প্রাচীন জাপানের ঐতিহ্য এবং রীতিনীতি সম্পর্কে প্রাপ্ত সমস্ত তথ্যই বর্তমানে পৌঁছেছে দুইটি সূত্র মারফত। প্রথমটা কোজিকি বা প্রাচীন ঘটনার বিবরণী, যাকে ফুরুকোতোফুমি নামেও পাঠ করা হয়। ৭১১-১২ খ্রিষ্টাব্দের দিকে লিখিত এই বিবরণীই এখন অব্দি সবথেকে প্রাচীন। জাপানের ৪৩তম শাসক সম্রাজ্ঞী গেনমেইয়ের নির্দেশে পণ্ডিত ওনো ইয়াসুমারো লিখেছিলেন। উপকথা, কিংবদন্তি, গান, বংশতালিকা এবং মানুষের মুখে বয়ে বেড়ানো আধা-ঐতিহাসিক বিষয়াদির চমৎকার সংকলন কোজিকি। এই গ্রন্থে বর্ণিত চর্চাগুলোই পরবর্তীতে প্রস্তুত করেছে শিন্টো ধর্মের ভিত্তি। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ দলিল নিহোন শোকি বা জাপানের ইতিহাস নামক পুস্তক। কোজিকি সংকলিত হবার আট বছর পর রচিত বলে আরো বেশি সংহত এবং সম্পূর্ণ। লিখিত হয় রাজকুমার তোনেরির তত্ত্বাবধানে।
কোজিকি এবং নিহোন শোকির মতো গ্রন্থ রচনায় পৃষ্ঠপোষকতা দানের বাইরেও সে সময়ে সম্রাটগণ স্থানীয়ভাবে প্রতিনিধি নিযুক্ত করতেন। প্রতিনিধিরা পরিচিত হতেন ফুদোকি নামে। তাদের মাধ্যমেই লিখিত হতো সে অঞ্চলের কৃষি, ভূগোল, ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং পুরাণের মতো বিষয়াদি। ফলে বিচিত্র এক সূত্র তৈরি হয়েছে ভিন্ন সময় এবং অঞ্চলের মধ্যে। পরবর্তীতে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান এবং ইসলাম ধর্মের আগমনে সেখানকার চিন্তাও বিবর্তিত হয়। সেই চিহ্ন ধারণ করে এখনো দাঁড়িয়ে পৌরাণিক চরিত্রগুলো।
রাইজিন
জাপানি উপকথায় রাইজিনের প্রধান পরিচয় বজ্রদেবতা হিসেবে। কালো মেঘ আর ঝড়কে নিয়ন্ত্রণ করেন উপর থেকে। পৃথিবীতে নামিয়ে আনেন মৃত্যু আর ধ্বংস। পাতালের সাথে নিয়ত সম্পর্ক। ক্ষুধার্ত দানবের মতো সবসময়েই ক্রুদ্ধ থাকেন। সাধারণত দৈব শক্তিকে অঙ্কিত করার সময় হেলো বা আলোকচক্র রাখা হয় পবিত্রতাকে প্রকাশ করার জন্য। রাইজিনের চিত্রায়নেও সেটা দৃশ্যমান। সেই সাথে বজ্রের নিয়ন্ত্রক হিসেবে তার হাতে থাকে বিশেষ ঢোল। বৃষ্টি আনয়নকারী বলে কৃষকের জন্য আশির্বাদ তিনি।
জাপানে খরা দেখা দিলে মনে করা হয় রাইজিনের অবহেলা অথবা অন্য কিছুতে আটকে থাকার ফল। মন্দির এবং মঠগুলোকেও সুরক্ষা দেন তিনি। শিন্টো এবং বৌদ্ধ বিশ্বাসে রাইজিন যুদ্ধের প্রতিরক্ষক। সেই হিসেবে ভালো বা মন্দ দেবতা না বলে তাকে বরং মধ্যবর্তী কোনো অভিধা দেওয়া যেতে পারে। বর্তমানেও প্রচলিত আছে কিংবদন্তি। যে শিশুরা নিজেদের নাভি ঢাকে না, রাইজিন তাদের উঠিয়ে নিয়ে যান।
পাতালে ইজানামির পঁচে যাওয়া মৃতদেহ থেকে রাইজিনের জন্ম। ইজানাগি যখন স্ত্রীকে সেখানে রেখে পালিয়ে আসেন; রাইজিন তাকে অনুসরণ করেন। রাইজিন পৃথিবীতে আগমন করেন সত্য, সেই সাথে আগমন করে মৃত্যু আর ধ্বংস। কোনো বিবরণীতে তাকে উদ্ধৃত করা হয়েছে দুষ্কৃতিকারী হিসেবে। তৎকালীন সম্রাট তার কর্মের দরুন বিব্রত হয়ে সুগারুকে নির্দেশ দেন রাইজিনকে বন্দি করতে। সুগারু তার কাছে গিয়ে সম্রাটের আদেশ পাঠ করে আত্মসমর্পণ করতে বলেন। শুনে হেসে উঠেন রাইজিন। সুগারু তাই দেবতা কাননোনের দারস্থ হন। এই দফায় রাইজিন সম্রাটের কাছে গমন করতে রাজি হন। তাকে ধ্বংসাত্মক ক্রিয়াকলাপ বন্ধ করে দিতে বাধ্য করেন সম্রাট। তারপর থেকে রাইজিন কেবল বৃষ্টির মাধ্যমে রাঙিয়ে তুলতে থাকেন জাপানকে।
ফুজিন
বাতাসের দেবতা ফুজিন। সবুজ শরীর আর লাল-সাদা চুল আর প্রশস্ত চোখের সংযোগে সৃষ্ট তার দানবীয় শরীর বেশ ভীতিপ্রদ। যেন অনন্ত ক্ষুধা নিয়ে মুখিয়ে আছে গিলে ফেলার জন্য। সাথে তার বিশাল বাতাসের ব্যাগ। ব্যাগটা পৃথিবীর চারপাশে ঘুরায়। তখন বায়ুপ্রবাহ আর ঝড়ের জন্ম নেয়। তার হাতের চারটি আঙুল নির্দেশ করে চারটি দিককে। স্বাভাবিক সময়ে আরোহন করে থাকেন ধুসর মেঘের উপর। সকল সময়ে সর্বত্র বিরাজমান থাকলেও ঝড়ের সময় ফুজিনের উপস্থিতি দৃশ্যমান। আঘাতে তছনছ হয়ে যায় সম্মুখের সমস্ত কিছু। ধ্বংসাত্মক চরিত্রের বাইরে গিয়ে হৃদয় প্রশান্তকারী শান্ত ও সুশীতল বাতাসের কৃতিত্ব কিন্তু তারই। সেই বিচারে রাইজিনের চেয়ে ফুজিন কিছুটা মোলায়েম। হয়তো এইজন্যই তার মতো পরিচিতি অর্জন করতে পারেননি।
ইজানামির মৃত্যুর পরে পাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বেদনার্ত স্বামী ইজানাগি তাকে অনুসরণ করে গমন করেন দানবে পূর্ণ মৃত্যুপুরীতে। সেখানে ইজানামির দেহ পঁচে যেতে শুরু করেছে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝতে পেরে স্বামী সেখান থেকে চলে আসেন। তার গলিত দেহ থেকে জন্ম নেন রাইজিন আর ফুজিন। সমস্ত প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে পাতাল থেকে উঠে আসেন পৃথিবীতে। সেই সাথে শুরু হয় মৃত্যু আর বিভীষিকার অধ্যায়।
মাঝে মাঝে রক্ষাকর্তা হিসাবেও আবির্ভুত হয়েছেন। ১২৭৪ সালে মোঙ্গল বাহিনী জাপান আক্রমণের চেষ্টা করে। কিন্তু ভয়ঙ্কর ঝড়ের কবলে পড়ে তছনছ হয়ে যায় জাহাজ। ভেস্তে যায় আক্রমণকারীদের পরিকল্পনা, রক্ষা পায় জাপান। ঝড়ের কৃতিত্ব দেয়া হয় দেবতা রাইজিন এবং ফুজিনকে। পরে ১২৮১ সালে আরো বড় পরিসরে তৎপরতা চালায় মোঙ্গলরা। এই দফাতেও দুই দিন ব্যাপী টাইফুনের কবলে মোঙ্গলবাহিনী নাস্তানাবুদ হয়। খোয়া যায় হাজার হাজার সৈন্য। যথারীতি সফলতার কৃতিত্ব যায় রাইজিন এবং ফুজিনের নামে।
আমেনো উজুমে
সংক্ষেপে উজুমে নামে পরিচিত এই দেবীকে আলোর সাথে সম্পর্কিত করা হয়ে থাকে। সূর্যদেবী আমাতেরাসুর সবচেয়ে বিশ্বস্ত প্রতিনিধি এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত ভোরের দেবী। সদা হাস্যোজ্জ্বল এবং সহজ, যেন সৃষ্টির আনন্দে নিয়ত দ্রবীভুত। প্রচলিত বিবরণীতে উজুমেকে ঢিলেঢালা পোশাকেই আবির্ভূত হতে দেখা যায়। আমাতেরাসুর মতো গাম্ভীর্য কিংবা অন্যান্য দেবতাদের মতো কৃত্রিমতাও নেই। উপরন্তু তিনি যেন দুনিয়াকে খুশিতে ভরিয়ে দেয়ার ব্রত পালন করছেন। আয়নাকে গণ্য করা হয় উজুমের প্রতীক। কারণ জাপানের পূর্ব উপকূলে ঊষা দেখা দেয় আয়নার আদলে। জাপানি শিল্পকলার বড় অংশ উজুমের অবদান। বিশেষ ধরনের নৃত্য, নাটক এবং চিত্রকলা। সেই দিক থেকে তিনি আনন্দ আর উচ্ছ্বাসেরও দেবী। পৃথিবীতে বসবাসকারী কামিদের প্রধান সারুতাহিকো ওকামি হলেন তার স্বামী। তাদের সন্তানেরাই পত্তন ঘটিয়েছে কাগুরা এবং নোহের মতো নাট্যকলার।
আমাতেরাসু যখন গুহায় লুকালেন, তামাম পৃথিবী অন্ধকারে ঢেকে গেল। অন্যান্য দেবতাদের কোনো প্রচেষ্টাই আমাতেরাসুকে বের করতে পারেনি। সেই সময় এগিয়ে এলেন উজুমে। কী মনে করে আড়ম্ভ করলেন নৃত্য। হাস্যকর অঙ্গভঙ্গি আর সজ্জা দেখে হাসিতে ফেটে পড়েন কামিগণ। বাইরের প্রবল হাসির শব্দে পৌঁছে যায় গুহার ভেতরেও। আমাতেরাসু কৌতূহলি হয়ে প্রথমে বাইরে উঁকি দেন। নিজের অনুগতের এমন নাচ তাকেও আমোদিত করে। আস্তে করে কপাট সরিয়ে বেরিয়ে আসেন আনমনেই। আমাতেরাসুর বাইরে আসায় পৃথিবীতে আবার বসন্ত নেমে আসে। উজুমে যেন সবাইকে প্রাণে বাঁচালেন।
ইনারি
সমৃদ্ধি, কৃষি আর শিল্পের দেবতা ইনারি। অন্যান্য দেবতার তুলনায় ইনারির চরিত্র অনেক বেশি বিভ্রান্তিকর। ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে তাকে ভিন্ন ভিন্ন রূপে আবির্ভুত হতে দেখা যায়। কখনো নারী, কখনো পুরুষ কিংবা কখনো উভলিঙ্গ হিসেবে। অবশ্য সময়ের সাথে ভূমিকার বিবর্তন ঘটেছে। তার অন্য নাম তানোকামি অর্থাৎ শষ্যের দেবতা। বৌদ্ধধর্মের সাথে তুলনা করতে গেলে তাকে বরং বোধিসত্ত্বের সাথে মেলানো যায়।
ইনারির বিচিত্র পরিচিতি তাকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে। কৃষি এবং নির্মাণশিল্পে নির্ভরতার যুগে সেই জনপ্রিয়তা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। কিতসুনে নামের শেয়ালকে প্রায়ই ইনারির দূত বলে উপস্থাপন করা হয়। জাপানি লোককথায় ওকাই নামে বহুল পরিচিত। ইনারির উদ্দেশ্যে নির্মিত মন্দিরগুলোর দরজায় প্রায়ই দেখতে পাওয়া যায়। বর্তমান জাপানে ইনারির উদ্দেশ্যে নির্মিত কমপক্ষে ২৯৭০টি মন্দির আছে।
কৃষির দেবী উকে মুচিকে বিয়ে করেন ইনারি। তবে তার উৎস খুঁজে বের করা মুশকিল। ৬ষ্ঠ শতকে জাপানে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসারের আগে থেকেই সমৃদ্ধির সাথে তাকে সম্পর্কিত করা হতো। শিনগন নামে জাপানি বৌদ্ধদের একটা শাখা ইনারিকে নিজেদের উপাস্যের সাথে মিলিয়ে নিয়েছে। অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দী জুড়ে ইনারির জন্য পালিত উৎসব ফুশিমি ছিল প্রধান আচারের অন্তর্ভুক্ত। ইদো আমলে এই ভূমিকা বদলাতে থাকে। সামুরাইদের আধিপত্যের ধারাবাহিকতায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে কামার এবং অস্ত্র নির্মাতারা। এবার ইনারির সমৃদ্ধির সমীকরণ কৃষি থেকে নির্মাণশিল্পের দিকে ভারি হয়। যোদ্ধা আর বণিকদের কাছে ইনারি যেন প্রিয় নাম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরেও জাপানের অর্থনৈতিক অগ্রগতির যুগে সবচেয়ে জনপ্রিয় দেবতা হিসেবে স্থান দখল করে আছেন ইনারি।
নিনিগি
সূর্যদেবী এবং স্বর্গের রাণী আমাতেরাসুর নাতি নিনিগি। পিতার নাম ওশিহোমিমি। পুত্রের কাঁধেই জাপানের গুরুভার তুলে দিতে চেয়েছিলেন আমাতেরাসু। কিন্তু শীঘ্রই পুত্রের চাইতে নাতি অধিক যোগ্য বলে প্রমাণিত হলো। সেই যে স্বর্গ থেকে অবতরণ, তার পরে আর ফিরে যাননি। মাটিতে প্রথম ধানের বীজ বপিত হয় তার মাধ্যমে। স্থাপিত হয় সভ্যতার পাটাতন। কামি আর মানুষ- উভয়ের জন্য ক্বায়েম হয় ন্যায়বিচার এবং শৃঙ্খলা। আমাতেরাসু তার হাতে রাজদণ্ড তুলে দেন। এই রাজদণ্ডই দুনিয়ার রাজপরিবার এবং আমাতেরাসুর মধ্যকার সম্পর্কের স্মারক। বর্তমানেও রাজদণ্ড রক্ষিত আছে বিশেষ মর্যাদায়। এশিয়ার মূল ভূখণ্ড ছেড়ে তৃতীয় থেকে দশম শতক অব্দি ইয়ায়োই জনগণ জাপানে অভিবাসী হয়। শিকার সভ্যতার বিপরীতে তারা কৃষিনির্ভর। ফলে জাপানের মাটিতে প্রবর্তন ঘটে কৃষির। নিনিগি সম্পর্কিত পুরাণ সেই ঘটনার দিকেই ইঙ্গিত দেয়।
মর্ত্যে অবতরণের পর নিনিগি স্থানীয় রাজার কাছে গেলেন। বিয়েতে আবদ্ধ হন রাজকন্যা কোনোহানাসাকুয়ার সাথে। স্ত্রী গর্ভবতী হলে হঠাৎ সন্দেহ হয় সন্তানের পিতা নিয়ে। সতীত্বের পরীক্ষা দিতে হয় কোনোহানাসাকুয়ার। জন্মদানকালে ঘরে আলো জ্বালানো হয়। কঠিন শপথ করে কোনাহানাসাকুয়া। যদি সত্যিই সে নিনিগির বিশ্বাস ভঙ্গ করে থাকে, তবে তার মৃত্যু হবে। আগুনে ঢেকে যায় গোটা গৃহ। জন্মগ্রহণ করে সন্তানেরা, বেঁচে যায় স্ত্রী। অযথা সন্দেহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে নিনিগি। তাদের ঘরে জন্ম নেয়া তিন পুত্রের নাম হোদেরি, হোসুসেরি এবং হুরি। হোদেরিকে জাদুর মাছ ধরার হুক উপহার দিয়ে নাবিকদের অধিপতি মনোনীত করেন নিনিগি। জাদুর ধনুক উপহার দিয়ে হুরিকে মনোনীত করা হয় শিকারিদের নেতা। এই সূত্র ধরেই পরবর্তী প্রজন্মে শুরু হয় ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। অবশ্য হুরিই দিন শেষে রাজক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করেন। খ্রিষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকে জাপানের সম্রাট জিম্মু ছিলেন তার নাতি। যাই হোক, হোদেরিকে গণ্য করা হয় হায়াতো জনগোষ্ঠীর আদি পিতা হিসেবে। অন্যদিকে ইয়ামাত জনগোষ্ঠীর পূর্বপুরুষ হুরি। ফলে উভয় শিকড় গিয়ে মিলিত হয়েছে নিনিগির রক্তে।
তারপর
রাইজিনকে প্রাথমিকভাবে চীনা বজ্রদেবতা লেইকংয়ের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ বলে মনে হয়। ভারতীয় বৃষ্টির দেবতা পার্জন্য এবং সেমেটিক ঝড়ের দেবতা এলকে এই প্রসঙ্গে উদ্ধৃত করা যেতে পারে। একইভাবে নর্স পুরাণের থর, গ্রিসের জিউস এবং কেল্টিক টারানিসের সাথেও রয়েছে অদ্ভুত মিল। মধ্য এশিয়ার বুক জুড়ে দীর্ঘ সময় বায়ুর দেবতা সমাদৃত ছিল। হেলেনেস্টিক যুগে গ্রিক প্রভাবও কম ছিল না। গ্রিক পুরাণে বিবৃত উত্তর বাতাসের দেবতা বোরিয়াস এখানে বিস্তৃত হয় ওয়ার্দো নামে। প্রাচীন চীনের শিল্প ও সংস্কৃতিতে ওয়ার্দোর উপস্থিতি দৃশ্যমান। জাপানি পুরাণের দেবতা ফুজিন বড় পরিসরে সেই বোরিয়াস বা ওয়ার্দোরই নিজস্ব সংস্করণ। ভোরের দেবী উজুমেকে পাঠ করা যায় ভারতীয় দেবী ঊষার পাশাপাশি রেখে। ঠিক একইভাবে ইনারির সাথে গ্রিক দেবী দিমিতির, নর্স দেবী ফ্রেয়া এবং ভারতীয় বৌদ্ধধর্মে স্থিত ডাকিনীর ধারণা সাদৃশ্যপূর্ণ।
ইব্রাহিমি ঐতিহ্য মতে, জান্নাত থেকে শয়তান কিংবা শয়তানের প্ররোচনায় আদম পতিত হয়েছেন। উভয় ক্ষেত্রেই পাপের ধারণা বিদ্যমান। জাপানি শিন্টো ধর্মে এই ধারণা অনুপস্থিত। কারণ নিনিগি দুনিয়ায় কোনো পাপের শাস্তি হিসেবে আগমন করেননি। করেছেন মহান উদ্দেশ্য নিয়ে। এক্ষেত্রে বরং নিনিগির সাথে গ্রিক চরিত্রে প্রমিথিউসের সাদৃশ্য। যিনি সভ্যতা টিকিয়ে রাখতে বিপ্লবের জন্ম দিয়েছেন। নিনিগি যেখানে কৃষির পত্তন ঘটান, প্রমিথিউস সেখানে শুরু করেন আগুন ব্যবহারের। পাঠ করার সুবিধার জন্য না হলে এই তুলনা অবশ্যই অন্যায়। কারণ জাপানি পুরাণের স্বাতন্ত্র্য অনেক দিক থেকেই ছাপিয়ে গেছে।