বাংলাদেশের মানচিত্র খুলে খুলনা বিভাগের দক্ষিণে নজর দিলে আমাদের চোখে পড়বে এক বিস্তৃত রাজ্যের চিহ্ন। পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপে অবস্থিত এই রাজ্যটি একটি বিশাল ম্যানগ্রোভ বন। এই রাজ্যে প্রায় ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদ এবং ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর নিবাস রয়েছে। এখানকার জলে বিচরণ করছে নোনা পানির কুমির, গুইসাপ, সামুদ্রিক মাছ, কচ্ছপ, নানা রকম সাপসহ বহু সরীসৃপ, উভচর এবং জলচর প্রাণী। ডাঙায় নজর দিলে দেখা দেবে চিত্রা হরিণের মায়াবী সৌন্দর্য। আকাশে উড়ে চলা হরেকরকম পাখি, গাছে শাখায় দাপট দেখানো বানর কিংবা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা সুন্দরীর শ্বাসমূল, গেওয়া, গরান এবং কেওড়া- এই সবকিছুই যেন সুন্দরবনের ‘প্রায় পরিপূর্ণ’ চিত্রাঙ্কন করে।
কিন্তু প্রায় ৬ হাজার বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত এই রাজ্যের রাজার কথা না বললে এ বনের গল্প একদমই পূর্ণতা পায় না। পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে পরিচিত রাজ্যটির নাম ‘সুন্দরবন’। আর সেই সুন্দরবনকে অন্যান্য হাজার বন থেকে অনন্য করে তুলেছে এক বাঘ। সুন্দরবনের অতন্দ্র প্রহরী এবং এর অলঙ্কার হিসেবে পরিচিত সেই বাঘ হচ্ছে বাংলাদেশ এবং ভারতের জাতীয় পশু– রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
বেঙ্গল টাইগার পরিচিতি
ভারতীয় উপমহাদেশে যত ধরনের বাঘের দেখা মেলে, তাদের মধ্যে আকারে বৃহত্তম, ক্ষিপ্রগতিসম্পন্ন এবং হিংস্রতায় অনন্য এই রয়েল বেঙ্গল টাইগার। শুধু উপমহাদেশ নয়, সারাবিশ্বের বাঘ পরিবারের সিংহভাগ সদস্য বেঙ্গল টাইগার গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। এ বাঘের ঐতিহ্য একে উপমহাদেশীয় সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তাই এটি ভারত এবং বাংলাদেশের জাতীয় পশুর সম্মাননা পেয়েছে। বৈজ্ঞানিক পরিমণ্ডলে এদের নাম Panthera tigris tigris.
রয়েল বেঙ্গল টাইগারদের নিবাস বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল এবং ভুটানের বনাঞ্চলে। ধারণা করা হয়, চীন এবং মায়ানমারেও অল্পসংখ্যক রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বসবাস রয়েছে। বাঘশুমারি-২০১৯ এর হিসাবমতে, রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জনসংখ্যা ভারতে ২,৯৬৭, বাংলাদেশে ৪৪০, নেপালে ২৩৫ এবং ভুটানে ১০০। ঘনবর্ষণ বনাঞ্চল (রেইনফরেস্ট), অরণ্যের জলাভূমি ও লম্বা ঘাসযুক্ত তৃণভূমির দিকে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বিচরণ লক্ষ করা যায়।
বাঘের বাহ্যিক বর্ণনা
রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখতে কেমন? প্রত্যক্ষদর্শীদের উত্তর, অসম্ভব সুন্দর। সাহিত্যের পাতার ‘ভয়ঙ্কর সুন্দর’ কথাটির বাস্তবিক অর্থ বুঝতে হলে আপনাকে রয়েল বেঙ্গলকে কাছ থেকে দেখতে হবে। মোটা পা, মজবুত দাঁত ও চোয়াল এবং সমস্ত দেহ জুড়ে রঙের বাহারি নকশাখচিত রয়েল বেঙ্গল টাইগার একটি স্তন্যপায়ী এবং মাংসাশী প্রাণী। এদের গায়ের রঙ পেটের দিকে হলুদ থেকে হালকা কমলা রঙের হয়। পায়ের ভেতরের দিকে সাদা রঙ দেখা যায়। গায়ের কমলা রঙের উপর লম্বালম্বি কালো, ধূসর বা বাদামি ডোরাকাটা দাগ দেখা যায়। লেজের দিকে এ দাগ গোলাকৃতির হয়ে যায়। জেনেটিক মিউটেশনের কারণে বেঙ্গল টাইগারের এক বিশেষ এবং দুর্লভ জাত হোয়াইট বেঙ্গলের দেখা মেলে, যাদের গায়ের রঙ সাদা হয়। রয়েল বেঙ্গলের চোখের রঙ হলদে হলেও হোয়াইট বেঙ্গলের রঙ হয় নীলচে।
অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, পৃথিবীর প্রতিটি বেঙ্গল টাইগারের গায়ের ডোরাকাটা দাগের ধরন একে অপরের থেকে আলাদা। অর্থাৎ, দুটো বাঘের ডোরাকাটা দাগ কখনই এক হবে না। অনেকটা মানুষের চেহারা বা আঙুলের ছাপের মতো। যদিও যমজদের ক্ষেত্রে চেহারা এক হতে পারে, তবে বাঘদের গায়ের দাগ এক হবে না। মূলত, এ বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে বাঘ গণনা করা হয়। একটি বাঘ গড়ে ১০-১৫ বছর পর্যন্ত বাঁচে। পুরুষ বাঘের ওজন গড়ে ২২৫ কেজি এবং বাঘিনীদের গড় ওজন ১৩৫ কেজি। এদের দেহের দৈর্ঘ্য প্রায় নয় ফুট। এদের দাঁত খুব শক্ত হয়। আকারে প্রায় ১০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের এই দাঁতের কামড় থেকে শিকার সহজে বের হতে পারে না।
শিকার এবং ভোজনবিলাস
রয়েল বেঙ্গল টাইগারের শক্তিমত্তার উপযুক্ত পরিচয় মেলে শিকারের সময়। মাংসাশী প্রাণী হওয়ার কারণে বাঘ মাঝারি থেকে বড় আকারের বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণী শিকার করে খায়। গাউর, ভারতীয় মোষ, সাম্বার হরিণ, চিত্রা হরিণ, বুনো শূকরসহ বিভিন্ন প্রাণী এদের ভোজনবিলাসিতার তালিকাভুক্ত। তবে এ তালিকা দেখে বাঘ শুধু বড় প্রাণী সাবাড় করে, তা ভেবে বিভ্রান্ত হবেন না। এরা খরগোশ, সজারুর মতো আকারে ছোট প্রাণীও ভক্ষণ করে। বনাঞ্চল ধ্বংসের ফলে খাবার ঘাটতি দেখা দিলে এরা বনের পার্শ্ববর্তী মানুষের বসতিতেও আক্রমণ করে। এরা একেবারে ৬০ কেজি পর্যন্ত খাদ্যগ্রহণ করতে পারে, তবে সচরাচর অল্প অল্প করে খেতে ভালোবাসে। তারা সাধারণত মানুষজনের সামনে পড়তে চায় না। কিন্তু কিছু কিছু বাঘের মানুষখেকো হয়ে ওঠার প্রমাণও পাওয়া গেছে। মানুষখেকো বাঘেরা অসুস্থ থাকে এবং স্বাভাবিকভাবে শিকার করতে অক্ষম হয়। আবার লোকালয়ের পাশে বাস করা বাঘরাও মানুষ আক্রমণ করতে পারে।
এদের একটি সীমাবদ্ধতা হচ্ছে, লম্বা দূরত্ব পর্যন্ত শিকারকে তাড়া করতে না পারা। এজন্য এরা ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে থাকতে পছন্দ করে। অনেকটা সামরিক কায়দায় ঘাপটি মেরে থাকা বাঘ সময় এবং সুযোগ বুঝে শিকারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং ঘাড় মটকে দেয়। ক্ষেত্রবিশেষে এরা ঘাড়ে কামড় বসাতে না পারলে শক্তিশালী থাবার মাধ্যমে শিকারকে বধ করে থাকে; এরপর শিকারকে টেনে তার ডেরায় নিয়ে যায় এবং সেখানেই সারে ভোজনপর্ব। মাঝে মাঝে এরা শিকার মুখে নিয়ে নদী পর্যন্ত পাড়ি দেয়।
বাঘের স্বভাব
বাঘ মানেই হিংস্র ও বন্য প্রাণী। শিকারি প্রকৃতির প্রাণী হওয়ার কারণে বাঘ অন্যান্য প্রাণীর প্রতি মোটেও বন্ধুসুলভ নয়, একথা নিশ্চিত বলা যায়। এরা একাকী থাকতে এবং শিকার করতে পছন্দ করে। তবে শীতকালে এদের ৩/৪ জনকে একসাথে দলবদ্ধ হয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। দৌড় এবং সাঁতারে সমান পারদর্শিতা দেখায় এরা, দিনের বেলায় ছায়াঘেরা এলাকায় বিশ্রাম করে এবং সন্ধ্যা অথবা ভোরের হালকা আলোয় শিকার করতে পছন্দ করে। এদের মাঝে মাঝে অতি গরমে জলের মধ্যে ডুব দিয়ে বিশ্রাম করতেও দেখা গেছে। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের স্মৃতিশক্তি অত্যন্ত প্রখর। ধারণা করা হয়, এরা কারো চেহারা একবার দেখলে আর ভোলে না। স্মৃতিশক্তি মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর চেয়ে বেশি বলে দাবি করেন বিজ্ঞানীরা।
খাদ্যসংকট দেখা না দিলে নিজের এলাকা ছেড়ে অন্য কোথাও হানা দেয় না এরা। নিজের সীমানা চিহ্নিত করার জন্য বাঘেদের তো কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার উপায় নেই। তাই তারা একটি অদ্ভুত কাজ করে। সীমান্তবর্তী অঞ্চলের গাছগাছালি এবং পাথরে মূত্র এবং কস্তুরীর মিশ্রণ ছড়িয়ে রাখে এবং অন্যান্য বাঘ এই মিশ্রণ দেখে সীমান্ত চিনে রাখে, অতঃপর অনধিকার প্রবেশ থেকে বিরত থাকে। তবে এত হিসেবের পরও কখনও কখনও দুই বা ততোধিক বাঘের মধ্যে লড়াই বেঁধে যায়। লড়াইকালে এরা গর্জন করে না, গলা থেকে শুধু হালকা শিসের মতো আওয়াজ বের হয়।
বংশবিস্তার
একাকী থাকতে পছন্দ করা রয়েল বেঙ্গল টাইগারের একমাত্র সামাজিক কর্মকাণ্ড হিসেবে ধরা যায় প্রজননক্রিয়া এবং সন্তান পরিচর্যাকে। অন্যান্য বন্যপ্রাণীর মতো এদের প্রজননের কোনো নির্দিষ্ট ঋতু নেই। একটি বাঘিনী বছরের ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যবর্তী সময়ে শাবকের জন্ম দেয়। একটি বাঘিনী একসাথে এক থেকে চারটি শাবকের জন্ম দিতে পারে। একটি পুরুষ বাঘ ৪ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয়ে ওঠে। স্ত্রী বাঘের ক্ষেত্রে প্রজননক্ষম হওয়ার বয়স তিন বছর হয়ে থাকে। বাঘিনীর গর্ভকাল প্রায় ১০৪ দিনের মতো হয়। কিছু ক্ষেত্রে এরা ৯৮তম দিন বা এর আগে শাবক জন্ম দেয়। আবার ১১০ দিনের পরেও জন্ম দিতে দেখা গেছে।
বাঘ শাবক জন্মের পর প্রথম তিন থেকে ছ’মাস দুধপান করে জীবনধারণ করে। জন্মের ১০ দিনের মাথায় এদের চোখ ফোটে। মোট জন্ম নেওয়া শাবকের মধ্যে ৫০ শতাংশ বিভিন্ন কারণে মারা যায়। বেঁচে থাকা পাঁচমাস বয়সী শাবককে মা বাঘ শিকারজীবনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। মোটামুটি দু’ বছর বয়সী বাঘ নিজের শিকার নিজে করতে শিখে যায় এবং একাকী জীবনযাপন শুরু করে।
রয়েল বেঙ্গল টাইগার সম্পর্কিত কিছু তথ্য
এবার রয়েল বেঙ্গল টাইগার সম্পর্কিত কিছু মজার তথ্য একনজরে দেখে নেওয়া যাক-
- রয়েল বেঙ্গল টাইগারের লালা জীবাণুনাশক এবং পচননিরোধক গুণসম্পন্ন। এ কারণে এরা দেহের কোথাও আঘাত পেলে সেখানে জিহ্বা দিয়ে লালা মালিশ করে দেয়। এই লালা রক্তপাত বন্ধ করতেও উপকারী।
- এদের গড় গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ৬০ কিলোমিটার।
- বাঘের গর্জন প্রায় ৩ কিলোমিটার দূর থেকেও শোনা যায়।
- বাঘ জাতীয় প্রাণীদের মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দাঁতের আকার বৃহত্তম।
- এদের কানের পেছনে সাদা ফোঁটা দেখা যায়। এর ফলে বাঘের মাথার পেছনেও এক জোড়া চোখ আছে বলে ভুল হয়।
- বাঘের সামনের পা পেছনের পায়ের চেয়ে দৈর্ঘ্যে ছোট। এর ফলে এই বাঘ প্রায় ২০-৩০ ফুট লম্বা লাফ দিতে পারে।
- দৌড়ানোর সময় বেঙ্গল টাইগার খুব দ্রুত দিক পরিবর্তন করতে পারে। এ বৈশিষ্ট্যের পেছনে লেজের ভূমিকা মুখ্য।
- বাঘের তাড়া করা প্রাণীদের মধ্যে সফলভাবে শিকারে পরিণত হওয়ার হার ১৫ শতাংশ।
- বাঘের ডোরাকাটা দাগ এদের চামড়ার উপরেও আছে। তাই দীর্ঘ লোম ফেলে দিলেও দাগ মুছে যায় না। রয়েল বেঙ্গল টাইগার পৃথিবীর একমাত্র প্রাণী, যাদের এই বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
এসব বৈশিষ্ট্য রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে পৃথিবীর অন্যান্য বাঘ থেকে আলাদা করেছে।
বাঘের বিপন্ন অবস্থা
ছোটবেলা মুরুব্বিদের মুখে শোনা বাঘের গল্পে প্রায়ই বাঘকে ‘মামা’ হিসেবে সম্বোধন করা হয়। এই বাঘ মামার গল্প শুনতে শুনতে আমরা কল্পনায় ডোরাকাটা হালুম হালুম ডাকা বাঘের চিত্র আঁকতে থাকি। দেশের জাতীয় পশু হিসেবে পরিচিত এই বাঘকে বাংলার গৌরব এবং তেজোদীপ্ততার প্রতীক হিসেবেও দেখা হয়। এই বাঘ মামা’র চিহ্ন বুকে নিয়ে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছে ক্রিকেট দলসহ আরো নানা ক্রীড়া সংগঠন। কিন্তু বাঘ মামারা আর ভালো নেই। যে বাঘ মামার গল্প শুনে শিশুরা বেড়ে ওঠে, সেই দিন বুঝি গেল। কিন্তু কেন ভালো নেই বাঘ মামা? কী তার দুঃখ? বাঘের দুঃখ হচ্ছে মানুষ। মানুষ দুই কারণে সুন্দরবনের অলংকার রয়েল বেঙ্গল টাইগার শিকার করে আসছে।
প্রথমত, প্রাচীনকাল থেকে হিংস্র বন্যপ্রাণী শিকার করাকে গৌরবের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ ভয়ংকর ধারণা এবং গৌরবের আশায় শিকারীরা বহু আগে থেকে রয়েল বেঙ্গল শিকারের নেশায় পড়েছে। দ্বিতীয়ত, বাঘের চামড়া, দাঁত, লোম, কঙ্কাল প্রভৃতিকে বহু রোগের মহৌষধ হিসেবে প্রচার করে চড়া দামে কালোবাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া বন ধ্বংস করে বসতি স্থাপনের সময় বাঘের আস্তানার দেখা পেলে মানুষ বাঘ হত্যা করছে। গত শতাব্দীতে এভাবেই ভারতীয় উপমহাদেশে প্রায় ৯৭ শতাংশ বাঘ হারিয়ে গেছে। বর্তমানে যে অল্পসংখ্যক বাঘ বেঁচে আছে, তারাও দ্রুত হারে হ্রাস পাচ্ছে। আবার জলবায়ু বদলের কারণে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়ছে। ফলে বাঘের আবাসস্থল হারিয়ে যাচ্ছে। এজন্য বাঘ মামারা আর ভালো নেই। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো কয়েক দশক পর রয়েল বেঙ্গল টাইগারের নাম ডাইনোসরের পাশে জাদুঘরে শোভা পাবে।
বাঘ বাঁচাও
১৯৭০ সালে ভারতে রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে রক্ষা করার জন্য বেশ কিছু প্রকল্প চালু করা হয়। ১৯৭২ সালে ভারতীয় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী সরকার রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে সংরক্ষণের জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করে। পরিবেশবাদী সংস্থা IUCN রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে বিপন্ন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। তাছাড়া নেপালেও বাঘ রক্ষার্থে নানা আইন প্রণিত হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও বাঘ রক্ষায় ‘টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান’ হাতে নেওয়া হয়েছে। এর প্রকল্পের আওতায় বাঘশুমারির মাধ্যমে বাঘের সংখ্যা নির্ধারণের পর এদের রক্ষায় নির্দিষ্ট এবং কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
এছাড়া স্মার্ট পেট্রল নামক একটি আধুনিক ব্যবস্থা চালু হয়েছে, যার মাধ্যমে বাঘের এলাকা নজরদারি করা হচ্ছে। তবে নির্দিষ্ট এবং পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না থাকায় প্রকল্পগুলো অনেকাংশেই ব্যর্থ হচ্ছে। তাই বাঘের সংখ্যা কমেই যাচ্ছে। বেশ কিছু অভয়ারণ্য নির্মাণ করা হলেও সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে না। স্থানীয়দের মধ্যে বাঘ শিকার আইন সম্পর্কে সচেতনতা না থাকায় অহরহ বাঘ নিধন চলছে।
আন্তর্জাতিক বাঘ সম্মেলনের প্রস্তাবনা অনুযায়ী, ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তবে একটু আগে আলোচ্য অব্যবস্থাপনাসহ অপরিকল্পিত শিল্পায়নের মাধ্যমে বারবার বাঘ রক্ষা প্রকল্প ব্যর্থ হচ্ছে। এই বিষয়ে অতিদ্রুত কার্যকরী কিছু না করা হলে বাঘদের আর রক্ষা করা সম্ভব হবে না। জাতীয় পশুর করুণ পরিণতি আমাদের জাতীয় ব্যর্থতায় রূপান্তরিত হবে। সুন্দরবন বাংলাদেশের জাতীয় বন। এ বন রক্ষার পেছনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার বড় ভূমিকা পালন করছে। যদি বাঘ না থাকে, তাহলে বনও একসময় হারিয়ে যাবে। প্রকৃতির আশ্চর্য, অনন্য এবং সুন্দরবনের রাজা রয়েল বেঙ্গল টাইগার ফের বাংলার বনে দাপটের সাথে রাজত্ব করুক, সেই প্রত্যাশায় আছে বাংলাদেশ।
[জাতীয় পশু রাজকীয় বাংলার বাঘ বইটি কিনতে ক্লিক করুন।]