Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ব্রণ নিরাময়ে কিছু ঘরোয়া সমাধান

‘ব্রণ’ শব্দটির সাথে আমরা কম বেশি সকলেই পরিচিত। এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন যাদের কখনো ব্রণের অভিজ্ঞতা হয়নি। অনেকেই বংশগত অথবা হরমোনজনিত সমস্যাকেই ব্রণের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে থাকেন। ব্রণ খুব মারাত্মক জটিল সমস্যা না হলেও অত্যাধিক ব্রণ ত্বকের বাহ্যিক সৌন্দর্য অনেকটাই ম্লান করে দেয়। কারো কারো ক্ষেত্রে ব্রণের সমস্যা খুব অসহনীয় পর্যায়ে চলে যায়। এসব ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া অন্য উপায় নেই। তবে অতিরিক্ত ওষুধ এবং রাসায়নিক ক্রিমের ব্যবহারে ত্বকের অনেক বাহ্যিক ক্ষতি হতে পারে। ফলে ব্রণের সমস্যার সমাধান প্রথমেই ঘর থেকে শুরু হওয়া উচিত। বিভিন্ন ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করে ব্রণ কম থাকতেই এর প্রতিকারের চেষ্টা করতে হবে।

মুখে সরিষার ব্যবহার

মুখে সরিষার ব্যবহার; Source: banglatribune.com

ত্বকের যত্নে যে ভেষজ উদ্ভিদ দারুণ কাজ করে, তা হলো সরিষা। বিশেষজ্ঞদের মতে, সরিষায় রয়েছে স্যালিসাইলিক এসিড। এই এসিড বিভিন্ন সংক্রামক থেকে ত্বককে রক্ষা করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে। তাই একটি পাত্রে টেবিল চামচের এক-চতুর্থাংশ সরিষা গুঁড়ো নিয়ে তাতে একই পরিমাণ মধু মিশিয়ে নিতে হবে। মিশ্রণটি ভালোভাবে মিশিয়ে মুখে ব্রণের চারপাশে ভালোভাবে লাগিয়ে নিতে হবে। এরপর ১৫-২০ মিনিট মিশ্রণটি শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করে হালকা ঠাণ্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।

চন্দন কাঠের গুঁড়ো

চন্দন কাঠের গুঁড়ো; Source: natunkagoj.com

ব্রণ নিরাময়ে চন্দন কাঠের গুঁড়ো ব্যবহার একটি অনন্য উপায়। তবে বাংলাদেশে আসল চন্দন কাঠ পাওয়া রীতিমতো কষ্টসাধ্য ব্যাপার। ভালো কোনো দোকান থেকে চন্দন কাঠ বা এর গুঁড়ো সংগ্রহ করে এর সাথে গোলাপজল মিশিয়ে এক ধরনের হালকা পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। এর সাথে দুই ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে নেয়া যেতে পারে। ঘরে যদি গোলাপ জল না থাকে, সেক্ষেত্রে গোলাপজলের পরিবর্তে মধু ব্যবহার করা যেতে পারে। মিশ্রণটি ব্রণের চারপাশে যত্ন সহকারে লাগিয়ে নিতে হবে। কিছু সময় পর মিশ্রণটি শুকনো হয়ে একধরনের আবরণ তৈরি করবে এবং মুখের ত্বক কিছুটা টেনে আসবে। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। হালকা ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে নিলেই পুরো মুখে একধরনের সতেজ অনুভূতি ফিরে আসবে। রাতে ঘুমানোর আগে মুখে মিশ্রণটি লাগিয়ে নিলে বেশ ভালো উপকার পাওয়া যায়।

আপেল ও মধুর মিশ্রণ

আপেল ও মধুর মিশ্রণ; Source: banglatribune.com

অনেক আগে থেকেই প্রাকৃতিক উপায়ে ব্রণ সমস্যার সমাধানে আপেলের রসের ব্যবহার হয়ে আসছে পৃথিবীর সর্বত্র। প্রথমে আপেল ব্লেন্ড করে অথবা অন্য কোনো উপায়ে পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। এরপর পেস্টের সাথে ৪-৫ ফোঁটা মধু মিশিয়ে নিতে হবে। মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। আপেলের রস মুখের বাহ্যিক পুষ্টি প্রদান করতে সক্ষম। ফলে ত্বক হয়ে ওঠে আরো সজীব। সপ্তাহে নিয়মিত ব্যবহারের ফলে ভালো উপকার পাওয়া সম্ভব, যা কিছুদিনের মধ্যেই চোখে পড়তে বাধ্য।

তুলসি পাতার রস

তুলসি পাতার রস; Source: youtube.com

সকল রোগের ওষুধ হিসেবে তুলসি গাছের পাতা যেন অনন্য। তুলসি পাতায় রয়েছে হাজার রোগের ভেষজ প্রতিকার। তাই আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাতেও এই পাতার ভূমিকা অনস্বীকার্য। ব্রণের চিকিৎসাতেও তুলসি পাতার রস বেশ উপকারী। প্রথমে তুলসি পাতা থেকে রস বের করে নিতে হবে। ব্রণ আক্রান্ত অংশে খুব ভালোভাবে লাগিয়ে শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এরপর হালকা কুসুম গরম পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। তুলসি গাছ পাওয়া খুব সহজসাধ্য ব্যাপার। চাইলে ঘরের বারান্দাতেও লাগিয়ে নিতে পারেন একটি তুলসি গাছ।

ডিমের সাদা অংশের ব্যবহার

ডিমের সাদা অংশ; Source: priyo.com

ত্বকের যত্নে ডিমের সাদা অংশ অনেকসময় ভালো কাজ দিতে পারে। ভালো ফল পেতে হলে ডিমের সাদা অংশের সাথে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস যুক্ত করে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর মিশ্রণটি ব্রণের চারপাশে লাগিয়ে সারারাত রেখে দিতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে পরিষ্কার পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। ডিমের সাদা অংশ ত্বকের খসখসে ভাব দূর করে দিয়ে ত্বককে আরো বেশি মসৃণ করে তোলে।

কমলালেবুর খোসা

কমলালেবুর খোসা; Source: farhanagarden.blogspot.com

ত্বকের যত্নে ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে কমলালেবুর খোসা এক অসাধারণ ভূমিকা পালন করে। এরজন্যে প্রথমে কমলার খোসা রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে গুঁড়ো তৈরি করে নিতে হবে। বাড়িতে মসুর ডাল আর চাল থাকলে সারারাত ভিজিয়ে রেখে পরদিন তা পিষে অথবা ব্লেন্ড করে নিতে হবে। কমলালেবুর খোসার গুঁড়ো, ডাল ও চালের মিশ্রনের সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এই পেস্টের সাথে চাইলে মধু, চন্দনের গুঁড়ো, কাচা হলুদ বা দুধের ব্যবহার করা যেতে পারে। এই মিশ্রণটি নিয়মিত ব্যবহারের ফলে অধিকাংশ সময় ব্রণ একেবারে অদৃশ্য হয়ে যায় এবং ব্রণের দাগও ধীরে ধীরে মুছে যাবে। এই মিশ্রণটির আয়ুর্বেদিক গুণাবলীর কারণে ত্বক আরো বেশি মসৃণ এবং উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।

রসুনের পেস্ট

রসুনের পেস্ট; Source: grameenbangla.com

ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে রসুন কতটা উপকারী তা কমবেশি আমরা সকলেই জানি। রসুনে আছে অ্যান্টিসেপটিক ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা ব্রণ দূর করতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। রসুন দেহের ভেতরে এবং বাইরে বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধে বেশ উপকারী। রসুনের কয়েকটি টুকরো নিয়ে তা পানির সাথে মিশিয়ে ব্লেন্ড করতে হবে। এরপর মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে আধঘন্টা মতো রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে।

ব্রণ থেকে মুক্তি লাভের উপায়; Source: youtube.com

যেকোনো ত্বকের সমস্যায় দৈনন্দিন কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলা অত্যাবশ্যকীয়। নিয়মমাফিক জীবনযাপন অনেক রোগ সহজেই প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। ব্রণের আধিক্য কমাতে তাই নিচের নিয়মগুলো সঠিকভাবে মেনে চলা উচিত।

১। তৈলাক্ত খাবার ত্বকের জন্য বেশ ক্ষতিকারক। তাই তেলযুক্ত খাবার এবং বাইরের খাবার যতটা সম্ভব পরিহার করতে হবে।

২। পানি ব্রণ নিরাময়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রতিদিন আমাদের গড়ে প্রায় ২-৩ লিটার পানি পান করা উচিত। পানি সরাসরি আমাদের শরীরের বিভিন্ন পাকস্থলীজনিত সমস্যা নিরাময়ে ব্যাপক সাহায্য করে। এর ফলে আমাদের ত্বক সবসময় সতেজ থাকে।

৩। প্রচুর পরিমাণ মৌসুমী ফল খাওয়া উচিত। দিনের অথবা রাতের খাবারের পর ফল খাওয়া অভ্যাসে পরিণত করতে হবে।

৪। আমাদের অনেকের মাঝেই হাতের নখ দিয়ে ব্রণ খোঁচানোর একটি প্রবণতা দেখা যায়। এই অভ্যাস ব্রণ এবং ত্বক উভয়ের জন্যে মারাত্মক ক্ষতিকারক। অতিরিক্ত খোঁচানোর ফলে ব্রণ ভেঙে গিয়ে মুখে দাগ পড়ে যেতে পারে।

৫। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ব্রণ বা ত্বকের যেকোনো সংক্রামক থেকে রক্ষা পাওয়ার পূর্বশর্ত। তাই বাইরে থেকে এসে পরিষ্কার পানিতে হাত মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। মুখ ধোয়ার ক্ষেত্রে আয়ুর্বেদিক ক্রিম বা ঘরে তৈরি পেস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। সম্ভব হলে হালকা গরম পানির ভাপ নিলে ত্বকে বেশ আরাম পাওয়া যায়।

ব্রণ থেকে মুক্তি; Source; youtube.com

ব্রণ হবার একটি অন্যতম কারণ হলো অপরিষ্কার ত্বক। তাই সবসময় ত্বক পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করতে হবে। আর ব্রণ নিরাময়ে উপরের যেকোনো একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দেখতে পারেন। এর বাইরেও আরো কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে যেমন- নিম পাতার রস, পেপের রস, চা গাছের তেল, বরফ ইত্যাদি ব্যবহার। তবু অনেকদিন ধরেই ব্রণ সমস্যায় ভুগছেন এবং অনেক চেষ্টা করেও কোনো ফল পাচ্ছেন না যারা, তাদের বিলম্ব না করে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

ফিচার ইমেজ- blog.sheba

Related Articles