প্রয়োজন কিংবা শখ, আমাদের জীবনের বড় একটি অংশ জুড়ে রয়েছে গাড়ি। আর এই চাহিদার কথা মাথায় রেখেই প্রতিবছর বিখ্যাত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে আসে নিত্যনতুন মডেলের গাড়ি। প্রয়োজনের চাহিদা মেটানোর পর, প্রথমেই সামনে আসে বিলাসবহুল ও দ্রুত গতির গাড়ির প্রসঙ্গ। শক্তিশালী ইঞ্জিন, অনবদ্য ডিজাইন ও বিলাসবহুল নানা সংযোজনে দ্রুত গতির গাড়ির চাহিদা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। নতুন বছর ২০১৯ সাল জুড়ে গতির ঝড় তুলতে যাওয়া গাড়িগুলোর মধ্যে অন্যতম সেরা বিলাসবহুল গাড়িগুলো নিয়ে সাজানো হয়েছে এই আয়োজন।
ল্যাম্বরগিনি অ্যাভেনট্যাডর এসভিজি
‘অজানা ভবিষ্যৎ; একটি সফর, একটি দুঃসাহসিক অভিযাত্রা।’ ল্যাম্বরগিনি এভাবেই পরিচয় করিয়ে দিয়েছে তাদের নতুন গাড়ি অ্যাভেনট্যাডর এসভিজি। স্বভাবসুলভ চোখ ধাঁধানো ডিজাইনের সাথে কাটিং এজ প্রযুক্তির মিশ্রণ, সেই সাথে রয়েছে নতুন অ্যাকটিভ অ্যারোডাইনামিক সিস্টেম, যা গাড়িটিকে দিয়েছে ভিন্ন এক মাত্রা। প্রযুক্তি ও প্রকৌশলে সেরা সংমিশ্রণের গাড়িটির চাকা চারটিতেই রয়েছে অ্যাকটিভ সাসপেনশন ও চার চাকা নিয়ন্ত্রণকারী স্টিয়ারিং সিস্টেম।
সর্বোচ্চ ৫৬৬ কিলোওয়াট পাওয়ারের সাথে রয়েছে সর্বোচ্চ ৭২০ নিউটন-মিটার টর্কের শক্তিশালী ইঞ্জিন। এই মডেলের মাত্র ৯০০টি গাড়ি তৈরি করেছে কোম্পানিটি। কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৬৩ সালে, এই উপলক্ষ্যে এসভিজি ৬৩ মডেলের একটি সংস্করণের মাত্র ৬৩টি গাড়ি তৈরি করা হয়েছে।
বিএমডব্লিউ আই-৮ রোডস্টার
গাড়িটির আইডিয়া ২০১২ সালে প্রথম উন্মোচন করা হলেও, গত বছরের নভেম্বরে টেস্ট ড্রাইভের সুযোগ পেয়েছে সৌভাগ্যবানরা। গাড়িটির ছাদ প্রায় ৫০ কিমি প্রতি ঘণ্টা গতিতেও খুলতে পারে এবং বন্ধ হতে সময় নেবে মাত্র ১৬ সেকেন্ড। আই-৮ রোডস্টারে রয়েছে ইলেকট্রিক মোটর ও লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির সাথে রয়েছে ইঞ্জিনের সমন্বয়। হাইব্রিড এই গাড়িটি সর্বোচ্চ পারফরম্যান্সের সাথে সর্বনিম্ন পরিবেশ দূষণের ব্যাপারেও তৎপর।
প্রতি কিলোমিটারে এই গাড়িটি মাত্র ৪৬ গ্রাম কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ করে। তাই বলে গতির প্রশ্নে কোনো আপোষ করেনি প্রতিষ্ঠানটি। অসাধারণ ডিজাইনের গাড়িটি সর্বোচ্চ ২৫০ কিমি/ঘণ্টা গতি তুলতে সক্ষম এবং ০-১০০ কিমি/ঘণ্টা গতি তুলতে সময় নিবে মাত্র ৪.৬ সেকেন্ড। বিএমডব্লিউর এই দুর্দান্ত হাইব্রিড গাড়িটি কিনতে খরচ করতে হবে ১৪৮,০০০ ইউএস ডলার।
অ্যাস্টন মার্টিন ডিবিএক্স
ডিবিএক্স হতে যাচ্ছে গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিটির প্রথম বিলাসবহুল এসইউভি। তাছাড়া এসইউভির বাজারে অ্যাস্টন মার্টিন নিজেদের প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্য রেখেই এই বছরের শেষের দিকে গাড়িটি বাজারে ছাড়বে। গাড়িটি সম্বন্ধে এখনও তেমন বিস্তারিত জানা যায়নি। তবে গাড়িটিতে ইঞ্জিন হিসেবে থাকতে পারে মার্সিডিজের ভি-৮ এবং নিজেদের ভি-১২।
তবে কোম্পানিটি হয়তো মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমি, দুনিয়ার অন্যতম চ্যালেঞ্জিং ট্র্যাক নুরবখরিন এবং আর্কটিকে গাড়িটির পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চালাবে। উদ্দেশ্য, সকল ক্ষেত্রে যেন সর্বোচ্চ উৎকর্ষতা অর্জন করতে পারে তাদের নতুন এই মডেলটি। গাড়িটি তৈরি করা হবে কোম্পানিটির বিলাসবহুল গাড়ি তৈরির আস্তানা ল্যাগোনডা সেইন্ট অ্যাথানে।
ফেরারি ৪৮৮ পিস্তা স্পাইডার
ইতালিয়ান ডিজাইন ও প্রকৌশলের অসাধারণ নিদর্শন ফেরারির এই গাড়িটি। ২০১৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত টানা ৩ বছর বছরের সেরা ইঞ্জিনের খেতাব জেতা ভি৮ ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে গাড়িটিতে।
আল্ট্রা-লাইটওয়েট কার্বন ফাইবারে মোড়া অনবদ্য ডিজাইনের গাড়িটির ইঞ্জিনের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পাশাপাশি এটি খুবই কম মাত্রায় কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন করে থাকে, প্রতি কিলোমিটারে যা মাত্র ২৬৬ গ্রাম। গাড়িটি যখন ফেরারির, তখন গতির কথা উঠবেই। ০-১০০ কিমি/ঘণ্টা গতি তুলতে গাড়িটির সময় লাগে মাত্র ২.৮৫ সেকেন্ড এবং ০-২০০ কিমি/ঘণ্টা মাত্র ৮ সেকেন্ড। সবমিলিয়ে এই মডেলটি যে গাড়ি ভক্তদের মন অচিরেই জিতে নিবে এই বছর, এই ব্যাপারে বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই।
টেসলা রোডস্টার
ইলেকট্রিক গাড়ির জগতে টেসলা রোডস্টার হতে যাচ্ছে দুর্দান্ত সংযোজন। মাত্র ১.৯ সেকেন্ডে ০-৯৬ কিমি/ঘণ্টা গতি তুলতে পারা এই গাড়িটির সর্বোচ্চ গতি হতে পারে ৪০২ কিমি/ঘণ্টারও বেশি। শুধুমাত্র ইলেকট্রিক গাড়ি নয়, বরং সর্বোপরি গাড়ির জগতে অন্যতম গতিদানব খেতাবের অধিকারী হতে যাচ্ছে এটি।
একবার চার্জে প্রায় ৬২০ মাইল অবধি চলবে এটি, যা অন্য যেকোনো ইলেকট্রিক গাড়ির চেয়ে বেশি। ২০০,০০০ ইউএস ডলার মূল্যের গাড়িটি টেসলার সবচেয়ে দামী গাড়িও বটে। প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে এগিয়ে থাকা গাড়িটিতে নেভিগেশন, গান শোনা ও ইন্টারনেট ব্রাউজ করার জন্য বিশাল টাচ-স্ক্রিনের সুবিধার পাশাপাশি রয়েছে অটোনোমাস ড্রাইভিং সিস্টেম।
ম্যাকলেরেন স্পিডটেইল
স্পিডটেইলকে এক কথায় গতিদানব বললে ভুল হবে না। মাত্র ১২.৮ সেকেন্ডে ০-৩০০ কিমি/ঘণ্টা গতি তোলা গাড়িটির রয়েছে হাইব্রিড ইঞ্জিন, যার মোট ব্রেক হর্স পাওয়ার ১,০৫০ এবং এখন পর্যন্ত এটি তাদের সবচেয়ে দ্রুতগতির গাড়ি! অনবদ্য ও ভিন্ন ডিজাইনের গাড়িটি এই প্রতিষ্ঠানের প্রথম হাইপার-জিটি গাড়ি। ভিন্ন আঙ্গিকের গাড়িটিতে রয়েছে মাত্র তিনটি আসন।
মজার ব্যাপার হলো, ড্রাইভারের আসনটি ডানে-বামে কোথাও নয় বরং ঠিক মাঝখানে। অ্যারোডাইনামিক ডিজাইনের সত্যিকার মাস্টারপিস এটি, যা ডিজাইনের দিক থেকে আর দশটা গাড়ি থেকে পুরো আলাদা। ঘন্টায় সর্বোচ্চ ৪০৩ কিলোমিটার গতি তোলা এই মডেলের গাড়ি তৈরি করা হয়েছে মাত্র ১০৬টি এবং চাইলেই আপনি এখন কিনতে পারছেন না গাড়িটি। কারণ সবগুলো বিক্রি হয়ে গিয়েছে এর মধ্যেই।
পোর্শা টায়কান
‘মিশন-ই’ স্লোগানের মাধ্যমে পোর্শা বাজারে আনতে যাচ্ছে তাদের সম্পূর্ণ ইলেকট্রিক স্পোর্টস কার, টায়কান। টায়কান শব্দটির অর্থ হচ্ছে ‘প্রাণোচ্ছল তরুণ ঘোড়া’। পোর্শা এই গাড়িটিতে ব্যবহার করবে দুইটি ইলেকট্রিক মোটর, যেখান থেকে মোট ৬০০ হর্স পাওয়ার উৎপন্ন হবে। এই গাড়িটিও গতির ঝড় তুলতে যাচ্ছে খুব দ্রুতই।
০-১০০ কিমি/ঘণ্টা ৩.৫ সেকেন্ডে এবং ২০০ কিমি/ঘণ্টা গতি তুলতে পারবে মাত্র ১২ সেকেন্ডেরও কম সময়ে। ৫০০ কিমি রেঞ্জের গাড়িটি মাত্র ৪ মিনিট চার্জেই চলতে পারবে প্রায় ১০০ কিলোমিটার। ইলেকট্রিক গাড়ির দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠানটি ২০২২ সাল নাগাদ প্রায় ৬ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করবে। বোঝাই যাচ্ছে, মিশন-ই সফল করতে ও ইলেকট্রিক গাড়ির দুনিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করতে বেশ পরিকল্পনা করে নেমেছে তারা।
আওডি ই-ট্রন
ক্রমবর্ধমান পরিবেশ দূষণের ফলে, অনেক বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান ঝুঁকছে পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তির দিকে। গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আওডিও ধীরে ধীরে সে পথেই হাঁটছে। ই-ট্রন সিরিজের গাড়িটি তাদের প্রথম সম্পূর্ণ ইলেকট্রিক চালিত গাড়ি। এসিউভি গাড়িটিতে রয়েছে প্রযুক্তি, বিলাসিতা ও ডিজাইনের সর্বোচ্চ সমন্বয়। দুইটি ইলেকট্রিক মোটর উৎপন্ন করতে পারে ৩০২ কিলোওয়াট পর্যন্ত এবং গাড়িটি ০-১০০ কিমি/ঘণ্টা গতি তুলতে সময় নেয় মাত্র ৫.৭ সেকেন্ড।
নেভিগেশন ছাড়াও চার্জিং স্টেশনে গাড়ির বিল দূর থেকে স্মার্টফোনের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রণ করার সুবিধা রয়েছে গাড়িটিতে। তাছাড়া সাইড মিররের বদলে এটিতে সংযুক্ত করা হয়েছে সাইড ক্যামেরা এবং সেই সাথে ৩৬০ ডিগ্রি ক্যামেরা সুবিধা তো রয়েছেই। ৭৪,৮০০ ইউএস ডলারের মূল্যের এই ইলেকট্রিক গাড়িটি ২০১৯ সালে অটোমোবাইল জগতের অন্যতম আকর্ষণ হতে যাচ্ছে।
বেন্টলি কন্টিনেন্টাল জিটি কনভার্টিবল
নজরকাড়া ডিজাইনের এই গাড়িটি ইংল্যান্ডের বেন্টলি ফ্যাক্টরিতে হাতে তৈরি করা হয়েছে, যাতে কারিগরি দক্ষতার সাথে রয়েছে আভিজাত্যের ছোঁয়া। দীর্ঘ ভ্রমণের ক্লান্তিতে খোলা হাওয়ার সুবিধা দিতে এটিতে রয়েছে ছাদ খোলার সুযোগ, যা খুলতে ও বন্ধ করতে মাত্র ১৯ সেকেন্ড প্রয়োজন এবং ৫০ কিমি/ঘণ্টা গতিতেও আপনি এই সুবিধা নিতে পারবেন।
যাই হোক, ১২ সিলিন্ডারের বেন্টলি ৬ লিটার ইঞ্জিনের সাথে রয়েছে নিখুঁত ও দ্রুত গিয়ার পরিবর্তনের জন্য ৮ স্পিড ডুয়েল ক্লাচ ট্রান্সমিশন সিস্টেম। ঘন্টায় সর্বোচ্চ ৩৩৩ কিলোমিটার গতি তুলতে পারা এই মডেলটি ০-১০০ কিমি/ঘণ্টা গতি তুলতে পারে মাত্র ৩.৮ সেকেন্ড সময়ে। ২,১৪,৬০০ ইউএস ডলার মূল্যের গাড়িটির আরেকটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো আপনি চাইলে নিজের পছন্দ মতো এটি সাজিয়ে নিতে পারবেন বেন্টলি থেকে।