১৯৯০’র দশকে ‘মিলিশিয়া মুভমেন্ট’ নামে যে নতুন আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল আমেরিকায়, তাকে অনেকে অভিহিত করে থাকেন মিলিশিয়া আন্দোলনের আধুনিক অধ্যায় হিসেবে। এই আন্দোলনের সদস্যরা প্রবল স্বকীয়তাবোধ এবং যাবতীয় ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্বাস করে। ৯০’র দশকে এই আন্দোলন আনুষ্ঠানিক নাম ও কাঠামো পেলেও এর শুরু আদতে বহু আগেই হয়। মহামন্দার সময়ে চলা ‘শার্ট মুভমেন্ট’ ছিল মিলিশিয়া গঠনের প্রাথমিক ধাপ। ৬০’এর দশকে উগ্র ডানপন্থীদের সশস্ত্র ‘মিনিটম্যান’ আন্দোলন মিলিশিয়ার গঠনকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করে।
এরপর, ৭০’এর দশকে আমেরিকার ৪০টি অঙ্গরাজ্যই মিলিশিয়া বা বেসরকারি আধা সামরিক বাহিনী গড়ে তোলার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্তু বিধিবাম। এই নিষেধাজ্ঞার পরই আমেরিকাজুড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো মিলিশিয়া বাহিনী গড়ে উঠতে শুরু করে। শ্বেত আধিপত্যবাদী, জায়নবাদ বিরোধী, নব্য-ফ্যাসিবাদ সমর্থক, নব্য-নাৎসিবাদ সমর্থক, অ্যান্টি-সেমেটিক সহ আরো নানান ভাবাদর্শ নিয়ে একের পর এক সৃষ্টি হতে থাকে ছোটবড় মিলিশিয়া গ্রুপ।
এই গ্রুপগুলোর ধ্যানধারণা কমবেশি একই রকম ছিল, আর তা হলো সরকার ও রাষ্ট্র কর্তৃক শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই, মানুষের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়ার বিরুদ্ধে লড়াই, আমেরিকা কর্তৃক সৃষ্ট সর্বগ্রাসী ‘নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার’ এর বিরুদ্ধে লড়াই। সরকার কর্তৃক আরোপিত কর, বিভিন্ন আইন এবং ব্যক্তিগত অস্ত্র মালিকানার নিষেধাজ্ঞাকে ধরা হয় সরকারি শোষণ হিসেবে। উল্লেখ্য, মিলিশিয়া গ্রুপগুলো ব্যক্তিগতভাবে অস্ত্র রাখার নিষেধাজ্ঞাকে অনেক বড় সমস্যা বলে মনে করে। কারণ, তাদের বিশ্বাস রাষ্ট্রীয় বাহিনী তাদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ এবং তারা নিজেরাই নিজেদের নিরাপত্তা বিধান করে নেবেন।
এতকিছুর পরও এই মিলিশিয়া গড়ে ওঠার ব্যাপারটি কোনো আন্দোলন হিসেবে অভিহিত হচ্ছিল না, কারণ তারা সবাই এক ছাতার নীচে আসতে সক্ষম হয়নি। এরই মাঝে ৮০’র দশকে উত্থান ঘটে ‘সারভাইবালিজম’ নামক অদ্ভুত এক রীতির। মানুষজন বিশ্বাস করতে শুরু করে যে, শীঘ্রই আমেরিকান শহুরে সমাজ ধ্বংস হবে পারমাণবিক আক্রমণে। তাই মানুষের উচিৎ শহর ছেড়ে মফস্বলে কিংবা গ্রামে গিয়ে বসবাস করা, অস্ত্রচালনা রপ্ত করে নিজের নিরাপত্তা নিজে বিধান করতে শেখা, সর্বোপরি চরমতম পরিস্থিতির জন্য নিজেকে তৈরি করা। এই সার্ভাইবালিজমে বিশ্বাসী মানুষগণও একধরনের মিলিশিয়া গড়ে তোলে। তবে ভাবাদর্শের দিক দিয়ে সেগুলো মূলধারার মিলিশিয়ার মতো নয়।
এ সময় আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছিল মিলিশিয়াগুলোর মাঝে। মিলিশিয়ায় বিশ্বাসী কিছু উদার গোছের নেতারা চাইতেন একেবারে সরকার পরিত্যাগ না করে বরং স্থানীয় মিলিশিয়াগুলোও সরকারি বাহিনীর মতোই দেশ ও সমাজের নিরাপত্তা বিধানের কাজে যোগ দিক। অবশ্য, এরকম চাওয়ার মতো লোকজনের সংখ্যা ছিল অত্যন্ত কম। তাছাড়া, মিলিশিয়াগুলোর তীব্র সরকারবিরোধী নীতি গ্রহণ চলতে থাকায় সরকারের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্কের ধারণা খড়কুটোর মতো ভেসে যায়।
একটু আগেই বলছিলাম, দেশজুড়ে গড়ে ওঠা মিলিশিয়া বাহিনী কিংবা সারভাইবালিস্টদের গ্রুপগুলো এক পতাকাতলে আসতে ব্যর্থ হচ্ছিল বিধায় তারা বড় আকারে নিজেদের প্রকাশও করত পারছিল না। এই অভাবটুকু পূরণ হয়ে যায় ৯০’র দশকের শুরুতেই। মিলিশিয়া গ্রুপ, শ্বেত আধিপত্যবাদী গ্রুপ, উগ্র ডানপন্থী গ্রুপ, সারভাইবালিস্ট গ্রুপ, ট্যাক্সবিরোধী গ্রুপ, সকলে মিলেই ঐক্যবদ্ধভাবে ‘প্যাট্রিয়ট মুভমেন্ট’ নামক এক নতুন আন্দোলনের সূচনা করলো। আর তাতেই কিস্তিমাত হয়ে গেল। ‘দেশপ্রেম আন্দোলন’, এই নামটাই তো যথেষ্ট! দেশব্যাপী মানুষের সমর্থন আসতে লাগলো এ আন্দোলনের জন্য। কাকতালীয়ভাবে এ সময়ই আমেরিকায় ইন্টারনেটের বিকাশ শুরু হয়। ফলে প্যাট্রিয়ট আন্দোলন আকাঙ্ক্ষার চেয়েও দ্রুত বিকাশ লাভ করতে লাগলো।
আধুনিক মিলিশিয়া আন্দোলন ১৯৯২ সালের ২১ আগস্টের ঘটনা থেকে শুরু হয়। ইউএস মার্শালসের ৬ জন সদস্য সেদিন গিয়েছিলেন ফ্লোরিডার নেপলস শহরের রুবি রিজ নামক এক এলাকা পরিদর্শনে। উদ্দেশ্য ছিল, বহুদিন যাবত অস্ত্র মামলায় পলাতক আসামি রেন্ডি উইভারকে অ্যামবুশ করা। মার্শালসের নিকট তথ্য ছিল যে, উইভার রুবি রিজে একটি ছোট্ট কুটির সদৃশ ঘরে অবস্থান করছেন। তারা উইভারের ছোট্ট সে ঘরটি শনাক্তও করে ফেলেন। কিন্তু বিপত্তি বাঁধায় উইভারের কুকুর স্ট্রাইকার। অপরিচিত মানুষজন দেখে কুকুরটি তীব্র আক্রোশে গর্জন শুরু করে।
কুকুরের গর্জন শুনে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসেন উইভার। কুকুরের বিরক্তির উৎস খুঁজে পেতে বাইরে বেরিয়ে আসে উইভারের ১৪ বছরের ছেলে স্যামি ও তার বন্ধু কেভিনও। তাদের অনুসন্ধানের নেতৃত্ব দিচ্ছিল কুকুরটি। এদিকে, মার্শালস সদস্যরা ততক্ষণে আশেপাশে ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে পড়েছেন। কুকুরকে অনুসরণ করে উইভারও ততক্ষণে ঝোপের কাছে পৌঁছে যান। এরপর কী ঘটেছিল তা নিয়ে রয়েছে বহুল বিতর্ক। কোনো উৎস থেকেই সঠিক বিবরণ পাওয়া যায়না। কেবল এতটুকু আমরা জানতে পারি যে, মিনিট দশেক পর সেখানে তিনটি প্রাণের অন্তর্ধান ঘটে। উইভারের ছেলে স্যামি, তার কুকুর স্ট্রাইকার আর একজন মার্শালস সদস্য বিল ডেগান!
ছেলের মৃতদেহ কোনোক্রমে নিজের ছোট কুঁড়েসদৃশ বাড়ির সামনে এনে বাড়িতে প্রবেশ করেন উইভার। আর মার্শালসদেরও কোনো অজানা কারণে শখ হলো রুবি রিজে একটি অদ্ভুত নাটুকে পরিবেশ তৈরি করার। তারা উইভারকে গ্রেফতারের জন্য এফবিআইয়ের সহায়তা চাইলেন। মাত্র তিনজন মানুষকে গ্রেফতারের জন্য তারা শতাধিক এফবিআই এবং স্থানীয় পুলিশ সদস্য আনালেন পরদিন। বাড়িতে আক্রমণ না করে বাড়ি ঘেরাও করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো এই ভয়ে যে, বাড়িতে বোমা থাকতে পারে! ২২ তারিখ তাদের স্নাইপারের গুলিতে নিহত হলেন উইভারের স্ত্রী ভিকি। আহত হলেন উইভার এবং কেভিন। স্নাইপারের আঘাতে গুরুতর আহত দুজন মানুষকেও তৎক্ষণাৎ গ্রেফতারের ইচ্ছে হলো না মার্শালসদের। তারা অবরোধ নাটক দীর্ঘায়িত করলেন আগস্টের শেষ পর্যন্ত!
এদিকে, ফেডারেল সরকারের পুলিশ ও এফবিআই বাহিনীর এই অবরোধ সুফল বয়ে আনে রেন্ডি উইভারের জন্য। দেশব্যাপী খবর ছড়িয়ে পড়ে যে ফেডারেল সরকার নির্মমভাবে একটি নির্দোষ পরিবারকে হত্যা করেছে। স্থানীয় মানুষজন এসে ভিড় করতে থাকে রুবি রিজের অবরোধ এলাকায়। জড়ো হয় ‘আরিয়ান ন্যাশনস’ নামক একটি শ্বেত আধিপত্যবাদী সংগঠন এবং আরো কিছু ডানপন্থী সংগঠনের সদস্যরা। উইভারের ব্যাপক জনসমর্থনের পালে বাড়তি হাওয়া যোগ করে পপুলিস্ট পার্টির সাবেক রাষ্ট্রপতি মনোনয়ন প্রার্থী বো গির্টজের উপস্থিতি। শেষ পর্যন্ত এই অবরোধ নাটক এফবিআই ও মার্শলসদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। বো গির্টজের নেতৃত্বে সাধারণ মানুষের সাথে সমঝোতা করে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয় ফেডারেল আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
এই ঘটনার জল এরপর বহুদূর গড়িয়েছে। উইভারের পক্ষ থেকে আগে গুলি ছোঁড়া হয়েছিল নাকি মার্শালসদের পক্ষ থেকে, তা নিয়ে চলে তুমুল বিতর্ক। অবশ্য সাধারণ মানুষ নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করে নেয় যে, মার্শালসরাই আগে আক্রমণ করেছে। তাছাড়া, এ ঘটনায় এফবিআইয়ের সংযুক্তির পর তাদের হাতে খুন হয় উইভারের স্ত্রী ভিকি। এই হত্যার দায়ে রুবি রিজের অভিযান পরিচালনা করা এফবিআই দলের প্রধান মাইকেল কাহোকে দেড় বছরের কারাদণ্ডও দেয়া হয়। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। দুর্নাম যা হবার হয়ে গেছে। দেশব্যাপী এফবিআইয়ের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা নড়বড়ে হয়ে যায়। আর উগ্র ডানপন্থীরা তো দীর্ঘদিন ধরেই মার্কিন রাষ্ট্রকাঠামো বিরোধী অবস্থানে ছিল। তাদের এ অবস্থানকে আরেক ধাপ এগিয়ে দেয় রুবি রিজের ঘটনা। এ ঘটনা আমেরিকায় মিলিশিয়া আন্দোলনের আধুনিক অধ্যায়ের সূচনা করে।
রুবি রিজের ঘটনার পর উগ্র ডানপন্থী সংগঠন কিংবা আরিয়ান ন্যাশনের মতো শ্বেত আধিপত্যবাদী সংগঠনগুলোর রাষ্ট্র ও সরকারের প্রতি ভরসার সমাপ্তি ঘটে। তথাকথিত ‘নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার’এ টিকে থাকবার জন্য নিজেদের সুরক্ষা নিজেদেরই করতে হবে, এরূপ বিশ্বাস তাদের মধ্যে বদ্ধমূল হয়। রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিজেদের রক্ষক ভাবার পরিবর্তে ভক্ষক ভাবতে শুরু করে এই শ্রেণী। আর নিরাপত্তার স্বার্থে নিজেদের সাথে রাখতে শুরু করে অস্ত্র, গড়ে উঠতে থাকে অসংখ্য অর্ধসামরিক ছোট ছোট বাহিনী, যারা একত্রে সংগঠিত হয়ে পরবর্তীতে মিলিশিয়া আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায়। এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির টোটকা ছিল সেই রুবি রিজই। ফেডারেল সরকারের বা আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর ‘দায়িত্বহীনতা’ এবং রুবি রিজে নির্বিচারে গুলি করার ঘটনা উল্লেখ করার মাধ্যমে আন্দোলনে নতুন মুখ যোগ করা হয়।
৯০’র দশকের দ্বিতীয়ার্ধে পুরো সময়টাই আমেরিকায় বিভিন্ন মিলিশিয়ার কিছুমাত্রায় সহিংস রূপ দেখা যায়। শ্বেত আধিপত্যবাদীরা ‘স্থানীয় আধিপত্যবাদ’ (লোকাল সুপ্রিমেসি) নামক নতুন ভাবধারার উন্মেষ ঘটায়। স্থানীয় বিভিন্ন সমস্যা তাদের আধাসামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য তারা স্থানে স্থানে বিভিন্ন ফেডারেল সংস্থা যেমন ‘ফরেস্ট সার্ভিস’, ‘ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট’ এর সদস্যদের কাজে বাঁধা দেয়, হামলা চালায়।
যেভাবেই হোক, যেমন করেই হোক, মিলিশিয়া আন্দোলনের জনপ্রিয়তা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছিল। কিন্তু সেই বিকাশে বাঁধ সাধে অতি উৎসাহী এক কর্মীর ন্যাক্কারজনক এক কাণ্ড। টিমোথি ম্যাকভেই নামক সে কর্মী ভেবেছিলেন, বোমা মেরে একটি ফেডারেল ভবন ধ্বসিয়ে দিতে পারলে তাদের আন্দোলন আরো বেগবান হবে। তিনি ‘ভি ফর ভেন্ডেটা’ সিনেমা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন কি না কে জানে! কিন্তু, ১৯৯৫ সালে ওকলাহোমায় তার সেই অতি উৎসাহী কর্ম ১৫৮ জনের জীবন কেড়ে নেয়! তাতে কি হঠাৎ করেই ছন্দপতন ঘটলো মিলিশিয়া আন্দোলনের?
না, মিলিশিয়া আন্দোলন ততদিনে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে গেছে, উগ্র আর অন্ধ সমর্থকদের দলে ভিড়িয়ে নিয়েছে, ছন্দপতনের তখন প্রশ্নই আসে না। ততদিনে আমেরিকাজুড়ে গঠিত হয়েছে ৯০০’র অধিক আধাসামরিক গ্রুপ, যাদের মোট সক্রিয় সদস্য সংখ্যা ৪০ হাজারের অধিক! অবশ্য তাদের স্থানীয় পৃষ্ঠপোষক এবং স্বক্রিয় সমর্থক হিসাব করলে সে সংখ্যাটা আড়াই লাখ ছাড়িয়েছিল! তবে ২০০০ সালের পর মিলিশিয়া আন্দোলনের ছোট ছোট গ্রুপগুলো একত্রিত হয়ে আকারে বড় গ্রুপ গড়ে তোলে। ফলে, বুশ সরকারের সময় মিলিশিয়া গ্রুপের সংখ্যা কমে গেলেও আদতে এ আন্দোলন দুর্বল হয়নি।
বর্তমানে আমেরিকায় সক্রিয় মিলিশিয়া গ্রুপের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে আছে ‘থ্রি পার্সেন্টারস’, ‘মিশিগান মিলিশিয়া’, ‘মিলিশিয়া মন্টানা’, ‘ওথ কিপারস’, ‘নিউ ইয়র্ক লাইট ফুট’। সময়ের সাথে সাথে এদের কৌশলগত দিকে অনেক পরিবর্তন এলেও চিন্তাচেতনায় কোনো পরিবর্তনই আসেনি। এখনো এই মিলিশিয়া গ্রুপগুলোর প্রধান বিশ্বাসই হলো ফেডারেল সরকারে ষড়যন্ত্র এবং ‘নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার’। অবশ্য সাম্প্রতিককালে মিলিশিয়া গ্রুপগুলো কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত। এই দ্বিধার কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়া।
বারাক ওবামার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়টা ছিল আমেরিকান মিলিশিয়া গ্রুপগুলোর স্বর্ণযুগের মতো! ২০০৮ থেকে ২০১১ সালেই মিলিশিয়া গ্রুপের সংখ্যা ৪২ থেকে বেড়ে ৩০০-তে উন্নীত হয়। এর বড় কারণ টি পার্টি আন্দোলন। টি পার্টি আন্দোলন হয়েছিল ফেডারেল সরকারের ঋণ মওকুফ ও ওবামাকেয়ার বিলের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে মিলিশিয়া আন্দোলনের ডিএনএতেই রয়েছে সরকারবিরোধীতা। ফলে ব্যাপক হারে মিলিশিয়া সদস্যরা টি পার্টি আন্দোলনে যোগ দেয় এবং তাদের নিজেদের সদস্য সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়।
কিন্তু ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হয়ে যেন মিলিশিয়া আন্দোলনের ভবিষ্যতই শংকার মধ্যে ফেলে দেন। দীর্ঘকাল ধরে যে ফেডারেল সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রতত্ত্ব নিয়ে বেঁচে ছিল এই মিলিশিয়া আন্দোলন, সেই ষড়যন্ত্র তত্ত্বই এবার ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। কেননা, নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট নিজেই ছিলেন একজন কট্টর ডানপন্থী, শ্বেত আধিপত্যবাদী! তাহলে মিলিশিয়া আন্দোলনের শ্বেত আধিপত্যবাদী ও ডানপন্থীরা (মূলত এই আন্দোলনের প্রায় সবাই শ্বেতাঙ্গ এবং ডানপন্থী) কি এবার সরকারের সমর্থন দেয়া শুরু করবে? নাকি ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে নিজেদের ভাবাদর্শের বিপরীতে গিয়ে হলেও একজন শ্বেত আধিপত্যবাদী ও ডানপন্থী প্রেসিডেন্টের বিরোধীতা করবে?
ট্রাম্প ইস্যুতে মিলিশিয়া আন্দোলন স্তিমিত হবার পরিবর্তে পুরনো খোলস পাল্টে নতুন রূপে আবির্ভূত হয়। মিলিশিয়া আন্দোলনের একটা বড় অংশ ট্রাম্পের আগমনের পর থেকে কিছুটা উদারকণ্ঠে কথা বলতে শুরু করে এবং ট্রাম্পের শ্বেত আধিপত্যবাদী আচরণের নিন্দা জানায়! এ পর্যায়ে এসে থ্রি পার্সেন্টারস আর ওথ কিপারসের মতো মিলিশিয়া গ্রুপগুলো উগ্র ডানপন্থী আর শ্বেত জাতীয়তাবাদীদের থেকে কিছুটা আলাদা হয়ে যায়। আর পূর্বেকার সেই ‘সরকারের সাথে কাজ করা’র ধারণাটি নতুন করে প্রাণ পায়। কিছু কিছু অঙ্গরাজ্যে তো ইতোমধ্যে রিপাবলিকনদের সাথে মিলিশিয়া গ্রুপগুলোর সমঝোতাও দেখা গেছে। পোর্টল্যান্ডে তো রীতিমতো রিপাবলিকান কিছু সভা সমাবেশের নিরাপত্তার দায়িত্বও দেয়া হয়েছে মিলিশিয়াদের। ফলে ভবিষ্যতে কী হবে তা নিশ্চিত করে বলা না গেলেও, বর্তমানকালের প্রেক্ষাপটে অন্তত এটা বলা চলে যে আধুনিককালের মিলিশিয়া আন্দোলনকে কিছুটা হলেও বশে আনতে সক্ষম হয়েছে রিপাবলিকানরা অথবা আরো নির্দিষ্ট করে বললে, টি পার্টির সদস্যরা। উগ্র স্বকীয়তাবাদী গোষ্ঠীর সাথে তাদের এই লোক দেখানো লিয়াজো কতদিন টিকে থাকে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।