Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

চাঙ্গা হতে চা-কফির বিকল্প হতে পারে যেসব কৌশল

সারা রাত বেশ ভালো ঘুমই হলো, ঘুম থেকে উঠেই বেশ চাঙ্গা ভাব আসছে শরীরে। সারা দিনের কাজের ধকল নিতে আর কোনো বাধাই নেই, শুধু নেমে পড়লেই হলো। কিন্তু বিধি বাম! সকাল ৯টায় কাজ শুরু করার ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে ১১টা নাগাদ গা ম্যাজম্যাজ করা শুরু করল, একটু ঝিমুনি ঝিমুনি ভাবও আসছে! সারা রাত সেই সুখনিদ্রা দিয়েও তবে লাভ হলো কি? ফলে কিছুই করার নেই, এক কাপ কড়া করে বানানো ধোঁয়া ওঠা কফির মগ হাতে নেয়া ছাড়া। এবং সেটা চলতে থাকে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত।

পরীক্ষার সময় চা এবং কফির মতো পানীয় খুবই কাজের একটা জিনিস, ঘণ্টার পর ঘণ্টা জেগে থেকে সিলেবাস শেষ করতে চা-কফির কোনো বিকল্প এখনো আসেনি বলেই সবার ধারণা। কিন্তু চা-কফি বাদেও কিছু সাধারণ কৌশল কাজ লাগিয়ে আপনি ঘুম ঘুম ভাব থেকে চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারেন। বিজ্ঞান বিষয়ক সাংবাদিক জুলিয়া কালডোর্ন উদ্ভাবিত বিজ্ঞান ভিত্তিক সেসব কৌশল নিয়ে চলুন আলাপ করা যাক।

তবে এখানে বলে রাখা প্রয়োজন এগুলো একেবারে অব্যর্থ এবং ক্যাফেইনের ধাক্কার মতো নিমেষেই চোখের ঘুম উধাও করে দেবে, এমনটা ভাববেন। আসলে এগুলো অনেকটা সাধারণ বিজ্ঞান ব্যবহার করে কিছু কর্মকাণ্ড, যা আপনার মন, শরীর এবং আশপাশকে ব্যবহার করে আপনাকে জাগ্রত রাখার কিছু কৌশল মাত্র। চা এবং কফিতে ভরপুর থাকে ক্যাফেইন নামক উত্তেজক রাসায়নিকের, অতিরিক্ত মাত্রায় পানের ফলে যা শরীরে নানা প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। ফলে মাঝে মধ্যে চা কফির বিকল্পের ব্যবহার ভাল ফলই আনবে আশা করা যায়।

কম্পিউটার স্ক্রিন থেকে কিছুক্ষণের জন্যে চোখ সরিয়ে নিন

কম্পিউটারে অনেক সময় ধরে কাজ করেন, এমন ব্যক্তিদের কাছে এটি খুবই প্রচলিত একটি সমস্যা, তা হলো অনেকক্ষণ ধরে কাজ করার পর ঝিমুনি মতো হওয়া এবং কাঁধ ও ঘাড় ব্যথা। চোখ খোলা রাখাই মুশকিল হয়ে পড়ে, চোখে শুষ্কভাব আসে।

কম্পিউটারে কাজ করার সময় কিছুক্ষণ পর পর চোখ সরিয়ে বিশ্রাম নিন; Source: gstockstudio

সমস্যাটাকে বলে ‘Digital Eye Strain’, প্রায় ৯৫% আমেরিকান এখন এই সমস্যায় ভুগছে। আমাদের দেশে এ ধরনের গবেষণা না হওয়াতে আমাদের জনগোষ্ঠীর কত শতাংশ এতে ভোগে, তা জানা যায় না। অনেক সময় ধরে টানা কম্পিউটার বা মোবাইল স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে থাকা আপনার চোখে অনেক ক্ষতি করে। এই সমস্যা থেকে বাঁচতে ঘন ঘন চোখের পাতা ফেলুন এবং একটু ঘুরে ফিরে বসুন এবং মিনিট ২০ পর পর দূরের কোনো স্থান বা বস্তুর দিকে তাকান।

এক্ষেত্রে ছোটবেলার নানি-দাদিদের কথা স্মরণীয়, ছোট শিশুদেরকে তারা সবসময় দূরের সবুজ প্রান্তরের দিকে তাকাতে বলতেন। দূরের সবুজ প্রান্তরের দিকে তাকালে চোখের দৃষ্টি একধরনের প্রশান্তি লাভ করে, যা এখন বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। দূরের কোথাও কিছুক্ষণ তাকালে আপনার চোখে প্রশান্তিও আসবে, ঝিমুনিও দূর হবে।

স্বাস্থ্যকর খাবার খান

রক্তে শর্করার পরিমাণ কম হলে আপনার কিছুটা শারীরিক ও মানসিক অলসতা অনুভূত হতে পারে, আবার অনেক পরিমাণে খাওয়া দাওয়া করলেও একই অনুভূতি হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ খাবার আপনাকে চাঙ্গা ভাব দেবে এমনিতেই।

স্বাস্থ্যকর খাবার আপনাতেই শরীরকে চাঙ্গা রাখে; Source: Anna Monette Roberts

বিশেষ করে সকালে আশঁযুক্ত খাবার দিয়ে নাশতা করার কথা বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, এছাড়াও দরকার উচ্চমাত্রার প্রোটিন যেমন- ডিম, পিনাট বাটার, লৌহজাত খাবার যেমন- মটরশুঁটি, মসুর এবং এছাড়াও দরকার ভিটামিন ‘সি’। এসব কিছুর একটা ভারসাম্যপূর্ণ সমন্বয় আপনাকে সারাদিনের জন্য শক্তি জুগিয়ে চলবে।

পর্যাপ্ত পানি পান করুন

টাফ্টস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, শরীর থেকে যদি ১-২% পানি হ্রাস পায়, সেটিও সামান্য অবসাদের সৃষ্টি করে। ফলে যদি ডিহাইড্রেশনের থেকেও বেশি মাত্রায় হয়, তাহলে তা কী পরিমাণ অবসাদ তৈরি করবে, তা সহজেই অনুমেয়।

পর্যাপ্ত পানি পান না করলে অবসাদগ্রস্ততা বেশি হয়, তাই প্রচুর পানি পান করুন; Source: skynesher

আমাদের শরীরের প্রায় ৬০ ভাগই পানি। রক্ত পানি ব্যবহার করে অক্সিজেন ও শর্করা শরীরের বিভিন্ন অংশে বহন করে। ফলে শরীরে পানিস্বল্পতা হলেই অবসাদ, দ্বিধা, বুক ধড়ফড় করা, জ্ঞান হারানো ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। ফলে পর্যাপ্ত পানি পান আপনাকে রাখবে সতেজ ও চাঙ্গা।

কিছুক্ষণের জন্যে বেরিয়ে পড়ুন

কাজের ফাঁকে কিছুক্ষণের জন্যে অফিসের বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ান; Source: Tom Merton

কাজের টেবিলে ঝিমুনি এলে বসে না থেকে কিছুক্ষণের জন্যে বেরিয়ে পড়ুন, আলো হাওয়ার স্বাদ নিন। ক্ষণিকের জন্যে সূর্যের আলোয় যাওয়া আপনার ঝিমুনি ভাব দূর করে দিতে পারে নিমেষেই। সূর্যের আলো মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসকে ভালোভাবে চালিত করে। মস্তিষ্কের এই অংশটি মূলত দেহঘড়িকে দিনরাত একটা ছন্দে বেঁধে রাখে। এবং এই ছন্দই ঘুম ও জেগে ওঠা নিয়ন্ত্রণ করে, তাই অসময়ে ঘুম ঘুম ভাব হলে কিছুক্ষণের জন্যে বেরিয়ে পড়ুন, সূর্যের আলো উপভোগ করুন, যা আপনাকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটা জেগে ওঠার বার্তা পাঠাবে।

কিছুক্ষণের জন্যে দ্রুত হাঁটাচলা করুন

সব সময় হয়তো অফিস থেকে বেরোনো সম্ভব না-ও হতে পারে, হোক সে পাঁচ মিনিটের জন্যে। ফলে বিকল্প হতে পারে কিছুক্ষণ দ্রুত হাঁটাচলা করা। গবেষণায় দেখা গেছে “ঘুম ঘুম ভাবের চূড়ান্ত মুহূর্তে শারীরিক ব্যায়াম করলে অবসাদ কিছু পরিমাণে প্রশমিত হয়ে যায়”

অফিসের করিডোরে কিছুক্ষণ হাঁটাচলা করুন; Source: Shutterstock

এরকম সময়ে দ্রুত হাঁটাচলা করলে Endrophins প্রবাহ (মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের একরকম হরমোন) বেড়ে যায়, এতে নিউরোট্রান্সমিটারে চাপমুক্ত হওয়ার সংকেত প্রেরিত হয়। ফলে অবসাদ দূর হয়ে শরীর ফুরফুরে হয়ে ওঠে।

গভীরভাবে শ্বাস নিন

সঠিক পদ্ধতিতে গভীরভাবে শ্বাস নিন; Source: fotandy

শান্তিতে ও স্বচ্ছন্দে থাকা একজন কর্মী, তার দক্ষতার সর্বোচ্চটা দিতে সক্ষম। কিন্তু অবসাদ ও ঘুমঘুম চোখে দক্ষতা দেখানো তো দূরে থাক, কাজটা ঠিকভাবে করাই সম্ভব নয়। দীর্ঘশ্বাস নেয়াও একধরনের সজীবতা এনে দিতে পারে। শান্ত হয়ে দীর্ঘশ্বাস নিলে শরীর অতিরিক্ত অক্সিজেন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে বহন করে শরীরে শক্তি এনে দেয়। দীর্ঘশ্বাস নেয়া চাপ ও উদ্বেগও হ্রাস করে। তবে এই সুফল পেতে সঠিকভাবে শ্বাস নেয়ার পদ্ধতি জানা থাকতে হবে, সঠিক পদ্ধতিটি এই লিংকে দেখতে পাবেন।

গান শোনা

ক্লান্ত লাগলে দু-তিন মিনিট গান শুনুন; Source: cubicles.net

নিজের প্রিয় গান শোনা আপনার মস্তিষ্কে কিছু রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটায়, যা আপনাকে একটা ভালোলাগার অনুভূতির মাধ্যমে চাঙ্গা করে তোলে। ২০১১ সালের এক গবেষণার ফলাফল অনুসারে জানা যায়, পছন্দের গান শোনা আপনার মস্তিষ্কে ডোপামিন নামক রাসায়নিকে ভরিয়ে দেয়, যেটা কিনা মানুষকে ‘পুরস্কৃত’ হওয়ার অনুভূতি দেয়। তাই যখনি ঘুমঘুম ভাব ভর করবে, কাজ থেকে তিন মিনিটের ছুটি নিয়ে পছন্দের কোন গান শুনুন আর ডোপামিন দিয়ে ঘুম তাড়ান!

চুইংগাম চিবোন

চুইংগাম চিবোলে ঘুমঘুম ভাব এড়ানো যায়; Source: alamy

ঝিম ঝিম ভাব ধরলে মুখ যদি চালু রাখা যায়, তবে তা মনকে তৎপর রাখে। দিনের বেলায় ঘুম কাটানোর জন্যে চুইংগাম চিবানো খুবই কার্যকর উপায়। কারণ চিবানোর জন্যে ক্রমাগত চোয়াল নাড়ানোর ফলে রক্তসঞ্চালন ঘটে, যা মস্তিষ্কের কিছু অংশকে সচেতন রাখে। তবে চুইংগাম চিবানোর সময় লক্ষ্য রাখুন যেন চিবানোর শব্দ খুব জোরে না হয়, কেননা এতে কিছুটা অভদ্রতা প্রকাশ পায়।

যদি কোনোটাই কাজ না করে, তবে সামান্য ঘুমিয়ে নিন!

ধারণাটা বেশ উদ্ভট মনে হতে পারে, ঝিমুনি থেকে বাঁচতে রীতিমতো ঘুমিয়ে পড়া! তাহলে আর লাভ হলো কী? কিন্তু ভুল বুঝবেন না, মাত্র ৫ থেকে ২৫ মিনিটের স্বল্প নিদ্রা যে পরিমাণ শক্তি সঞ্চার করতে পারে তাতে আপনি অনায়াসেই আরো ৭/৮ ঘন্টা জেগে থাকতে পারবেন। একে বলা হয় ‘পাওয়ার ন্যাপ’।

৫ মিনিটের স্বল্পনিদ্রা আরো ৬/৭ ঘন্টার জন্যে শক্তি এনে দেয়; Source: John Lambert Pearson

২০০৮ সালের হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের গবেষণায় দেখা গেছে, টানা অনেকক্ষণ ঘুমানোর থেকে ক্লান্তির সময় মাত্র ৬ মিনিট ঘুমিয়ে নেয়া অনেক বেশি কার্যকর, এটি স্মৃতি সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সৃজনশীল চিন্তা করতে সাহায্য করে। তাই সবথেকে ভালো উপায় হলো ৫/৬ মিনিটের একটা স্বল্পনিদ্রা দিয়ে ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলা।

চা-কফি পান তো চলবেই, কিন্তু এর ক্যাফেইনের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হলে শরীরে নানা বিরূপ প্রতিক্রিয়া, রাতে নিদ্রাহীনতা ইত্যাদি দেখা যায়। আরেকটি সমস্যা হলো ক্যাফেইন আপনার দেহে একটা ‘মিথ্যা’ শক্তির ভাব দেয়, ক্যাফেইন কার্যত কোনো শক্তি যোগায় না, শুধু উত্তেজিত করে। এতে ক্যাফেইনের প্রভাব কেটে গেলে আপনার আবার আগের অবস্থায় ফিরে যেতে হয় এবং ক্ষেত্রবিশেষে আগের থেকেও বেশি অবসাদ চলে আসতে পারে। তাই বিরতির সময় এককাপ চা তো হতেই পারে, কিন্তু কিছুক্ষণ যেতে না যেতেই আরেক কাপ চা হাতে না নিয়ে বরং এসব স্বাস্থ্যকর কৌশলকে কাজে লাগান।

ফিচার ছবি- Shutterstock

Related Articles