সিন্ডারেলার গল্প কে না জানে? বাবা মারা যাবার পরে সৎমা আর বোনদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল সিন্ডারেলা। একদিন তাকে রেখে সবাই চলে গেল রাজপ্রাসাদের এক অনুষ্ঠানে। ঠিক সেই সময় এসে উপস্থিত হল সিন্ডারেলার পরীমা। জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় সিন্ডারেলার শতছিন্ন কাপড় পরিণত হলো মূল্যবান আর অসাধারণ এক পোশাকে।
পদযুগল আবৃত করার জন্য পরীমা তাকে দিলেন কাচের জুতো (Glass Slipper)। সিন্ডারেলা চলে গেল প্রাসাদে, রাজপুত্র তাকে দেখেই মুগ্ধ হয়ে গেল। কিন্তু পরীমার জাদুর স্থায়িত্ব ছিল কেবল মধ্যরাত অবধি। কাজেই বারোটার ঘণ্টা বাজতে বাজতেই সিন্ডারেলা অন্তর্হিত হলো, ভুলে ফেলে গেল একপায়ের জুতো। সেই জুতো দিয়েই রাজপুত্র তাকে খুঁজে বের করে। তারপর রূপকথার গল্পে সাধারণত যেমন হয়, তেমনই সবাই সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগল।
এই কাহিনী নিয়েই ডিজনি ১৯৫০ সালে তৈরি করে তাদের বিখ্যাত অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র, যা পরে ২০১৫-তে লাইভ অ্যাকশন হিসেবে পুনর্নির্মিত হয়। ডিজনি তাদের কাহিনী সাজিয়েছিল ফরাসি গল্পকার পেরাল্ট (Charles Perrault) রচিত সিন্ডারেলা পরিমার্জিত করে। ১৬৯৭ সালে প্রকাশিত পেরাল্টার গল্পগ্রন্থ “স্টোরিস অফ পাস্ট টাইমস উইথ মোর্যালস” (Histoires ou contes du temps passé) এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত সিন্ডারেলার কাহিনী সম্ভবত সবচেয়ে পরিচিত এবং সর্বাধিক পঠিত। কিন্তু এই কাহিনী চলে আসছে তারও বহু আগে থেকে, যেখানে চরিত্রের নাম বাদ দিলে গল্পের মূল সুর একই। অধিকাংশই মনে করেন, সিন্ডারেলার সবচেয়ে প্রাচীন রূপ পাওয়া যায় মিশরীয় একটি গল্পে।
মিশরীয় সিন্ডারেলা
সুপ্রাচীন মিশরের সিন্ডারেলার গল্প আমাদের শুনিয়েছেন ভূতাত্ত্বিক স্ট্র্যাবো (Strabon)। তার জীবনকাল ছিল ৬৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ২৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। তার গ্রন্থ জিওগ্রাফিকা’র (Geographika) দ্বিতীয় খন্ডে তিনি এই কাহিনীর অবতারণা করেন। জিওগ্রাফিকা’র প্রথম খন্ড সাত খ্রিস্টাব্দে বের হলেও দ্বিতীয় খণ্ড কবে প্রথম প্রকাশিত হয় তা জানা যায়নি, তবে নিশ্চিতভাবেই তা ২৪ খ্রিস্টাব্দের আগে।
স্ট্র্যাবোর গল্পের সিন্ডারেলার নাম রোডোপিস (Rhodopis), অনিন্দ্যসুন্দরী এক গ্রীক তরুণী। তার গায়ের চামড়া ফ্যাকাশে, দিঘলকেশ উজ্জ্বল লাল বর্ণের, আর চোখ যেন পান্নার মতো। রোডোন (rhódon) নামের অর্থ হচ্ছে গোলাপ, আর পিস-এর অর্থ করা যায় চোখ। নাম থেকে বোঝা যায় গোলাপের মতোই কমনীয় ছিল তার চোখজোড়া।
তরুণী রোডোপিস
রোডোপিসের জন্ম এমন একসময়ে, যখন সাগরে জলদস্যুদের রাজত্ব। সুন্দরী রোডোপিস একদিন ছাগল চড়াচ্ছিল, তখন এক দস্যুর চোখ পড়ল তার উপর। জহুরি চোখ বুঝল এই মেয়েকে বিক্রি করতে পারলে ভাল লাভ হবে। ফলে জলদস্যুদের দল তাকে অপহরণ করে। রোডোপিসের ঠিকানা হয় অজানা এক দ্বীপে, ধনবান এক দাসমালিকের সম্পদ হিসেবে। এখানে তার সাথে পরিচয় হয় এক গল্প বলিয়ে দাসের, ঈশপ। তার কাছ থেকে রোডোপিস শিখল গান।
রোডোপিস আর ঈশপ বেশি দিন একসাথে থাকার সুযোগ পেল না। গ্রীক তরুণীকে তার মালিকের পছন্দ হচ্ছিল না, ফলে তাকে মিশরের নুক্রাটিস (Naukratis) শহরে নিয়ে বিক্রি করে দেয়া হলো। তার নতুন মালিক হলেন এক গ্রীক বনিক চ্যারাক্সোস (Charaxos)। দয়ালু এই বৃদ্ধ তার প্রতি সদয় ছিলেন, যার ফলে রোডোপিস বাসার অন্যান্য দাসি, বিশেষ করে তিন মিশরীয় বোনের চক্ষুশূল হয়ে উঠল। চ্যারাক্সোসের অগোচরে নিজেদের সমস্ত কাজ তারা রোডোপিসের ঘাড়ে চাপাতে লাগল। হতভাগা রোডোপিস সবার কাজের ঘানি টানতে লাগল একাই।
একাকী রোডোপিসের সঙ্গী ছিল পশুপাখিরা। তারা তাকে সেভাবেই ভালবাসত, যেমন রোডোপিস তাদের ভালবাসত। নীলনদের তীরে গেলেই একটি বানর তার কাঁধে চেপে বসত, নির্ভয়ে পাখিরা খাবার খেত তার হাত থেকে। নদীর জলহস্তি ডাঙায় উঠে আসত শুধু তার সঙ্গী হতে। কাজ শেষে প্রতিদিন রোডোপিস তাই নদীর ধারে চলে যেতে, সেখানে বন্ধু পশুপাখিদের সাথে নেচে গেয়ে চেষ্টা করত নিজের দুর্ভাগ্যকে ভুলে থাকার।
একদিন আবহাওয়া ছিল অত্যন্ত চমৎকার। শীতল আরামদায়ক বাতাসে সবার প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছিল। প্রকৃতির শোভা উপভোগ করতে চ্যারাক্সোস চলে গিয়েছিলেন নদীতীরে, সেখানে এক গাছের নিচেই তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। হঠাৎই তার ঘুম ভেঙে গেল। প্রথমে তিনি বুঝতে পারলেন না কেন। এরপর তার কানে ভেসে এলো জলতরঙ্গের মতো মিষ্টি কণ্ঠ। শব্দ অনুসরণ করে তিনি দেখতে পেলেন রোডোপিসকে, পশুপাখিদের দর্শক বানিয়ে সে গাইছে অপূর্ব গান। বিমোহিত চ্যারাক্সোস তার দাসীকে পুরস্কার দিতে মহামূল্যবান একজোড়া জুতো বানালেন। সেই জুতো ছিল নরম আর গোলাপের মতো লাল, মিশরের অভিজাত মহিলারাও এত অসাধারণ জুতো কখনও পায়ে দেয়নি। চ্যারাক্সোস রোডোপিসকে এই জুতোজোড়া উপহার দিলেন। ফলে বাসার অন্য দাসীরা তার প্রতি আরো বিরূপ হয়ে উঠল।
রাজকীয় অনুষ্ঠান
মিশরের ক্ষমতার কেন্দ্র তখন মেম্ফিস। মহাক্ষমতাবান ফারাও অ্যামাসিস (Amasis) ঘোষণা দিলেন, তিনি রাজদরবারে আয়োজন করতে যাচ্ছেন এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান। সেখানে থাকবে নাচ, গান আর নানা বিনোদনের ব্যবস্থা। মিশরের সমস্ত অভিজাতবর্গ আমন্ত্রিত হলেন, যার মধ্যে ছিলেন চ্যারাক্সোসও। তিনি ফয়সালা করলেন তার দাসদাসীদের সাথে নিয়ে যাবার, যাতে তারা সেখানে সবাইকে আনন্দ দিতে পারে। রোডোপিসের খুব ইচ্ছা ছিল অনুষ্ঠানে গিয়ে নেচে-গেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেবার। কিন্তু কুটিল দাসীরা তা আর হতে দিল কই। তারা নিজেদের অনুপস্থিতির ছুতো দেখিয়ে রোডোপিসের হাতে একশ একটা কাজ ধরিয়ে দিল, জানাল, মনিব এসব অবিলম্বে সুসম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন। অগত্যা রোডোপিস রয়ে গেল, চেয়ে চেয়ে দেখল মনিবের জাহাজ নীলনদ ধরে মেম্ফিসের দিকে চলে যাচ্ছে।
সবাই চলে গেলে নিঃসঙ্গ রোডোপিস ময়লা কাপড় ধুতে নদীর পাড়ে চলে এলো। কাপড় ভিজিয়ে সজোরে আছড়াতে আছড়াতে গান গাইতে লাগল সে। তার পায়ে ছিল মালিকের দেয়া সেই জুতো। কাপড়ের ছিটকে আসা পানিতে জুতো ভিজে গেলে রোডোপিস তা খুলে রেখে দিয়ে আবার কাজে মনোনিবেশ করল। মতান্তরে সে গোসল করতে নেমে জুতো খুলে তীরে রেখে এসেছিল।কিন্তু এ কী! তার খুলে রাখা একপাটি জুতো মুহূর্তেই ছোঁ মেরে নিয়ে গেল এক বাজপাখি (মতান্তরে ঈগল)। রোডোপিস হায় হায় করে উঠল। কিন্তু সে বুঝতে পারল এই বাজপাখি হচ্ছে দেবতা হোরাসের প্রতিরূপ (প্রাচীন মিশরীয় বিশ্বাসে বাজপাখি হোরাসের প্রতীক)। কাজেই দেবতার উপর ভাগ্য ছেড়ে দিয়ে অন্য পাটি সে জামার তলে লুকিয়ে ফেলল।
এদিকে মেম্ফিসের রাজরবারে বসে ফারাও বিরক্তচোখে দেখছিলেন রাজকীয় অনুষ্ঠান। তিনি মনে করেছিলেন, এতে তার মন প্রফুল্ল হবে। কিন্তু কীসের কী। কিছুই ভাল্লাগে না! হঠাৎ করেই তার মাথার উপর উড়ে এলো এক বাজপাখি, তার ঠোঁট থেকে খসে পড়ল লাল একপাটি জুতো। সেই জুতো আবার এসে পড়ল ঠিক রাজার কোলে। জুতো ফেলে বাজ পগার পার, তার কাজ শেষ হয়ে গেছে।
প্রতিদিন তো রাজার কোলে জুতো এসে পড়ে না। আবার বাজপাখি জুতো ফেলে দিয়ে যাবার ঘটনাও ঘটে না। রোডোপিসের মতো অ্যামাসিসও বুঝে গেলেন এ দেবতা হোরাসেরই ইঙ্গিত। দেবতার ইশারা মানেই আদেশ, আর ফারাওয়ের জন্য সেই আদেশ শিরোধার্য। অ্যামসিস সাথে সাথে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিলেন। তিনি আদেশ জারি করলেন মিশরের সমস্ত কুমারি মেয়েকে এই জুতো পরে দেখতে হবে। যার পায়ে জুতো খাপ খাবে তাকেই তিনি করবেন নিজের স্ত্রী, মিশরের রানী। চ্যারাক্সোস এসে পৌঁছতে পৌছতেই অনুষ্ঠান তাই শেষ হয়ে গেল।
রোডোপিস-মিশরের রানী
মিশরের সব শহর-নগর খুঁজে রাজার লোকেরা তামা তামা করে ফেলল। কিন্তু খোঁজ মিলল না সেই কুমারীর, দেবতা হোরাসের ইচ্ছায় যে হবে অ্যামাসিসের ভাবি বধূ। এবার অ্যামাসিস নীলের বুকে জাহাজ ভাসালেন, চলার পথে প্রতিটি বন্দরে থেমে পরীক্ষা করতে লাগলেন কারো পায়ে জুতো লাগে কি না।
রোডোপিস একদিন নদীতে কাপড় ধুচ্ছিল। এমন সময় বেজে উঠল রাজকীয় শিঙ্গা। ফারাওয়ের জাহাজের রেশমি বেগুনি পাল ভেসে উঠল দিগন্তে। ভীতচকিত রোডোপিস জঙ্গলে গিয়ে লুকালো, তার জানা ছিল না ফারাও তারই জুতো নিয়ে এর মালিকের সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। চ্যারাক্সোস অ্যামসিসকে মহাসমারোহে অভ্যর্থনা জানালেন। তার ঘরের সমস্ত কুমারী চলল জুতো পায়ে দিয়ে নিজেদের অ্যামসিসের রানী প্রমাণ করতে। চ্যারাক্সোস জুতো দেখেননি, তবে তার ঘরের দাসীরা দেখেই বুঝে ফেলল এই জুতো কার। কিন্তু ঈর্ষার জ্বালায় কেউই মুখ খুলল না। বরঞ্চ জোরজবরদস্তি করে জুতোতে পা ঢোকানোর চেষ্টা করে গেল।
কিন্তু রোডোপিসের জুতো তো মেলে না কারো পায়ের মাপে। ফারাও হতাশ হয়ে গেলেন। আর কতদিন দেবতা তাকে এভাবে ঘোরাবেন ভাবতে ভাবতেই তার চোখ পড়ল নলখাগড়ার জঙ্গলে। সেখানে থেকে উঁকি দিচ্ছিল এক তরুণীর মুখ। ফারাও তাকে ডাক দিলেন। পা পা করে এগিয়ে এলো রোডোপিস। অ্যামাসিস তার হাতে তুলে দিলেন সযত্নে বয়ে বেড়ানো লাল সেই জুতো। রোডোপিস পা গলাল জুতোয়, অনায়াসে তা এঁটে গেল। এবার রোডোপিস পোশাকের তল থেকে দ্বিতীয় পাটি বের করে আনল। ফারাও তো আনন্দে দিশেহারা, পেয়ে গেছি। তিনি রোডোপিসকে নিজ স্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করলেন। রোডোপিসের সৌভাগ্যে হিংসায় জ্বলতে থাকা সবাই প্রতিবাদ করল, এই মেয়ে এক দাসী মাত্র, তাছাড়া সে তো মিশরীয়ও নয়। ফারাও তাদের বললেন, তার চোখে রোডোপিস অন্যদের থেকে বেশি মিশরীয়, কারণ রোডোপিসের চোখ নীলনদের মতো সবুজ, তার কেশ যেন প্যাপিরাস, আর ত্বক মিশরীয় পদ্মের মতো উজ্জ্বল।
ঐতিহাসিক ভিত্তি
আশ্চর্য হলেও সত্যি, রোডোপিস শুধু কল্পকাহিনীর চরিত্র নয়, ইতিহাসের পাতায়ও তার খোঁজ মেলে। ৪৩১ খ্রিস্টাব্দে রচিত গ্রীক ঐতিহাসিক হেরোডেটাসের “দ্য হিস্টোরিস” বইতে তার উল্লেখ আছে। তবে হেরোডেটাসের রোডোপিস আর স্ট্র্যাবোর রোডোপিসের গল্পের খুব বেশি সাদৃশ্য নেই। অনেকে দাবি করেন হেরোডেটাসের রোডোপিসকে ব্যবহার করে স্ট্র্যাবো তার নিজের মতো গল্প ফেঁদেছিলেন।
হেরোডেটাসের বর্ণনাতে, রোডোপিসের আবাস ছিল নুক্রাটিস শহরে, ফারাও দ্বিতীয় অ্যামাসিসের রাজত্বকালে (৫৭০-৫২৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)। তার কাজ ছিল শহরের ধনী লোকেদের মনোরঞ্জন করা (hetaira)। রোডোপিস নিজেও ছিল সম্পদশালী, আর তার ভক্ত অনুরাগী ছিল সহস্রাধিক। অনেক গ্রীক মনে করেন, গিযার মেঙ্কাউড় (Menkaure) পিরামিড রোডোপিস নিজের জন্যই বানিয়েছিলেন। কিন্তু হেরোডেটাস রোডোপিসের পেশার দিকে ইঙ্গিত করে এই বক্তব্য সম্পূর্ণভাবে নাকচ করে দিয়েছেন।
হেরোডেটাসের ভাষ্যে রোডোপিস থ্রেসিয়ান এক তরুণী, যে প্রথমে ছিল এজিয়ান সাগরের সামোস দ্বীপের বাসিন্দা ইডমনের দাসী। ইডমনের আরেক দাস ছিল ঈশপ, যার ছোট ছোট গল্প কিংবদন্তী হয়ে আছে। ইডমন রোডোপিসকে বিক্রি করে দেয় আরেক দাসমালিক জ্যান্থেসের কাছ, যে তাকে নিয়ে আসে মিশরের নুক্রাটিসে। এখানে রোডোপিসকে দেখেই ভালবেসে ফেলল চ্যারাক্সোস নামে এক গ্রীক। চ্যারাক্সোসের নিবাস ছিল গ্রীসের লেসবস দ্বীপের রাজধানী মাইটিলিনে (Mytilene)। তার বোন নামকরা গ্রীক কবি স্যাফো (Sappho) যাকে তুলনা করা হয় হোমারের সাথে।
চ্যারাক্সোস অনেক দামে রোডোপিসকে কিনে নিয়ে মুক্ত করে দিল, তার আশা ছিল রোডোপিস তার সাথে মাইটিলিনে ফিরে যাবে। কিন্তু রোডোপিস নুক্রাটিসেই ব্যবসা ফেঁদে বসল। চ্যারাক্সোসের হৃদয় ভেঙ্গে দেবার জন্য রোডোপিসকে দায়ী করে স্যাফো কবিতাও লিখেছেন। তবে সেখানে তিনি তাকে সম্বোধন করেছেন ডরিচা (Doricha) নামে। কাজেই চ্যারাক্সোসের সাথে আসলেই রোডোপিসের কোনো সম্পর্ক ছিল কি না তা নিয়ে দ্বিমত আছে, তবে এটাও কেউ কেউ বলেন যে, রোডোপিস হয়তো তার ব্যবসার তাগিদে ডরিচা নাম ব্যবহার করত, বা এটা হয়তো ছিল তার জন্মগত নাম।
ব্যবসা বাড়াতে এবং জাতে ওঠার তাগিদে রোডোপিস ঠিক করল ডেলফিতে অ্যাপোলোর মন্দিরে ওরাকলের কাছে এমন কিছু নিবেদন করবে যা এর আগে কেউ করেনি। তখনকার দিনে সমাজের উঁচু তলায় উঠতে মন্দিরে দান করা খুব স্বাভাবিক ছিল। রোডোপিস কী দান করেছিল আন্দাজ করতে পারবেন? অনেকগুলো লোহার শলাকা, যাতে গেঁথে উৎসর্গীকৃত পশুর মাংস পোড়ান হয়। এতে তার খরচ হয়েছিল যৎসামান্য। কিন্তু এর ফলেও লোকের মুখে তার নাম রটে যায়। তার মৃত্যু হয়েছিল নুক্রাটিসেই, শত-সহস্র ভক্ত তার সমাধির জন্য চাঁদা দেয়।
বিতর্ক
অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন মিশরীয় সিন্ডারেলা হিসেবে রোডোপিসের বিস্তারিত কাহিনী আদতে মিশরীয়ই নয়, এবং এই কাহিনী আসলে মাত্র একশত বছরের পুরাতন। তাদের কথার সমর্থনে তারা তুলে ধরেন, স্ট্র্যাবোর যে বর্ণনার কথা বলা হচ্ছে তা আসলে খুবই সংক্ষিপ্ত। এর ভিত্তিতে যে কাহিনীর অবতারণা করা হয়েছে তার রচয়িতা সত্যিকার অর্থে আমেরিকার ইলিনয়েসের বাসিন্দা অলিভ মিলার (Olive Beaupre Miller, 1883-1968 CE)। তিনি পেরাল্টা আর স্ট্র্যাবোর গল্প একাকার করে নিজের মনের মাধুরি মিশিয়ে বাচ্চাদের জন্য এই কাহিনী দাঁড়া করিয়েছিলেন। স্বামীর সাথে তিনি একটি প্রকাশনা সংস্থা চালাতেন। সেখান থেকে ১৯২০ সালে প্রকাশিত “থ্রু ফেয়ারি হলস” গ্রন্থে রোডোপিস: দ্য ফার্স্ট সিন্ডারেলা স্টোরি নামে তিনি এই গল্পটি অন্তর্ভুক্ত করেন।
যে-ই এই গল্পের মূল রচয়িতা হোক না কেন, এ কথা সত্যি যে, মিশরীয় সিন্ডারেলার কাহিনী কিন্তু আমাদের জানা কাহিনী থেকে কম চিত্তাকর্ষক নয়!