠেলে দেয় হুমকির মুখে। গৃহবিবাদের সুযোগে অনেক শত্রু রোমের এলাকায় ঢুকে পড়ে। প্রয়োজন দেখা দেয় একটি নতুন শাসনব্যবস্থার।
জুলিয়াস সিজার বুঝতে পেরেছিলেন।
তার হাত ধরে রিপাবলিক পরিবর্তিত হতে থাকে সিনেট থেকে ব্যক্তিকেন্দ্রিক শাসনের দিকে। তার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করেন অক্টাভিয়ান। সূচীত হয় ২০০ বছরের শান্তিপূর্ণ সময় প্যাক্স রোমানা, যার সমাপ্তি ঘটে ১৮০ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট মার্কাস অরেলিয়াসের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে।
প্যাক্স রোমানার সময় কিন্তু যুদ্ধবিগ্রহ বা ক্ষমতার সহিংসতা বন্ধ ছিল না। তবে পূর্ববর্তী শতাব্দীর তুলনায় তা কমে এসেছিল। ক্ষমতার লড়াই মূলত প্রাসাদে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। এতে সেনাবাহিনী, বিশেষ করে প্রিটোরিয়ান গার্ড দল মূল নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায়। এই সময় বহু নতুন এলাকাও রোমের হস্তগত হয়। প্যাক্স রোমানার শেষে রোম পরিণত হয় তার ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি বিস্তৃতি এবং জনবহুল সাম্রাজ্যে। অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা তুলনামুলকভাবে অনেক ভাল ছিল, এবং নাগরিকেরা ক্রমশ সম্রাটের আনুগত্যে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে।
জুলিও-ক্লডিয়ান রাজবংশ
ইম্পেরিয়াল রোমের প্রথম রাজবংশ, যার সূচনা ১৯ আগস্ট, ১৪ খ্রিস্টাব্দে অগাস্টাসের মৃত্যুর পর। ৬৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই বংশ টিকে ছিল। চারজন সম্রাট এসময় রাজত্ব করেন।
টিবেরিয়াস (১৪-৩৭ খ্রিস্টাব্দ)
টিবেরিয়াস ছিলেন দক্ষ সেনাপতি। অগাস্টাসের শাসনামলে তিনি বিভিন্ন যুদ্ধে কৃতিত্বের পরিচয় দেন। ৫৬ বছর বয়সে তিনি সিংহাসনে বসেন। তিনি মোটামুটি সুস্থিরভাবে সাম্রাজ্য পরিচালনা করতে থাকেন। সিনেট বজায় থাকলেও টিবেরিয়াস কমিটিয়া কিউরিয়াটা, প্লেবেইয়ান কাউন্সিলসহ অন্যান্য নাগরিক কমিটি কার্যত বাতিল করে দেন। তিনি প্রিটোরিয়ান গার্ডদের সংখ্যাও বৃদ্ধি করেন। তিনি প্রদেশগুলোর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় অনেক সময় ব্যয় করেন। তার পালক পুত্র ছিলেন জার্মানিকাস। তিনি বিয়ে করেছিলেন অগাস্টাসের নাতনি, জেনারেল আগ্রিপ্পার মেয়ে, আগ্রিপিনাকে। তাদের সন্তানদের মধ্যে ছিলেন নিরো, ড্রুসাস ও গাইয়াস সিজার।
টিবেরিয়াসের প্রিটোরিয়ান গার্ডের কম্যান্ডার সেজানাস। উচ্চাভিলাষী সেজানাস চক্রান্ত করে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী জার্মানিকাসকে বিষপ্রয়োগে হত্যা করেন। তিনি সম্রাটকে হাতের মুঠোয় এনে ফেলেন। ২৬ খ্রিস্টাব্দে তার প্ররোচনাতে টিবেরিয়াস রাজকার্য থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে ক্যাপ্রি দ্বীপে চলে যান। মূল ক্ষমতা চলে আসে সেজানাসের হাতে। তার প্রভাবে আগ্রিপিনা, নিরো ও ড্রুসাসকে আলাদা আলাদা স্থানে নির্বাসন দেয়া হয়। নিরো ও আগ্রিপিনা সেখানেই মারা যান। এদিকে টিবেরিয়াস যখন বুঝতে পারলেন সেজানাস তার জন্য বিপদজনক হয়ে উঠেছেন তখন তিনি সক্রিয় হলেন। ৩১ খ্রিস্টাব্দে সেজানাসকে গ্রেফতার করে মেরে ফেলা হয়।
২৩ বছর শাসন করার পর ৭৯ বছর বয়সে টিবেরিয়াস মারা যান। সিনেট তার উত্তরাধিকারী হিসেবে বেছে নেয় জার্মানিকাসের পুত্র গাইয়াস সিজারকে, যিনি কালিগুলা নামে অধিক পরিচিত ছিলেন।
কালিগুলা (৩৭-৪১ খ্রিস্টাব্দ)
অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মতে কালিগুলা ছিলেন মানসিকভাবে অসুস্থ। তার অর্থলিপ্সা ছিল অত্যধিক। নিজের উত্তরাধিকার উড়িয়ে দিয়ে তিনি ধনবান নাগরিকদের হত্যা করে তাদের সম্পদ লুটে নিতে শুরু করেন। তার রক্তলোলুপতা রোমানদের আতঙ্কিত করে তুলেছিল। ফলে চার বছরের পাগলাটে শাসনের পর প্রিটোরিয়ান গার্ডরা তাকে হত্যা করে।
ক্লডিয়াস (৪১-৫৪ খ্রিস্টাব্দ)
কালিগুলার মৃত্যুর পর সিনেট পরবর্তী শাসক ঠিক করতে আলোচনায় বসল। প্রথমে রিপাবলিক পুনঃপ্রতিষ্ঠার কথা বললেও দ্রুতই সিনেটরেরা নিজেদের নাম রাজা হিসেবে প্রস্তাব করতে থাকলেন। এদিকে প্রিটোরিয়ান গার্ড নিজেরাই সম্রাট বেছে নিল। তিনি কালিগুলার চাচা আর টিবেরিয়াসের ভ্রাতুষ্পুত্র ক্লডিয়াস। সেনাদের চাপে সিনেট তার নিয়োগ বৈধতা দিতে বাধ্য হল। ক্লডিয়াসের সৎ ছেলের নাম ছিল নিরো। ক্লডিয়াসের শাসনামলের উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল ব্রিটেনে রোমের আগ্রাসন। ১৬ দিনের ক্যাম্পেইনে তিনি পরবর্তীতে ব্রিটেন জয় করার ভিত্তি স্থাপন করে যান।এছাড়াও টিবেরের মুখে নতুন বন্দর নির্মাণ, পানি নিষ্কাশনের নালা (AQUA CLAUDIA) স্থাপন এবং ফসিন লেক শুকিয়ে চাষাবাদের জন্য বিশাল এলাকা উদ্ধার তার সময়ের কাজ।
নিরো (৫৪-৬৮ খ্রিস্টাব্দ)
নিরো যখন রাজা হলেন তার বয়স তখন ষোল। প্রথম কয়েক বছর ছিল শান্তিপূর্ণ, এসময় নিরোর শিক্ষক সেনেকা আর প্রিটোরিয়ান গার্ড কম্যান্ডার বুরাসই আসলে সবকিছু দেখাশোনা করতেন। কিন্তু ক্রমেই নিরোর নীচতা আর ক্ষমতার লোভ প্রকাশ পেতে থাকে। তিনি নিজের মা ও স্ত্রীকে হত্যা করেন, সিংহাসনের ন্যূনতম দাবী তুলতে পারে এমন কাউকেই তিনি বাঁচিয়ে রাখলেন না। সেনেকা ও বুরাসকেও একই পরিণতি বরণ করতে হয়। তিনি ধনী রোমানদের সম্পত্তি কেড়ে নেন। রাজকার্যে কোনো সময় না দিয়ে তিনি আমোদ-প্রমোদে গা ভাসিয়ে দেন। নিজের জন্য তিনি জৌলুশপূর্ণ প্রাসাদ বানালেন, নাম দিলেন গোল্ডেন হাউজ।
তার সময়ই ৬৪ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জুলাই ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে রোমের এক বিরাট অংশ ধ্বংস হয়ে যায়। নিরো নতুন করে রোম পুনর্নির্মাণ করলেন। আগের সংকীর্ণ রাস্তাঘাট প্রশস্ত করা হলো, বাড়িঘর বানানো হলো পাথর দিয়ে। শহরের পানি সরবরাহ ব্যবস্থাও সম্রাট ঢেলে সাজালেন। কিন্তু তার আচার ব্যবহারের কোনো পরিবর্তন হলো না। আগুন লাগার দায় তিনি রোমে থাকা ক্ষুদ্র খ্রিস্টান গোষ্ঠীর উপর চাপিয়ে দিলেন এবং তাদের উপর নেমে এলো অকথ্য অত্যাচার। এদিকে নিরোর বাড়াবাড়ি সীমা ছাড়িয়ে গেলে হিস্পানিয়া থেকে গভর্নর গ্যালবা নিজেকে রাজা ঘোষণা করে ৬৮ খ্রিস্টাব্দে সসৈন্যে রোমের দিকে যাত্রা করলেন, তার সাথী হলেন জার্মানির গভর্নর ভার্জিনিয়াস। সিনেট নিরোকে জনতার শত্রু বলে চিহ্নিত করলে তিনি পালিয়ে যান এবং জুনের ৯ তারিখে আত্মহত্যা করলেন। তার সাথেই সমাপ্তি ঘটল জুলিও-ক্লডিয়ান রাজবংশের।
চার সম্রাটের বছর
৬৯ খ্রিস্টাব্দে গ্যালবা দায়িত্ব নেন। কিন্তু তার মিতব্যায়িতা আর সংযম সৈন্যদের যথেচ্ছাচারে বাধা দেয়ায় শহরে প্রবেশের পনের দিন পরেই অথোর নেতৃত্বে প্রিটোরিয়ান গার্ডেরা তাকে মেরে ফেলে। অথো নিজেকে সম্রাট দাবী করলে রাইন নদী এলাকার রোমান বাহিনীর কম্যান্ডার ভিটেলিয়াস বিদ্রোহ করেন। তার সাথে লড়াইয়ে পরাজিত হয়ে অথো আত্মহত্যা করেন। তার শাসনকাল ছিল তিন মাসের। ভিটেলিয়াস রাজা হয়েই ভোগবিলাসে গা ভাসিয়ে দিলেন। এই সুযোগে জুডিয়াতে ইহুদিদের বিদ্রোহ দমন করতে থাকা রোমান লিজিওন তাদের জেনারেল ভেস্পাসিয়ানকে সেই বছরের পহেলা জুলাই রাজা ঘোষণা করে বসল। ছেলে টাইটাসকে জুডিয়ার দায়িত্বে রেখে ৭০ খ্রিস্টাব্দে ভেস্পাসিয়ান রোমে এসে পৌঁছলেন। তিনি ভিটেলিয়াসকে সিংহাসনচ্যুত করে হত্যা করলেন।
ফ্ল্যাভিয়ান রাজবংশ
ভেস্পাসিয়ান (৬৯-৭৯ খ্রিস্টাব্দ) : ফ্ল্যাভিয়ান রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ভেস্পাসিয়ান অত্যন্ত সাদাসিধা জীবনযাপন করতেন। তিনি বহু অযোগ্য সিনেটরকে বাদ দিয়ে সেখানে উপযুক্ত লোক বসালেন, যাদের অন্যতম ছিলেন আগ্রিকোলা। তার নেতৃত্বে রোমানরা ব্রিটেন জয় করে। তার আমলে টাইটাস জেরুজালেম ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে এর বাসিন্দাদের দাস হিসেবে বিক্রি করে দেন।রোমের সৌন্দর্যবর্ধনে প্রচুর অর্থ খরচ করা হয়, নাগরিকদের জন্য নির্মিত হয় অনেক গন স্নানাগার। ভেস্পাসিয়ান নতুন এক ফোরাম নির্মাণ করেন। রোমের বিখ্যাত কলোসিয়ামের কাজও তিনি শুরু করেছিলেন।
টাইটাস (৭৯-৮১ খ্রিস্টাব্দ) : বাবার মৃত্যুর পর টাইটাস অভিষিক্ত হলেন। তিনি কলোসিয়াম নির্মাণ সম্পূর্ণ করেন। তার সময় ভিসুভিয়াসের অগ্নুৎপাতে পম্পেই এবং হারকিউলেনিয়াম নগরী ধ্বংস হয়ে গেলে তিনি দক্ষ হাতে দুর্যোগ সামাল দেন। ৮০ খ্রিস্টাব্দে রোমে নতুন করে আবার অগ্নিকান্ড ঘটলে সেই বিপর্যয়ও টাইটাস সফলভাবে মোকাবেল করেছিলেন। সম্ভবত জ্বরে ভুগে তিনি মারা যান।
ডমিশিয়ান (৮১-৯৬ খ্রিস্টাব্দ) : টাইটাসের ভাই ডমিশিয়ান অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত রোম মেরামত সম্পন্ন করেন। তার সময় জার্মানির অনেক নতুন এলাকা রোমের অন্তর্ভুক্ত হয়। তিনি সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক খুঁটিও মজবুত করেন। কিন্তু তার স্বেচ্ছাচারিতায় সবাই অতিষ্ঠ হয়ে উঠে। পনের বছর রাজত্ব করার পর তিনি গুপ্তহত্যার শিকার হলেন। শেষ হলো ফ্ল্যাভিয়ানদের শাসন।
দ্য ফাইভ গুড এম্পেরর্স
নের্ভা (৯৬-৯৮ খ্রিস্টাব্দ): তিনি সিনেটের অনুমোদনে সম্রাট হন। তার ষোল মাসের শাসন ছিল নিরুপদ্রব আর শান্তিপূর্ণ।
ট্রাজান (৯৮-১১৭ খ্রিস্টাব্দ): রাইন অঞ্চলের রোমান কম্যান্ডার। তিনি সুদক্ষ সেনানায়ক ছিলেন। মানুষ তাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করত। তিনি অনেক নতুন নতুন এলাকা রোমের সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। পার্থিয়াতে তার অভিযান রোমের সীমানা বাড়াতে না পারলেও শত্রুদের শক্তি অনেকাংশে কমিয়ে দিতে পেরেছিল। শিল্প সংস্কৃতিতেও এসময় উৎকর্ষ সাধিত হয়। তবে রোমের অর্থনীতিতে দুর্বলতা পরিস্ফুট হতে থাকে।
হ্যাড্রিয়ান (১১৭-১৩৮ খ্রিস্টাব্দ): তিনি ছিলেন ট্রাজানের আত্মীয়। তার প্রথম কাজ ছিল ট্রাজানের দখলকৃত বহু এলাকা ছেড়ে দেয়া। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে এত বড় সাম্রাজ্য সামাল দেয়া সম্ভব হবে না। তিনি দক্ষতার সাথে প্রসাশনিক কার্যক্রম চালিয়ে যান। তিনি স্কটল্যান্ড থেকে ব্রিটেনে ক্যালেডোনিয়ান আগ্রাসন প্রতিহত করেন এবং দুই অঞ্চলের মাঝে বিশাল এক প্রতিরক্ষা প্রাচীর, পিক্টস ওয়াল, নির্মাণ করেন। পূর্বে ইহুদিদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে তিনি সেখানেও কঠোর ব্যবস্থা নিলেন। তার দত্তক পুত্র ছিল অলাস। অলাসের পুত্র লুসিয়াস আর সম্রাটের ভ্রাতুষ্পুত্র নাবালক মার্কাস অরেলিয়াস। অলাস অসময়ে মারা গেলে হ্যাড্রিয়ান মার্কাসের চাচা টাইটাস অরেলিয়াস অ্যান্টোনিয়াসকে উত্তরাধিকারী নির্বাচন করেন। অ্যান্টোনিয়াস লুসিয়াস আর মার্কাস অরেলিয়াসকে দত্তক নেন।
টাইটাস অরেলিয়াস অ্যান্টোনিয়াস (১৩১-১৬১ খ্রিস্টাব্দ): পূর্ববর্তী সম্রাটের প্রতি তার আনুগত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ সিনেট তাকে পিয়াস (PIUS) নাম প্রদান করে। তিনি শান্তিপূর্ণভাবে রাজত্ব করেছিলেন।
মার্কাস অরেলিয়াস (১৬১-১৮০ খ্রিস্টাব্দ): তিনি প্রথমে যৌথভাবে লুসিয়াসের সাথে রাজা হলেন। সাম্রাজ্য নানাদিক থেকে বিপদের সম্মুখীন হলো। হিস্পানিয়াতে মুররা আর গলে বেশ কিছু জার্মান জাতি অনুপ্রবেশ করে। প্রাচ্যে পার্থিয়া রোমের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ব্রিটেনের রোমান সৈন্যরা নিজেরাই এক নতুন সম্রাট নিযুক্ত করে। মার্কাস পার্থিয়ার সাথে যুদ্ধে সফল হন। শান্তিচুক্তি অনুযায়ী মেসোপটেমিয়া রোমের অধিকারে চলে আসে। ব্রিটেনের সমস্যারও সমাধান হলো। কিন্তু তার সময় রোমে প্লেগ ছড়িয়ে পড়লে বর্ধিষ্ণু খ্রিস্টান সম্প্রদায়কে দায়ী করে তাদের উপর নির্মম নির্যাতন নেমে আসে। ১৬৮ খ্রিস্টাব্দে লুসিয়াসের মৃত্যু হলে অরেলিয়াস একাই রাজত্ব করতে থাকেন। শেষ চৌদ্দ বছর তিনি সীমান্ত এলাকাতে জার্মান গোত্রগুলোর সাথে লড়াই করে কাটান। এখানেই ভিয়েনাতে তার মৃত্যু হয়। এর কিছুদিন পরেই অর্থের বিনিময়ে জার্মানদের সাথে রোমের শান্তি স্থাপিত হলো। তার সাথেই প্যাক্স রোমানার সমাপ্তি হলো।
কমোডাস (১৮০-১৯২ খ্রিস্টাব্দ): অরেলিয়াসের ছেলে কমোডাস শাসন করেছিলেন ১২ বছর। তার সময় রাষ্ট্রযন্ত্রে দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়ে। তিনি বহু যোগ্য সিনেটরকে সরিয়ে দিয়ে অদক্ষ লোকদের নিয়োগ দেন।কমোডাস পরে আততায়ীর হাতে নিহত হন।
পার্টিনেক্স (১৯২-১৯৩ খ্রিস্টাব্দ): তিন মাসের জন্য রাজত্ব করেছিলেন, তিনি ছিলেন সিনেটর। সেনাবাহিনীর সমর্থন আদায় করতে তিনি ব্যর্থ হন। ফলে তাকেও গুপ্তহত্যার শিকার হতে হয়।
সেভেরান রাজবংশ
প্রিটোরিয়ান গার্ডেরা বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে ধনবান সিনেটর জুলিয়ানাসের হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়। মাত্র দুই মাস পরেই তাকে ক্ষমতাচ্যুত ও নির্বাসিত করা হলো। প্রায় একই সময় ভিন্ন ভিন্ন এলাকা থেকে রোমান সৈন্যদল তাদের পছন্দের মানুষকে সম্রাট দাবী করে। শেষ পর্যন্ত দানিয়ুবের তীরবর্তী এলাকা থেকে সেভেরাস জয়ী হলেন।
সেপ্টিমাস সেভেরাস (১৯৩-২১১ খ্রিস্টাব্দ): আফ্রিকান সেভেরাস ছিলেন দক্ষ যোদ্ধা। তিনি প্রিটোরিয়ান গার্ডদের ক্ষমতার রাশ টেনে ধরলেন। রাজধানী থেকে তাদের সরিয়ে দিয়ে সেখানে ৫০ হাজার রোমান লিজিওনেয়ার নিয়ে আসা হলো। তিনি সিনেটকে নিষ্ক্রিয় করে দেন। পার্থিয়ানদের বিরুদ্ধেও যুদ্ধযাত্রা পরিচালনা করে তিনি মেসোপটেমিয়া ও অ্যারাবিয়ার অনেক অঞ্চল তাদের থেকে ছিনিয়ে নেন। ক্যালেডোনিয়ানদের এলাকাতেও তিনি অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। সেই লক্ষ্যে ব্রিটেনে থাকার সময় তার মৃত্যু হয়।
উত্তরাধিকারিদের সংঘাত
সেভেরাসের দুই ছেলে, কারাকালা আর গেটা। কারাকালা নিজের হাতে গেটাকে হত্যা করেন। তার সময় দাস ছাড়া সাম্রাজ্যের আর সকল মুক্ত মানুষকেই নাগরিক হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়, যাতে রাজস্ব আদায় বাড়ে। ২১৬ খ্রিস্টাব্দে তারই এক সৈনিক কারাকালাকে হত্যা করে। এবার ক্ষমতা নেন মার্সিনাস। এক বছরের মাথায় হেলিওগ্যাবালাস তাকে প্রতিস্থাপন করেন। তার মেয়াদ ছিল ২২২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত, সেই বছর প্রিটোরিয়ান গার্ডদের হাতে তিনি নিহত হন। এরপর ২৩৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শাসন করেন কারাকালাসের অবৈধ সন্তান আলেক্সান্ডার সেভেরাস। ক্ষমতার মূল নাটাই ছিল তার দাদি জুলিয়া মিসার হাতে। আততায়ীর হাতে সেভেরাস নিহত হলে সূচনা হলো এক অস্থির সময়, যা পরিচিত তৃতীয় শতকের বিপর্যয় নামে।