১৯৩৯ সালের ২৩ আগস্ট; হিটলারের নাৎসি জার্মানি এবং স্ট্যালিনের সোভিয়েত ইউনিয়ন এক অনাক্রমণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। সেই চুক্তি অনুযায়ী দেশ দুটি একে অপরের উপর আক্রমণ করবে না বলে অঙ্গীকার করে, সেই সঙ্গে তারা পূর্ব ইউরোপকে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। এই চুক্তি ইতিহাসে মলোটভ-রিবেনট্রপ চুক্তি নামে পরিচিত। চুক্তির এক সপ্তাহ পরেই জার্মানি তার প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ড আক্রমণ করে এবং ভয়াবহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়। পরবর্তী কয়েক মাসে নাৎসিরা ইউরোপের বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিজেদের পদানত করে। জার্মান বাহিনীর কুদৃষ্টি থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নও বাদ যায়নি। শুধুমাত্র সময় এবং সুযোগের অপেক্ষায় ছিল নাৎসিরা।
সোভিয়েত-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি ধীরে ধীরে দুর্বল হতে থাকে এবং উভয় দেশই যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করে। ইউরোপের বিশাল অঞ্চল জয় করা নাৎসি বাহিনী চরম আত্মবিশ্বাস নিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন জয়ের পরিকল্পনা করে। শেষ পর্যন্ত মলোটভ-রিবেনট্রপ চুক্তির বাইশ মাসের মাথায় ১৯৪১ সালের ২২ জুন সাম্রাজ্যবাদী নেশায় মত্ত হিটলার তার জীবনের বৃহত্তম ভুল করে বসেন। সেদিন তার নির্দেশে নাৎসিরা সোভিয়েত ইউনিয়নের উপর ইতিহাসের বৃহত্তম সামরিক অভিযান শুরু করে। এই আক্রমণ ‘অপারেশন বারবারোসা’ নামে পরিচিত।
আকস্মিক আক্রমণের মাধ্যমে নাৎসি বাহিনী রেড আর্মির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দেয়। এরপর কয়েক মাসের মধ্যে নাৎসিরা সোভিয়েত রাজধানী মস্কোর উপকণ্ঠে হাজির হয়। নাৎসি আক্রমণে কোণঠাসা রেড আর্মি কোনোভাবে টিকে ছিল। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই প্রকৃতির আশির্বাদে এবং স্ট্যালিনের ইস্পাত-কঠিন নেতৃত্বে রেড আর্মি ঘুরে দাঁড়ায়। সোভিয়েত রেড আর্মি একসময় নাৎসি বাহিনীকে নাস্তানাবুদ করতে শুরু করে এবং ব্যর্থ হয় অপারেশন বারবারোসা।
ঠিক কী কী কারণে ব্যর্থ হয় অপারেশন বারবারোসা এবং থেমে যায় নাৎসিদের জয়রথ?
হিটলারের অতি আত্মবিশ্বাস ও জার্মানির গোয়েন্দা ব্যর্থতা
হিটলার যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন, তখন ইউরোপের বিস্তীর্ণ এলাকা নাৎসিদের দখলে। খুব সহজেই অনেকগুলো দেশ দখল করে অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাসী ছিলেন হিটলার। জার্মানরা তাদের প্রতিপক্ষের সামরিক সম্ভাবনাকে অবমূল্যায়ন করে এবং তারা তাদের নিজস্ব বাহিনীর ক্ষমতাকেও অতিরঞ্জিত করে বিবেচনা করতে থাকে। এছাড়া ১৯৩৬-৩৮ সালের মধ্যে স্ট্যালিন গ্রেট পার্জ বা গ্রেট টেররের মাধ্যমে রেড আর্মির প্রচুর দক্ষ ও তুখোড় সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করায় হিটলার রেড আর্মিকে একটি ভঙ্গুর ও দুর্বল সেনাবাহিনী বলে ভাবতে থাকেন। হিটলার ভেবেছিলেন দুর্বল রেড আর্মি, তার তথাকথিত মহান শক্তিশালী নাৎসি বাহিনীর কাছে পাত্তাই পাবে না। স্ট্যালিনের গ্রেট পার্জ হিটলারকে সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণে প্ররোচিত করে। কথায় আছে, প্রতিপক্ষকে কখনো দুর্বল ভাবতে নেই। হিটলার ঠিক সেই ভুলই করে বসেন।
হিটলারের বিশ্বাস ছিল- ঝটিকা আক্রমণের মাধ্যমে মাত্র তিন মাসের মধ্যে মস্কোর পতন ঘটাবেন, তিনি চেয়েছিলেন শীত আসার আগেই মস্কো দখল করতে। নাৎসি বাহিনী যদিও কয়েক মাসের মধ্যেই মস্কোর কাছাকাছি চলে গিয়েছিল, কিন্তু হিটলারের প্রত্যাশানুযায়ী অত দ্রুত সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটেনি। হিটলারকে অবাক করে দিয়ে সোভিয়েত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ফলে যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হতে থাকে। কিন্তু নাৎসি বাহিনী সোভিয়েত ভূখন্ডে দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিল না। এছাড়া জার্মান গোয়েন্দারাও সোভিয়েত ইউনিয়নের যুদ্ধ প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে পারেনি। নাৎসি গোয়েন্দারা সোভিয়েত সামরিক সক্ষমতা ও সংরক্ষিত সেনাবাহিনী সম্পর্কে সঠিক তথ্যই জানতে পারেনি। নাৎসি জার্মানির সঙ্গে কমিউনিস্ট সোভিয়েত ইউনিয়নের যুদ্ধের আশঙ্কা করে অনেক আগে থেকেই স্ট্যালিন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিলেন। হিটলারের অতি আত্মবিশ্বাস ও জার্মানির গোয়েন্দা ব্যর্থতা অপারেশন বারবারোসা সফল না হওয়ার জন্য অনেকাংশে দায়ী।
স্ট্যালিনের ইস্পাত-কঠিন নেতৃত্ব
সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্ট্যালিন ত্রিশের দশকের মাঝামাঝি থেকে একটি বড় ধরনের যুদ্ধের আশঙ্কা করছিলেন। তৎকালীন ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে তিনি আন্দাজ করতে পেরেছিলেন যে, নাৎসিদের সাথে সোভিয়েত ইউনিয়নের যুদ্ধ অনিবার্য। কিন্তু অর্থনৈতিক ও সামরিকভাবে পশ্চিম ইউরোপ থেকে অনেকটা পিছিয়ে থাকা সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষে যুদ্ধ করা সম্ভব ছিল না। এজন্য প্রথমে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নকে একটি শিল্পোন্নত দেশে পরিণত করেন এবং পরবর্তীতে ভূ-রাজনৈতিক চালের মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়নকে জার্মানি এবং ইঙ্গ-ফরাসি জোটের আক্রমণ থেকে সাময়িকভাবে বিরত রাখেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে স্ট্যালিন যে জার্মানির সঙ্গে অনাক্রমণ চুক্তি করেছিলেন তা-ও মূলত দেশকে সামরিকভাবে শক্তিশালী করতে এবং যুদ্ধের পর্যাপ্ত প্রস্তুতির জন্যই করেছিলেন। অনাক্রমণ চুক্তি ও অপারেশন বারবারোসার মধ্যবর্তী প্রায় বাইশ মাস সময়ের মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে থাকে। নাৎসিরা যখন মস্কোর উপকণ্ঠে চলে আসে তখন অত্যন্ত শোচনীয় অবস্থায় সোভিয়েত সরকারকে কুইবশেভে (বর্তমান সামারা) সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হলে স্ট্যালিন কুইবশেভে না গিয়ে, মস্কোতে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। স্ট্যালিন ভেবেছিলেন মস্কো থেকে তিনি সরে গেলে সৈন্যদের মনোবল ভেঙে যেতে পারে। তাই স্ট্যালিন ক্রেমলিনে থেকেই যুদ্ধের নির্দেশনা দিতে থাকেন। মস্কোতে থেকেই তিনি তার সেনাবাহিনীকে সুসংগঠিত ও ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করতে থাকেন।
নাৎসি আক্রমণের পর স্ট্যালিন এক রেডিও ভাষণে ইতিহাসের কোনো বাহিনীই অপরাজেয় নয় বলে উল্লেখ করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, নেপোলিয়ন এবং কায়জার ভিলহেলমের আর্মিদেরও অপরাজেয় বলে মনে করা হতো, এরা যেমন রাশিয়ান বাহিনীর কাছে পরাজিত হয়েছিল, তেমনি হিটলারের বর্তমান ফ্যাসিস্ট জার্মান সেনাবাহিনীর একই অবস্থা হবে। বলা বাহুল্য, তার এই ভাষণ সোভিয়েত সেনাবাহিনী ও জনগণকে ব্যাপকভাবে উজ্জীবিত করে এবং তার নেতৃত্বে সোভিয়েতরা নাৎসিদের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলে। জার্মান বাহিনীর দ্রুত এগিয়ে আসার প্রেক্ষিতে স্ট্যালিনের নির্দেশে সোভিয়েত সামরিক শিল্পগুলো মধ্য রাশিয়ায় স্থানান্তর করে এর কার্যক্রম অধিকতর জোরদার করা হয়। এভাবে স্ট্যালিনের ইস্পাত-কঠিন নেতৃত্ব নাৎসিদের জয়রথ থামিয়ে অপারেশন বারবারোসাকে ব্যর্থ করে দেয়।
জেনারেল উইন্টার
কথায় আছে- “এটাও ইতিহাসের শিক্ষা যে, কেউই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়না।” হিটলারও ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেননি। নেপোলিয়ানের বাহিনীসহ ইতিহাসের অনেক শক্তিশালী সেনাবাহিনী রাশিয়ান শীতের কাছে পরাজিত হয়েছিল। কিন্তু হিটলার রাশিয়ার শীতকে গুরুত্ব না দিয়েই সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করেন। শীত আসার আগে ১৯৪১ সালের অক্টোবরের মধ্যে জার্মান বাহিনী মস্কোর উপকণ্ঠে চলে আসে এবং কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হয় ‘ব্যাটল অফ মস্কো’। প্রথমদিকে সোভিয়েত বাহিনী পর্যুদস্ত হতে থাকে, কিন্তু দুই মাস পর ডিসেম্বরে জার্মান বাহিনীর দুর্দিন শুরু হয়। এ সময় সোভিয়েত বাহিনীর পক্ষে হাজির হয় জেনারেল উইন্টার! সেই জেনারেল উইন্টার, যিনি বারবার রাশিয়ানদের বিদেশী আগ্রাসন থেকে মুক্ত করেছেন। সেই উইন্টার বা শীতকাল আবারও সোভিয়েতদের রক্ষার জন্য উপস্থিত হয়।
শীত ও বরফের প্রকোপে জার্মান বাহিনী বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এই শীতের প্রকোপে পড়েই নেপোলিয়ন পরাজিত হয়েছিল। সেসময় তাপমাত্রা অনেক সময় মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গিয়েছে। তাপমাত্রা রেকর্ড নিম্নে নেমে যাওয়ায় চরম শীত ও বরফের মধ্যে জার্মান ট্যাঙ্ক এবং যানবাহনগুলো জমে যেতে থাকে, সেই সঙ্গে জার্মানদের খাদ্যসামগ্রীর সংকট শুরু হয়। বরফের স্তূপের মধ্যে জার্মান ট্যাংক ও সামরিক সরঞ্জাম চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি হয়। চরম প্রতিকূল অবস্থায় ১৯৪২ সালের জানুয়ারিতে জার্মান বাহিনী পিছু হটতে থাকে। প্রথমবারের মতো সোভিয়েত বাহিনী জার্মানদের থামিয়ে দেয় এবং তাদের বিতাড়িত করে। এরই সঙ্গে শেষ হয় অপারেশন বারবারোসা এবং শুরু হয় সোভিয়েত বাহিনীর প্রতি-আক্রমণ। এজন্য রাশিয়ার শীতকে অপারেশন বারবারোসা ব্যর্থ হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
জার্মানির রসদ সরবরাহে ঘাটতি
প্রয়োজনীয় রসদের যোগান দিতে না পারা জার্মান বাহিনীর ব্যর্থতার অন্যতম প্রধান কারণ। জার্মানরা দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের জন্য পর্যাপ্ত রসদ নিয়ে যায়নি। নাৎসিরা ভেবেছিল- যেহেতু খুব দ্রুতই সোভিয়েতদের পতন হবে তাই তারা সোভিয়েত ভূখন্ড থেকে প্রাপ্ত রসদ দিয়েই কাজ চালিয়ে দিতে পারবে। কিন্তু স্ট্যালিনের নির্দেশে রেড আর্মি ‘স্কর্চড আর্থ পলিসি’ বা ‘পোড়ামাটি নীতি’ গ্রহণ করে। পোড়ামাটি নীতি অনুযায়ী সোভিয়েত বাহিনী যখন পিছু হটছিল তখন সেখানকার সব রসদ ধ্বংস করে দেয় যেন জার্মানরা সেগুলো ব্যবহার করতে না পারে। রেড আর্মি সেখানকার রাস্তাঘাট ধ্বংস করে দেয়, খাদ্যসামগ্রী পুড়িয়ে ফেলে, খনিগুলোতে আগুন লাগিয়ে দেয়। এককথায়, জার্মানরা সুবিধা নিতে পারে এমন সবকিছুই ধ্বংস করে দেয় সোভিয়েতরা।
উপরন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের দুর্বল অবকাঠামো ও অন্যান্য কারণে জার্মানি থেকেও নাৎসি বাহিনীর জন্য পর্যাপ্ত রসদ আসতে পারেনি। যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি ও অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয় জার্মানি। জার্মানদের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল, অভিযানের পরিকল্পনা করার সময় নাৎসি কর্মকর্তারা আবহাওয়া এবং সোভিয়েত ভূখণ্ডের দুর্বলতাগুলো সঠিকভাবে বিবেচনা করেনি। সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রচুর বনভূমি, জলাভূমি এবং নৃশংস রাশিয়ান শীতের সূচনা অপারেশনের গতি থামিয়ে দেয়। এমনকি জার্মানরা নাৎসি বাহিনীর জন্য পর্যাপ্ত শীতবস্ত্রের সরবরাহ করতে পারেনি। মস্কোর কাছে তুষারপাতের মধ্যে নাৎসি সৈন্যদের কাঁপতে থাকার দৃশ্য জার্মানদের রসদ সরবরাহের ব্যর্থতার প্রতীক।
সোভিয়েত ট্যাংক শ্রেষ্ঠত্ব
জার্মানরা যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করেছিল, দূরদর্শী স্ট্যালিন তখন তার শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো আরো পূর্বে স্থানান্তর করে প্রচুর পরিমাণে সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদন শুরু করেন। প্রাথমিকভাবে সোভিয়েতরা ধাক্কা খেলেও পরবর্তীতে বিশাল ট্যাংক বহর নিয়ে রণক্ষেত্রে নামে রেড আর্মি। এ সময় উৎপন্ন সোভিয়েত ট্যাংকগুলো ছিল অত্যাধুনিক ও শক্তিশালী। নতুন উৎপাদিত ট্যাংকগুলো ইউরোপের প্রতিকূল অবস্থা মোকাবিলার উপযুক্ত ছিল এবং এগুলো কাদা ও বরফের মধ্যেও যুদ্ধে সক্ষম ছিল। ট্যাংক উৎপাদনে শ্রেষ্ঠত্বের মাধ্যমে সোভিয়েত বাহিনী নাৎসিদের নাস্তানাবুদ করতে থাকে।
কঠোর সোভিয়েত প্রতিরোধ
নাৎসিদের সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণের প্রেক্ষিতে সোভিয়েতরা তাদের প্রতিরোধকে ‘গ্রেট প্যাট্রিয়টিক ওয়ার’ হিসেবে আখ্যা দেয়। স্ট্যালিনের নেতৃত্বে মাতৃভূমি রক্ষায় সোভিয়েত জনগণ জার্মানির বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলে। জার্মানরা যেসব সোভিয়েত ভূখন্ড দখল করে, সেখানেও সোভিয়েত জনগণ গেরিলা যুদ্ধ চালিয়ে যায়। স্ট্যালিন সোভিয়েত জনগণ ও সৈন্যদের দেশরক্ষায় ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করেন। সোভিয়েতরা ছিল দেশরক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। মূলত সোভিয়েতদের প্রবল প্রতিরোধের ফলেই অপারেশন বারবারোসা ব্যর্থ হয়।
পরিশেষ
কোনো একটি নির্দিষ্ট কারণে অপারেশন বারবারোসা ব্যর্থ হয়নি। অনেকগুলো কারণ একটি চেইনের মতো কাজ করার ফলে অপারেশনটি ব্যর্থ হয়। ঘটনার চেইন বা প্রতিটি ঘটনাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোনো একটি বা দুটি ঘটনা যদি না ঘটত বা চেইন যদি তৈরি না হতো, তবে হয়তো নাৎসিদের হাতে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হলেও হতে পারত। যেমন ধরা যাক, যদি শীত ও বরফের প্রকোপ সেই সময়ে শুরু না হতো এবং জার্মান রসদ সরবরাহ স্বাভাবিক থাকত, তবে হয়তো নাৎসিদের হাতে মস্কোর পতন হতো। আবার স্ট্যালিনের মতো কঠোর ও প্রভাবশালী নেতা যদি না থাকতেন বা সোভিয়েত ইউনিয়ন যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদন করতে ব্যর্থ হতো, তবে সোভিয়েতরা জার্মানদের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারত না। তাই উপরে আলোচিত সবগুলো কারণ যখন একত্রিত হয়েছে, তখনই অপারেশন বারবারোসা ব্যর্থ করা সম্ভব হয়েছে।