বাংলাদেশে একটা সময় পর্যন্ত সমাজের আদর্শ মানুষ হিসেবে শিক্ষকদেরকে সবচেয়ে বেশি মর্যাদা দেয়া হতো এবং ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সকলে তাদের কথা মেনে চলতেন। শিক্ষকেরা ছিলেন সমাজের মস্তিষ্ক। তাই হয়তো বা স্বাধীনতার পূর্ব মুহূর্তে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করার সময় অন্যান্য পেশাজীবীর সাথে শিক্ষকদেরও হত্যা করা হয়েছিল। শিক্ষকেরা ছিলেন অনেকটা পাঞ্জেরীর মতো। দেশের সমাজ, রাজনীতি কোনদিকে প্রবাহিত হবে, সেটা তারাই ঠিক করে দিতেন। তাদের শত শত ছাত্র ছাড়াও সমাজের আপামর জনসাধারণ তাদের আলোয় আলোকিত হতেন। শিক্ষকেরা ছিলেন আলোর দিশারী। সুলেখক আহমদ ছফা এমনই একজন শিক্ষকের জীবনাচারের কিছু অন্তরঙ্গ প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন ‘যদ্যপি আমার গুরু’ বইটিতে।
অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক সরাসরি লেখকের শিক্ষক ছিলেন না। পিএইচডির গবেষণার জন্য অন্য অনেকের পরামর্শে লেখক অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের কাছে গিয়েছিলেন তার থিসিসের সুপারভাইজার হওয়ার প্রস্তাব নিয়ে। সেই প্রথম পরিচয়। সত্যি বলতে প্রথম সাক্ষাতে রাজ্জাক স্যারকে লেখকের ভালো লাগেনি তাঁর চাঁচাছোলা ব্যবহারের কারণে, কিন্তু সময় যতই গড়িয়েছে, ঘনিষ্ঠতা ততই বেড়েছে। অবশ্য স্বাভাবিক নিয়মে সম্পর্কের মধ্যে এসেছে টানাপোড়েন এবং সেগুলো তারা অতিক্রমও করেছেন আপন মহিমায়। লেখকের ভাষায়,
প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে পরিচিত হওয়া আমার জীবনের অত্যন্ত ঘটনাসমূহের একটি।
লেখকের স্বভাবই এমন, একজন মানুষ, তিনি যত বড় ব্যক্তিত্বই হোন, তার আগ্রহ এবং কৌতূহল উদ্দীপ্ত রাখতে পারেন না। লেখক দীর্ঘ সাতাশ বছর ধরে রাজ্জাক স্যারের সান্নিধ্য লাভ করেছেন, কিন্তু একটি দিনের জন্যও রাজ্জাক স্যার লেখকের কাছে পুরনো হয়ে যাননি।
প্রথম সাক্ষাতেই কোনো এক অজানা কারণে লেখককে প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক ‘মৌলবি আহমদ ছফা’ বলে সম্বোধন করেছেন এবং সেটাই থেকে গেছে পরবর্তী দিনগুলোতেও। রাজ্জাক স্যারের সাথে প্রথম সাক্ষাতের বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে,
প্রথমত তার চোখের দৃষ্টি অসাধারণ রকম তীক্ষ্ণ, একেবারে মর্মে গিয়ে বেঁধে। দ্বিতীয়ত ঢাকাইয়া বুলি তিনি অবলীলায় ব্যবহার করেন, তার মুখে শুনলে এই ভাষাটি ভদ্রলোকের ভাষা মনে হয়।
এরপর সময় গড়িয়েছে তার আপন মহিমায় এবং লেখকের সাথে রাজ্জাক স্যারের সম্পর্কও পেয়েছে বিভিন্ন মাত্রা। রাজ্জাক স্যার সময়ে সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে তার মতামত ব্যক্ত করেছেন। কখনও সেটা লেখকের প্রশ্নের উত্তরে, আবার কখনও নিজে থেকে, আবার কখনও লেখক অন্য কারো সাথে রাজ্জাক স্যারের আলাপের সময় উপস্থিত থেকে সেগুলো শুনেছেন। লেখক যেহেতু সাক্ষাৎকারের ঢংয়ে বইটা লেখেন, তাই রাজ্জাক স্যারের কথাগুলো এসেছে স্মৃতিকথা হিসেবে। লেখকের ভাষায়,
রাজ্জাক স্যারের ওপর কোনোকিছু লিখে প্রকাশ করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাপার। এই ঝুঁকি দু’দিক থেকেই। রাজ্জাক স্যার নানা স্পর্শকাতর বিষয়ে এমন একতরফা মতামত দিয়ে বসে, যেটা সমাজের মানুষ বরদাশত করতে অনেক সময়ই প্রস্তুত নয়। অন্যদিকে তার বক্তব্যের উপস্থাপনায় যদি সামান্য হেরফেরও ঘটে যায়, তিনি সেটা সহজভাবে নিতে রাজি হবেন না।
বইয়ের পরবর্তী পাতাগুলোয় রয়েছে রাজ্জাক স্যারের চরিত্রের বিভিন্ন দিকের আলোকচ্ছটা। মাত্র ১১০ পৃষ্ঠার এক বই, কিন্তু পড়লে মনে হবে, কত না বিচিত্র বিষয়েরই অবতারণা করা হয়েছে এই বইতে। আর পড়া শেষ হলে মনে হবে, বইটা কেন আরও বর্ধিত কলেবরের হলো না? বইতে বেশিরভাগ সময় রাজ্জাক স্যারের কথা এসেছে। পাশাপাশি লেখকের নিজস্ব কিছু মতামতও এসেছে, কিন্তু খুবই সীমিত আকারে। রাজ্জাক স্যার কোনো দেশের মানুষকে বিচার করার ক্ষেত্রে দুটো বিষয়কে প্রাধান্য দিতে বলেছেন,
যখন কোনো নতুন জায়গায় যাইবেন, দুইটা বিষয় পয়লা জানার চেষ্টা করবেন। ওই জায়গার মানুষ কী খায়। আর পড়ালেখা কী করে। কাঁচাবাজারে যাইবেন, কী খায় এইডা দেখনের লাইগ্যা। আর বইয়ের দোকানে যাইবেন, পড়াশোনা কী করে, হেইডা জাননের লাইগ্যা।
কোনো বই লেখা এবং পড়ার বিষয়েও রাজ্জাক স্যার দিয়েছেন অভিজ্ঞতালব্ধ মতামত। তার ভাষায়,
লেখার ব্যাপারটি অইল পুকুরে ঢিল ছোঁড়ার মতো ব্যাপার। যতো বড় ঢিল যত জোরে ছুঁড়বেন পাঠকের মনে, তরঙ্গটাও তত জোরে উঠব এবং অধিকক্ষণ থাকব। আর পড়ার কাজটি অইলো অন্য রকম। আপনে যখন মনে করলেন, কোন বই পইড়্যা ফেলাইলেন, নিজেরে জিগাইবেন যে-বইটা পড়ছেন, নিজের ভাষায় বইটা আবার লিখতে পারবেন কি না। আপনের ভাষার জোর লেখকের মতো শক্তিশালী না অইতে পারে, আপনার শব্দভাণ্ডার সামান্য অইতে পারে, তথাপি যদি মনে মনে আসল জিনিসটা রিপ্রোডিউস না করবার পারেন, ধইর্যা নিবেন, আপনের পড়া অয় নাই।
বই পড়ার বিষয়ে তিনি আরো একটি কথা বলেছেন,
ক্ষেত চষবার সময় জমির আইল বাইন্ধ্যা রাখতে অয়।
এর মানে হচ্ছে, কোনো একটা গুরুত্বপূর্ণ বই পড়ার সময় নোট রাখতে হয়।
বিশ্বসাহিত্য এবং বাংলা সাহিত্যের কথাও এসেছে আলোচনা প্রসঙ্গে। শেক্সপিয়রের প্রতিভাকে রাজ্জাক স্যার বলেছেন,
অঘটনঘটনপটীয়সী প্রতিভা। সে কারণেই শেক্সপিয়ার মার্চেন্ট অব ভেনিসের শাইলকের মাত্র একটা কথা ‘আ জিউ’স ব্লাড ইজ অলসো রেড’ দিয়েই তিনি তামাম ইহুদিরে মনুষ্যসমাজের অংশ বইলা প্রমাণ করলেন।
বাংলা সাহিত্যের বিকাশ নিয়ে বলেছেন, “আধুনিক বাংলা গদ্যের বিকাশই অইল নাইন্টিন্থ সবচাইতে মূল্যবান অবদান।” রাজা রামমোহন রায় এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কথাও এসেছে। গৌড়ীয় বাংলা ব্যাকরণকে তিনি রামমোহন রায়ের বড় কাজ বলে অভিহিত করেছেন। আর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিষয়ে বলেছেন, “এন্টায়ার নাইন্টিন্থ সেঞ্চুরির মধ্যে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর অইল সর্বাংশে একজন বড় মানুষ। বাই ফার, হি ইজ দ্য বেস্ট।” বঙ্কিমের বিষয়ে বলেছেন, “বঙ্কিমের একটা ইনফিরিয়রিটি কমপ্লেক্স আছিল। তার পড়াশোনা অইছিল মুসলমানের টাকায়। মুহসিন ফান্ডের টাকায় তিনি লেখাপড়া করেছিলেন। মুসলমানের বিরুদ্ধে কলম ধইরা সেই ঋণ শোধ করেছিলেন। একবার রামকৃষ্ণ বঙ্কিমরে দেইখ্যা কইছিলেন, তোমার মনে এত অহংকার কেন?”
রাজ্জাক স্যারের কথায় সমকালীন জীবনযাত্রা থেকে শুরু করে শিল্প-সাহিত্য সবকিছুই উঠে এসেছে। কাজী নজরুল ইসলামের প্রসঙ্গ আসতেই উনি শিশুর মতো উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠতেন। নজরুল প্রসঙ্গে তিনি প্রেমেন মিত্তিরের একটা কবিতার লাইন আবৃত্তি করতেন, “বজ্র, বিদ্যুৎ আর ফুল এই তিনে নজরুল। আবার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্বন্ধে বলেছেন, “রবীন্দ্রনাথের প্রতিভা ঠিকই আছিল। বাংলা ভাষাটি ত রবীন্দ্রনাথের হাতেই পুষ্ট অইছে। এক হাতে বিচিত্র বিষয় নিয়ে লিখছেন, এইটাই রবীন্দ্রনাথের সবচেয়ে বড় ক্রেডিট। আদার দ্যান লিটারেরি ট্যালেন্ট অন্যান্য বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের যদি বিদ্যাসাগরের মতো মানুষদের সঙ্গে তুলনা করেন, হি কামস নো হেয়ার নিয়ারার টু দেম।” রাজ্জাক স্যারের ভাষায় “বড় লেখক আর বড় মানুষ এক নয়।” আর বাংলা ভাষা বিষয়ে স্যারের কথাটা খুবই সহজ, ‘বাংলা ভাষাটা বাঁচাইয়া রাখছে চাষাভুষা, মুটেমজুর- এরা কথা কয় দেইখ্যাই ত কবি কবিতা লিখতে পারে। সংস্কৃত কিংবা ল্যাটিন ভাষায় কেউ কথা কয় না, হের লাইগ্যা যখন সংস্কৃত কিংবা ল্যাটিন ভাষায় সাহিত্য লেখা অয় না।”
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে রাজ্জাক স্যার বলেছেন, “বেঙ্গলের সবচাইতে মিসফরচুন ব্যাপার অইল, এইখানে সাপোর্টিং কলেজ অওনের আগে য়্যুনিভার্সিটি তৈয়ার অইছে। আর মিডল স্কুল তৈয়ার না কইরা কলেজ বানাইছে। শুরু থেইক্যাই বেঙ্গলের এডুকেশন সিস্টেমটা আছিল টপ হেভি।” আরও বলেছেন, “বাঙালিদের যেরকম ডিগ্রির ক্রেজ, এইডা নতুন কোনো কিছু নয়। কলেজ তৈরি করার আগে ইউনিভার্সিটি তৈয়ার করার কারণে এই ক্রেজ জন্মাইছে। বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির বাইরে ইন্ডিয়ার অন্য কোনো অঞ্চলে এই ক্রেজ পাইবেন না।” বর্তমানে আমাদের ধ্বংসপ্রাপ্ত শিক্ষাব্যবস্থার দিকে তাকালে এই কথাটার মর্মাথ সহজেই অনুভব করা যায়। মিডল স্কুলের সূত্র ধরেই স্যার বলছিলেন, গ্রেট ব্রিটেনে বাজেটে ডিফেন্সের চাইতে এডুকেশনে বেশি অর্থ অ্যালট করা হয়।
রাজ্জাক স্যার কথা বলেছেন সেক্যুলারিজম নিয়ে। তিনি বলেছেন, “ইউরোপীয় রেনেসাঁর আগে খ্রীস্টানজগৎ মনে করত মরণের পরে যে অনন্ত জীবন অপেক্ষা কইরা আছে, হেইডা অইল আসল জীবন।…যীশুখ্রিস্ট ত এই নশ্বর দুনিয়াকে ভেল অভ টিয়ার্স কইয়া গেছেন।…রেনেসাঁর সময় যখন ধীরে ধীরে জীবনের ডেফিনেশন তৈয়ার অইতেছিল, তখন পুরা দৃষ্টিভঙ্গিটাই পাল্টাইয়া গেল। রেনেসাঁর আগে পরকালটাই আছিল সব। রেনেসাঁর পর এই দুনিয়াটাই সব, পরকাল কিছু না।”
আলাদা করে তিনি বলেছেন ইসলাম ধর্ম নিয়ে। “ইসলাম ধর্মের সাথে অন্যান্য ধর্মের একটা বড় পার্থক্য এইখানে যে ইসলাম ধর্মেও পরকালের গুরুত্ব স্বীকার করা অইছে, কিন্তু ইহকালের গুরুত্বও অস্বীকার করা অয় নাই। ফিদ্দুনিয়া ওয়াল আখেরাতের কথা ইসলামে যেভাবে বলা অইছে, অন্য কোনো ধর্মে সেরকম নাই। …সেক্যুলারাইজেশন ইফেক্ট অব ইসলাম ও ইন্ডিয়া ওয়াজ রিয়্যালি ইনরমাস।”
তিনি কথা বলেছেন সমাজতন্ত্র নিয়েও। একবার তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, সমাজতন্ত্রের কোন জিনিসটা আপনার ভালো লাগে? উত্তরে একটা গল্পের মাধ্যমে বলেছিলেন, “মেহনতি মানুষের ওপর এই যে জাগ্রত সহানুভূতি আমার মনে অইছে এইডাই সমাজতন্ত্রের সবচেয়ে বড় কন্ট্রিবিউশন।”
রাজ্জাক স্যার একটা কথা প্রায়ই বলতেন। আমরা শিক্ষকেরা প্রতি বছরই বুড়ো হয়ে যাচ্ছি। কিন্তু প্রতিটি নতুন বছরে আমাদের কাছে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এসে হাজির হয়। এই তরুণদের চাহিদা, চাওয়া-পাওয়ার খবর আমাদের মতো লোমচর্মের বৃদ্ধদের জানার কথা না। এটাই হলো শিক্ষক জীবনের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি।
লেখক আহমদ ছফার মতে,
“প্রফেসর রাজ্জাককে যদি একটা মাত্র পরিচয়ে সনাক্ত করতে হয়, আমার ধারণা ‘ঢাকার পোলা’ এর চাইতে অন্য কোনো বিশেষণ তাঁর সম্পৰ্কে প্রযোজ্য হতে পারে না।…খাওয়াদাওয়া, রান্নাবান্না; আচার-আচরণের ঢাকাইয়া বৈশিষ্ট্যগুলো প্রফেসর রাজ্জাক এবং তাঁর পরিবার অতি সযত্নে রক্ষা করে আসছেন।…তিনি যখন বাজার করতে যেতেন, সব সময়ে লুঙ্গি-পাঞ্জাবি পড়তেন। …প্রথম দৃষ্টিতেই তাঁকে একজন মাঠের কৃষক আর কিছুই মনে হওয়ার কথা না।…নিজস্ব সামাজিক অবস্থানের উপর দাঁড়িয়ে এবং নিজের সামাজিক পরিচিতির আদি বৈশিষ্ট্যসমূহ গৌরবের সাথে ধারণ করে একটা বিষদৃষ্টির অধিকারী হওয়া চাট্টিখানি কথা নয়।”
রাজ্জাক স্যারের বিষয়ে ছফা লিখেছেন,
“ইন্টেলেকচুয়াল বিউটি তথা মনীষার কান্তি কী জিনিস আমাদের সমাজে তার সন্ধান সচরাচর পাওয়া যায় না। রাজ্জাক সাহেবের প্রতি প্রাণের গভীরে যে একটা নিষ্কাম টান অনুভব করেছি, ও দিয়েই অনুভব করতে চেষ্টা করি এথেন্স নগরীর তরুণেরা দলে দলে কোন অমৃতের আকর্ষণে সক্রেটিসের কাছে ছুটে যেতো। …তিনি যে প্রজন্মের মানুষ, সেই প্রজন্মকে কতদূর পেছনে ফেলে এসেছেন। পরবর্তী অনেকগুলো প্রজন্মকে বুদ্ধিবৃত্তি এবং মানসকর্ষণের দীক্ষা দিয়েছেন। বলতে গেলে কিছুই না লিখে শুধুমাত্র সাহচর্য, সংস্পর্শের মাধ্যমে কত কত আকর্ষিত তরুণচিত্তের মধ্যে প্রশ্নশীলতার অঙ্কুর জাগিয়ে তুলেছেন, একথা যখন ভাবি বিস্ময়ে অভিভূত না হয়ে উপায় থাকে না।”
ছোট কলেবরের এই বইটিতে প্রফেসর রাজ্জাক স্যারের একটা অন্তরঙ্গ পরিচয় তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। আর সেটা করতে গিয়ে অনেকের নামই এসেছে। বিখ্যাৎ দাবাড়ু নিয়াজ মোর্শেদ থেকে শুরু করে শিল্পী সুলতান ছাড়াও কাজী মোতাহার হোসেনের মতো মানুষেরাও উঁকি দিয়েছেন ক্ষণিকের তরে। বইটা যেহেতু লেখা হয়েছে স্মৃতি থেকে, তাই ঘটনার বর্ণনায় কিছু অগোছালো ভাব পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু সেটা লেখকের সম্মানবোধ প্রকাশের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। এছাড়াও যদি কোনো বিষয়ে প্রফেসর রাজ্জাকের সাথে লেখকের দ্বিমত হয়েছে, সেটাও বলতে লেখক দ্বিধাবোধ করেননি। সে কারণেই বইটি সুপাঠ্য। আপনার হাতে কিছুটা সময় থাকলে আপনিও পড়ে দেখতে পারেন, কালের সাক্ষী একজন মানুষ প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাকের অন্তরঙ্গ জীবন প্রণালীর আলোকচ্ছটা।