ত্বক নিয়ে কি আর চিন্তার শেষ আছে! সুন্দর, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বক পেতে আয়োজনেরও কমতি নেই। কিন্তু ত্বকের যত্ন নিতে গিয়ে ভুল করে ভুলের পরিমাণটাও কম হয় না কিন্তু! আর এই ভুলের কারণেই হাজারো যত্ন নেয়ার পর ত্বকের অবস্থা যেমনটা ঠিক তেমনই থেকে যায়। অনেকসময় আবার অবস্থা বেশ করুণও হয়ে যায়! ত্বকের যত্ন নেয়া মানে যে শুধু বিভিন্ন উপাদান দিয়ে ত্বকে ঘষামাজা করা, তা নয়। ত্বককে ভালো রাখতে ব্যালেন্সড ডায়েট বা সঠিক খাদ্যাভ্যাস, আশেপাশের পরিবেশ, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি- সবই বিবেচনায় আনা চাই। এই বিষয়গুলো যে সবারই কম-বেশি জানা আছে। তবুও হেলায় ত্বকের বারোটা যেন বেজেই যায় এই ব্যস্তজীবনে। ত্বক সুন্দর থাকলে আপনি সুন্দর ও স্নিগ্ধ থাকেন, তাই মন ও চারপাশের সবকিছুও ভালো লাগে। তাই ত্বককে সুন্দর, মসৃণ, সতেজ ও লাবণ্যময়ী রাখতে কিছু ভুল করা একেবারেই মানা!
মেকআপ না তুলেই ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যাস
রাতের কোনো পার্টি বা অনুষ্ঠান থাকলে তো কোনো কথাই নেই! কাপড়টা কোনোরকম বদলাতেই বিছানায় গিয়ে ঘুম! আর এই ভারি মেকআপ নিয়ে সারা রাত ঘুমানোর চাইতে ত্বকের বড় শত্রু নেই। সারা রাত থাকা এই মেকআপ ত্বকের লোমকূপে জমে থাকবে। এর ফলে ত্বকে র্যাশ, ব্রণ ও নানা ধরনের চর্মরোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই অবশ্যই প্রথমে ভালো করে ত্বকের ধরন অনুযায়ী মেকআপ রিমুভার দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করে নিতে হবে। এরপর ভালোমতো ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে প্রথমে টোনার এবং পরে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে হবে।
রাতে ঘুমানোর আগে অবশ্যই মুখ পরিষ্কার করতে হবে
আশেপাশে পরিবেশের অবস্থা বিবেচনা করে নিশ্চয়ই দূষণের কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এই দূষণের সব থেকে নিকৃষ্ট শিকার হলো ত্বক। বাইরে থেকে এসে ভালোভাবে ত্বক পরিষ্কার না করলে তার প্রভাবটা থেকে যায়। আর ত্বকের সেই জমে থাকা ময়লা নিয়েই রাতে ঘুমিয়ে গেলে ধীরে ধীরে ত্বকের বিপর্যয় ঘটে। খুব চট করেই এই পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না। তাই বাইরে থেকে এসে তো বটেই, রাতে ঘুমাতে যাবার আগেও অবশ্যই ত্বক ভালোমতো পরিষ্কার করে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে হবে।
ত্বকে চাই আলতো হাতের যত্ন
এক্সফোলিয়েটিং ও ক্লিনজিং শব্দ দুটোর সাথে নিশ্চয়ই পরিচিতি আছে। এই দুটোর ক্ষেত্রে ত্বকের জন্য কোনোটিই অতিরিক্ত ভালো নয়। অতিরিক্ত পরিমাণে ত্বকে এক্সফোলিয়েট করা হলে ত্বক যদি স্বাভাবিকভাবে সেনসিটিভ বা সংবেদনশীল না-ও থাকে, তবে এর কারণে হয়ে যায়। এছাড়াও ত্বকে র্যাশ হয় এবং ত্বক রুক্ষও হয়ে যায়। আবার ত্বক পরিষ্কার করতে গিয়ে অতিরিক্ত জোরে ত্বকে ঘষামাজা করা ঠিক না। এতে করে ত্বক রুক্ষ হয়ে ব্রণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সঠিক নিয়ম অনুযায়ী ত্বক পরিষ্কার রাখা ভালো। প্রতিদিন সকালে (অথবা গোসলের সময়) ও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ত্বক পরিষ্কার করুন এবং সপ্তাহে শুধুমাত্র একদিন ত্বক এক্সফোলিয়েট করুন।
ক্লিনজিং অয়েল এড়িয়ে যাচ্ছেন না তো!
শুনে হয়তো বা মনে করতে পারেন যে, সব ধরনের ত্বকের জন্য ক্লিনজিং অয়েল ব্যবহার করা তো একেবারেই বোকামির কাজ। তা-ও আবার যদি হয় তৈলাক্ত ত্বক, যা সহজেই যেকোনো কিছুতে প্রতিক্রিয়া ঘটায়! ক্লিনজিং অয়েল মূলত লোমকূপ পরিষ্কার করে, যার পর ত্বকে কোনো ধরনের ময়লার অবশিষ্টাংশ থাকে না। শুধু একটি বিষয় মাথায় রাখা দরকার, ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত অন্য যেকোনো প্রোডাক্টের মতো এটিও অতিরিক্ত ব্যবহার ঠিক নয়। শুকনো ত্বকে শুকনো হাতে তিন ফোঁটা ক্লিনজিং অয়েল নিয়ে হালকা হাতে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
গরম পানি ত্বকের জন্য ক্ষতিকর
গরম পানির ভাপ ত্বকের জন্য ভালো। এতে ত্বকের লোমকূপ খুলে যায় এবং ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ভালোভাবে শোষণ হয়। আর ত্বক থাকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। কিন্তু অতিরিক্ত গরম পানি ত্বককে রুক্ষ ও শুষ্ক করে ফেলে। তার বদলে ব্যবহার করতে পারেন কুসুম গরম পানি। সবচাইতে ভালো হয় যদি মেকআপ তোলার জন্য ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করা হয়। এতে করে ত্বকের লোমকূপ আটকে যায় সহজে এবং ত্বকে বলিরেখা পরে না।
ব্রণে হাত দেয়া বারণ!
ত্বকে ব্রণ নিয়ে সবার মাথা ব্যাথার শেষ নেই! একে তো ব্রণ থাকাকালীন দেখতে বাজে দেখায়, তার ওপর আবার ব্রণের কালো দাগ থাকলে তো দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। আর এই জেদি কালো দাগ হওয়ার কারণ হলো ব্রণে হাত দেয়া। ব্রণের জন্য হাতের ছোঁয়া একেবারে নিষিদ্ধ! তাই ব্রণ শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। শুধুমাত্র দাগই নয়, ব্রণে হাত দিলে হতে পারে ইনফেকশনও! কারণ এতে থাকে নানা রকম জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া। হাত দিয়ে চেপে ব্রণের শাঁস বা পুঁজ বের করলে লোমকূপের গভীরে চলে যায় এসব জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া। যদিও ঘরোয়া পদ্ধতিতে বিভিন্ন প্যাক বা যেকোনো কিছু ব্যবহার করে ব্রণের সমস্যা ও কালো দাগ দুটোই দূর করা সম্ভব, তবুও ব্রণের ক্ষেত্রে সবচাইতে ভালো হয় চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে, সে অনুযায়ী নিয়ম মেনে চলা। কারণ অনেক সময় শারীরিক সমস্যার জন্যও ব্রণ হতে পারে। তাই যথাযথ পরীক্ষার মাধ্যমে এর কারণ জেনে সে অনুযায়ী চিকিৎসা করা ভালো।
গলা ও ঘাড় নিয়মিত পরিষ্কার রাখা
বেশিভাগ ক্ষেত্রেই ত্বকের যত্ন নিতে গিয়ে শুধুমাত্র মুখের ত্বকের যত্নই নেয়া হয়। ঘাড় বা গলার যত্ন খুব বেশি একটা নেয়া হয় না বললেই চলে। মেকআপ করার সময় মুখের সাথে সাথে কিন্তু গলায়, আবার জামা-কাপড় ভেদে ঘাড়েও ফাউন্ডেশন দেয়া হয়। আর মুখের মেকআপের মতোই ঘাড়ের ও গলার মেকআপ তোলাটা জরুরি। তবে ঘাড় ও গলার মেকআপ তোলার ক্ষেত্রে ক্লিনজিং ওয়াইপ ব্যবহার করা ভালো। এতে করে খুব সহজেই মেকআপ তুলে নেয়া যায়। তবে ত্বকের রকমভেদে বাজারে বিভিন্ন ধরনের ক্লিনজিং ওয়াইপ পাওয়া যায়। অবশ্যই ত্বকের ধরন অনুযায়ী যেটা শ্রেয়, সেই ক্লিনজিং ওয়াইপ ব্যবহার করবেন।
রোদে যাওয়ার আগে ত্বকে চাই সানস্ক্রিন
ত্বকের জন্য ক্ষতিকর জিনিসগুলোর মধ্যে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি একটি। এটি শুধু যে ত্বকের দাগ-ছোপের কারণ, ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে যাওয়ার কারণ, তা-ই নয়! বরং ত্বকে ক্যান্সারেরও কারণ সূর্যের এই অতিবেগুনি রশ্মি। বাইরে যাওয়ার আগে অবশ্যই ত্বকে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়! অবশ্য প্রতিদিন সানস্ক্রিন ব্যবহারের ফলে লোমকূপে ধুলো-ময়লা জমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে বদ্ধ কোনো পরিবেশে থাকলে এর সম্ভাবনাটা বেশি। সেসব ক্ষেত্রে এমন ধরনের ক্রিম, সেরাম বা তেল ব্যবহার করতে হবে, যার মধ্যে সানস্ক্রিনের গুণাগুণ রয়েছে।
ঠিকমতো ঘুম, খাওয়া-দাওয়া না হলে
উপর দিয়ে ত্বকের যতোই যত্ন নেয়া হোক না কেন, ভেতর থেকে যদি আপনি সুস্থ এবং সাবলীল অনুভব না করেন তা আপনার ত্বকে ফুটে উঠতে বাধ্য! প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা ঘুম এবং সময় পেলেই হালকা বিশ্রাম নিতে ভুলবেন না। আর খাদ্যাভ্যাস ভালো করুন, প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।
এছাড়াও ময়লা বালিশের কভারে মাথা দিয়ে শোয়া, অপরিষ্কার চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ানো এবং না বুঝেই যেকোনো ধরনের প্যাক মুখে দেয়া বা পদ্ধতি অবলম্বন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।