প্রতিটি উৎসবের আগে নারীদের প্রস্তুতির একটি বড় অংশ জুড়ে থাকে নিজেদের যত্ন আর রূপচর্চা। সারাদিনের ঘোরাঘুরি, বন্ধু-আত্মীয়দের সাথে দেখা করতে যাওয়া বা যেকোনো অনুষ্ঠানে যদি নিজেকে আরেকটু প্রাণবন্ত, আরেকটু সুন্দর না দেখায় তাহলে কি হয়? আর যদি কোথাও বেড়াতে না যান, তবে বিশেষ দিনে ঘরেই যদি আপনাকে আরেকটু বিশেষ দেখায় তবে মন্দ হয় না। কিন্তু সারাদিনের রুটিনমাফিক চলা আর হাজারো কর্মব্যস্ততার মাঝে নিজেকে বিশেষ দিনের জন্য আলাদা করে প্রস্তুত করার সময় কোথায়?
গৃহিণীরা যদিও অনেক কাজের ফাঁকে নিজের জন্য কিছুটা সময় বের করতে পারেন, কিন্তু এখনকার অধিকাংশ কর্মজীবী নারীদের জন্য বিশেষ দিনের জন্য আলাদা প্রস্তুতি গ্রহণ যেন হরিণ ধরার মতোই কঠিন কাজ। উৎসবের আগের দিন রাত বা উৎসবের দিন সকালের সময়টুকুই যেন নিজেদের জন্য বরাদ্দ থাকে। তাই এই স্বল্প সময়ের মধ্যে নিজেকে আরো লাবণ্যময়ী ও আকর্ষণীয় করে তুলতে আমাদের নারী পাঠকদের জন্য নিয়ে এলাম- চেহারার হারিয়ে যাওয়া লাবণ্য ফিরিয়ে আনার ও উৎসবের দিন নিজেকে আরেকটু তারুণ্যদীপ্ত করে তোলার সহজ কিছু ফেসপ্যাকের তথ্য নিয়ে।
বেসন, লেবু, টক দইয়ের প্যাক
লেবু আর টক দই উভয়ই ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী দুটি উপাদান। লেবু একটি প্রাকৃতিক ব্লিচার। ত্বকের রোদে পোড়াভাব, মরা কোষ, কালো দাগ ও ক্লান্তি দূর করা সহ লেবুর রস ভেতর থেকে উজ্জ্বলতা বাড়াতেও অত্যন্ত কার্যকর। আবার টক দই ত্বকের পুষ্টি যোগায়, ত্বকে হারানো আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনে। সেই সাথে টক দই ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। এ থেকে বোঝা যায়, বেসন, টক দই আর লেবুর এই প্যাকটি ত্বকের জন্য কতটা উপকারী! দুই চা চামচ টকদইয়ে এক চা চামচ বেসন ও কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে সারা মুখে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললেই যথেষ্ট। ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর করা ছাড়াও এই প্যাক ত্বককে আরো সজীব ও টানটান করে। আর উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করার কথা তো বলাই বাহুল্য।
দুধ-বাদামের প্যাক
রোজকার ব্যস্ততা সময়ের সাথে সাথে আপনার সেই নজরকাড়া সুস্থ সুন্দর ত্বকটা কি কেড়ে নিচ্ছে? তাই মন খারাপ না করে জেনে নিন সহজে ও সল্প সময়ে নিজে সুন্দর মুখশ্রীর প্রাণ ফিরিয়ে আনার একটি উপায়। কাঁচা দুধ আর বাদামের মিশ্রণ পরিষ্কার মুখে লাগিয়ে রেখে দিন ১০-১৫ মিনিট। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। কাঁচা দুধের বদলে দুধের সরও ব্যবহার করতে পারেন। কাঁচা চিনাবাদামও ব্যবহার করতে পারেন, তবে ৩-৪টি কাজুবাদামের পেস্ট ব্যবহার করলে আরো ভালো। ত্বকের রুক্ষতা দূর করে ত্বকে আর্দ্রতা যোগায় কাজুবাদাম। ভিতর থেকে পুষ্টি জুগিয়ে এই ফেসপ্যাকটি আপনার ত্বককে করে তুলবে আরো উজ্জ্বল ও কোমল।
ত্বকের জন্য বেশ স্বাস্থ্যকর এই প্যাকটি উৎসব শেষে সারাদিনের প্রসাধনীর চাপ আর ক্লান্তি দূর করতেও সাহায্য করবে।
পেঁপে-লেবুর ফেসপ্যাক
ত্বকের যত্নে বারবার লেবুর কথা এসেই যায়। লেবুর গুণাগুণের কথা তো আপনাদের আগেই বলেছি। পেঁপেও কিন্তু কম যায় না। পেঁপেতে পেপেইন থাকে যা ত্বকের অভ্যন্তরে থেকে মৃতকোষ দূর করে গভীরভাবে ত্বককে পরিষ্কার করে। লেবুরও ত্বক উজ্জ্বল করার গুণ রয়েছে। তাই পেঁপে ও লেবুর রসের ২:১ অনুপাতে মিশ্রণ ত্বককে করে তোলে দাগহীন, উজ্জ্বল এবং আরো প্রাণবন্ত।
কলা-মধুর প্যাক
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ প্রকৃতির দুটি উপাদান হলো কলা ও মধু। ত্বকের জন্য এই দুটির উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। এই দুটির মিশ্রণ একদিকে যেমন ত্বকের বলিরেখা কমায়, অন্যদিকে ত্বকে প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা জুগিয়ে ত্বককে উজ্জ্বল করে। এই প্যাকটি তৈরী করার জন্য প্রথমে অর্ধেক কলা চটকে নিয়ে আধা চা চামচ মধুর সাথে মেশাতে হবে এবং এতে কয়েক ফোঁটা গোলাপ জলও যোগ করতে হবে। এক চা চামচ টক দইও যোগ করা যায়, যদিও তা ব্যবহারকারীর ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। ঘন এই মিশ্রণ মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। মাত্র ১৫ মিনিটের এই প্যাকটি ব্যবহারের উপকারিতা সাথে সাথেই আপনি বুঝতে পারবেন। উৎসব ছাড়াও সপ্তাহে দুবার সহজ এই প্যাকটি আপনি ত্বকের যত্নে ব্যবহার করতে পারেন।
এ পর্যায়ে বলে রাখা উচিত, সংবেদনশীল ত্বকে অনেক সময় লেবুর রস, টক দই এই উপাদানগুলো ব্যবহারের ফলে অস্বস্তি দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে অবশ্যই রুপচর্চার ক্ষেত্রে এই উপাদানগুলো এড়িয়ে যেতে হবে। দুধ প্রায় সব ধরনের ত্বকেই মানিয়ে যায়। তাই দুধের ফেসপ্যাকগুলোতে বেশি গুরুত্ব দিতে পারেন। সেই সাথে সকল প্যাকের উপাদানের যথার্থ ঘনত্বের দিকেও খেয়াল রাখা জরুরি। আর অবশ্যই পরিষ্কার, জীবাণুমুক্ত পানির ব্যবহারের এক্ষেত্রে কোনো বিকল্প নেই।
দুধ-গোলাপের প্যাক
গোলাপের কয়েকটা পাপড়ি মিহি করে পিষে তাতে দুই টেবিল চামচ দুধ ও দুই টেবিল চামচ চন্দনের গুঁড়া মিশিয়ে তৈরী করা যায় ফর্সা ও উজ্জ্বল ত্বকের জন্য আরেকটা জাদুকরী প্যাক। মাত্র ১৫ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। গোলাপের পাপড়ি ত্বকের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। এর এন্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন ই ত্বকের বলিরেখা কমিয়ে ত্বককে আরো টানটান করে। ল্যাকটিক এসিডসমৃদ্ধ দুধ তো সবসময়ের জন্যই ত্বকের উত্তম প্রাকৃতিক টোনার। তাই দুধ, চন্দন আর গোলাপের এই মিশ্রণ আপনাকে করে তুলবে বিশেষ দিনের জন্য একদম প্রস্তুত।
এই গরমের মধ্যে ত্বককে সজীব আর শীতল রাখাটাই যেন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সজীব ত্বক স্বাভাবিকভাবেই প্রাণবন্ত আর সুস্থ ত্বক মানেই সুন্দর। তাহলে নিজের ও ত্বকের সুস্থতার দিকে নজর তো দিতেই হয়। উৎসবের দিনের সাজগোজের ধকল সহ্য করে নেওয়ার জন্য ত্বককে আগের দিনই দিতে পারেন একটু বাড়তি পুষ্টি। আবার সকালে রোদে বের হওয়ার আগেই ত্বকে শীতলতা আর সজীবতার ছোঁয়া লাগিয়ে নিতে পারেন সারাদিনের জন্য। আর এই উদ্দেশ্যে শসা আর ঘৃতকুমারীর প্যাকের মতো কার্যকর আর কি-ই বা হতে পারে?
শসা- ঘৃতকুমারীর প্যাক
একটা শসার চার ভাগের এক ভাগ নিয়ে মিহি করে পিষে এর পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। এক টেবিল চামচ ঘৃতকুমারীর রস যোগ করে ভালোভাবে মেশাতে হবে। মুখে এই মিশ্রণ লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। স্বাভাবিক পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। ত্বককে সজীব, সতেজ, লাবণ্যময় আর প্রাণবন্ত করতে এই প্যাকের জুড়ি নেই।
আর বর্তমান আবহাওয়ায় উৎসবের দিন বাইরে বের হলে ছাতা, সানগ্লাস আর পানির বোতল নিতে ভুলবেন না যেন। উৎসবে-আনন্দে নিজেকে রাখুন যত্নে।
ফিচার ইমেজ: flicker.com