মৎস্যকন্যা শব্দটি শুনলেই সাগর পাড়ে শুয়ে থাকা কোনো রহস্যময়ী রূপসীর ছবি কল্পনায় ভেসে উঠে। সাধারণ কোনো রমনী নয়, অর্ধেক তার মানব শরীর আর অর্ধেক মাছ। সেই আদিকাল থেকেই সুন্দরী, লাস্যময়ী, এমনকি কখনো বিশ্বাসঘাতক মৎস্যকন্যার চরিত্র ঘিরে জন্ম নিয়েছে বহু কিংবদন্তী। বহু মনের কল্পনা, গল্প, উপন্যাস ছাড়িয়ে বাস্তবেও মানুষ খুঁজে বেড়িয়েছে এই প্রাণের উপস্থিতি। বহু নাবিক অন্তত একবার মৎস্যকন্যার দেখা পাওয়ার আশায় বছরের পর বছর কাটিয়েছেন। অনেকে আবার এক দর্শনে পাগল হয়েছেন এমন গল্পও প্রচলিত আছে।
তাদের তীক্ষ্ণ সুরেলা গান, অপার্থিব সৌন্দর্য এবং সামুদ্রিক জীবনধারা সব মানুষের অন্তরেই এক অজানা আকর্ষণের সৃষ্টি করে। বিশ্বের একেক সংস্কৃতিতে রয়েছে মৎস্যকন্যার একেক সংস্করণ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বহু শতাব্দী প্রাচীন কিংবদন্তী মৎস্যকন্যার দর্শন পাওয়া কি এই যুগেও সম্ভব? তবে কি তা শুধুই কল্পনা? নাকি সত্যি?
১. কিরিয়াত ইয়াম এর মৎস্যকন্যা
২০০৯ সালে ইসরায়েলের কিরিয়াত ইয়াম শহর হঠাৎ করেই স্থানীয় ও ভ্রমনার্থী সবার কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। হুট করে এমন আকর্ষণের কেন্দ্র হওয়ার কারণটাও বেশ অভিনব। আর তা হলো মৎস্যকন্যা দর্শন!
সমুদ্র সৈকতে হাঁটতে গিয়ে স্থানীয় এক বাসিন্দা অদূরেই এক নারীকে সূর্য স্নান করতে দেখে, বন্ধুরা মিলে সেদিকে এগিয়ে যান। কিন্তু তাদেরকে দেখেই সেই নারী ঢেউয়ে লাফ দিয়ে হারিয়ে যায়। আর তখনই সবাই তার মাছের মতো লেজ দেখে বুঝতে পারে তাদের সামনে কোনো সাধারণ নারী ছিলেন না। ছিল এক মৎস্য কন্যা! এই দাবির পর থেকে পুরো শহরই যেন মৎস্যকন্যা জ্বরে আক্রান্ত হয়। এই খবর প্রচার হতেই শত শত মানুষ তার দেখা পেয়েছে এমন দাবি করা শুরু করে। জানা যায়, সে সময় প্রায়ই সন্ধ্যার দিকে এক মৎস্যকন্যার খেলা দেখা যেত আর কিছুক্ষণ পরই সে পালিয়ে যেত। স্থানীয় হোক বা ভ্রমণার্থী, এত মানুষ তাকে দেখার দাবি জানায় যে সত্য-মিথ্যা যাচাই করা রীতিমত কঠিন হয়ে পড়ে।
এই গল্প এত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে নগর কর্তৃপক্ষ এই জলকন্যার অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য এক লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে। কিছুদিন আগেও কিরিয়াত ইয়ামের মৎস্যকন্যার এক ভিডিও ইন্টারনেটে ব্যাপক আলোচিত হয়েছে।
২. জিম্বাবুয়ের জলকন্যারা
২০১২ সালে জিম্বাবুয়ের গোক্বে ও অসবর্ন বাঁধের নির্মাণ কাজের সময় শ্রমিকেরা হঠাৎ ভয় পেয়ে তাদের কাজ ছেড়ে চলে যাওয়া শুরু করে। স্থানীয়দের ভাষায় ‘মাম্বা মুন্টু’ বা মৎস্যকন্যা তাদেরকে নানাভাবে হয়রানি করে কাজে বাধা সৃষ্টি করছিলো। জিম্বাবুয়ের লোককথা আর পৌরাণিক গল্পে মাম্বা মুন্টুর উপস্থিতি অশুভ সংকেত বলে মনে করা হয়। আর তাই কর্মীরা অকল্যাণের ভয়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেয়।
স্থানীয় কাউন্সিল বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করতে শ্বেতাঙ্গ শ্রমিকদের কাজে নিয়োগ দেয়। এমনটি করার মূল কারণ ছিল এই লৌকিক উপাখ্যান এবং কুসংস্কারমুক্ত জনবল নিয়োগ করা। কিন্তু অবাক ব্যাপার, এই শ্রমিকেরাও নির্মাণ কাজ ফেলে রীতিমতো পালিয়ে যায়। জিম্বাবুয়ের নদীর এই মৎস্যকন্যার ক্ষোভ ও হয়রানির ভয়ে শ্রমিকেরা কাজে না ফেরার প্রতিজ্ঞা করে বসে।
অবশেষে অসন্তুষ্ট মৎস্যকন্যাদের শান্ত করতে আঞ্চলিক কাউন্সিল সদস্য ও বিভিন্ন গোত্র প্রধানরা ধর্মীয় আচার পালন এবং পরিশুদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয় যাতে বাঁধের কাজ সম্পূর্ণ শেষ করা যায়। জিম্বাবুয়ের মতো বহুরূপী লৌকিক বিশ্বাসের দেশে বাস্তবতা ও পরাবাস্তবতা পাশাপাশি বাস করে। তাই প্রশ্ন থেকে যায়, সত্যি কি মৎস্যকন্যার উপস্থিতি ছিল, নাকি পুরোটাই মনের ভ্রম?
৩. ওরাং ইকান
সময়টা ১৯৪৩ সাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগুনে অর্ধেক বিশ্ব পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। ইন্দোনেশিয়ার ‘কেই’ দ্বীপে জাপানি সেনারা ঘাঁটি গেড়েছে। চারপাশে নজরদারি করা ও তথ্য সংগ্রহ করাই তাদের কাজ। কে ভাবতে পেরেছিল এমন বিপজ্জনক সময়েও মৎস্যকন্যার দেখা পাওয়া যাবে?
জাপানি সৈন্য দলটি ঐ দ্বীপে থাকার সময় একাধিকবার পানিতে ছোট একটি মানুষের অবয়ব দেখার কথা জানায়। তাদের ভাষ্যমতে, মানুষের মতো আকার হলেও সেটার ঘাড় এবং মাথায় বড় বড় কাঁটা আছে আর মুখের আকৃতি অনেকটা কাতলা মাছের মতো। প্রায়ই ‘কেই’ দ্বীপের লেগুন এবং সৈকতে এই অদ্ভুত প্রাণীকে খেলতে দেখা যেত। জাপানি সৈন্যরা এই দৃশ্য দেখে অভিভূত হয়ে পড়ে। কিন্তু দ্বীপের বাসিন্দাদের সাথে কথা বলার পর তারা জানতে পারে মৎস্যকন্যা সদৃশ যে প্রাণীটি তারা দেখছিল সেটা এখানে বহু পরিচিত ‘ওরাং ইকান’ অথবা ‘মানুষ মাছ ‘।
এমন চাঞ্চল্যকর সময়ে গ্রুপ সার্জেন্ট তারো হোরিবা দ্বীপের আদিবাসীদের থেকে এক বিশেষ দাওয়াত পেলেন। আদিবাসীরা মাছ ধরেছে আর সেই মাছ দেখতে হোরিবাকে যেতে বলা হয়েছে। গ্রামে পৌঁছে সর্দারের বাড়িতে ঢুকতেই যা দেখলেন তা হয়তো তিনি কোনোদিন ভুলতে পারেননি। মেঝেতে যে প্রাণীটি পড়ে ছিল তা দেখতে মানুষ নয়, আবার মাছও নয়। হোরিবার বর্ণনায় প্রাণীটির ছোট শরীরে লাল বাদামি চুল আর ঘাড় বরাবর কাঁটা ছিল। চেহারা মানুষের মতো হলেও মুখ ঠোঁট বিহীন মাছের মত যার পুরোটা জুড়ে রয়েছে সূচালো ধারালো দাঁত। সেদিনের দৃশ্য হোরিবাকে এতটাই বিচলিত ও হতবাক করেছিল যে তিনি যুদ্ধের পর জীব বিজ্ঞানীদেরকে এই ঘটনা তদন্ত করার আহ্বান জানান। কিন্তু কেই দ্বীপের এই বিকট দর্শন মৎস্যকন্যার গল্প কেউই বিশ্বাস করেনি। মৎস্যকন্যা বা জলমানবের অস্তিত্ব প্রমাণে এটিই সবচেয়ে ভালো ভাবে নথিভুক্ত ঘটনা। তারপরও হোরিবা আসলে সেদিন কি দেখেছিলেন সেটা আজও এক রহস্যই রয়ে গেছে।
৪. কাইমান
কাইমান, নামটি থেকেই যেন ক্ষমতার আভাস পাওয়া যায়। আর এই নামের উৎসও বেশ রহস্যজনক। এই আকর্ষণীয় নামটি হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার এক কিংবদন্তি মৎস্যকন্যার।
২০০৮ সালে হঠাৎ করেই দেশটির পত্র-পত্রিকায় এক বিচিত্র সংবাদের ঝড় উঠে। সে বছর এক দল বন্ধু মিলে নদীর ধারে ক্যাম্পিং করতে গিয়ে কিছু অদ্ভুত জোরালো আওয়াজ শুনতে পান। কে যেন পানিতে জোরে জোরে শব্দ করছে, সাথে জোরে কোনো কিছুতে আঘাত করার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। শব্দের উৎস খুঁজতে গিয়ে দলটি পানিতে আধডোবা এক নারীর সন্ধান পায়। ফ্যাকাসে সাদা গায়ের রঙ, লম্বা কালো চুলের দীর্ঘাঙ্গী নারীটির ত্বক দেখতে কিছুটা স্বচ্ছ, দেখে মনে হয় যেন দ্যুতি ছড়াচ্ছে। কিন্তু এই রমনী ঘুরে তাকাতেই সবচেয়ে বিস্ময়কর আর পিলে চমকানো বৈশিষ্ট্য নজরে এলো। সেটা হলো তার তীক্ষ্ণ লাল চোখ।
কাইমান দেখা দেওয়ার এই খবরটি আরও ভালো করে তদন্ত করার জন্য দলের একজন ঘটনাস্থলে দৌড়ে যান। তিনি উল্লেখ করেন জলকন্যাটি বিষণ্ণভাবে চিৎকার করছিল, অনেকটা কান্নার মতো। এক সময় দলটির হুড়োহুড়ির মধ্যে এই রহস্যময় প্রাণী পঙ্কিল পানিতে হারিয়ে যায়।
দক্ষিণ আফ্রিকার বাসিন্দারা কাইমানের অস্তিত্বকে প্রবলভাবে ভয় পায়। কথিত আছে, কাইমান মানুষকে পানির নিচে টেনে নিয়ে যায়, যেখানে নিজের আকাঙ্ক্ষার বস্তু খুঁজে পেয়ে মানুষ আর কখনোই ফিরে আসতে পারে না।
৫. হেব্রিডিয়ান মৎস্যকন্যা
স্কটল্যান্ডের লোককথা অসংখ্য রহস্যময় ঘটনা আর পৌরাণিক কাহিনীতে ভরপুর। মৎস্যকন্যাদের কাহিনীও এই তালিকা থেকে বাদ পড়েনি। এমনকি বাস্তবেও স্কটল্যান্ডের বেনবেকুলা এলাকার লোকজন মৎস্যকন্যার দেখা পেয়ে ঘটনাচক্রে হত্যা করে বলে তারা দাবি করে। ১৮৩০ সাল, একদিন সাগরের তীরের কাছাকাছি এক মহিলা শৈবাল কাটার সময় জলে এক ক্ষুদ্রকায় নারীকে সাঁতার কাটতে দেখেন। আশ্চর্য হয়ে তিনি আরও লোকজন ডেকে জলচর প্রাণীটিকে দেখাতে থাকেন। একপর্যায়ে লোকজন মৎস্য কন্যার দিকে ছুটে যেতে শুরু করলে, সে দ্রুত সাঁতারে তাদের নাগালের বাইরে চলে যায়। কিন্তু কিছু দুষ্ট ছেলে ভীত মৎস্যকন্যার দিকে পাথর ছুঁড়তে থাকে, যার মাঝে একটি পাথর তার পিঠে আঘাত করে। কয়েকদিন পরে তার মৃত দেহ তীরে ভেসে আসে। অন্যান্য মৎস্যকন্যাদের মতো, এই মৎস্যকন্যাও দেখতে ছোট, তার চামড়া ফ্যাকাশে সাদা ও পায়ের বদলে আঁশবিহীন মাছের লেজ ছিল।
মৎস্যকন্যার মৃত দেহ পাওয়ার পর, শহরের শেরিফ তাকে সঠিকভাবে সমাধিস্থ করাই উপযুক্ত মনে করলেন। তার জন্য কফিন বানানো হলো এবং কাফনের কাপড় দিয়ে শরীর মোড়ানো হলো। এরপর যেখানে তাকে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল তার কাছেই তাকে দাফন করা হলো। সময়ের পরীক্ষায় এই গল্প টিকে গেলেও ঠিক কোথায় এই মৎস্যকন্যার কবর তার সুনিশ্চিত কোনো তথ্য কোথাও পাওয়া যায়নি। এমনকি এরূপ কোনো সমাধির চিহ্নও সেখানে পাওয়া যায়নি।
৬. নিউজিল্যান্ডের মৎস্যকন্যা
এবার সময়কাল ২০১৪ সাল। নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণ দ্বীপে একদল জেলে সাগর পাড়ের বালিতে এক অদ্ভুতুড়ে মৃতদেহ দেখতে পায়। খুন হয়েছে এমন কারো লাশ সন্দেহ হওয়ায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে খবর দেয়া হলো। কিন্তু একটু ভালো করে পরীক্ষা করতেই বেরিয়ে এলো এই দেহাবশেষ সম্পূর্ণ মানুষের নয়। দেহটি মানুষের মতো দেখতে এমন কোনো প্রাণীর যার একই সাথে জলচর বৈশিষ্ট্যও রয়েছে।
এই আবিষ্কারে নিউজিল্যান্ডের সংবাদ মাধ্যমে যেমন ঝড় ওঠে তেমনি মানুষের মাঝেও প্রাচীন উপাখ্যানের গল্পগুলো আবার জনপ্রিয় হয়ে উঠে। শেষ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি কর্তৃপক্ষের হাত ঘুরে দ্য ইউনিভার্সিটি অফ অকল্যান্ড এর প্রাণী বিজ্ঞানীদের হাতে এই দেহাবশেষ তুলে দেয়া হয়। এখনো পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো বিশদ ফলাফল প্রকাশিত হয়নি।
৭. বেরিং সাগরের মৎস্যকন্যা
মৎস্যকন্যার গল্পের উপাখ্যান বহু প্রাচীন। কিন্তু নির্ভুলভাবে লিপিবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া ঘটনাগুলোর সময়কাল খুব বেশি আগের নয়। তার মাঝে কয়েকশ বছর আগে, ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে হেনরি হাডসনের নরওয়ে ভ্রমণের ঘটনাটির উল্লেখ অনেক জায়গায় পাওয়া যায়। সেই সময় হেনরির জাহাজ নরওয়ের উত্তরের বেরিং সাগরে বিচরণ করছিলো। তিনি তার জার্নালে (হেনরি হাডসনের নিজস্ব ডায়েরি) মৎস্যকন্যার দলের সাথে এক বিচিত্র সাক্ষাতের ঘটনা লিখেছেন। তিনি লিখেছেন, একদিন এক মৎস্যকন্যা হেনরি হাডসন আর তার নাবিকদের দেখে বাকি বোনদের ডাকতে চলে যায়। মৎস্যকন্যারা আকারে প্রায় পুরুষদের সমান বড়। তারা অত্যধিক ফর্সা আর লম্বা কালো চুলের অধিকারী । হাডসনের মতে, তাদের লেজ ডলফিনের মতো কিন্তু তাতে ম্যাকারেলের মতো দাগ রয়েছে। বিশ্বখ্যাত এই নাবিক মৎস্যকন্যা দর্শনে কতটা রোমাঞ্চিত হয়েছিলেন তা জার্নালের লেখায় স্পষ্ট বিবরণ দেয়া আছে।
তৎকালীন সময়ে অনেক নাবিক গভীর সমুদ্রের বিভিন্ন প্রাণীকে মৎস্যকন্যা ভেবে ভুল করতেন। বিশেষ করে ম্যানাটীদের দূর থেকে দেখে এমন ভুল করা অসম্ভব কিছু নয়। কিন্তু হাডসনের সেই ঘটনাটি সেদিক থেকে একটু আলাদা কারণ নরওয়ের কাছে বেরিং সাগরে, যেখানে তিনি ছিলেন সেখানে কোনো ম্যানাটী পাওয়া যায় না। আবার এত অভিজ্ঞ নাবিকের দ্বারা কোনো সামুদ্রিক প্রাণী সনাক্তকরণ ভুল হবে সেটাও বিশ্বাসযোগ্য নয়। তাই প্রকৃতিবিদ ফিলিপ হেনরির মতে, হয় এই পুরো গল্পটিই গাঁজাখুরি ও বানোয়াট। তা না হলে অবশ্যই হাডসন আর্কটিকে এমন কিছু দেখেছেন যার অস্তিত্ব এখনো বিজ্ঞানের দুনিয়ায় স্বীকৃতি পায়নি।
৮. দিয়ারনিস মারমেইড
স্কটল্যান্ডের ইতিহাস জুড়ে বহু মৎস্যকন্যার গল্প পাওয়া যায়। তার মাঝে আরেকটি জনপ্রিয় গল্পের সূত্রপাত হয় ১৮৯০ সালের শুরুর দিকে। সে সময় স্কটল্যান্ডের নিওয়ার্ক বে মৎস্যকন্যার গুণে একটি জনপ্রিয় স্থানে পরিণত হয়। অনেকেই এই বিশেষ মৎস্যকন্যার আত্মপ্রকাশ শুধুই গুজব বলে উড়িয়ে দিলেও কিছু লোক এই জলকন্যাকে দিয়ারনিস নাম দেয় এবং তার সম্পর্কে নানা ঘটনা প্রচার শুরু করে। এই মৎস্যকন্যা প্রচলিত উপকথার মতো সুন্দরী নয় বরং দেখতে কিছুটা ভয়ঙ্কর। মানুষের মতো দেখতে দিয়ারনিসকে প্রায় সাত ফুট লম্বা, ফ্যাকাশে সাদা চামড়া আর ঘাড়ে, মাথায় কালো চুলবিশিষ্ট বর্ণনা করা হয়েছে।
স্থানীয়রা তাকে তার হাত দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে পাথরের উপর উঠে আসতে দেখতো। আবার সে পিছলে ঢেউয়ে মিলিয়ে যেত। মানুষ দূর থেকে শুধুমাত্র কয়েক পলক তার দেখা পেত। স্থানীয়দের ভাষায় দিয়ারনিস মৎস্যকন্যাকে বেশ ভীত সন্ত্রস্ত মনে হত। সে কখনোই সৈকতের কাছে আসতো না। পর পর কয়েক গ্রীষ্মে দিয়ারনিসের দেখা পাওয়া গেলেও আবার সে রহস্য হয়ে নীরবে ঢেউয়ের নিচে হারিয়ে যায়। বিজ্ঞানের এই যুগে অনেকেই দিয়ারনিসকে তিমি বলে সন্দেহ করলেও নিওয়ার্ক বে’র মানুষের জন্য তা এখনো কিংবদন্তী।
ফিচার ইমেজ: pocket full of grace