এই ঈদে কীভাবে সাজাবেন আপনার ঘর

সামনেই আসছে ঈদ। চারদিকে চলছে প্রস্তুতি। গৃহিণীদের অন্দরসজ্জার প্রস্তুতি এর মধ্যে অন্যতম। বছরের অন্যতম সেরা উৎসব এই ঈদ উৎসব, আর ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে আসবেন আত্মীয় স্বজন এবং অতিথিগণ। কিভাবে সাজাবেন আপনার ঘর? আজ আমরা ঈদে অন্দরসজ্জা নিয়েই কথা বলব।

যেহেতু এই কোরবানির ঈদ গরমেই হচ্ছে সেহেতু অন্দরসজ্জায় সবচেয়ে মনোযোগ দিতে হবে স্নিগ্ধতায় এবং শীতলতায়। যাতে  আপনার বাসায় অতিথি এলে তাঁকে একটা নির্মল পরিবেশ উপহার দিতে পারেন।

দেয়াল সাজুক রঙে

wall-paper-2

Image source – artfire.com

wall-paper

Image Source -cfau-pd.net

কত কল্পনা বুনি আমরা এই ঘরের দেয়ালে। কল্পনার রঙে দেয়াল সাজাতে আমাদের কার না ভাল লাগে। অল্প খরচে কিভাবে সাজাবেন আপনার অন্দরের দেয়াল? ওয়ালপেপার দিয়ে মুড়ে দিতে পারেন আপনার পুরোনো দেয়াল। তবে পুরোঘর ওয়ালপেপার দিয়ে ঢেকে দেয়াটা নিঃসন্দেহে ভাল কিছু হবে না।

ঈদের আগে বসার ঘর, সামনের রুমের দেয়াল টেক্সচার কিংবা এম্বোস জাতীয় ওয়ালপেপার দিয়ে মুড়ে দিতে পারেন। অন্যান্য রুমের দেয়ালে জ্যামিতিক নকশা, ছোট ছোট নান্দনিক ফুল, হালকা রঙ কিংবা প্রাকৃতিক দৃশ্যের ওয়ালপেপার ব্যবহার করতে পারেন। তবে ছোট ঘরের জন্য হিজিবিজি ওয়ালপেপার এড়িয়ে যান। রান্না ঘর এবং খাবার ঘরে ওয়ালপেপার ব্যবহার না  করাই  ভাল।

ঘরে ঢুকতেই যদি করিডোর থাকে তবে করিডোরের দেয়ালে মুখোশ বা ঝুলন্ত গাছ লাগাতে পারেন। আর দেয়ালে যদি ছবি থাকে তবে তার উপরে “ট্র্যাক লাইট” দিয়ে আলো ফেললে অন্যরকম আবেদনের সৃষ্টি করে।

কোথায় পাবেন এবং দরদাম

রাজধানির গুলশানে বাড়ির ফিটিংস পাওয়া যায় এমন দোকানে, হাতিরপুল, মহাখালীর উড়ালসেতুর নিচে কয়ক্টি দোকানে। ওয়ালপেপার বর্গফুট ও রোল হিসেবে বিক্রি করা হয়। প্রতি রোলের দাম ২০০০ থেকে ১০,০০০ টাকার মধ্যে আর বর্গফুট হিসেবে দাম পরবে ১২ থেকে ৫৫ টাকা পর্যন্ত।

অন্দরে আলোকসজ্জা

lights-in-home

Image source -Supernamai.It

অন্দরের আলোকসজ্জা মনে প্রশান্তির অন্যতম কারণ। অল্প খরচে একটু বুদ্ধি খাটিয়ে আপনার বাসা করে তুলতে পারেন শান্তিময় নীড়। প্রথমেই আসা যাক প্রবেশ পথে। প্রবেশ পথের রুচিশীল পরিবেশ অতিথির মনে জন্ম দেবে আপনার সম্পর্কে একটি ইতিবাচক ধারণা। প্রবেশ পথে কম উজ্জলতার এবং হালকা রঙের বাতি ব্যবহার করতে পারেন। এর দুই পাশের দেয়ালে চাইলে পেইন্টিং ঝুলাতে পারেন। পেইন্টিং এর উপরে স্পটলাইট দিয়ে পেইন্টিংকে করতে পারেন আরো আবেদনময়।

বসার ঘরে উজ্জ্বল আলো ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া ঘরের এক কোণে ল্যাম্পশেড, কর্নার কেবিনেট এবং শোকেসগুলোতে ব্যবহার করতে পারেন কম উজ্জলতার আলোকবাতি।

অন্দর সাজুক জলে

water-fall-in-hoome

Image Source- Thinkter.com

একটু ঠান্ডা জল শরীরে শীতল পরশ এনে দেয়। এই গরমে শহুরে নাগরিকেররা চান একটু শীতল পরশ। তাই ঘরে রাখতে পারেন জলের ফোয়ারা কিংবা ছোট বড় মাটির কিংবা কাঁচের পাত্রে কিছুটা পানি। অন্দরসজ্জায় পানির এই আয়োজন ঘরকে রাখে শীতল।

ঘরের এই জলসজ্জার রীতি বহু প্রাচীন, তবে এই জলসজ্জায় এখন যোগ হয়েছে কিছুটা শৈল্পিক প্রয়াস। মাটির বা কাঁচের পাত্রে পানি রেখে এতে ছিটিয়ে দিতে পারেন ফুলের পাপড়ি। কিংবা মাঝে দিতে পারেন একটা মোমের বাতিদান যা আপনার  গৃহকে করে তুলবে আরো স্নিগ্ধ এবং মনোরম।

তবে যে ঘরেই পানির পাত্র রাখুন না কেন খেয়াল রাখবেন সে ঘরটিতে যেন পরযাপ্ত আলোবাতাস প্রবেশ করতে পারে। নয়তো ঘরের দেয়াল স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যাবার আশঙ্কা থাকে।

আসবাবপত্রে ঈদের আমেজ

ondor-shojja-2

Image Source – bangla-news.com-au

ondor-shojja

Image source- rodoshee.com

ঈদে আমাদের নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং বিত্তবান গৃহিণীদের আসবাবপত্রের দিকে নজরটা থাকে একটু বেশি। অনেকেই আসবাবপত্রে পরিবরতন আনতে চান। পরিবর্তনটা যে খুব বড় হতে হবে এমন নয়, আপনি চাইলে খুব হালকা কিছু পরিবর্তনেও আসবাবপত্রে আনতে পারেন ঈদের আমেজ।

যেহেতু ঈদ গরমে সেহেতু আসবাবপত্রে রাখতে পারেন স্নিগ্ধতার আমেজ। সোফার কাভার, বিছানা চাদর, বালিশের কুশন, পর্দা ইত্যাদির কাপড় হতে পারে হালকা রঙের সুতি কাপড়। কুশন, বিছানাচাদর, পর্দা দেশি ঢঙের ব্লকপ্রিন্ট, হাতের কাজ, বাটিক কিংবা কাটওয়ার্ক ইত্যাদির কিনতে পারেন। এতে ঘর বৈচিত্র্যময় যেমন হবে তেমনই সতেজ ভাবটাও থাকবে।

কোথায় পাবেন এবং দরদাম

নগরীর প্রায় সব শপিং কমপ্লেক্সেই কুশন, বিছানাচাদর, পর্দা ইত্যাদি পেতে পারেন। পর্দার দাম পড়বে ৬৫০ থেকে ২০০০ টাকা, কুশন কাভার ২০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং বিছানাচাদর পড়বে ৬৫০ থেকে ২০,০০০ টাকার মতো।

অন্দরে টুং টাং ( উইন্ড চাইম)

wind-chime

Image Source- breastcanceryogablog.com

wind-chime-3

Image Source- intellectric.com

নাগরিক জীবন। রিক্সার ক্রিং ক্রিং, গাড়ির হর্ন আর পেট্রোল, ডিজেলের গন্ধে ভারী বাতাস থেকে পরিত্রাণ পেতে চান অনেকেই। ক্লান্ত দেহ নিয়ে ঘরে এসে পেতে চাই একটু নীরবতা কিংবা হালকা টুং টাং। অন্দরে প্রশান্তির ব্যবস্থা করতে পারেন নিজেই।

ঘরের যে জায়গায় বাতাসের ভাল প্রবাহ আছে সেখানে ঝুলাতে পারেন উইন্ড চাইম। তবে সবসময় মিশ্তি একটা ধ্বনি শুনতে চাইমটি বারান্দায় লাগাতে পারেন।

কোথায় পাবেন এবং দরদাম

ফ্যাশন হাউজ যাত্রা, আড়ং এবং রঙে পাবেন কিছু নকশাদার উইন্ড চাইম। পুঁতি, কাঠ আর ঝুনঝুনি মিলে উইন্ড চাইম দিবে হালকা শব্দ। আড়ঙের উইন্ড চাইমে রয়েছে পাটের ব্যবহার।

এছাড়াও ঘন্টা আকৃতির, ধাতব টিউবের উইন্ড চাইম পাবেন নগরীর যেকোন শৌখিন দ্রব্যের দোকানে। উইন্ড চাইম ১০০-৯০০ টাকার মধ্যে পাবেন।

ঘর সাজাতে বইঃ

book-case

Image Source- craftshub.com

book-case2

Image source- homedesigning.com

একটা সময় ছিল যখন অন্দর সজ্জার অন্যতম আকর্ষণ ছিল বইয়ের তাক। কাঠের আলমারিজুড়ে শোভা পেত সারি সারি বই। আর এই বইগুলো তুলে ধরত বাড়ির মানুশগুলোর পারিবারিক ঐতিহ্য এবং মুল্যবোধ। এখন সময়ের সাথে সাথে মানুষের বই পড়ার অভ্যাস কমেছে এবং প্রাধান্যহীনতায় ভুগছে বইয়ের তাক।

এই ঈদে অন্দরে আপনার রুচির ছাপ হতে পারে বইয়ের তাক। এখন অনেকেই জ্যামিতিক নকশায় আঁকা বাঁকা বইয়ের তাক পছন্দ করেন। ঘরের প্রায় প্রতিটি রুমে একটি করে বইয়ের তাক লাগাতে পারেন। বইয়ের তাক যাতে কাঁচ দ্বারা আবদ্ধ না থেকে সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। যাতে পরিবারের সকল সদস্য কিংবা অতিথিরাও যেন বইগুলো স্পর্শ করতে পারে।

ঘরের দেয়ালের রঙ যদি সাদা কিংবা হালকা রঙের হয় তবে তাকের রঙ কালো বা বাদামী রঙের লাগাতে পারেন। আর যদি অন্য রঙের হয় তবে সাদার প্রলেপ ভাল দেখায়।

অন্দরে সবুজের স্নিগ্ধতাঃ

artificial-water-fall

Image Source- landscape-america.com

plants-in-home

Image source- food52.com

আধুনিক অন্দর সজ্জায় সবুজে আনে আভিজাত্য এবং প্রকৃতির ছোঁয়া। চাইলে ঘরের ভেতরে করতে পারেন গাছের বাগান। এর জন্য লাগবে মাটির পটরি, কলস, টব এবং নকশা করা প্ল্যান্টস পট। পটারির উপরে মাটির টব বসিয়ে এর মধ্যে গাছ বসিয়ে দিন। এবার পটারির উপরে টব রেখে তার উপরে কলসিগুলো কাত করে রেখে দিন। এর মাঝে বসিয়ে দিতে পারেন কৃত্রিম ফোয়ারা। চাইলে ফোয়ারায় মাটির তৈরি হাস বসিয়ে দিতে পারেন।

The following article is about the decoration of home for the Eid festival. 

References:

  1. prothom alo.com
  2. priyokothon.com
  3. bdnews24.com

Featured image: Newsbar24.blogspot.com

Related Articles

Exit mobile version