মানসিক স্বাস্থ্যের কথা খেয়াল আছে তো?

আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা কিন্তু আজকের না। শত শত বছর ধরে এই সমস্যাগুলো ঘিরে রেখেছে আমাদের। মানসিক অস্থিরতাকে ‘পাগল’, ‘উন্মাদ’, ‘ঢং করছে’… ইত্যাদি নানা নাম দিয়ে থাকি আমরা নিজেরাই। আবার, যখন নিজে এই সমস্যায় ভুগি, তখন এই কথাগুলোই আমাদের দিকে ফিরে আসে।

বর্তমান স্বাস্থ্য সমস্যার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হলো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা। উদ্বিগ্নতা, অস্থিরতা, অতিরিক্ত মানসিক চাপ ইত্যাদি এই সমস্যার লক্ষণ।

মানসিক স্বাস্থ্যের যত সমস্যা

বেশ সাধারণ কিন্তু ভয়ানক কিছু মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা রয়েছে। এগুলোকে আমরা “ও কিছু না” ভেবে অবহেলা করি। যেমন- অ্যাংজাইটি বা উদ্বিগ্নতা, ডিপ্রেশন, প্যানিক ডিজর্ডার, ইনসমনিয়া বা অতিরিক্ত ঘুম, ওসিডি, অতিরিক্ত ক্ষুধা বা ক্ষুধামন্দা, পিটিএসডি ইত্যাদি। এছাড়াও আরো অনেক রকমের মানসিক সমস্যা আছে, যা আমাদের জীবনে বেশ বাজে প্রভাব ফেলে।

Image Credit: melitas/Shutterstock

কেন হয় এসব মানসিক সমস্যা?

১) অসুখ/অপারেশন/কোনো দুর্ঘটনা-পরবর্তী ট্রমা মূলত উদ্বিগ্নতা ও অস্থিরতার প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। 
২) দীর্ঘ অসুস্থতা বা পঙ্গুত্ব মানসিক চাপ বা অশান্তিকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। 
৩) অতিরিক্ত কাজ বা পড়াশোনার চাপ।
৪) পারিবারিক অশান্তি, বিচ্ছেদ।
৫) পারিবারিক-সামাজিক চাপ, অপমান।
৬) একাকিত্ব। 
৭) অপমান, অবহেলা কিংবা বঞ্চনা। 
৮) দারিদ্র্য কিংবা অতিরিক্ত চাহিদা। 
৯) বেকারত্ব, চাকরিচ্যুত হওয়া। 
১০) দীর্ঘমেয়াদি কোনো কাজের প্রভাব ইত্যাদি।

Image Credit: Lively Scout / For The Times

মানসিক স্বাস্থ্য কেন গুরুত্বপূর্ণ? 

১) মানসিক অস্থিরতা, চঞ্চলতা, উদ্বিগ্নতা কমাতে হলে মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতা দরকার।
২) আমাদের মেজাজ-মর্জি ভালো থাকবে যদি মানসিকভাবে শক্ত হই। কারো সাথে অহেতুক রাগারাগি, চেচামেচি হবে না। শান্তভাবে সমাধান করতে পারবেন সমস্যাগুলো।
৩) পড়াশোনা, কাজ, এবং নিজের শখের দিকে পূর্ণ মনোনিবেশ করার জন্যও মানসিক শান্তি অত্যাবশ্যক।
৪) আত্মমর্যাদা এবং আত্মোপলব্ধি বাড়িয়ে দেয়।
৫) শারীরিক অসুস্থতা, যেমন- হৃদরোগ, ইনসমনিয়া, ক্ষুধামন্দা,  উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিসের মতো রোগের ক্ষেত্রে প্রাবল্য কম হয়। মানসিক শক্তি ফিরে পেলে এই রোগগুলোর তীব্রতা ধীরে ধীরে কমে যায়।
৬) বন্ধুবান্ধব, পরিবার ও প্রিয়জনের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে।
৭) মানসিক শান্তি, আত্মার শান্তি ফিরে পাবার জন্য সুস্থতা দরকার- মনের এবং শরীরের।
৮) যদি নিজের মানসিক চাপ আর অস্বস্তিকে বশে আনতে পারেন, তাহলে দৈনন্দিন ছোটখাট চাপ অনায়াসে মোকাবেলা করতে পারবেন।
৯) শান্তভাবে-পরিষ্কারভাবে চিন্তা করতে পারবেন।
১০) আত্মহত্যার প্রবণতা কমায়, অপরাধ প্রবণতা কমাতে সাহায্য করে।

Image Credit: HBR Staff/LvNL/Getty Images

মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে করণীয়

১) বর্তমানকে গুরুত্ব দিন। কী হয়েছে, কেন হয়েছে, কী হবে- এসব বাজে চিন্তা না করে আজকের দিন উপভোগ করুন।
২) যাদের সাথে সময় কাটালে আপনার ভালো লাগে তাদের সাথে থাকার চেষ্টা করুন।
৩) যে কাজ আপনাকে মানসিক প্রশান্তি দেয়, সেই কাজগুলো করুন। 
৪) নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করুন। 
৫) নিয়মিত ব্যায়াম, ধ্যান, ইয়োগা করুন। এতে শরীর যেমন সুস্থ থাকবে, সেরকম মানসিক অসুস্থতার দিক থেকে আপনার মন সরিয়ে নেবে। 
৬) মোবাইল বা এই জাতীয় ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে দূরে থাকা, যারা আপনাকে পেছনে ধরে রাখতে চায় তাদের থেকে দূরে থাকা, যা মানসিক শান্তি ব্যহত করে সেসব থেকে যথাসম্ভব দূরত্ব বজায় রাখতেই হবে। 
৭) খুব বেশি রকমের সমস্যা হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
৮) কোথাও ঘুরে আসতে পারেন।

আসলে মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা কম-বেশি অনেকেরই থাকে। কেউ সহজে নিজেদের এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারে, কেউ পারে না। আবার কেউ হয়তো বুঝতেই পারে না যে তাদের মানসিক অবস্থা স্থিতিশীল নয়। তাই, যত্নবান হোন নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে, উপভোগ করুন ছোট্ট এই জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত। 

Language: Bangla
Topic: Importance of mental health
References: Hyperlinked inside
Feature image source: icrc.org

Related Articles

Exit mobile version