কেউ পুলিশের গুপ্তচরগিরিতে তার প্রতিভার স্বাক্ষর রাখছে, কেউবা লাইব্রেরিতে কাটিয়ে দেয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা, কেউবা ভবিষ্যৎবাণী করতে ওস্তাদ, আবার কেউ তাদের সাহসী ভূমিকার জন্য প্রশংসা কুড়িয়েছে অন্যদের কাছ থেকে। এরা কেউ মানুষ নয়, নিতান্তই একেকটি খুদে বিড়ালের এসব অসামান্য কীর্তির কথা ছড়িয়ে রয়েছে বিশ্বজুড়ে। কীর্তিমান সেসব বিড়াল নিয়েই আজকের আয়োজন।
ফিডেল: বইপাগল বিড়াল
বই প্রেমিক বিড়ালের দেখা পাওয়া যায় ইংল্যান্ডের কেন্ট শহরে। ২০০৯ সালে এই বিড়ালকে নিয়ে ব্যাপক হইচই পড়ে যায় ইংল্যান্ড জুড়ে। ৮ বছর বয়সী ফিডেল নামের এই কালো বিড়ালটি ডিল নামের এক লাইব্রেরিতে প্রতিদিন যেতে পছন্দ করতো।
বিড়ালটির আস্তানা ছিল লাইব্রেরির খুব কাছেই এক বাড়িতে। মনিব যখন কাজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়তেন, সেই সময় বিড়ালটি চলে আসতো কাছের ডিল লাইব্রেরিতে, অদ্ভুতভাবেই এটি রোজ একই সময়েই চলে যেত লাইব্রেরিতে। সারাদিন লাইব্রেরিতে কাটিয়ে, বইয়ের এক সেলফ থেকে অন্য সেলফে ঘুরে ঘুরে ঠিক বাড়ি ফিরতো মালিক বাড়ি ফেরার পূর্বমুহূর্তে। পাঠাগারের একটি নীল রঙের চেয়ারের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ ছিল কালো এই মার্জারের। ফিডেলের অদ্ভুত রকমের পাঠাগার প্রীতির খবর বেশ সাড়া জাগিয়েছিল দেশটিতে।
অস্কার: ভবিষ্যদ্বাণী করা বিড়াল
২০১০ বিশ্বকাপ ফুটবলের জয়-পরাজয় নির্ধারণের ক্ষেত্রে তার ভবিষ্যদ্বাণীর কথা এখনো নিশ্চয় ভোলেননি ফুটবল ভক্তরা। যেন সত্যিই এক ভবিষ্যৎদ্রষ্টা বিড়াল অস্কার। তার আস্তানা যুক্তরাষ্ট্রের রোড আইল্যান্ডের এক হাসপাতাল স্টিরি হাউস নার্সিং এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার। অস্কারের ক্ষমতা ছিল সে মৃত্যুর আগাম আভাস দিতে পারতো!
অস্কারের এই আভাস দেওয়ার স্টাইলও ছিল বেশ অদ্ভুত। তার প্রতিদিনের রুটিন ছিল গোটা হাসপাতাল চক্কর দেওয়া। মর্মান্তিক হলেও সত্য যে, অস্কার হাসপাতাল চক্কর শেষ করে যে রোগীর পাশে গিয়ে বসতো, হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ সেই রোগীর বাড়ির লোকজনদের খবর পাঠিয়ে দিতো। কারণ, অদ্ভুতভাবেই দেখা যেতো সেই রোগী অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই ইহলোকের মায়া ত্যাগ করে পরলোকে পাড়ি জমাতেন। এভাবে প্রায় একশটিরও বেশি ভবিষ্যদ্বাণী করতে সফল হয় অস্কার।
আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, মুমূর্ষু রোগীর পাশ থেকে অস্কার উঠে যাওয়ার সাথে সাথেই অদ্ভুতভাবেই বেঁচে উঠেছে সেই রোগী। অস্কারের এই অদ্ভুত ক্ষমতার বিষয়টি প্রথম নজরে এসেছিল ডেভিড ডোসা নামের এক চিকিৎসকের। তারপর থেকেই নানা দেশের খবরের কাগজে নানা বিজ্ঞাপন, লেখা বেরিয়েছিল অস্কারকে নিয়ে।
পিটার: দ্য লর্ডস ক্যাট
পিটার নামের এই বিখ্যাত বিড়ালটি লর্ডস মাঠের সাথে একাত্ম হয়ে আছে। সুপরিচিত ক্রিকেট দর্শক হিসেবে এই বিড়ালের বেশ জনপ্রিয়তা ছিল লর্ডসে। প্রায় বারো বছর যাবত লর্ডসে ছিল পিটার। মন দিয়ে সে দেখতো ক্রিকেট খেলা। ১৯৬৪ সালের ৫ নভেম্বর পিটার মারা যায়। তার মৃত্যুর পর উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমানাকে তার স্মরণে লেখা হয়েছিল, “He was a cat of great character and loved publicity and his sleek brown form could often be seen prowling on the field of play when crowds were biggest.”
হ্যামার: সৈনিক বন্ধু
বিভিন্ন সময়ের যুদ্ধের ইতিহাসে হাতি, কুকুরের ভুমিকার কথা শোনা গেলেও বিড়ালের কথা খুব একটা শোনা যায় না। যদিও প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সিক্যাট সাইমন বা ক্রিমিয়ান টমের মতো বিড়ালদের বেশ প্রশংসনীয় অবদান ছিল। এমনই এক যুদ্ধে অবদান রেখেছিল হ্যামার নামের এক বিড়াল। উপসাগরীয় যুদ্ধে এই বিড়ালটিকে নিয়ে ব্যাপক হৈচৈ পড়ে গিয়েছিল। ইরাকে যুদ্ধকালীন এক তাঁবুতেই হ্যামারের জন্ম। সৈনিকদের আদরে বেড়ে ওঠা হ্যামার খাবারের গুদামের ইঁদুরগুলোকে কড়া পাহাড়ায় রেখে খাবার নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচিয়ে দিতো। এভাবেই সৈনিকদের মন জয় করে নিয়েছিল সে।
তাছাড়া তাঁবুতে সকলের সাথে খুনসুটিতে মেতে থাকতো হ্যামার। যুদ্ধের নানা দুশ্চিন্তার মাঝেও সকলের মেজাজ হালকা করে রাখতো সে। সৈনিকদের কাছে এটি ছিল এক টুকরো প্রশান্তি। যুদ্ধ শেষে মার্কিন সেনারা দেশে ফিরে যাওয়ার সময় হ্যামারকেও তাদের সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য সেই সময় সৈনিকদের পাশাপাশি অনেক সাধারণ মানুষও সরকারের কাছে আবেদন জানায়। সেই আবেদন সাড়া দিয়ে মার্কিন সরকার হ্যামারকে দেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়।
স্কারলেট: এক দুঃসাহসী মা বিড়াল
১৯৯৬ সালের ৩০ মার্চ। নিউইয়র্কের ব্রুকলিনের এক পরিত্যাক্ত গ্যারেজে আগুন লেগে যায়। দমকল কর্মীরা সেই গ্যারেজের আগুন আয়ত্বে আনার পর খেয়াল করেন যে একটি বিড়াল পোড়া গ্যারেজের ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে একে-একে মুখে করে তুলে বের করে নিয়ে আসছে তার ছোট ছোট পাঁচটি ছানাকে।
বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে দমকল কর্মীরাই হাসপাতালে নিয়ে যায় ঐ মা-বিড়াল আর তার পাঁচ ছানাকে। মা বিড়াল স্কারলেটের শরীরের নানা স্থানে পুড়ে গেলেও কিন্তু সে তার ছানাদের সঙ্গ ছেড়ে যায়নি। সংবাদ মাধ্যমের বদৌলতে আলোড়ন তুলে মা স্কারলেটের দুঃসাহসী সেই ঘটনা। একাধিক বইও লেখা হয়ে যায় ‘দ্য ব্রেভেস্ট ক্যাট’কে নিয়ে। ২০০৮ সালে স্কারলেট চিরবিদায় নেয় পৃথিবী থেকে।
ফ্রেড: পুলিশের গুপ্তচর
নিউইয়র্ক পুলিশ বাহিনীর পোষ্য বিড়াল ফ্রেড পুলিশের চর হিসেবে সুনামের সাথে কাজ করেছে বহুদিন। ব্রুকলিনের ভুয়া পশু চিকিৎসকেরা রীতিমত ফ্রেডের ভয়ে তটস্থ থাকতো। পুলিশ গোয়েন্দারা ফ্রেডকে নিয়ে প্রায় সময় হামলা চালাতো এসব ভুয়া ডাক্তারের অনুসন্ধানে।
ফ্রেড তার কাজের জন্য পুরস্কৃতও হয়েছে। ২০০৫ সালের এক বসন্তের সকালে ব্রুকলিনের সহকারী এটর্নি ক্যারল মোরান রাস্তা থেকে অসুস্থ অবস্থায় তুলে আনেন ফ্রেডকে। সেই থেকে পুলিশ বাহিনী নানা কাজে ফ্রেডকে ব্যহার করতে থাকে। পরবর্তীতে অন্য পশুদের ট্রেনিং দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হতো ফ্রেডকে। ২০০৬ সালে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় ফ্রেড চিরতরে বিদায় নেয়।
সিসি: গবেষণাগারের বিড়াল
‘সিসি’ শব্দের অর্থ কার্বন কপি। পৃথিবীর প্রথম ক্লোনড বিড়াল হলো সিসি। অনেকের কাছে আবার সে ‘কপিক্যাট’ নামেও পরিচিত। টেক্সাসের এক গবেষণাগারে ২২ ডিসেম্বর ২০০১ সালে জন্মেছিল সিসি। এই বিড়ালটি হলো ট্যাবি ও ডোমেস্টিক শর্ট হেয়ার প্রজাতির।
বিখ্যাত এই বিড়ালটির মায়ের নাম রেনবো। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, রেনবো আর সিসি কিন্তু মোটেও দেখতে একরকম নয়, তবে তার সারগোটেড মা এলির বৈশিষ্ট্যের সাথে সিসির যথেষ্ট জিনগত মিল দেখা গেছে। সিসির বয়স যখন পাঁচ বছর, তখন সে তিনটি সন্তানের জন্ম দেয়। তার দশ বছরে পা দেওয়ার সাথে সাথে সকলে মিলে ধুমধাম করে তার দশ বছরের জন্মদিন পালন করে।
ফিচার ইমেজ: urbantabloid.com