মানসিক স্বাস্থ্যের উপর আধুনিক জীবনযাত্রার প্রভাব

প্রবাদ আছে, স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। স্বাস্থ্য বলতে আমরা প্রধানত দৃশ্যমান শরীরকেই বুঝি। মনের স্বাস্থ্যের খবর কয়জন রাখি? আধুনিক জীবনযাত্রার সাথে খাপ খাওয়াতে গিয়ে আমরা নিজেদের অজান্তেই আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে ফেলি। হয়ে উঠি অসুখী। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান কিংবা টেকনোলজির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ফেলছে মারাত্মক খারাপ প্রভাব। এছাড়াও আরও নানাবিধ কারণ আমাদের শারীরিক ও মানসিক উভয়দিকেই নানা ক্ষতি করছে।  

অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

আধুনিক জীবনযাত্রার সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য কোনো উপলক্ষ থাকুক কিংবা না থাকুক, ঘরোয়া খাবার বাদ দিয়ে জাঙ্ক ফুড খাই আমরা হরমেশাই। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব জাঙ্ক ফুড তৈরির পদ্ধতি হয় অস্বাস্থ্যকর, মেশানো থাকে নানা ক্ষতিকর উপাদান যা আমাদের শরীরের ক্ষতি তো করেই, পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যর উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। 

জাঙ্ক ফুড; Image Source: istockphoto.com

সতেজ ও ঘরোয়া প্রক্রিয়ায় তৈরি খাবার আপনার শরীরকে যেমন ভালো রাখবে, ঠিক তেমনই আপানার মন সবসময় ভালো এবং সতেজ রাখবে। অপরদিকে, আপনি যদি কোনোকিছুর তোয়াক্কা না করে সবসময় অস্বাস্থ্যকর খাবার খান, তবে আপনার অজান্তেই নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে। আপনার মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাবে, কারণ এ ধরনের খাবার গ্রহণ করলে আপনার শরীর খারাপ হতে পারে যেকোনো মুহূর্তেই, ফলে তার প্রভাব পড়ে মনেও।  

শারীরিক কাজকর্ম কমে যাওয়া

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই যুগে ভার্চুয়ালি অফিসের সকল কাজকর্ম সম্পাদন করা যায়। বর্তমানে তাই অনেক কোম্পানি রিমোট জবের সুযোগ দেয়। রিমোট জবের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে অনেক সময় অফিসের সময়ের পরও কাজ করতে হয়। 

© Alvaro Reyes

ফলে দীর্ঘসময় ল্যাপটপ কিংবা কম্পিউটার ডেস্কে বসে থাকতে হয়, শরীরের নড়াচড়া কম হয়। এছাড়াও, অনেক সময় ব্যায়াম করার ফুরসতও মেলে না। ঘরের যাবতীয় কাজকর্ম মেশিনের মাধ্যমে করা যায়। ফলস্বরূপ মানুষ ধীরে ধীরে মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়। দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ ও বিষণ্নতা ঘিরে ধরে।

ধূমপান 

অ্যাশট্রেতে সিগারেট; Image Source: pixabay.com

মানসিক চাপ কমানোর জন্য অনেকেই ধূমপান করেন। ধূমপায়ীরা মনে করে যে এর ফলে চাপ কমে। ধূমপান করলে ডোপামিন হরমোন নিঃসরণ হয়, ফলে সাময়িকভাবে চাপ কমালেও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি হয়। কারণ, মস্তিস্ক তখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে ডোপামিন নিঃসরণ করতে পারে না। এর প্রভাবে বাড়ে মানসিক চাপ। মানসিকভাবে একজন ধীরে ধীরে আরও বেশি বিপর্যস্ত হয়ে যায়।

প্রযুক্তির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার 

বর্তমান যুগ মানেই প্রযুক্তির যুগ। এককালে চিঠি লিখে আত্মীয়, বন্ধুবান্ধবদের সাথে যোগাযোগ করতে হতো। প্রযুক্তির কল্যাণে এখন হাতে হাতে মোবাইল ফোন শোভা পায়, এবং সেই মোবাইলে আছে ইন্টারনেট সংযোগ। 

সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মুহূর্তেই আমরা আপডেট পেয়ে যাই কাছের মানুষদের। এতে যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় যে কারো সাথে যোগাযোগ করা সহজ হলেও মানসিকভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি বিভিন্নভাবেই। 

ইন্টারনেট আসক্তি; Image Source: destinationsforteens.com

স্ক্রিন টাইম বেড়ে যাওয়ায় স্লিপ সাইকেলে এসেছে বিপর্যয়। এছাড়াও, সোশ্যাল মিডিয়াতে অন্যদের সুখী সুখী পোস্ট দেখে, তাদের জনপ্রিয়তা দেখে আফসোস করছি, হাহুতাশ করছি। এভাবেই নিজের অজান্তে নিজেকে আমরা অসুখী করে তুলছি। ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছি। 

সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে বেশি সময় দেওয়ার ফলে আমাদের যেকোনো কাজে বেশিক্ষণ মনোযোগ দেওয়ার ইচ্ছাও কমিয়ে ফেলে। এভাবে প্রযুক্তির প্রতি আসক্তিতে নিজেদের চারপাশ থেকে আলাদা করে ফেলে অনেকেই। প্রযুক্তি আমাদের কমিউনিকেশন গ্যাপ তো কমাচ্ছেই না, উল্টো আরও বেশি বাড়িয়ে তুলছে। 

চোখের পলকে যেমন পৃথিবী বদলে যাচ্ছে, ঠিক তেমনই বদলে যাচ্ছে আমাদের জীবনযাপনের ধরন। আধুনিক জীবনযাত্রা ঠিক এভাবেই আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলছে। তাই শরীরের পাশাপাশি আমাদের মনেরও যত্ন নিতে হবে। তবেই আমরা পরিপূর্ণভাবে সুস্থ থাকব। 

Language: Bangla.
Topic: How does Modern Lifestyle Affect Our Mental Health?
Feature Image: canva.com
References: Hyperlinked inside.

Related Articles

Exit mobile version