ধরা যাক, একদিন অফিসে গিয়ে হুট করেই শুনলেন, আপনাকে ছাটাই করা হয়েছে। আজ থেকে আর আসতে হবে না অফিসে। হঠাৎ করে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো ঘটনাই বটে! হুট করে চাকরি চলে গেলে বিপদের আর শেষ নেই।
সরকারি চাকরিতে এটা বিরল হলেও বহুজাতিক এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে হুট করে চাকরি চলে যাওয়াটা খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়। বিশেষ করে কর্পোরেট এবং এনজিও খাতে এমনটি প্রায়ই হয়ে থাকে। ব্যাপারটি অবশ্যই দুঃখজনক। কিন্তু যেহেতু হরহামেশাই ব্যাপারটি ঘটে থাকে, তাই এর জন্য প্রস্তুতি থাকলে আপনার উপর এর খারাপ প্রভাব খুব একটা পড়বে না। যদি আপনার চোখ-কান একটু খোলা রাখেন, তাহলে কিছু পূর্বাভাস আপনি আগে থেকেই টের পাবেন। এক্ষেত্রে আপনার কোনো বুদ্ধিমান পদক্ষেপ হয়তো ছাটাই ঠেকাতেও পারে। আর না পারলেও নিজের জন্য নতুন কোনো বিকল্প কাজের সংস্থান করে রাখতে পারবেন আগে থেকেই। তখন হয়তো পরিস্থিতি অনেকটাই আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
পরপর খারাপ রিভিউ পাওয়া
খারাপ পারফরম্যান্স এর রিভিউ পাওয়া যে সবসময় খারাপ তা কিন্তু নয়। কখনো কখনো বরং এটা ভালো লক্ষণ। এটাকে অনেক সময় সমালোচনা হিসেবে কর্মীর কাছে পাঠানো হয়, যাতে কর্মী ভুলত্রুটিগুলো শুধরে নিজেকে গড়ে তুলতে পারেন।
কিন্তু খারাপ পারফরম্যান্সের রিভিউ যদি ক্রমাগত পেতে থাকেন এবং তা হয় ঘন ঘন, তাহলে বুঝতে হবে লক্ষণ সুবিধের নয়। এছাড়া যদি রিভিউতে গঠনমূলক কোনো সমালোচনার পরিবর্তে ‘আপনার কাজে আমরা সন্তুষ্ট নই’, ‘আপনি দলে কাজ করতে পারেন না’ বা ‘আপনার ব্যক্তিত্ব আমাদের প্রতিষ্ঠানের সাথে মেলে না’- এ ধরনের নেতিবাচক কথা লেখা থাকে, তবে একে সতর্ক সংকেত হিসেবে বিবেচনা করুন।
বিশ্বস্ততার জায়গা থেকে সরিয়ে দেওয়া
প্রতিটি অফিসেরই কিছু নিজস্ব তথ্য থাকে, যা একান্তই ঐ অফিসের কর্মীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। গুরুত্বপূর্ণ এই তথ্যগুলো সাধারণত বাইরের মানুষ জানে না। যদি হঠাৎ করেই আপনাকে অফিসের এ ধরনের তথ্যগুলো আর না জানানো হয়, যে ধরনের ইমেইল আগে পেতেন তা আর পাঠানো না হয় কিংবা কোনো গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে ডাকা না হয় যেখানে আপনাকে আগে ডাকা হতো, তাহলে বুঝে নিতে হবে আপনি সেই বিশ্বস্ততার জায়গাটি হারিয়েছেন। আপনার অফিস আপনাকে আর তাদের নিজের লোক ভাবতে রাজি নয়।
অসম্ভব কোনো দায়িত্ব আপনাকে দেওয়া হলে
যখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে তখন আপনাকে এমন সব দায়িত্বই দেওয়া হয় যা আপনার দ্বারা করা সম্ভব। কখনো কখনো হয়তো কাজের প্রেশার বাড়তেও পারে। কিন্তু যদি কখনো এমন হয় যে প্রতিনিয়তই আপনাকে এমন সব কাজ দেওয়া হয় যা আপনার একেবারেই এখতিয়ারের বাইরে, তাহলে বুঝতে হবে সমস্যা কিছু একটা আছে।
অনেকক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান কিংবা কর্তৃপক্ষ ইচ্ছে করেই কর্মীকে এমন সব দায়িত্ব দেন যা তাদের পক্ষে করা কখনোই সম্ভব নয়। কেননা ছাঁটাই করার জন্য কর্মীর এই অপারগতাকে অজুহাত হিসেবে দেখাতে পারেন। এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে বিষয়টি ভেবে দেখুন। কাজের চাপ খুব বেশি মনে হলে আপনার সুপারভাইজর বা বসের সাথে কথা বলুন। তিনি যদি এর কোনো সমাধান দেন তবে তো ভালোই। আর তা না হলে বুঝে নিন এতে কোনো না কোনো গড়মিল আছে।
উপরমহল থেকে খুব বেশিমাত্রায় ‘ওয়ার্নিং’ দেওয়া
বেশিরভাগ সময়েই দেখা যায়, কোনো ভুল দ্বিতীয়বার না করার জন্য সতর্ক করা হলে তা অনানুষ্ঠানিকভাবেই কর্মীকে জানানো হয়। এতে করে কর্মী নিজেকে শুধরে নেওয়ার সুযোগ পায়। আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ওয়ার্নিং’ বা সতর্ক করা কখনোই ভালো লক্ষণ নয়। এর মানে হলো আপনাকে সতর্ক করার বিষয়টি আপনার প্রতিষ্ঠান খুব গুরুত্বের সাথে দেখছে। আর ‘ওয়ার্নিং’ যদি একের অধিকবার পান, তাহলে বুঝে নিন এর ধারাবাহিকতায় আপনার জন্য ভালো কোনো খবর অপেক্ষা করছে না।
বসের সাথে সম্পর্ক ক্রমশ খারাপ হওয়া
সাধারণত বস বা সুপারভাইজরের সাথে কর্মীর সম্পর্কটি আন্তরিক এবং বন্ধুত্বপূর্ণই হয়ে থাকে। কিন্তু যদি সম্পর্কটি কোনো কারণে খারাপ হয়ে যায় তাহলে সেটি আসলেই ভাববার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
যদি আপনার বস বা সুপারভাইজরের সাথে মনোমালিন্য বা সম্পর্ক খারাপ হয় তাহলে দেখুন তিনি আপনার সাথে কী ধরনের আচরণ করছেন। তিনি যদি জনসম্মুখে আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করেন বা আপনাকে হেয় করেন তাহলে বিষয়টিকে একেবারে হেলাফেলা করবেন না। এটি কোনো খারাপ কিছুর পূর্বাভাস হতে পারে।
সময় এবং খরচপত্রের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ চাওয়া
‘ফিফটি প্লাস!: ক্রিটিক্যাল ক্যারিয়ার ডিসিশনস ফর দ্য রেস্ট অফ ইউর লাইফ” বইয়ের লেখক রবার্ট ডিলেনস্নাইডার বিখ্যাত সাময়িকী বিজনেস ইনসাইডারকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “খুব বড় কোনো ঘটনা না ঘটলে সাধারণত হিসাব বিভাগ কর্মীদের কাছে তাদের খরচের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ চায় না।”
আপনার কাছে যদি আপনার কাজ, সময় এবং খরচপাতির পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব চাওয়া হয় তাহলে বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে নিন। আপনার কাছে তখনই পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব চাওয়া হয় যখন আপনার দিকে সন্দেহের তীরটি যায়। আপনি যদি সম্পূর্ণ নির্দোষও হয়ে থাকেন, তবুও বিষয়টিকে সতর্কতার সাথে বিবেচনা করুন। আপনার আরো কোনো সহকর্মীর কাছে এ ধরনের হিসাব চাওয়া হয়েছে, নাকি একমাত্র আপনার কাছেই তা জানুন।
আগের মতো আপনাকে আর কাজে যুক্ত করা হচ্ছে না
আপনার দ্বারা অসম্ভব এমন দায়িত্ব আপনাকে দেওয়া যেমন শুভলক্ষণ নয়, তেমনি আপনাকে দায়িত্ব না দেওয়াটাও চিন্তার বিষয় বটে। আপনাকে যদি আগের মতো আর কাজের দায়িত্ব দেওয়া না হয় বা নতুন কোনো কাজে যুক্ত করা না হয় তাহলে সেটাকে খারাপ কিছুর পূর্বাভাস হিসেবেই বিবেচনা করুন। এর মানে হতে পারে আপনার প্রতিষ্ঠান আপনাকে আর কাজ বা দায়িত্বের জন্য যোগ্য মনে করছে না কিংবা তারা আপনার উপর ভরসা করতে পারছে না। কিংবা তারা হয়তো চাইছেই না যে আপনি তাদের কোনো কাজে যুক্ত হোন।
প্রতিষ্ঠানের নিয়মনীতির সাথে মানিয়ে নিতে পারছেন না
নতুন প্রতিষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পর বেশ কিছুদিন সেখানকার পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে বেগ পাওয়া, দায়িত্ব বুঝে নেওয়া কিংবা সেখানকার মানুষদের সাথে চলাফেরা সবকিছুতেই কিছুটা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন আমাদের হতে হয়। কিন্তু মানিয়ে নিতে পারাটা যদি একেবারেই না হয়ে ওঠে তাহলে তা কখনোই আপনার জন্য ভালো ফলাফল বয়ে আনবে না। কেননা প্রতিষ্ঠানে কখনো একা কিছু করা যায় না। আর সেখানের পরিবেশ বা মানুষদের সাথেই যদি মিলে চলতে না পারেন তাহলে তা থেকে ভালো কোনো ফলাফল আশা করাটা বোকামি।
আপনাকে অবহেলা করা হচ্ছে
এমনটা যদি হয় যে অফিসে আপনাকে আর পাত্তা দেওয়া হচ্ছেনা বা আপনার কোন কাজ নিয়ে কেউ আগ্রহী নয় তাহলে একটু সতর্ক হতে হবে বৈকি। হতে পারে যে আপনাকে আর অফিসের মানুষ বলে কেউ গণ্য করছে না কিংবা তারা ধরেই নিয়েছে যে আপনি সিলেবাসের বাইরে। আপনি কি করছেন না করছেন, আপনার কাজ কেমন চলছে সেগুলো নিয়ে কারোরই কোন মাথাব্যথা না থাকাটাকে তাই সাবধানতার সাথেই বিবেচনায় রাখুন।
কাজের জন্য আর আগের মতো প্রশংসা পাচ্ছেন না
সাধারণত প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোনো কর্মী ভালো কোনো কাজ করলে তাকে সাধুবাদ জানানো, তাকে প্রশংসা করা হয়। তা সে যত ছোট কাজই হোক না কেন। কেননা এতে কর্মী উৎসাহ পান এবং সেই অনুপ্রেরণাতে সামনে আরোও ভালো কিছু করতে পারেন। কিন্তু যখন দেখবেন আপনি ভালো কোনো কাজ করা সত্ত্বেও তার স্বীকৃতি পাচ্ছেন না, তখন সেটাকে কখনোই হালকাভাবে নেবেন না। এমন অবস্থায় ভেবে দেখুন আপনার সাফল্যের স্বীকৃতি কি অন্য কেউ নিয়ে নিচ্ছে? নাকি আপনার প্রতিষ্ঠানই আপনাকে স্বীকৃতি দিচ্ছে না, কারণ তারা আর আপনাকে চায় না!
ফিচার ইমেজ: Thug Start