১০ সেকেন্ড হোক বা ১ ঘন্টা, সময়ের ব্যবধানটা কম বেশি হলেও লেট মানেই লেট! সকালে ঘুম থেকে উঠেই আমাদের যে বিষয়টি তাড়া দেয় তা হলো, যে জায়গায় বা কাজে যেতে হবে সেখানে সময়মত পৌঁছানো। স্কুল-কলেজ, কর্মক্ষেত্র অথবা যেকোনো জায়গায় লেট হওয়ার জন্য পড়তে হয় নানা রকম বিড়ম্বনায়। এছাড়াও পানিশমেন্ট, বেতন কেটে নেওয়া, লজ্জায় পড়ার মতো বিষয়গুলো তো আছেই! কিন্তু আমাদের সার্কেলে বা আশেপাশে এমন মানুষ রয়েছে যারা যেখানেই আর যেকোনো কাজেই হোক না কেন, সময়ের ব্যপারে তাদের একটুও নড়চড় হয় না। কিছু কৌশল তো তাদের অবশ্যই আছে, যার জন্য তারা এই অভ্যাসটি ধরে রাখতে পারেন। আজকের কথাগুলো হবে তাদের সেসব কৌশল নিয়েই!
১। তারা নিয়মিত একটি ক্যালেন্ডার ব্যবহার করেন
তাদের এই অভ্যাসের মূলে থাকে সারাদিনের পরিকল্পনা! প্রতিদিনের এই পরিকল্পনা যদি আপনি আগের দিন রাতেই ঘুমাতে যাবার আগে একটি ক্যালেন্ডারে লিখে রাখেন তাহলে সকালে ঘুম থেকে উঠেই সেই ক্যালেন্ডার দেখে আপনি একটি ধারণা নিয়ে রাখতে পারবেন যে সারাদিনে ঠিক কখন আপনার কোন কাজটি করতে হবে এবং সেভাবেই আপনি সারাদিনের প্ল্যানটি করে নিতে পারবেন। এতে করে কাজগুলো সময়মতো হয়ে যাবে এবং আপনার প্রোডাক্টিভিটিও বাড়বে।
২। রুটিন করার সময় প্রতিটি কাজের জন্য এক্সট্রা সময় বরাদ্দ রাখেন
আপনি যখন কোনো কাজের প্ল্যান বা রুটিন করেন, তখন প্রতিটি কাজের জন্য যতটুকু সময় লাগতে পারে, ঠিক সেই সময়টুকুই নিশ্চয় আপনি ক্যালেন্ডারে লিখে রাখেন! কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আনুমানিক সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হয় না এবং সেজন্য পরবর্তীতে আপনি যে কাজগুলো প্ল্যান করে রেখেছিলেন সেগুলো এলোমেলো হয়ে যায়। তাই প্রতিটি কাজের জন্য নির্ধারিত সময়ের বাইরেও এক্সট্রা কিছু সময় রাখুন।
৩। তারা সেই কাজটিই করেন যাতে তারা আনন্দ খুঁজে পান
অনেক সময় সামাজিকতা রক্ষার জন্য বা ভদ্রতার খাতিরে অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমাদের অনেক জায়গায় যেতে হয়। ধরুন, আপনি খুব ক্লান্ত বা কাজের অনেক চাপ রয়েছেন, এই অবস্থায় আপনাকে যদি অন্য কোথাও যেতে হয়, তাহলে আপনার প্রয়োজনীয় সব কাজে বাধা আসবে এবং ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজটি করার জন্য আপনি অবসাদ অনুভব করবেন। তাই এসব ক্ষেত্রে পরিস্থিতিকে কিভাবে বিচক্ষণতার সাথে সামালানো যায় সেই উপায়টি খুঁজে বের করুন। যেমন- যদি খুব জরুরী কাজের ভিড়ে আপনার কোনো দাওয়াত থাকে তাহলে সেখানে ফোন করে বা একটি মেসেজ দিয়ে আপনি আপনার সমস্যার কথাটি বুঝিয়ে বললে আপনার সামাজিকতাটাও থাকলো এবং কাজগুলোও ঠিকঠাকভাবে সারতে পারলেন।
৪। অ্যালার্মের বিষয়ে এককথায় তারা মাস্টার
ঘুম থেকে ঠিক যে সময়ে উঠবেন ঠিক সেই সময়ের জন্যই অ্যালার্ম দেয়াটা বোকামি। কারণ অ্যালার্ম শুনে আড়মোড়া ভেঙে ঘুম থেকে উঠতে উঠতে কিছুটা বেশি সময় তো লেগেই যায়! আর এই দেরি হওয়া থেকেই পরবর্তীতে প্ল্যান করে রাখা কাজগুলোতেও ব্যাঘাত ঘটে। এখন অনেক মুঠোফোনেই ওয়ার্নিং এলার্টের অপশন থাকে। এই এলার্ট আপনাকে অ্যালার্মের সময়ের ১০-৩০ মিনিট আগেই ওয়ার্নিং দিবে। এতে করে আপনি একদম ঠিক সময়মতো জাগতে পারবেন।
৫। প্রতিটি কাজের অগ্রাধিকার সম্পর্কে তাদের স্পষ্ট ধারণা থাকে
যদিও আপনার রুটিনে থাকা সব কাজই গুরুত্বপূর্ণ, তবুও রকম ফেরে গুরুত্বটা কম বেশি হতেই পারে। যে কাজটির গুরুত্ব বেশি বা দ্রুত সেরে ফেললে আপনার জন্য সুবিধা হয়, সেটি আগেভাগে করে রাখুন। এতে করে আপনার মানসিক চাপ কমে যাবে এবং অন্যান্য কাজগুলো অনায়েসে করে ফেলতে পারবেন।
৬। ট্রাফিকের অবস্থা নিয়ে তারা সবসময়ই আপডেটেড
রাস্তাঘাটে বের হলে ভিড়ের সম্মুখীন হওয়াটাই স্বাভাবিক। এছাড়া বাস, ট্রেন কিংবা প্লেনের জন্য নির্ধারিত সময় থেকেও কিছুটা বিলম্ব হতে পারে। সেক্ষেত্রে আজকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ট্রাফিক সম্পর্কিত বিভিন্ন গ্রুপ রয়েছে যেখান থেকে আপনি পোস্ট দিয়ে বা পেজে স্ক্রল করে জেনে নিতে পারেন যে, যেখানে যাচ্ছেন সেখানকার ট্রাফিক আপডেট কী বা কোন রুটে গেলে আপনি সেই নির্ধারিত সময়ে রাস্তা ফাঁকা পাবেন এবং দ্রুত পৌঁছাতে পারবেন। এছাড়াও বিভিন্ন এফ এম রেডিওগুলোতেও আজকাল লাইভ ট্রাফিক আপডেট পাওয়া যায়।
৭। মাল্টিটাস্কিং বিষয়টি তারা এড়িয়ে চলেন
কোনো কাজে আপনি যতই পারদর্শী হোন না কেন, একসাথে দুটি কাজ করা কখনোই আপনার পক্ষে সম্ভব নয়। এই যেমন আপনি হয়তো বা গান শুনতে শুনতে কোন কিছু লিখছেন বা কাজ করছেন। তখন কাজটি শেষ করতে পারলেও কাজের মাঝখানে বার বার আপনার মনোযোগ নষ্ট হয়ে যাবে অথবা কাজটি আশানুরূপ ভালো হবে না। এর চাইতেও বড় ব্যাপারটি হলো যে, আপনি যে কাজটি ১ ঘণ্টায় শেষ করতে পারবেন সে কাজটি করতে আপনার তার থেকেও বেশি সময় লেগে যাবে। তাই আপনি হাতের কাজটি শেষ করে গান শুনলে আপনার কাজটিও শেষ হয়ে যাবে এবং পরে রিল্যাক্স হয়ে গান শুনে সময়টা কাটাতে পারবেন।
৮। তারা ‘না’ বলতে জানেন
নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে অবশ্যই আপনার স্পষ্ট ধারণা থাকবে। তাই নিজের ক্ষমতার কথাটা মাথায় রেখেই কাজের প্ল্যান করুন। একদিনে বা এক সময়ে আপনার ঠিক যতটুকু কাজ করার ক্ষমতা আছে বলে আপনি মনে করেন, ঠিক সেটুকুই যেন আপনার কাজের তালিকায় থাকে।
৯। যাতায়াতের বিষয়টি ম্যানেজ করায় তারা বেশ পারদর্শী
যারা নিয়মিত ঠিক সময়ে সব জায়গায় পৌঁছে যায় তাদের যে কখনো দেরি হয়ে যায় না তা কিন্তু নয়। তবে এরকম পরিস্থিতি তারা খুবই বিচক্ষণতার সাথে সামাল দেন। জলদি পৌঁছানোর জন্য কোন পথে বা কীভাবে গেলে সুবিধা হয় সেটা মাথায় রাখুন। ধরুন, আপনার বাসা থেকে কাছাকাছি কোন জায়গায় ইন্টারভিউ আছে, সেক্ষেত্রে আপনি যদি পায়ে হেঁটে যেতে চান তবে যেতে পারেন। কিন্তু আপনার যদি কোনো কারণে দেরি হয়ে যায় তাহলে আর না হেঁটে রিক্সা নিয়ে চলে যান। কারণ কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপনার নিজের সুবিধার জন্যই প্ল্যান থেকে বেরিয়ে কাজগুলো সারতে হয়।
১০। তাদের সবকিছুতেই প্ল্যান থাকে
কিছু বিষয় খেয়াল করলে দেখতে পাবেন যে সেসব কারণেই আপনার দেরি হয়ে যায়। সেই বিষয়গুলো খুঁজে বের করুন এবং সেগুলো সমাধান করুন। যেমন ধরুন, সকালের নাস্তা বানাতে গিয়ে আপনার দেরি হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে আগের দিন রাতে আপনি নাস্তার কিছু কাজ এগিয়ে রাখলে এবং নিজে নিজে কিছু প্ল্যান করে রাখলে নাস্তা নিয়ে আর এই সমস্যাটি হয় না। এছাড়াও আপনি পরের দিন কোন কাপড়টি পরবেন, কী নিয়ে যাবেন তা আগেভাগে গুছিয়ে রাখা ভালো।
১১। তারা জায়গার জিনিস জায়গায় রাখে
একটু ভেবে দেখুন তো, আজ পর্যন্ত কতবার আপনি চাবি, বইপত্র, জামা-কাপড় আরও কতো কী খুঁজতে গিয়ে কতটা সময় নষ্ট করেছেন! এভাবেই কিন্তু দিনে প্রায় বেশ খানিকটা সময় বৃথা চলে যায়। তাই সবকিছু জায়গা মত রাখার চেষ্টা করুন আর ভুলে যাওয়ার সমস্যা থাকলে স্টিকি নোটস-এ লিখে চোখের সামনে কোনো এক জায়গায় রাখুন।
১২। তারা সময়ানুবর্তিতাকে গুরুত্ব দেয়
ছোটবেলায় আমরা সবাই কিন্তু সময়ানুবর্তিতা নিয়ে রচনা লিখতাম। তবে মুখস্থ করে পরীক্ষার খাতায় লিখে আসা পর্যন্তই যা, বাস্তবে সেটা আর চর্চা করা হয়ে ওঠে না। মানুষ তাই করে যেটার মূল্য তার কাছে বেশি! তবে নিজেদের জীবনটাকে নিয়ম করে সাজাতে এই অভ্যাসটি আয়ত্তে আনা কেন নয়!
ব্যস, এই হলো সময়ের মানুষদের ভিন্ন হয়ে ওঠার কিছু কৌশল। খুব কঠিন কি কাজগুলো করা বা নিয়মগুলো মেনে চলা? তাহলে আপনি কেন পারবেন না আরেকজন সময়ের মানুষ হয়ে উঠতে?