Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

গ্রিক পুরাণে বর্ণিত পৃথিবী সৃষ্টির রহস্য: মানুষের আগমন

আগের পর্ব থেকে আমরা জেনেছি যে, কীভাবে টাইটানদের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে অলিম্পিয়ানরা মর্ত্য এবং স্বর্গের অধিপতি হয়ে গেলেন। কিন্তু তার মানে নয় যে, জিউসের জন্য প্রতিযোগিতা শেষ হয়ে গিয়েছে। জিউসকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য জায়ান্টগণ, যারা ক্রনাসের রক্ত থেকে জন্ম নিয়েছিলেন, তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন। কিন্তু জিউস ততদিনে দেবরাজ। সামান্য জায়ান্টরা তার কিছুই করতে পারলো না। জায়ান্টদের সাথে লড়াইয়ে জিউসকে সাহায্য করেছিলেন তার পুত্র হারকিউলিস বা হেরাক্লিস।

টাইফোনের জন্ম

টাইফোন ছিলেন গায়ার সর্বশেষ, সবচেয়ে ভয়ংকর ও ধ্বংসপ্রিয় পুত্র। তবে অনেক ঐতিহাসিক টাইফোনকে শুধু হেরার পুত্রও বলে থাকেন। টাইফোনের পিতা ছিল টারটারাস। বলা হয়, এত ধ্বংসলীলা দেখে এবং নিজের সন্তান জায়েন্টদের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতেই গায়া-টারটারাস টাইফোনের জন্ম দেন। হেসিওড টাইফোনের অবয়ব ব্যাখ্যা করেন এভাবে-

এক জ্বলন্ত দানব যার রয়েছে একশত মাথা,
যে ক্ষেপে উঠলো সকল দেবতার বিরুদ্ধে।
তার বিকট চোয়াল থেকে বেরিয়ে আসতো মৃত্যু-ঘণ্টা,
তার চোখ থেকে নির্গত হতো চোখ-ধাঁধানো আগুন।

ভয়ংকর টাইফোন; Image Source: artstation.com

যেমনটি অন্য সব টাইটান এবং দানবরা করতে চেয়েছে, তেমনি টাইফোনও চেয়ে বসলেন জিউসের আসন। টাইফোন ও জিউসের মধ্যে সংঘটিত হলো এক ভয়ংকর যুদ্ধ। জিউসের নিয়ন্ত্রণে ছিল আলোকসম্পাত ও বজ্রপাতের শক্তি। তিনি একের পর এক বজ্র নিক্ষেপ করে টাইফোনকে মাটির একেবারে গভীরে পাঠিয়ে দিলেন, যেখান থেকে নির্গত হতে থাকলো অগ্নি। এভাবেই টাইফোন পরিণত হলো সিসিলির বিখ্যাত মাউন্ট এটনার আগ্নেয়গিরিতে। পরাজিত টাইটানদেরও দেবরাজ ছেড়ে দেননি। প্রত্যেককে টারটারাসে বন্দী করে রাখলেন এবং হেকটানকিরসদের রাখলেন পাহারায়। প্রমিথিউসের ভাই অ্যাটলাস, যিনি টাইটানদের প্রতিনিধি ছিলেন, তাকে দিলেন সর্বোচ্চ শাস্তি। রাত ও দিনের মিলনে যাতে টাইফোন বা অন্য কোনো সন্তান জন্ম নিতে না পারে সেই ব্যবস্থা করলেন জিউস।

তিনি অ্যাটলাসকে বললেন, সমস্ত পৃথিবীর ভার বহন করতে। পৃথিবীর যে স্থানে রাত ও দিনের রেখা ম্লান হয়ে যায় সেখানে অ্যাটলাসকে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। তার পিঠে থাকবে স্বর্গের খিলানগুলোর ভার। তিনি আজীবন স্বর্গ আর মর্ত্যকে একে অপর থেকে দূরে রাখবেন।

কিমেরিয়ান ও হাইপারবোরিয়ান

যখন সকল দানব, টাইটান এবং টাইফোনও ধ্বংস হয়ে গেলেন, তখন ধরিত্রী মাতা তৈরি হলেন কিছু মানুষ জন্ম দেওয়ার জন্য। গ্রিকরা পৃথিবীকে একটি গোলাকার চাকতির মতো ভাবতো, যার মাঝ বরাবর চলে গেছে একটি সাগর (ভূমধ্যসাগর)। পূর্বেই উল্লেখ করেছি, পৃথিবীর চারদিকে সদা বহমান ছিল এক সমুদ্র, যেটি ছিল শান্ত। এতে ছিল না কোনো বায়ুপ্রবাহ বা স্রোত।

সেই সমুদ্রকে ঘিরে ধীরে ধীরে জনপদ গড়ে ওঠে। সেই জনপদের প্রায় সকলেই ছিলেন দেবতাদের প্রিয় এবং তাদের জীবনে ছিল না কোনো দুঃখ, জরা, মৃত্যু। তারা সারাক্ষণ মেতে থাকতেন আমোদ-আহ্লাদে (হাইপারবোনিয়ান ও পরে ইথিয়পিয়ানরা)। শুধু দুর্ভাগা ছিলেন কিমেরিয়ানগণ। তারা সমুদ্রের এমন উপকূলে বাস করতেন যেখানে কোনোদিন দিবালোক দেখা যেতো না। তাদের আবাসস্থল আসলে কোথায় তাও ঠিক করে জানা যায়নি।

পৃথিবী তৈরির শেষ ধাপ: মানুষ তৈরির ক্ষেত্রে ৩টি প্রচলিত ধারণা

কী করে পৃথিবীতে মানুষ ও তাদের বংশধররা বিচরণ করা শুরু করলো তা নিয়ে বিভিন্ন কাহিনী প্রচলিত আছে। এমনি একটি কাহিনী প্রমিথিউস ও এপিমিথিউসের।

এপিমিথিউস ও প্রমিথিউস

আগেই বলা হয়েছে, প্রমিথিউস ছিলেন অ্যাটলাসের ভাই, ইপেটাস ও ক্লাইমেনির পুত্র। তিনি ছিলেন এমন একজন টাইটান, যাকে মানবজাতির বড় বন্ধু বলা হয়। প্রমিথিউসের, যার নামের অর্থ ছিল ‘দূরদর্শিতা’, ছিলেন আরেকজন ভাই। নাম এপিমিথিউস। এপমিথিউস ছিলেন প্রমিথিউসের উল্টো। তার নামের অর্থ ছিল অপরিণামদর্শী। তিনি সবসময়ই খুব দ্রুত এবং চিন্তা না করেই সিদ্ধান্ত নিতেন এবং কথার বরখেলাপ করতেন।

মানুষের জন্য আগুন নিচ্ছেন প্রমিথিউস; Image Source: tooeleonline.com

সেই অপরিণামদর্শী এপিমিথিউসকেই মানুষ ও প্রাণীকূল সৃষ্টির দায়িত্ব দেওয়া হলো। কিন্তু তিনি তো ভেবেচিন্তে কাজ করেন না। তাই তিনি তার সমস্ত প্রজ্ঞা, ক্ষিপ্রতা, শক্তি, সাহস দিয়ে দিলেন জীবজন্তুদের। তাদেরকে আত্মরক্ষার জন্য দিয়ে দিলেন পশম, ডানা, পালক ইত্যাদি। যখন মানুষ তৈরির পালা এলো, তখন তার ঝুলি তখন শূন্য। সুতরাং, মানুষ তৈরি হলো কোনোপ্রকার দৈহিক রক্ষাকবচ ছাড়া একেবারে অরক্ষিত, দুর্বল বেশে। এপিমিথিউস প্রতিবারের মতো তার ভুল বুঝতে পারলেন। এপিমিথিউস দুঃখভরে ব্যাপারটি প্রমিথিউসকে জানালেন। প্রমিথিউস এই ক্ষতিপূরণের জন্য মানুষকে দিলেন সবচেয়ে সুন্দর আকৃতি। দেবতাদের আকৃতি। সুতরাং বলা যায় যে, গ্রীকদের মতে, মানুষ দেবতাদের মানুষের আকৃতি দেয়নি, বরং দেবতারাই মানুষকে তাদের আকৃতি দিয়েছেন।

প্রমিথিউস শুধু আকৃতিই দিলেন না, বরং সূর্যের কাছ থেকে মানুষের জন্য চুরি করে নিয়ে এলেন আগুন। মানুষের যেহেতু ছিল না কোনো ধারালো চোয়াল বা প্রাকৃতিক রক্ষাকবচ তাই প্রমিথিউস মানুষকে আত্মরক্ষা এবং জীবিকার জন্য দিলেন আগুনের আশীর্বাদ।

প্রমিথিউসের উপর জিউসের ক্রোধ: প্যাণ্ডোরার সৃষ্টি

যদিও প্রমিথিউস টাইটান যুদ্ধে স্বজাতির বিরুদ্ধে গিয়ে জিউসকে সাহায্য করেছিলেন, তথাপি জিউস তার ঋণ ভুলে গেলেন। গ্রীক পুরাণে এমন অসংখ্য কাহিনী আছে যেখানে দেবতারা খুবই অযৌক্তিক এবং নিষ্ঠুর শাস্তি প্রদান করেন। যখনি কোনো মরণশীল বা অমর কেউ দেবতাদের সমকক্ষতা লাভের চেষ্টা করে, তখনি তারা ক্রোধান্বিত হয়ে ওঠেন। এক্ষেত্রে গ্রীকপূর্ব দানবীয় দেবতাদের সাথে গ্রীক দেবতাদের মিল পাওয়া যায়। যাই হোক, প্রমিথিউস যেহেতু মানুষের বন্ধু ছিলেন এবং মানুষকে স্বয়ং দেবতার আকৃতি দেওয়ার ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন তখন স্বাভাবিকভাবেই দেবরাজ জিউস প্রমিথিউসকে আর ভালো চোখে দেখেননি। তার ক্রোধ আরও চরমে উঠলো যেদিন প্রমিথিউস তাকে বোকা বানালেন।

প্রমিথিউস একদা একটি বিশাল ষাঁড় জবাই করলেন। এর উৎকৃষ্ট অংশটুকুর উপর নাড়িভুঁড়ি ছিটিয়ে তা লুকিয়ে ফেললেন। আর হাড়গুলোর উপর চর্বির স্তুপ ঢেলে দিলেন। যখন জিউসকে এদের মধ্য থেকে একটি বাছাই করতে বলা হলো তখন স্বভাবতই জিউস চর্বিযুক্ত স্তুপের দিকে অঙ্গুলি তাক করলেন। কিন্তু পরে যখন দেখলেন যে, চর্বির নিচে আছে শুধুই হাড়গোড় তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। তিনি তার কথার ব্যত্যয় করতে পারবেন না। একারণেই যখনি দেবতাদের জন্য পশু বলি দেয়া হয়, মানুষ পায় উৎকৃষ্ট অংশটুকু আর দেবতাদের উৎসর্গ করা হয় অবশিষ্টটুকু।

বিশ্বের একাধিপতিকে বোকা বানানোর জন্য বেশ কড়া শাস্তিই ভোগ করতে হয়েছে মানুষকে এবং প্রমিথিউসকে। প্রমিথিউসকে শাস্তি হিসেবে ককেশাসে বন্দী করার জন্য জিউস পাঠালেন তার দুই ভৃত্য ‘ফোর্স’ এবং ‘ভায়োলেন্স’কে। ককেশাস পর্বতে প্রমিথিউসকে আজীবনের জন্য একটি পাথরের সাথে বেঁধে রাখা হয়। জিউসের আদেশে একটি ঈগল প্রতিদিন এসে প্রমিথিউসের যকৃত ভক্ষণ করে। পরদিন সেই যকৃত আবারো গজায়, আবারো ঈগলটি এসে তা খায়। শোনা যায়, পরবর্তীতে হারকিউলিস জিউসেরই নির্দেশে প্রমিথিউসকে মুক্ত করেন

প্রমিথিউসকে শাস্তি দেওয়ার আরেকটি বড় কারণ ছিল, প্রমিথিউস জানতেন জিউসের কোনো এক সন্তান তাকে ক্ষমতাচ্যুত করবে। জিউস প্রায়ই তার পুত্র, দেবতাদের বার্তাবাহক হারমিসকে পাঠাতেন যদি প্রমিথিউসের মুখ থেকে কিছু শোনো যায় সেই উদ্দেশ্যে। কিন্তু প্রমিথিউস কোনোদিন মুখ খোলেননি। মানুষের উপরও জিউস চটেছিলেন। প্রমিথিউসের কারণেই মানুষ পেল দেবতার আকৃতি এবং সূর্য দেবতার শক্তি, আগুন। এই আগুনের কারণে মনুষ্য সভ্যতা কয়েকশো বছর এগিয়ে গেল। দেবরাজ চাইতেন মানুষ তাকে ভয় করুক, উপাসনা করুক এবং তার দয়ায় বেঁচে থাকুক।

প্রমিথিউস যেমন মানুষকে দিলেন শক্তি তেমনি তিনি মানুষের আরাম আয়েশও কেড়ে নিলেন। ইতিপূর্বে মানুষকে জীবিকা নির্বাহের জন্য সারাবছর কষ্ট করতে হতো না। দেবরাজ যে ফসল ফলাতেন তা দিয়ে তাদের দিব্যি চলে যেত। কিন্তু এখন মানুষকে নিজের অন্ন নিজেরই যোগাঢ় করতে হয়। এছাড়াও মানুষকে শায়েস্তা করার জন্য দেবরাজ তৈরি করলেন একজন নারীকে। এর পূর্বে পুরাণে কোথাও নারীদের উল্লেখ ছিল না। জিউস নারীকে তৈরি করলেন যাতে মানুষের জীবনে নেমে আসে চরম হতাশা, কষ্ট, দুঃখ ও পাপাচার।

নারীকে জিউস অত্যন্ত সুন্দর ও লাজুক করে তৈরি করলেন এবং নাম দিলেন প্যাণ্ডোরা। প্যাণ্ডোরাকে স্বাগত জানানোর জন্য জিউস সকল দেবতাদেরকে একটি বাক্স দিয়ে এতে সকল অশুভ শক্তি ভরে প্যাণ্ডোরাকে উপহার দিতে বলেন। প্যাণ্ডোরা শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘সকলের উপহারের সমন্বয়’। জিউস প্যাণ্ডোরাকে এপিমিথিউসের সাথে বিয়ে দিলেন। প্রমিথিউস এপিমিথিউসকে নিষেধ করেছিলেন দেবতাদের কাছ থেকে উপহার নিতে, কিন্তু এপিমিথিউস যথারীতি তা ভুলে গেলেন এবং প্যাণ্ডোরাকে বিয়ে করেলন। দেবতারা প্যাণ্ডোরাকে যে উপহারের বাক্স দিয়েছিলেন তা তাকে কোনোদিন খুলতে বারণ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জিউস তো এটিই চাইছিলেন।

প্যাণ্ডোরা; Image Source: apessay.com

গ্রীক পুরাণ মতে, নারীদের অত্যুৎসাহিতাই মানুষের সকল দুঃখ দুর্দশার কারণ। প্যাণ্ডোরা লোভ সংবরণ না করতে পেরে বাক্সটি খুলে ফেলেন এবং মানুষের জন্য নিয়ে আসেন মৃত্যু, হতাশা, পাপ আরও যেসব অশুভ জিনিস আছে, সব। কিন্তু এত অশুভের মধ্যে শুধু একটি জিনিসই ঐ বাক্সে ভালো ছিল, তা ছিল ‘আশা’। যার কারণে মানবজীবনে এত হতাশার মধ্যেও তারা বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করে।

মানুষ সৃষ্টির পঞ্চযুগ ও দিউক্যালিওন- পিরা উপাখ্যান

মানুষ সৃষ্টির আরেকটি প্রচলিত কাহিনী হলো, যখন যুদ্ধ হাঙ্গামা বলতে কিছু ছিল না, তখন দেবতারা স্বর্গে বসে একটু ঝিমিয়েই পড়ছিলেন। তাই তারা পৃথিবীর বিভিন্ন ধাতব পদার্থ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন। তারা প্রথমে তৈরি করেন স্বর্ণের মানুষ। তারা মরণশীল হলেও তাদের জীবন দেবতাদের মতোই ছিল নির্বিঘ্ন, দুঃখকষ্টহীন সুখের জীবন। তাদের খাবারেরও অভাব ছিল না। মৃত্যুর পর কবরস্থ করা হলেও তাদের আত্মা থাকতো অমর। মৃতের আত্মা জীবিতদের সহায়তা করতো। এরপরে তারা অধঃক্রমে নেমে এলেন রুপার মানুষের দিকে। তারা স্বর্ণ প্রজাতির মতো ছিল না। বরং ছিল খুবই নিম্ন বুদ্ধির। তারা একে অপরের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে মারা গেল। তাদের আত্মাও তাদের সাথে ধ্বংস হয়ে গেল।

এরপর এলো তাম্রপ্রজাতির মানুষ। তারা রৌপ্য প্রজাতি থেকে ছিল আরও ভয়ংকর ও শক্তিশালী। এরা ছিল প্রচণ্ড যুদ্ধ প্রিয়। তাদেরকে বিতারিত করার জন্যই চতুর্থ যুগে জন্ম নিলেন কিছু বীর প্রজাতির মানুষ। তারা গৌরবময় ও দুঃসাহসিক সব অভিযানে অংশ নিলেন। যখন সব বিশৃঙ্খলা থামলো তখন দেবতারা তাদের পাঠিয়ে দিলেন এক দ্বীপে যেখানে তারা সুখে শান্তিতে বাস করতে লাগলেন। সর্বশেষ যুগে এলো লৌহপ্রজাতির মানুষ। এরাই নিকৃষ্টতম সৃষ্টি এবং যারা এখনো টিকে আছে। তাদের নেই কোনো সৎসাহস। যতদিন তারা বেঁচে থাকবে অধম থেকে অধমতর হবে। পাপাচার, কষ্ট, পরিশ্রমে ভরা থাকবে তাদের জীবন। তারা উত্তমকে ত্যাগ করে শক্তির পূজা করবে। সৎচ্চরিত্র ব্যক্তির কোনো মূল্য থাকবে না। অনেকটা আইয়আমে জাহেলিয়াত যুগের মতোই।

অবশেষে যেদিন এদের মধ্যে আর কেউই থাকবে না যে অন্যায়ের প্রতিবাদ করে, সেদিন জিউস তাদেরকে ধ্বংস করে দিবেন।

পিরা ও ডিওক্যালিয়ন পাথর ছুঁড়ছেন; Image Source: greekmythology.blogspot.com

পঞ্চযুগের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ আরেকটি কাহিনী মতে, আসলেই যখন লৌহ যুগে পাপাচার চরমে উঠেছিল তখন জিউস তার ভাই সমুদ্র দেবতা পোসাইডনের সাহায্য নিয়ে তৈরি করলেন এক মহাপ্লাবন। যেমনটির বর্ণনা আছে ইসলাম ও খ্রিস্টীয় ধর্মে নূহ (আঃ) এর ক্ষেত্রে। সেই প্লাবনে মাঠঘাট, পশুপাখি সব বিদীর্ণ হয়ে গেল। কিন্তুপারন্যাসাস নামক স্থানই একামাত্র প্লাবিত হলো না। প্রমিথিউসের সন্তান ডিওক্যালিয়ন ও এপিমিথিউস ও প্যাণ্ডোরার কন্যা পিরাকে প্রমিথিউস এব্যাপারে আগেই জানিয়েছিলেন। কীভাবে তার কোনো ব্যাখ্যা নেই। প্রমিথিউস তাদেরকে একটি বাক্স বানাতে বলেছিলেন। ভাগ্যিস বাক্স বানানো ছিল। ডিওক্যালিয়ন ও তার স্ত্রী পিরা বন্যা থেকে বাঁচতে সেই বাক্সে চড়ে বসলেন। বাক্স পারন্যাসাসে থামল। দেবতারা সদয় হয়ে বন্যা থামালেন। কারণ পিরা ও ডিওক্যালিয়ন ছিলেন ধার্মিক। তারা দু’জন বাক্স থেকে নেমে দেখলেন কোনোদিকে প্রাণের চিহ্ন নেই।

কিছুদূর যাওয়ার পর তারা একটি স্যাঁতসেঁতে মন্দির দেখতে পেলেন। সেখানে গিয়ে মাথা নত করার সাথে সাথে তারা আদেশ শুনতে পেলেন, “তোমার মাথা অবগুণ্ঠিত করো এবং তোমাদের পেছনে নিক্ষেপ করো তোমাদের মায়ের অস্থিগুলো”। তারা ভয় পেলেন কিন্তু ডিওক্যালিয়ন তার অর্থ করলেন এভাবে, ধরিত্রী গায়া তাদের মা এবং চারদিকে ছড়ানো পাথরগুলোই তার অস্থি। সুতরাং তারা তাদের পিছনে মাটিতে পড়ে থাকা পাথরগুলো নিক্ষেপ করলেন এবং এই পাথরগুলো থেকেই আমরা, মানে মানুষরা জন্ম নিলাম।

তথ্যসূত্র:

Mythology: Edith Hamilton (1942)

ফিচার ইমেজ – greekmythology.wikia.com

Related Articles