১৯৯৮ সালে মুক্তি হলিউডে মুক্তি পায়A Bug’s Life নামক অ্যানিমেশন সিনেমা। মুক্তির পর পরই বাজিমাত করে ফেলে সিনেমাটি। শিশুতোষ এই অ্যানিমেশন সিনেমাটি তার শক্তিশালী কাহিনীর জোরে খুব সহজেই শিশু-কিশোর ছাপিয়ে তরুণ, বৃদ্ধ সবার মন জয় করে নিলো। সেই কালজয়ী সিনেমার গল্পটি পতঙ্গদের ঘিরে।
সিনেমার শুরুতে দেখানো হয় একটি পিঁপড়া সমাজের হালচিত্র। ফসল তোলার মৌসুমে তারা মহা উৎসাহে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে খুব অল্প সময়ের মাথায় শুকনো পাতার উপর নির্মিত অস্থায়ী শস্যভাণ্ডার পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। সবকিছু ঠিকমতো চলছিলো। কিন্তু ঝামেলা পাকালো এক তরুণ বিজ্ঞানী পিঁপড়া। তার আবিষ্কৃত নতুন যন্ত্রের যান্ত্রিক ত্রুটি এবং নিজের গাফেলতির কারণে পুরো শস্যভাণ্ডার রীতিমতো জলে ভেসে গেলো। একটি ভুল, পুরো পিঁপড়া সমাজের কান্না। এর কারণ, এই শস্যগুলো ছিল অত্যাচারী ঘাসফড়িংদের খাজনা। খাজনার শস্য না পেলে লঙ্কাকাণ্ড বাঁধিয়ে দেবে তারা। এই সমস্যা এবং ঘাসফড়িংদের আগ্রাসনকে নিয়ে এরপর সিনেমার গল্প এগিয়ে যেতে থাকে। ধীরে ধীরে পতঙ্গদের রোমাঞ্চকর সামাজিক জীবনের বিচিত্র ছবি ফুটে ওঠে দর্শকদের সামনে।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, সিনেমায় যে পতঙ্গ সমাজের কথা বলা হয়েছে, তা নিছক কল্পনা নয়। বরং বাস্তবিক অর্থেই পতঙ্গদের একটি সুশৃঙ্খল সমাজ ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে পিঁপড়াদের সমাজব্যবস্থা এতটাই গোছানো যে, এর বর্ণনা শুনলে অবাক হতে হয়। আমাদের আজকের আলোচনায় পিঁপড়াদের সেই অভিনব সমাজব্যবস্থা নিয়ে আলোকপাত করবো।
পিপীলিকার ঢিবি
পিঁপড়ারা কোথায় থাকে? হাস্যকর প্রশ্ন করলাম বোধহয়। কারণ, এখন পর্যন্ত এমন কোনো জায়গা পেলাম না যেখানে পিঁপড়ারা হানা দিতে পারেনা। সামান্য চিনির ঘনক ফেলে দিতে দেরি, এর আগেই দলবল বেঁধে পিঁপড়ার দল এসে সেটিকে বহন করে কুচকাওয়াজ করতে করতে নিয়ে যায় নিজের ঢেঁড়ায়। তবে আমাদের লোকালয়ের সর্বস্তরে এদের বিচরণ থাকলেও, এরা কিন্তু বাস্তুহারা নয়। এরা মাটির উপর, গাছের গোঁড়ায় কিংবা বসতবাড়ির মেঝের ফুটোয় মাটি খুঁড়ে কিংবা ঝরঝরে মাটি জড়ো করে উঁচু ঢিবির ন্যায় বাসা বানিয়ে থাকে। কিছু প্রজাতির পিঁপড়া শুকনো পাথরের নিচে বসতি গড়তে পছন্দ করে। পাথরের কারণে পিঁপড়ার বাসা উষ্ণ এবং শুষ্ক থাকে।
পিঁপড়া ঢিবি বানানোর কাজে উস্তাদ হয়ে থাকে। এদের ঢিবি নির্মাণ কৌশলে ফুটে উঠেছে কারিগরি নৈপুণ্য। স্থানভেদে এসব ঢিবি পিঁপড়াদের বসবাস এবং লার্ভা থেকে সন্তান জন্ম নেওয়ার জন্য পরিমিত তাপমাত্রা এবং উপযুক্ত পরিবেশ প্রদান করে। ঢিবি নির্মাণের সময় পিঁপড়ারা মাটি খুঁড়ে অনেকগুলো সরু সুরঙ্গ তৈরি করে থাকে। অনেক সময় এদের সুরঙ্গ প্রায় ২০-২৫ মিটারের মতো গভীর হতে পারে। অনেকে মনে করতে পারেন, একটি ঢিবির ভেতর কয়েক হাজার পিঁপড়া মিলে আর কয়টা সুরঙ্গ খনন করবে? কিন্তু আপনারা জানলে অবাক হবেন যে, জাপানের হোক্কাইডো দ্বীপে প্রায় ৬৭০ একর বিস্তৃত পিঁপড়ার কলোনী পাওয়া গেছে। এই কলোনীতে প্রায় ৪৫ হাজার সংযুক্ত সুরঙ্গের সন্ধান পাওয়া গেছে! কলোনীতে দশ লক্ষ রানী পিঁপড়ার অধীনে প্রায় ৩৬০ মিলিয়ন শ্রমিক পিঁপড়া কাজ করছে। অবাক হতে হয় এই ভেবে যে, এত বড় কলোনী পরিচালনা করতে পিঁপড়াদের একটুও নিয়মের হেলাফেলা হচ্ছে না। সবকিছু সুশৃঙ্খলভাবে এগিয়ে যাচ্ছে বছর ধরে। এ ধরনের বিশাল পিঁপড়া সমাজকে ‘সুপার কলোনী’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
সামাজিক কাঠামো
প্রতিটি সমাজে বিভিন্ন শ্রেণীর সদস্য বাস করে। সমাজে শ্রেণীভেদে কাজ ও মর্যাদা ভিন্ন হয়ে থাকে। পিঁপড়া সমাজে এরকম তিন শ্রেণীর সদস্য দেখা যায়- রানী, পুরুষ (ড্রোন) এবং শ্রমিক পিঁপড়া। রানী পিঁপড়া পুরো পিঁপড়া সমাজের মধ্যমণি। একটি রানীর নেতৃত্বে পিঁপড়ারা সমাজের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। রানী শুধু পালের গোদাই নয়, এমনকি একটি পিঁপড়া সমাজের গোড়াপত্তনও করে সে। রানী পিঁপড়া একসাথে হাজার হাজার ডিম পেড়ে শুরু করে একটি নতুন সমাজ। সেই ডিম ফুটে অন্যান্য শ্রেণীর পিঁপড়ার জন্ম হয়। যখন ঢিবি নির্মাণ করা হয়, তখন রানীর ঠাঁই মেলে সবচেয়ে গভীরের কক্ষে। শিকারী প্রাণী, পতঙ্গ এবং অন্যান্য ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রানীকে সুরক্ষিত রাখতে এমন করা হয়। একটি রানী পিঁপড়া গড়ে ৩০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। রানী পিঁপড়া আকারে অন্যান্য পিঁপড়ার তুলনায় কিছুটা বড় হয়। এদের দেহের তৃতীয় অংশ দ্বিতীয় অংশের তুলনায় মোটা হয়। এর ফলে এরা খুব সহজে ডিম পাড়তে পারে।
রানী পিঁপড়ার ডিম নিষিক্ত করার জন্য প্রয়োজন হয় ড্রোন পুরুষ পিঁপড়ার। এদের আয়ু খুব কম হয়ে থাকে। রানীর সাথে মিলনের পর পরই এদের মৃত্যু হয়। এরা পিঁপড়া সমাজের সংখ্যালঘু সদস্য। শুধু রানী পিঁপড়া এবং ড্রোন পিঁপড়ার পাখা থাকে। ডিম পাড়ার পর রানীর পাখা বিলুপ্ত হয়ে যায়। কোনো কারণে ঢিবি ধ্বংস হয়ে গেলে এরা উড়ে অন্যত্র চলে যায়। সেখানে নতুন ডিমের মাধ্যমে নতুন সমাজের জন্ম হয়।
সমাজের সংখ্যাগুরু সদস্য হচ্ছে শ্রমিক পিঁপড়া। এরা স্ত্রী লিঙ্গের পতঙ্গ হলেও এদের ডিম পাড়ার ক্ষমতা নেই। শ্রমিক পিঁপড়া পৃথিবীর সবচেয়ে কর্মঠ প্রজাতির জীবগুলোর মধ্যে অন্যতম। এদের সামান্য বিশ্রাম নেওয়ার উপায় নেই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা এরা অক্লান্ত পরিশ্রম করতে পারে। এদের শ্রমের ফসল হিসেবে একটি শক্তিশালী ঢিবি গড়ে ওঠে। প্রজাতিভেদে শ্রমিক পিঁপড়া এক সপ্তাহ থেকে এক বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। একটি পিঁপড়া সমাজে একটি রানী পিঁপড়ার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু কলোনীর আকার এবং জনসংখ্যা বড় হলে একাধিক রানীর উপস্থিতি দেখা যায়।
দশে মিলে করি কাজ
ঢিবির ভেতর পিঁপড়া কলোনী যেন একটি পুরোদস্তর কারখানা। এখানে ব্যস্ত কর্মীর ন্যায় শ্রমিকরা নিজের কাজে ব্যস্ত। রানী পিঁপড়ার নির্দেশনায় এরা যেকোনো কঠিন কাজকে অনেকগুলো ছোট অংশে বিভক্ত করে অনেকে মিলে খুব কম সময়ের মধ্যে সমাধা করে ফেলতে পারে। সমাজের তরুণ সদস্যদের জন্য ভারী কাজ করার রেওয়াজ নেই। এরা বেশিরভাগ সময় রানী এবং তার ডিমের পরিচর্যার কাজে নিয়োজিত থাকে। বয়স বাড়লে এদের কাজে পরিবর্তন আসে। এরা তখন ঢিবির নিরাপদ জগত ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। দলবেঁধে সুশৃঙ্খলভাবে খাদ্য সংগ্রহ, বহন এবং শত্রুর হাত থেকে ঢিবি রক্ষার কাজে এরা নিয়োজিত থাকে।
যদিও রানী পিঁপড়া সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে থাকে, কিন্তু কাজ ভাগাভাগির ক্ষেত্রে তার কোনো অধিকার খাটাতে দেখা যায় না। শ্রমিক পিঁপড়ারা একে অপরের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে এই কাজটি করে থাকে। গুরুত্বপূর্ণ কাজে যেমন আমরা মিটিং করে সিদ্ধান্তে উপনীত হই, তেমনি পিঁপড়ারাও সবাই আলোচনা করে কাজের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়।
পিঁপড়াদের যোগাযোগ মাধ্যম
সমাজের সদস্যদের মধ্যে দৃঢ় বন্ধন গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী যোগাযোগ ব্যবস্থা। সমাজের সদস্যরা একে অপরের সাথে কথা-বার্তা, আলাপচারিতার মাধ্যমে এই বন্ধন গড়ে তুলতে পারে। একথা নাহয় আমাদের জন্য সত্য, কিন্তু পিঁপড়ারা কীভাবে অন্যদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে থাকে? মজার ব্যাপার হলো, পিঁপড়ারাও কথা বলার মাধ্যমে যোগাযোগ করে। যদিও আমাদের কথা বলার পদ্ধতির সাথে সেটির তেমন একটা মিল নেই। কথা বলার জন্য এদের মুখ দিয়ে শব্দ করার প্রয়োজন হয় না। এদের কথা বলার ভাষা রাসায়নিক!
কোনো তথ্য আদান-প্রদানের প্রয়োজন হলে এক পিঁপড়া নিজের দেহ থেকে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ করতে থাকে। অন্য পিঁপড়া নিজের অ্যান্টেনার সাহায্যে সেই পদার্থের ঘ্রাণ নেয় এবং এর মাঝে লুকানো তথ্য উপলব্ধি করতে পারে। আমাদের কাছে অদ্ভুত শোনালেও পিঁপড়া জগতে এটাই সাধারণ চিত্র। অনেকে হয়তো সারিবদ্ধ পিঁপড়ার দলকে খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে এ ধরনের ঘ্রাণ পেয়েছেন। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, এই ঘ্রাণ পিঁপড়াদের পরিচয়পত্রের মতো কাজ করে। ‘পিঁপড়া তোর নাম কী ঘ্রাণে পরিচয়’ মন্ত্রে এক পিঁপড়া নিজের দলের সদস্যদের চিনতে পারে। আবার পদমর্যাদা অনুযায়ী পিঁপড়াদের ঘ্রাণ ভিন্ন হয়। তবে পিঁপড়ারা শুধু ঘ্রাণের মাধ্যমে সব ভাব আদান প্রদান করে না। মাঝে মাঝে এরা একে অপরের গায়ের সাথে লেগে কম্পনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে থাকে।
পিঁপড়াদের সামাজিক দায়িত্ব
পিঁপড়া আকারে ক্ষুদ্র হওয়ায় এদের শিকার, খাদ্য সংগ্রহ, আত্মরক্ষামূলক কাজ একা করতে পারে না। এজন্য এরা দলবেঁধে চলাফেরা করে। একতাবদ্ধ পিঁপড়ার দল যেকোনো প্রাণীর জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। পিঁপড়াদের একতার প্রমাণ হয়তো আমরা অনেকেই পেয়েছি। ছোটবেলা খেলার ছলে পিঁপড়ার ঢিবি আক্রমণ করার পর পিঁপড়াদের সম্মিলিত আক্রমণের মুখোমুখি হয়নি, এমন মানুষ কমই আছে। একটি পিঁপড়ার কামড় হয়তো তেমন গুরুতর কিছু নয়, কিন্তু যখন শত শত পিঁপড়া আপনাকে কামড়ে দেবে তখন ব্যথা সহ্য করা মুশকিল হয়ে পড়ে।
বিপদে না পড়লে পিঁপড়ারা অনেক শান্তশিষ্ট পতঙ্গ হিসেবে চলাফেরা করে। এরা পরিবেশ এবং ঘ্রাণ বিচার করে খাদ্যের সন্ধানে বের হয়। পথে যেসব খাদ্যবস্তু পড়ে থাকে, সেগুলো বহন করে নিজের ঢিবিতে সঞ্চয় করে এরা। অনেক পিঁপড়া খাদ্যের জন্য অন্য পতঙ্গের উচ্ছিষ্টের উপর নির্ভরশীল হয়। পিঁপড়ারা খাদ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে বেশ হিসেবী হয়ে থাকে। ভবিষ্যতের কথা ভেবে এরা অনেক খাবার জমা করে রাখে। বিখ্যাত গল্পকার ঈশপ পিঁপড়াদের এই গুণের উপর ভিত্তি করে একটি উপদেশমূলক গল্প রচনা করেছিলেন।
পিঁপড়াদের যুদ্ধ
প্রতিটি পিঁপড়া তার রানী এবং ঢিবির প্রতি অনুগত থাকে। এরা ঢিবির সদস্যদের প্রয়োজনে সবকিছু করতে প্রস্তুত থাকে। কিন্তু অন্য ঢিবির পিঁপড়াদের সাথে এদের সম্পর্ক তেমন ভালো থাকে না। এরা অন্য ঢিবির প্রতি হিংস্র মনোভাব প্রকাশ করে। এর পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে ‘খাদ্য’কে দায়ী করা যায়। কোনো পিঁপড়া চায় না অন্য কেউ এসে তার খাবারে ভাগ বসাক। কয়েক প্রজাতির পিঁপড়া নিজের ঢিবির আশেপাশের অঞ্চলে শুকনো মাটি দিয়ে সীমানা টেনে দেয়। অন্য কলোনীর পিঁপড়া এই সীমানা অতিক্রম করলেই বিপদ। তখন রানীর নেতৃত্বে শ্রমিক পিঁপড়ারা সৈনিক হয়ে ওঠে। বিষ নিক্ষেপ করা, কামড়ে দেয়া কিংবা হূল ফোটানোর মাধ্যমে এরা একে অপরকে হত্যা করার চেষ্টা করে। পিঁপড়াদের মতো ক্ষুদ্র প্রাণীর জন্য অন্যান্য শিকারি পশু, পিঁপড়া খাদক প্রাণী কিংবা মানুষের চেয়ে অন্য ঢিবির পিঁপড়া সবচেয়ে বেশি বিপদজনক।
গেম অফ থ্রোন্স
‘রাজত্ব থাকলে রাজা থাকবেন’– একথা পিঁপড়াদের জন্য ভুল। বরং রাজা থাকলে রাজত্ব থাকবে এমন বিশ্বাসে বিশ্বাসী রানী পিঁপড়া। তাই মাঝে মাঝে রানী পিঁপড়া স্বার্থপরের মতো নিজের কলোনীকে বিপদের মুখে ফেলে একা পালিয়ে যায়। ঢিবির অন্যান্য পিঁপড়া মারা পড়লেও রানী পিঁপড়ার লক্ষ্য থাকে যতদিন পারা যায় বেঁচে থাকা আর ডিম পাড়া। যেসব কলোনীতে একাধিক রানী থাকে, সেখানেও দেখা দেয় ক্ষমতাগ্রাসের খেলা। কথায় আছে- ‘এক বনে দুই বাঘ থাকতে পারে না’। তেমনি এক কলোনীতে একাধিক পিঁপড়া খুব বেশিদিন একসাথে থাকতে পারে না। এক রানীর শ্রমিকরা কয়েক বছরের মাথায় অন্য রানীকে হত্যা করে ফেলে। অনেক সময় শ্রমিক পিঁপড়ারা স্বাধীনভাবে রানীর সংখ্যা কমানোর উদ্যোগ নেয়। এই রাজহত্যায় অংশ নেয়া শ্রমিকরা মাত্র একজন রানীকে বাঁচিয়ে রেখে বাকিদের হত্যা করে।
অনেক সময় এর ব্যতিক্রমও দেখা যায়। অজ্ঞাত কারণে শ্রমিকরা তখন সব রানীকে মেরে ফেলে। যদি এভাবে বা অন্য কোনো কারণে ঢিবির রানীর আসন ফাঁকা থাকে, সেক্ষেত্রে আর কিছু করার থাকে না। রানী নেই মানে ডিম নেই। আর ডিম নেই মানে ঢিবির ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নেই। তাই সেই ঢিবির বংশ পরম্পরার সেখানে ইতি টানা হয়।
বিচিত্র আমাদের জগত, আর বিচিত্র এর প্রাণীকূল। সামান্য ঢিবির ভেতর পিঁপড়ারা যেমন সামাজিক জীবনযাপন করছে, তা শুনে অবাক না হয়ে পারা যায় না। আকারে ক্ষুদ্র হলেও এদের মাঝে বন্ধুত্ব, শ্রমের বণ্টন, স্বজাতিপ্রেম এমনকি ক্ষমতার লোভ- এরকম নানা বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান রয়েছে। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, জীবজগত কতটা রোমাঞ্চকর হতে পারে।