একটু খেয়াল করলে দেখবেন, প্রায়ই যত আকস্মিক মৃত্যু সংবাদ শোনা যায় তার মাঝে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। প্রতি বছর বিভিন্ন কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজে আক্রান্ত হয়ে (যেসকল রোগের কারণে হার্ট অ্যাটাক হয়) অনেক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের (WHO) তথ্য মতে, সারা পৃথিবীতে মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে হৃদরোগ প্রথম স্থান দখল করে আছে। এই মৃত্যুর হার কেবলমাত্র হৃদরোগীদের মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়। বিভিন্ন বয়সের মানুষ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যাচ্ছেন। সাধারণত যাদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্থুলতার মতো সমস্যা রয়েছে তাদের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু তাই বলে এর নির্দিষ্ট কোনো বয়সসীমা নেই।
সকল রোগেরই কমবেশি প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। হার্ট অ্যাটাকও এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হলে রোগীকে হাসপাতালে নেয়ার আগ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদক্ষেপ অবশ্যই নিতে হবে। এগুলোর হেরফের হলে রোগীর অকালমৃত্যুও হতে পারে। এই অকালমৃত্যু রোধ করতে আমাদের সবার হার্ট অ্যাটাক সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা উচিত।
যেভাবে হার্ট অ্যাটাক হয়
হৃৎপিণ্ড আমাদের দেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। জন্মের পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অনবরত এটি কাজ করে চলেছে। এর মূল কাজ হলো দেহের প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে রক্ত সরবরাহ করা। কিন্তু মাত্র ৩১০ গ্রাম ওজনের এই যন্ত্রটির ঠিকমতো কাজ করতে নিজেরও শক্তির প্রয়োজন হয়। এই শক্তি আসে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের প্রবাহের মাধ্যমে। করোনারি ধমনীর মাধ্যমে হৃৎপিণ্ড নিজের জন্য এই রক্ত সরবরাহ করে। কোনো কারণে রক্ত সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেলেই বিপদ।
প্রথমে করোনারি ধমনীতে রক্ত জমাট বেঁধে ব্লক তৈরি হয়। তখন হৃৎপিণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ কিছু পেশীতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে সেগুলো অকেজো হয়ে যেতে পারে। আর একেই আমরা বলি হার্ট অ্যাটাক, যার আভিধানিক নাম মায়োকার্ডিয়াল ইনফারকশন। রক্ত চলাচল ব্যবস্থা যে হঠাৎ করেই বন্ধ হবে এমন কোনো কথা নেই। একজন ব্যক্তির হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গগুলো কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই দেখা দিতে পারে।
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণসমূহ
হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পূর্বে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। রোগীসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের এই লক্ষণগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা উচিত। এ বিষয়ে ধারণা থাকলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে।
১. হার্ট অ্যাটাকের প্রথম ও প্রধান লক্ষণ হলো বুকে ব্যথা। বুকের মাঝখানে ও বাম পাশে ব্যথা অনুভূত হয় এবং ধীরে ধীরে এর তীব্রতা বাড়তে থাকে। রোগীর মনে হতে পারে তার বুকের উপর কোনো কিছু চাপ দিয়ে রাখা হয়েছে। আবার এমনও মনে হতে পারে যে, বুকের মাঝে কিছু একটা আটকে আছে। এই ব্যথা একটানা বা কিছুক্ষণ পরপর থেমে থেমে অনুভূত হয়।
২. শ্বাস-প্রশ্বাসে অসুবিধা হয়। বুকে ব্যথার পাশাপাশি নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে। বুকের ব্যথা ছাড়াও এককভাবে এমনটি হতে পারে।
৩. দেহের উপরের অংশে (নাভীর উপর থেকে) চোয়াল, হাত এবং ঘাড়ে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়।
৪. মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব এবং বদহজম দেখা দিতে পারে।
৫. শীতের মধ্যেও অনবরত ঘামতে থাকা, চোখে ঝাপসা দেখা, দেহের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা ইত্যাদি নিয়মিত লক্ষণের মাঝে পড়ে।
রোগীর মাঝে এসব লক্ষণ দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে এবং ভর্তি পূর্ববর্তী কিছু বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
হাসপাতালে নেওয়ার আগে যা যা করতে হবে
একজন রোগীর হার্ট অ্যাটাক হলে খুব দ্রুত কিছু ব্যবস্থা নিলে ঘটনার ভয়াবহতা কমিয়ে আনা সম্ভব। এ ব্যাপারগুলো সম্পর্কে সকলের ধারণা থাকা আবশ্যক।
১. প্রথমেই ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে
বুকে ব্যথা অনুভূত হলে সাথে সাথেই রোগীকে অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ খাওয়াতে হবে। অনেক রোগীর অ্যাসপিরিনে এলার্জি থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে ডাক্তার রোগীকে অন্য যে ব্যথানাশক ওষুধ লিখে দিয়েছেন তা খাওয়াতে হবে। ব্যথানাশক ওষুধ চিবিয়ে সেবন করার উপযুক্ত কিনা তা ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নেওয়া ভালো। কারণ গলাধঃকরণ করা ওষুধের তুলনায় চিবিয়ে সেবন করা ওষুধ দ্রুত শরীরের উপর ক্রিয়া করে। চিবিয়ে সেবন করার মতো শক্তি না থাকলে ওষুধ গুঁড়ো করে সেবন করতে সাহায্য করতে হবে।
২. যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে নিতে হবে
দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে হবে। কয়েকটি হাসপাতালের জরুরী বিভাগের অ্যাম্বুলেন্স নাম্বার তাই সবসময় মুঠোফোনের স্পিড ডায়ালে রেখে দেওয়া উচিত। এছাড়া বাসায় একটি খাতায় এবং রোগীর পকেটে চিরকুট বা কার্ড হিসেবে এই নাম্বারগুলো রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। এতে প্রয়োজনের সময় ফোন নাম্বার পেতে অসুবিধা হবে।
৩. রোগীর শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে কিনা খেয়াল করতে হবে
রোগীর নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা হলে শরীরে পর্যাপ্ত বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য শরীরের অতিরিক্ত কাপড় ঢিলেঢালা করে দিতে হবে। অনেক সময় রোগীর জিহ্বা গলায় আটকে যেতে পারে। এরকম হলে দ্রুত তা ছাড়িয়ে দিতে হবে। বমি আসলে যাতে তা শ্বাসনালীতে চলে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার।
৪. রোগী কোথাও ভ্রমণে গেলে সাথে প্রয়োজনীয় তথ্য সম্বলিত চিরকুট রাখতে হবে
হৃদরোগীদের অন্যদের তুলনায় হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। একাকী কোনো যানবাহনে বা কোনো অনুষ্ঠানে থাকা অবস্থায় হৃদরোগীদের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তখন যাতে দেরী না হয় সেজন্য রোগীর পকেটে সবসময় আগে থেকে একটি কার্ড বা চিরকুট রাখতে হবে। সেখানে তার রক্তের গ্রুপ, কোন কোন ওষুধ ও খাদ্যে অ্যালার্জি রয়েছে ইত্যাদি যাবতীয় তথ্য থাকবে। আজকাল অধিকাংশ মানুষের মুঠোফোন লক করা থাকে। তাই প্রয়োজনীয় কিছু ফোন নাম্বার ও রোগীর ব্যক্তিগত ডাক্তারের নাম্বারও সেই চিরকুটে দিয়ে রাখা উচিত। এতে অপরিচিত মানুষদের সাহায্য করতে সুবিধা হবে।
৫. হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে গেলে সিপিআর পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে
হার্ট অ্যাটাক হলে রোগীর কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা জ্ঞান হারিয়ে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে দুই হাত দিয়ে রোগীকে সিপিআর (কার্ডিয়াক পালমোনারি রিসাসসিটেশন) দিতে হবে। ইন্টারনেটে সিপিআর কিভাবে দিতে হয় তা নিয়ে অসংখ্য ভিডিও ও আর্টিকেল রয়েছে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি অভিজ্ঞ কোনো ডাক্তারের কাছ থেকে হাতে কলমে পদ্ধতিটি শিখে নেওয়া হয়। এতে বিপদের সময় আপনার অভিজ্ঞতা আরেকজনের জীবন বাঁচানোর কারণও হতে পারে।
মনে রাখতে হবে যে, সিপিআর পদ্ধতি কেবল হৃৎপিণ্ড কাজ করা বন্ধ করলেই প্রয়োগ করতে হবে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে হৃৎপিণ্ড কাজ না করলেও সাময়িকভাবে দেহে রক্ত চলাচল অব্যাহত থাকে।
৬. বিপদের মধ্যে কী কী করতে হবে তার একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে রাখা উচিত
পরিবারে হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তি থাকলে সবসময় আসন্ন দুর্ঘটনার জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে রাখা জরুরী। সকল বয়সের সদস্যকে এই পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। এতে আসল বিপদের সময় কী পদক্ষেপ নেওয়া লাগবে তা নিয়ে কোনো কালক্ষেপণ হবে না। যেকোনো দুর্ঘটনা সঠিকভাবে মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে পূর্বপ্রস্তুতি পুরো ব্যাপারটিকে অনেক সহজ করে দেয়। সব রোগজনিত দুর্ঘটনা আগে থেকে জানিয়ে আসে না। তাই সকলের এ ব্যাপারে দূরদর্শিতা আর পারস্পরিক সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।
যে বিষয়গুলো এড়িয়ে চলতে হবে
ঘটনার আকস্মিকতায় আমরা প্রায়ই নানারকম ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারি। এগুলোর সুদূরপ্রসারী ফলাফল রোগীর জন্য কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই কিছু ব্যাপারে আমরা যেন কোনো ভুল করে না বসি সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। যেমন –
১. রোগীর অস্বাভাবিকতায় বেশি উত্তেজিত হওয়া ঠিক নয়
কোনো ক্রমেই আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। এটা স্বাভাবিক যে একজন মানুষকে বুকে হাত দিয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করতে দেখলে যে কেউ ঘাবড়ে যাবে। কিন্তু মাথা যথাসম্ভব ঠান্ডা রাখলে তা পরিস্থিতির দ্রুত মোকাবেলায় সহযোগিতা করবে। সময় এখানে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পরিবারে আহাজারি শুরু হলে তা কেবল সময় অপচয় করবে। এতে রোগীর উপর যেমন বিরূপ প্রভাব পড়বে তেমনি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা হবে।
২. ওষুধপত্র উঁচু জায়গা এবং ড্রয়ারে রাখা উচিত নয়
রোগীর ওষুধ ও পথ্য সবসময় হাতের কাছে সুবিধাজনক জায়গায় রাখতে হবে। দরকার হলেই যেন সাথে সাথে পাওয়া যায় এমন কোনো অবস্থানে রাখা ভালো।
৩. রোগীকে একাকী গাড়ি চালিয়ে হাসপাতালে যেতে দেয়া যাবে না
বুকে ব্যথা ও অনিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে রোগী কখনোই নিজে গাড়ি চালিয়ে হাসপাতালে যাবেন না। এক্ষেত্রে অন্য কোনো গাড়িচালক কিংবা প্রতিবেশীদের সাহায্য নিতে হবে।
৪. নির্ধারিত ওষুধের বাইরের ওষুধ সেবনের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে
ডাক্তারের নির্ধারণ করা দেওয়া ওষুধ ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তির সুপারিশ করা ওষুধ খাওয়া ঠিক নয়। কী কী ওষুধ সেবন করা যাবে এবং কোনগুলো যাবে না তা নিয়ে ডাক্তারের সাথে বিস্তারিত আলাপ করে নিন।
৫. দুর্বল হৃৎপিণ্ডের মানুষদের কঠিন শারীরিক শ্রম পরিহার করা উচিত
দুর্বল ও অনিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা থাকলে ভারী কোনো শারীরিক কসরতের কাজ করা যাবে না। এতে শরীরে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। কোন ব্যায়ামগুলো শরীরের জন্য ভালো এবং কোনগুলো নয় তা ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে।
৬. মোটেই চুপচাপ ব্যথা সহ্য করা যাবে না
বুকে ব্যথা বাড়তে থাকলে চুপচাপ তা সহ্য করে যাওয়া ঠিক নয়। ব্যথা কমে যাবে এমনটি ভেবে অপেক্ষা করলে দেরি হয়ে যেতে পারে। আর থেমে থেমে ব্যথা শুরু হওয়াও একটি বড় উপসর্গ।
প্রতিকার অপেক্ষা প্রতিরোধ উত্তম
বিভিন্ন কার্ডিওভাসকুলার ডিজিস বা হৃদরোগ যেমন বংশগত ও বার্ধক্যজনিত কারণে দেখা দেয়, তেমনি অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনও এ রোগগুলোর অন্যতম প্রধান কারণ। সুস্থ স্বাভাবিকভাবে চলার জন্য তাই অবশ্যই কিছু খারাপ অভ্যাস বর্জন করা জরুরী। এসব অভ্যাসের মাঝে ধুমপানের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। এজন্য অবশ্যই ধুমপান পরিহার করতে হবে।
যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে তাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ডায়াবেটিক রোগীদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস তৈরি করতে হবে। অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না। নিজেকে সবসময় প্রফুল্ল রাখতে হবে। কোনো প্রকার অযথা দুশ্চিন্তা করা শরীরের জন্য ভালো নয়। আর অবশ্যই ডাক্তারের কাছে রুটিন চেকাপের জন্য যেতে হবে।
প্রথমবারের মতো হার্ট অ্যাটাক হলে রোগী হাসপাতালে সাধারণ চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে যেতে পারেন। কিন্তু এতেই বিপদ পুরোপুরি কেটে যাবে না। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী হার্টে কোনো ব্লক আছে কিনা তার চিকিৎসা করাতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো প্রকার অবহেলা করা যাবে না। ‘এখন তো সুস্থই আছি’ এমন মানসিকতা নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে আলসেমি করা মোটেই ঠিক নয়।
হার্ট অ্যাটাক থেকে মুক্তি পেতে পড়ুন এই বইটি