![](https://assets.roar.media/assets/Sn5LatGmkAWeJ4iE_line-com.jpg?w=1200)
রাজপরিবার নিয়ে কম-বেশি সবারই রয়েছে ব্যাপক কৌতূহল। তাদের পোশাক, চালচলন, রীতিনীতি জনসাধারণের কাছে কৌতূহলেরও বিষয়। রাজার সংস্কৃতি সেদেশের প্রজাদের কাছে আদর্শ স্বরূপ। তাই দেশের সার্বিক উন্নয়নে কাণ্ডারি স্বরূপ রাজার দায়িত্বও থাকে অনেক। রাজার সঠিক দিক-নির্দেশনা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায় উন্নতির শিখরে। কর্মের মাধ্যমে তিনি প্রজা-হৃদয়ে আজীবন স্থান করে নেন। একজন দক্ষ কাণ্ডারি হিসেবে তার শাসনামল প্রজাদের কাছে স্বর্গসম। তাই রাজার পরিবর্তন হলেও প্রজাদের মনে তিনি এবং তার শাসনামলের চিত্র গাঁথা থাকে যুগ যুগ ধরে।
বীরেন্দ্র বীর বিক্রম শাহ দেব এমনি একজন যশস্বী রাজা, যিনি হিমালয় কন্যা নেপালের উন্নয়নে রাজতান্ত্রিক ইতিহাসে ও আন্তর্জাতিকভাবে সবথেকে সফল রাজা হিসেবে নিজের নেতৃত্বের প্রমাণ রেখে গেছেন।
![](https://assets.roar.media/assets/MSMgCptuzWc0mdAo_1sU4FOEgw4K1csW3_dcnepalonline-com.jpg)
বীরেন্দ্র বীর বিক্রম শাহ দেব ছিলেন ‘দ্রব্য শাহ’ পরিবারের নবম প্রজন্ম পৃথ্বী নারায়ণ শাহের বংশধর। আধুনিক নেপালের জন্মে পৃথ্বী নারায়ণ শাহের অবদান অপরিসীম। ১৭৬৮ সালে পৃথ্বী নারায়ণ রাজা হন। রাজা হয়েই নেপালের আয়তন কয়েকগুণ বৃদ্ধি করেন। বলা হয়ে থাকে, এখনকার তুলনায় আয়তনে দ্বিগুণ ছিল রাজা পৃথ্বী নারায়ণের নেপাল। এরপর দীর্ঘদিন নানান উত্থান-পতন, রেষারেষির মধ্যদিয়ে নেপালের রাজতন্ত্রের ক্ষমতায়নের পরিবর্তন ঘটে। বংশপরম্পরায় ১৯৫৫ সালে ত্রিভূবন বীর বিক্রম শাহের পুত্র মহেন্দ্র বীর বিক্রম রাজা হন। মহেন্দ্র বীর বিক্রম শাহ দেবের মৃত্যুর পর একাদশতম রাজা হিসেবে সিংহাসনে বসেন তার পুত্র বীরেন্দ্র বীর বিক্রম শাহ।
![](https://assets.roar.media/assets/liiVKuHOlUk1wiXW_Wikimedia-Commons.jpg)
মহেন্দ্র বীর বিক্রম শাহ দেব ও রানী ইন্দ্র রাজ্য লক্ষ্মী দেবীর জ্যেষ্ঠ পুত্র বীরেন্দ্র বীর বিক্রম ১৯৪৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর কাঠমান্ডুর নারায়ণহিতি রাজপ্রাসাদে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫০ সালে রানী ইন্দ্র রাজ্য লক্ষ্মী মারা যান এবং পরবর্তীতে ১৯৫২ সালে মহেন্দ্র ইন্দ্রর ছোট বোন রত্না রাজ্য লক্ষ্মী দেবীকে বিয়ে করেন। বীরেন্দ্র ছাড়াও রাজা মহেন্দ্রের জ্ঞানেন্দ্র ও ধীরেন্দ্র নামে আরো দুই পুত্র এবং শান্তি, সারদা, শুভ্রা নামে তিন কন্যা ছিল। ১৯৫৫ সালে বীরেন্দ্রর দাদা ভূবন বীর বিক্রম মারা গেলে তার পুত্র মহেন্দ্র সিংহাসনে বসেন এবং বীরেন্দ্রকে প্রিন্স হিসাবে অভিষেক করা হয়।
নেপালের রাজতন্ত্রের ইতিহাসে বীরেন্দ্রই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষাগ্রহণ করেছিলেন এবং শিক্ষার জন্য তিনি বিদেশ ভ্রমণও করেন। তার শিক্ষাজীবনের আট বছর কাটে ভারতের দার্জিলিংয়ে খ্রিস্টানদের জন্য নির্মিত স্কুল সেন্ট জোসেফ কলেজে। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে যুবরাজ পদে আভিষেকের পর ১৯৫৯ সালে প্রিন্স বীরেন্দ্র ইংল্যান্ডে যান এবং সেখানে এটন কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে ১৯৬৪ সালে দেশে ফিরে আসেন। এরপর ১৯৬৭ সালে কিছুদিন জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং পরবর্তীতে ১৯৬৭-৬৮ সাল হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক তত্ত্ব বিষয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জন করেন তিনি। পড়াশোনা ছাড়াও হস্তশিল্প ও চিত্রকর্মে তার প্রবল ঝোঁক ছিল। এছাড়া তিনি হেলিকপ্টার চালনা বিদ্যাও রপ্ত করেছিলেন।
![](https://assets.roar.media/assets/0rXI9Bl7efhicRTz_j.jpg)
নেপালের দুই প্রভাবশালী পরিবার শাহ পরিবার ও রানা পরিবার। দুই পরিবারের বংশধরদের বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের উদাহরণও বেশ নজর কাড়ার মতো। বীরেন্দ্র শাহের মা রানী ইন্দ্র রাজ্য লক্ষ্মী দেবী ছিলেন জেনারেল হরি শমসের রানার কন্যা। পরবর্তীতে জেনারেল কেন্দ্র শমসের জং বাহাদুর রানার বড় মেয়ে ঐশ্বরিয়া রাজ্যলক্ষী রানাকে পাত্রী হিসাবে মনস্থির করা হয় যুবরাজ বীরেন্দ্রের সহধর্মিনী হিসাবে।
১৯৭০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি মহা জাঁকজমক আয়োজনে বীরেন্দ্র ও ঐশ্বরিয়া রাজ্যলক্ষীর বিয়ে হয়। সেসময়ের সর্বাপেক্ষা ব্যয়বহুল ও জাঁকজমকপূর্ণ বিয়ের আয়োজন করা হয়েছিল বীরেন্দ্র ও ঐশ্বরিয়ার, যা নেপালে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। বীরেন্দ্র ও ঐশ্বরিয়া তিন সন্তানের পিতা-মাতা হন। ১৯৭২ সালের ২৭ জুন বীরেন্দ্র ও ঐশ্বরিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র দীপেন্দ্র জন্মগ্রহণ করেন। এরপর ১৯৭৬ সালের ১৫ অক্টোবর প্রিন্সেস শ্রুতি ও ১৯৭৭ সালের ৬ নভেম্বর প্রিন্স নিরাজন নামে আরও এক কন্যা ও পুত্রের জন্ম হয়।
![](https://assets.roar.media/assets/4i3yOhdpXToTI2Zh_Birendra_1972-gr.jpg)
১৯৭২ সালে রাজা মহেন্দ্র শিকারে বের হন এবং সেখানেই তার মৃত্যু ঘটে। জনশ্রুতি আছে, রাজা মহেন্দ্রের মৃত্যু সাধারণ ছিল না, তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। রাজা মহেন্দ্রের মৃত্যুর পর পরম্পরা অনুযায়ী বীরেন্দ্র বীর বিক্রম রাজা হন। ১৯৭৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তার রাজ্যাভিষেক ঘটে। বিশ্বের কয়েকজন দক্ষ রাজাদের মাঝে বীরেন্দ্র অন্যতম যিনি দেশের উন্নয়নে বিপুল পরিবর্তন আনেন। ক্ষমতায় আসার পরই তিনি পূর্বের সনাতনী ধারা মেনে স্থানীয় ও আঞ্চলিক সংস্থা হিসেবে পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় দেশ পরিচালনা শুরু করেন। তিনি অনুভব করেন, নেপালের মতো স্বল্পোন্নত দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা উপযুক্ত না, একমাত্র গঠনমূলক সরকার ব্যবস্থাই পারে নেপালের অবকাঠামোগত পরিবর্তন আনতে।
তিনি উপলব্ধি করেন, বিভিন্ন দেশের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করলে তার প্রভাব দেশের রাজনৈতিক অবস্থার আমূল উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে সক্ষম। এ উদ্দেশ্যে তিনি ১৯৭৩ সালের অক্টোবর মাসে প্রথম দেশ ভ্রমণে বের হন। সেসময় ভারত ও চীন দুটি উন্নত দেশ হওয়া সত্ত্বেও তাদের ভেতর শীতল সম্পর্ক বিরাজমান ছিল। তিনি দীর্ঘ দু’মাস ভারত সফর করেন, পরে চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়ন ভ্রমণে যান। তার এই উদ্যোগে দু’দেশের সাথেই নেপালের সম্পর্ক গাঢ় হয়, যা রাজা হিসাবে বীরেন্দ্রের অনেক বড় অর্জন ছিল।
![](https://assets.roar.media/assets/g3FvAeQVlOvJbiuc_bf073d32c7801f2fe2a4065bc2fc3f12.jpg)
রাজা বীরেন্দ্র বীর সমগ্র নেপালে শিশুদের বিনা খরচে পড়াশোনার ব্যবস্থা করে দেন। এছাড়াও তার আমলে বহিঃশত্রুর হাত থেকে নেপালকে মুক্ত রাখতে তিনি সফল হন। তিনি সর্বপ্রথম নেপালে পঞ্চায়েত সরকার ব্যবস্থার প্রচলন করে। কিন্তু নেপালী কংগ্রেস পার্টির অনেক নেতাগণ তার এই শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। বীরেন্দ্র দেশের সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূলে রাখতে বহুসংখ্যক নেতাকে কারাবন্দী করতে বাধ্য হন। তার এই আদেশের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল নির্দলীয় ও বহুদলীয় পার্টির গণভোটের মাধ্যমে জনমত আদায়। ফলস্বরুপ ১৯৮০ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বহুদলীয় ব্যবস্থায় দেশ পরিচালনার বিপক্ষে প্রায় ৫৫ শতাংশ জনমত পাওয়া যায়। এই নির্বাচনের মতামতে অসন্তুষ্ট বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বেপরোয়া মনোভাবের দরুণ দেশের অবকাঠামো অস্থিতিশীল পর্যায়ে চলে যায়। তারা বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে দেশের সংবিধান পরিবর্তনে আগ্রাসী হয়ে ওঠে।
১৯৯০ সালের দিকে এ আন্দোলন আরও তীব্র হয়ে উঠলে বিভিন্ন স্থানে দাঙ্গা, হানাহানি, হরতাল, সংঘর্ষে দেশের অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। দেশের স্বাভাবিক কর্মকান্ড ব্যাহত হতে থাকলে বীরেন্দ্র পুনরায় সংবিধান সংশোধন করতে মনস্থির করেন। অবশেষে ১৯৯০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর পূর্বের অনুশাসন পরিবর্তিত হয়ে দেশে বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থার খসড়া প্রবর্তন করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৯০ সালের ৯ নভেম্বর নতুন সংবিধানের খসড়া অনুমোদন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কে.পি. ভট্টরাই। বীরেন্দ্র বহুদলীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থায় ক্ষমতার উপযুক্ত বন্টন ও মানবাধিকার অক্ষুন্ন রাখার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালান।
রাজা বীরেন্দ্রর শাসনামলে দেশের পর্যটন শিল্পের যথেষ্ট উন্নয়ন হয়। এছাড়া এশিয়া আঞ্চলিক সহযোগিতায় বেসরকারী সংস্থা ‘সার্ক’ (SARRC: দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা) প্রতিষ্ঠায়ও রাজা বীরেন্দ্রের ভূমিকা অসীম। দক্ষিণাঞ্চলের সাতটি দেশ যথাক্রমে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল, মালদ্বীপ, ভুটান এবং আফগানিস্তান নিয়ে ১৯৮৫ সালের ৮ই ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় সার্ক। এরপর ১৯৮৭ সালের ১৬ জানুয়ারী সার্কের প্রধান সচিবালয় নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে প্রতিষ্ঠা পায়, যার উদ্বোধন করেন রাজা বীরেন্দ্র।
![](https://assets.roar.media/assets/vWoIfVdJTxfGmVV0_Narayanhiti_Palace_Museum.jpg)
২০০১ সালের ১ জুন, নেপালের রাজতন্ত্রের ইতিহাসে এক অন্যতম কালরাত্রী, যার পেছনে দায়ী করা হয় প্রিন্স দীপেন্দ্রকে। জানা যায়, প্রিন্স দীপেন্দ্র ১৯৮৭ সালে ইংল্যান্ডের এটন কলেজে ভর্তি হন এবং সেখানে পিতার বন্ধু বর্নট জেরেমি বাগের কন্যা শেলীর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ১৯৯০ সালে ফিরে এসে সে পরিবারে তার পছন্দের কথা জানালে তারা অসম্মতি জানায় এই সম্পর্কের পরিণতির ব্যাপারে। ফলে তখন থেকেই পরিবারে অসন্তোষ শুরু হয়। অনেকের মতে, এ সময় দীপেন্দ্রকে কুবুদ্ধি দিয়ে বাবা-মায়ের বিপরীতে চালনা করেন পরবর্তী রাজা জ্ঞানেন্দ্র। অনেকের ধারণা, জ্ঞানেন্দ্র রাজা হবার উদ্দেশ্যেই এই পরিকল্পনা করেন।
১ জুন দীপেন্দ্র মদ্যপ অবস্থায় পারিবারিক একটি পার্টিতে আসেন এবং লজ্জাজনক কর্মকান্ড চালান। তার অবস্থা দেখে রাজা বীরেন্দ্র তার অপর দুই সন্তানকে আদেশ সেন দীপেন্দ্রকে তার কক্ষে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু কিছুক্ষণ পর দীপেন্দ্র আবার ফিরে আসেন ওই পার্টিতে একটি মেশিনগান ও এম-১৬ পিস্তল সহ। সর্বপ্রথম তিনি পিতা বীরেন্দ্রকে গুলি করেন। এরপর ফুফু শান্তি, সারদা, চাচা ধীরেন্দ্র বীর বিক্রম, মাতা ঐশ্বরিয়া, অনুজ নিরাজন ও শ্রুতি, শারদার স্বামী কুমার খাদ্গা, বীরেন্দ্রর দূর সম্পর্কের বোন জয়েন্তীকে হত্যা করেন। একই হত্যাকান্ডে আহত হন রাজপরিবারের আরও অনেকেই। অনেকেই ঘটনার আকস্মিকতায় ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে এদিক ওদিক লুকিয়ে বাঁচতে সক্ষম হয়। এই ঘটনার কিছুক্ষণের মঝে আশ্চর্যজনকভাবে দীপেন্দ্র নিজের উপরও গুলি বর্ষণ করেন। তিন দিন হাসপাতালে শয্যাশায়ী থেকে ৪ জুন হাসপাতালেই মৃত্যুবরণ করেন দীপেন্দ্র।
![](https://assets.roar.media/assets/PTVDPeV1w5TAc3wK_bg-120161026175038.jpg)
এই হত্যাকান্ডের জন্য প্রিন্স দীপেন্দ্রকে দায়ী করা হলেও নেপালের জনসাধারণের মতে দীপেন্দ্রকে উস্কে দেওয়ার কাজ করেন রাজা জ্ঞানেন্দ্র। কারণ উপস্থিত সকলের ভাষ্যানুযায়ী, দীপেন্দ্র সেদিন অত্যাধিক মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন এবং পরিকল্পনা থাকলে তিনি নিজের উপর গুলি বর্ষণ করতেন না। নেপালের এই নৃশংস হত্যাযজ্ঞের পর ৪ জুন জ্ঞানেন্দ্র বীর বিক্রম নিজেকে রাজা হিসেবে ঘোষণা দেন এবং এককভাবে রাজ্য পরিচালনা শুরু করেন।
ধীরে ধীরে নেপালের রাজ্য অনিয়ম ও অরাজকতার সৃষ্টি হয়। ২০০৬ সালে মাওবাদীরা রাজা জ্ঞানেন্দ্রর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে ২০০৬ সালের ২১ এপ্রিল জ্ঞানেন্দ্র ঘোষণা দেন, তিনি নেপালের গণতন্ত্র রক্ষায় রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতর থেকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করতে চান। এরপর ২০০৬ সালের ১০ জুন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী গিরিজা প্রসাদ কৈরালার নেতৃত্বে নেপালের সংসদীয় নীতি অনুসারে রাজার সমস্ত ক্ষমতা বাতিল ঘোষণা করা হয়। এই ঘোষণার মাধ্যমে নেপালের ২৩৯ বছরের রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে।
রাজপরিবারে ঘটে যাওয়া সেদিনের হত্যাকান্ডের সঠিক হত্যাকারী কে তা এখনও সঠিক তদন্ত করা সম্ভব হয়নি। অনেক তথ্য-প্রমাণ রাজা জ্ঞানেন্দ্রের শাসনামলে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। কিন্তু আজও নেপালের সাধারণ মানুষের হৃদয়ে রাজা বীরেন্দ্র বীর বিক্রম, তার আদর্শ, রীতিনীতি তাদের পথ প্রদর্শক। তাই মৃত্যুর এত বছর পরও তারা তাদের প্রাণপ্রিয় রাজার হত্যাকারীকে খুঁজে বেড়ায়।