Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ক্যারিয়ার গড়তে নেটওয়ার্কিংয়ে দক্ষ হবার ৫টি ধাপ

ব্যক্তি যে ক্ষেত্রেই ক্যারিয়ার গড়ুক না কেন, নিজের সাফল্যকে ত্বরান্বিত করতে নেটওয়ার্কিংয়ে পারদর্শিতা বলতে গেলে অপরিহার্য। কী এই নেটওয়ার্কিং? বিভিন্ন মানুষের সাথে পেশাদারী সম্পর্ক গড়ে তোলাটাই মূলত নেটওয়ার্কিং। নেটওয়ার্কিং আপনাকে সহায়তা করবে অনেকভাবে, যাদের সাথে নেটওয়ার্ক থাকবে তাদের থেকে শিখতে পারবেন, যেকোনো সমস্যায় তাদের থেকে সাহায্য নিতে পারবেন, কার্যক্ষেত্রে তৈরি করতে পারবেন নিজের পরিচিতি, অন্যদের সমস্যায় নিজের দক্ষতা দেখানোরও সুযোগ পাবেন।

আপনার নেটওয়ার্কই পেশাদার জগতে আপনার কদর নির্ধারণ করবে; image source: creativelive.com

তারপরও অনেক মানুষের এই নেটওয়ার্কিং ব্যাপারটির প্রতি একটি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আছে। “চাকরিতে মামা-চাচা”-এরকম একটি নেতিবাচক শব্দবিভ্রম তৈরি করে তারা অন্যদের নিরুৎসাহিত করে নেটওয়ার্কিংয়ে। আবার অনেকে আছেন পেশাদারী সম্পর্ক তৈরি করার সম্পর্কে ভীতি এবং সংকোচ পোষণ করেন। কিন্তু মুক্তচিন্তার এবং বিচক্ষণ মানুষ মাত্রই বুঝবেন নেটওয়ার্কিং যে আসলে খারাপ কিছু নয়, বিদেশেও তাই নেটওয়ার্কিংকে দেখা হয় ইতিবাচকভাবেই।

নেটওয়ার্কিং করা, নির্ভরযোগ্য সম্পর্ক তৈরি করা- এই পুরো প্রক্রিয়াটিরই একটি গঠনমূলক পদ্ধতি আছে। এই পুরো প্রক্রিয়াটিকে সহজ ও বোধগম্য পাঁচটি ধাপের মাধ্যমে তুলে ধরা হলো আপনাদের সামনে-

১. নিজের গন্তব্য ঠিক করুন

একটি ভালো নেটওয়ার্ক তৈরি করতে গেলে সব মানুষকে সময় দিয়ে আসলে লাভ নেই। আপনার ক্যারিয়ারকে ভালোভাবে বুঝে সে অনুযায়ী নেটওয়ার্কিং তৈরি করাটাই আসলে কার্যকরী। আপনি যদি এখনো ক্যারিয়ার ভালোমতো শুরু করে না থাকেন, যেমন আপনি যদি ছাত্র হয়ে থাকেন, তবে নিজের উদ্দেশে তিনটি প্রশ্ন করতে পারেন।

  • আপনার স্বপ্নের ক্যারিয়ারটি কী?
  • আপনার ভবিষ্যতটা কীভাবে কল্পনা করেন?
  • আপনার সবচেয়ে সুখী, অনুপ্রাণিত, পূর্ণ সত্ত্বাকে আপনি কোথায় খুঁজে পেতে পারেন?

এই প্রশ্নগুলো বিবেচনা করার পর আপনার পাঁচ বছর পরের লক্ষ্যটি লিখে ফেলুন। তারপর সেই লক্ষ্যকে পাবার উদ্দেশ্যে লিখুন এক বছরের লক্ষ্য, এবং এক বছরের জন্য নব্বই দিনের, এভাবে ছোট ছোট অনেকগুলো লক্ষ্য দাঁড় করিয়ে ফেলুন। এরকম একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকলে আপনার জন্য নেটওয়ার্কিয়ের কাজটি অনেক সহজ হয়ে যায়, প্রতিটি যোগাযোগকেই আপনি আপনার ক্যারিয়ারের ছাঁচে ফেলে ইতিবাচকভাবে নিতে পারেন।

আর আপনি যদি  ইতোমধ্যেই আপনার নির্দিষ্ট ক্যারিয়ারে থেকে থাকেন, তবে এই ধাপে উপরের প্রথম প্রশ্নটি বাদ দিয়ে নিজেকে বাকি দু’টো প্রশ্ন করুন। এবং সেই অনুযায়ী সাজিয়ে নিন নিজের গন্তব্যকে।

নিজের গন্তব্য ঠিক করুন; image source: yese69.com

২. একটি নকশা তৈরি করুন

আপনি আপনার আগামী পাঁচ বছরের গতিপথকে আপনার মাথার মধ্যে নিয়ে এসেছেন, এবং অনেক স্বল্প পরিসরে অনেক ছোট ছোট লক্ষ্য তৈরি করে ফেলেছেন। এখন আপনাকে তৈরি করতে হবে আপনার নেটওয়ার্কিং নকশা। আপনার লক্ষ্যগুলোর দিকে আপনাকে এগিয়ে নিতে পারে এমন অন্তত তিনজন ব্যক্তির নাম লিখুন। এই তিনজন হতে পারে এমন কেউ, যারা আপনাকে আরো অনেক মানুষের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে পারবে এবং তাদের সাথে আপনার যোগাযোগ করার সুযোগ আছে।

এই তিনজন হতে পারে উপদেষ্টা বা মেন্টর, যারা আপনার লক্ষ্যকে ইতোমধ্যে অর্জন করে ফেলেছে। হয়তো আপনার বিনিয়োগ দরকার, বিনিয়োগকারীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে পারবে। কিংবা চাকরিতে থাকলে আপনাকে ভালো পরামর্শ দিতে পারবে, অথবা অন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কাছে আপনাকে তুলে ধরতে পারবে। এই মানুষগুলোকে বেছে নেয়ার জন্য অনেক বেশি গবেষণা করুন। কারণ যদি আপনার নেটওয়ার্কিং সফল হয়, পরবর্তীতে অনেকবার আপনার এদের কাছে ফিরে আসতে হবে।  

খুঁজে বের করুন আপনার কার সাথে সংযোগ প্রয়োজন; imagesource: businessinsider.com

৩. উপযুক্ত মানসিকতা তৈরি করুন

এবার আপনার মন থেকে পেশাদারী মনোভাবটি একদম সরিয়ে ফেলতে হবে। কারণ যেসব মানুষের সাথে আপনি নেটওয়ার্কিং করবেন বলে ভাবছেন, প্রত্যেকটি মানুষের সাথেই আরো অনেক মানুষ নেটওয়ার্কিং করবার চেষ্টা করবে এবং সে সম্ভাবনাই বেশি। আপনার মাথায় যদি পেশাদারী কারণটাই সবার আগে থাকে, তখন আপনি যে শুধু পেশাদারী কারণেই তার সাথে খাতির দেবার চেষ্টা করছেন, তা সে এক নিমেষেই বুঝে ফেলবে, কারণ এরকম অভিজ্ঞতা তার হয়ে থাকে অহরহ। ফলে আপনি দেখবেন চেষ্টা করবার পরও আপনাদের মধ্যে আসলে তেমন কোনো সম্পর্ক তৈরি হয়নি, আপনাকে সাহায্য করার তেমন কোনো আগ্রহও হয়তো তার মাঝে দেখবেন না।

আন্তরিক সম্পর্ক তৈরি করাই আসলে শ্রেষ্ঠ নেটওয়ার্কিং এবং এই নেটওয়ার্কিং শুধুমাত্র কার্ড অদলবদলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আপনি যার সাথে সম্পর্ক তৈরি করতে চাচ্ছেন, তাকে ব্যক্তি হিসেবে দেখুন, আপনার পেশাদার লাভের মাধ্যম হিসেবে নয়। তৈরি করুন বন্ধুত্ব, তবেই আপনাদের সম্পর্কটা টেকসই হবে, বিকাশেরও সুযোগ থাকবে। অতএব, নেটওয়ার্কিংয়ে অগ্রসর হবার আগে ভাবুন যে একজন বন্ধুর সাথে দেখা বা কথা বলতে যাচ্ছেন। কথোপকথনের বিষয়বস্তু হালকা রাখুন, নিজেদের মাঝে মিল খোঁজার চেষ্টা করুন, হালকা রসিকতা করুন, অর্থাৎ মানুষ হিসেবে আপনি তার প্রতি কৌতূহল অনুভব করছেন, তা দেখান। এই মানসিকতাটি তৈরি করে ফেলুন আপনার ভবিষ্যৎ যেকোনো নেটওয়ার্কিংয়ের জন্য।

নেটওয়ার্কিং এ করুন বন্ধুত্বের সম্পর্ক; image source: skillshare.com

৪. গড়ুন মানবিক সংযোগ

এখন আপনার শুরু করতে হবে বেছে নেয়া মানুষগুলোর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা, সেটা হতে পারে মুখোমুখি, হতে পারে মুঠোফোনে, হতে পারে ভিডিও চ্যাটে। কিন্তু সবক্ষেত্রেই একটি আন্তরিক সংযোগ তৈরি করতে আপনার নিচের ব্যাপারগুলো মাথায় রাখতে হবে-

  • অপরপক্ষের মানুষকে সবসময় ভাবনার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে গভীর অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ প্রশ্ন জিজ্ঞাসার মাধ্যমে। যেকোনো মানুষের কাছ থেকেই অনেককিছু জানা যায় সঠিক প্রশ্নগুলো করার মাধ্যমে।
  • ভালো ভালো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার মাধ্যমে অপরপক্ষের মানুষটির কাছে নিজের কার্যকারিতা দেখিয়ে দিতে হবে। আপনার প্রশ্ন দিয়েই সেই মানুষটি বুঝতে পারবেন যে আপনি শিখতে চান এবং আপনার নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাবার ইচ্ছা আছে।
  • যখন উত্তরগুলো শুনবেন, এমনভাবে মনোযোগ দেবেন যেন মনে হয় এটাই এখন পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মুখোমুখি অবস্থায় চোখে চোখ রেখে কথা বলার চেষ্টা করবেন, হাসিমুখ রাখবেন। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরে কৌতূহল প্রকাশ  করবেন, তিনি কী বলতে চান, তার উপর গুরুত্ব দেবেন; আপনি কী শুনতে চান, তার উপর নয়।

 

হাসিমুখে সংযোগ তৈরি করুন; imagesource: pinterest.com

মানুষের সাথে যোগাযোগে আমাদের একটি প্রবণতা থাকে নিজেকে প্রকাশ করাকে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া, নিজের পূর্ববর্তী বিশ্বাসের উপরই নিশ্চয়তা অর্জনের চেষ্টা করা। একটি ভালো সংযোগের জন্য নতুন তথ্যের প্রতি উদার থাকতে হবে, অন্যের প্রতিভাকে দেখার সদিচ্ছা থাকতে হবে। মনে রাখবেন, যেকোনো সংযোগই যতটা আপনার জন্য, ঠিক ততটাই অপরপক্ষের জন্য। অপরপক্ষ যদি সেই সংযোগ থেকে কিছু না নিতে পারে, তবে তার সেই সংযোগ রাখার দরকার নেই।

৫. হয়ে উঠুন ‘সুপার কানেক্টর’

একজন মানুষকে অপরজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার চর্চা করে তোলাটা আপনার নেটওয়ার্ক গড়ার সবচেয়ে দ্রুততম উপায় হতে পারে। এই পদ্ধতিটি শুনতে খুবই সহজ মনে হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু এর চর্চা খুব কম মানুষকেই করতে দেখা যায়। এ কারণেই নির্ভরযোগ্য সংযোগ তৈরি করা এখন খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করে গড়ে তুলুন সুপার নেটওয়ার্ক; imagesource: inman.com

বিগত ধাপগুলোতে আপনি যাদের সাথে নেটওয়ার্কিং করেছেন, চেষ্টা করুন তাদের সাথে অন্য কারো যদি সাহায্য লাগে তাদেরও যোগাযোগ করিয়ে দিতে। এভাবে গড়ে তুলুন আপনার বিশাল নেটওয়ার্ক, যেখানে কারো কাছে আপনি ঋণী, কেউ কেউ আপনার কাছে ঋণী, কিন্তু সবাই সবার পরিচিত এবং শুভানুধ্যায়ী। এই ক্ষেত্রে চেষ্টা করুন ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষকে একে অপরের সাথে সংযোগ করিয়ে দেবার। কারণ এখন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষ প্রয়োজন হয়। আপনার নেটওয়ার্কে একজন দক্ষ গ্রাফিক্স ডিজাইনার, একজন ভিডিও এডিটর, একজন ওয়েব ডেভেলপার রাখা তো বলতে গেলে আবশ্যক। এভাবেই গড়ে তুলুন একটি ‘সুপার কানেকশন’।  

বিভিন্ন পেশার মানুষকে রাখুন নিজের নেটওয়ার্কে; image source: wordpress.com

এভাবে একজন শক্তিশালী সুপার কানেক্টর হতে আপনার নিচের ব্যাপারগুলো মাথায় রাখতে হবে।

  •  সাহায্য করার মতো মুক্ত মানসিকতা রাখুন।
  •  শুধু পরিচয় তৈরি না করে বন্ধুত্ব তৈরি করুন।
  •  একবার সংযোগ তৈরি করেই কখনো ভুলে যাবেন না। পরবর্তীতে তাদের কাছে জিজ্ঞেস করুন কেমন লেগেছে এই যোগাযোগ। এরপরও বেশ কয়েকবার চেষ্টা করুন যোগাযোগ করার, এর ফলে আপনার সংযোগটি আরো পাকাপোক্ত হবে। অপরপক্ষও বুঝবে যে শুধু পেশাদারী কারণেই আপনি তার সাথে যোগাযোগ করেননি, ব্যক্তি হিসেবেও আপনি তাকে সমীহ করেন।

এভাবেই আপনি গড়ে তুলতে পারেন একটি কার্যকরী নেটওয়ার্ক, যা আপনার ক্যারিয়ার গড়ার প্রতিটি পদক্ষেপে আপনার সাহায্যে আসবে।

ফিচার ইমেজ- wallpaper.wiki

Related Articles