২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত ইসরায়েলের সাধারণ নির্বাচনের পূর্বে বর্তমান ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা করেছিলেন, তিনি যদি পুনঃনির্বাচিত হন তাহলে পশ্চিম তীরের জর্ডান উপত্যকা এবং মৃত সাগরের উত্তর-পশ্চিমাংশে ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করবেন তথা ইসরায়েলের অন্তর্ভুক্ত করে নেবেন। একই সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্মতিক্রমে পশ্চিম তীরে অবস্থিত ইহুদী বসতিগুলোও ইসরায়েলের অন্তর্ভুক্ত করে নেবেন। জাতীয় ঐকমত্যের সরকারের প্রধান হিসেবে নেতানিয়াহু পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর গত ২৫ মে, ২০২০ এ ঘোষণা করেন যে, জুলাইয়ের ১ তারিখ হতে এই অন্তর্ভুক্তি প্রক্রিয়া শুরু হবে। ইসরায়েলের এই পদক্ষেপকেই বলা হচ্ছে পশ্চিম তীর অ্যানেক্সেশন বা সংযুক্তিকরণ।। আজকের আলোচনায় এই অ্যানেক্সেশনের বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব।
প্রথমেই অ্যানেক্সেশন কী তা জেনে নেওয়া যাক। একটি রাষ্ট্র যখন অন্য একটি রাষ্ট্রের ভূখণ্ড জোরপূর্বক দখল করে নিজ রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত করে নেয় তখন তাকে অ্যানেক্সেশন বা অন্তর্ভুক্তিকরণ বলে। উদাহরণ স্বরূপ- ২০১৪ সালে রাশিয়া ইউক্রেনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। ইসরায়েলেরও ১৯৮০ সালে পূর্ব জেরুজালেম এবং ১৯৮১ সালে সিরিয়ার গোলান মালভূমি অ্যানেক্স করে নিয়েছে যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাদে অন্য কোনো দেশ আজ পর্যন্ত স্বীকৃতি দেয়নি। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে, যেকোনো ধরনের অ্যানেক্সেশন সম্পূর্ণরূপে অবৈধ।
পশ্চিম তীর
বর্তমান ফিলিস্তিন দুইটি অঞ্চল নিয়ে গঠিত- পশ্চিম তীর এবং গাজা। এই দুটি অঞ্চলের মধ্যে পশ্চিম তীর হচ্ছে প্রধান ভূমি। জর্ডান নদীর পশ্চিমে অবস্থিত বলে একে পশ্চিম তীর বলা হয়। এর পূর্ব দিকে জর্ডান এবং বাকী তিন দিকে ইসরায়েল অবস্থিত। ২০০২ সাল থেকে ইসরায়েল পশ্চিম তীরের এই তিন দিকে ৮ মিটার উঁচু এবং প্রায় ৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি দেয়াল নির্মাণ করছে। ইসরায়েলের ভাষ্য অনুযায়ী, এই দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে নিরাপত্তা জনিত কারণে।
১৯৬৭ সালের আরব ইসরায়েল যুদ্ধে ইসরায়েল এই পশ্চিম তীর দখল করে নেয়। পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালে ইসরায়েল সরকার এবং পিএলও এর মধ্যে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যা অসলো অ্যাকর্ড নামে পরিচিত।
অসলো অ্যাকর্ড অনুযায়ী, পশ্চিম তীরকে তিনটি এলাকায় বিভক্ত করা হয়েছে- এরিয়া A, এরিয়া B এবং এরিয়া C। এরিয়া A হল পশ্চিম তীরের ১৮% এলাকা নিয়ে গঠিত যেখানে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ শাসন করে, এরিয়া বি ২২% এলাকা নিয়ে গঠিত যেখানে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক দিকগুলো দেখভাল করে এবং ইসরায়েল রয়েছে নিরাপত্তার দায়িত্বে। পশ্চিম তীরের বাকি ৬০% এলাকা নিয়ে গঠিত এরিয়া C, অসলো অ্যাকর্ড অনুযায়ী যার নিয়ন্ত্রণ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করার কথা থাকলেও ইসরায়েল তা করেনি। বরং এই এরিয়া সি এর নিরাপত্তা, নির্মাণ, কৃষি, প্ল্যানিং থেকে শুরু করে সমস্ত নাগরিক সুযোগ সুবিধার নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একটি ইউনিট COGAT (Coordinator of Government Activities in the Territories) এর হাতে। পুরো পশ্চিম তীর জুড়ে প্রায় ৭০০ রাস্তা প্রতিবন্ধক এবং ১৪০ মিলিটারি চেকপয়েন্ট রয়েছে যার মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
বর্তমানে পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেম মিলে প্রায় ৩০ লক্ষ ফিলিস্তিনি বসবাস করে। এ ছাড়াও ২৫০ ইহুদি বসতিতে (১৩০টি অফিসিয়াল, ১২০ টি আনঅফিসিয়াল) রয়েছে ৬ লক্ষ থেকে সারে সাত লক্ষ ইহুদির বসবাস যা ইসরায়েলের মোট ইহুদী জনসংখ্যার ১০%। ইসরায়েলের মূল ভূমি থেকেও পশ্চিম তীরে ইহুদি জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি।
আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে এই ইহুদি বসতিগুলো সম্পূর্ণ অবৈধ। কেননা জেনেভা কনভেনশনের আর্টিকেল ৪৯ এ বলা আছে যে, “The occupying power shall not deport or transfer parts of it’s own civil population into the territory it occupies” অর্থাৎ দখলদার শক্তি তার নিজস্ব জনসংখ্যার কোনো অংশ দখলকৃত অঞ্চলে নির্বাসন বা স্থানান্তর করবে না। সে হিসেবে এই বসতি নির্মাণ জেনেভা কনভেনশনের সরাসরি লঙ্ঘন। কিন্তু ইসরায়েল কবেই-বা আন্তর্জাতিক আইনকে পাত্তা দিয়েছে!
এবার জর্ডান উপত্যকা প্রসঙ্গে আসি। জর্ডান উপত্যকা হলো পশ্চিম তীরের পূর্ব দিকের লম্বা আকৃতির একটি সীমান্তবর্তী অংশ যা পশ্চিম তীরকে জর্ডানের সাথে যুক্ত করেছে। ১০৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই এলাকায় প্রায় ৬৫ হাজার ফিলিস্তিনি এবং ৩০টি অবৈধ বসতিতে ১১ হাজার ইহুদি সেটেলাররা বসবাস করে। উল্লেখ্য, জর্ডান উপত্যকার বেশিরভাগ অংশই এরিয়া C এর অন্তর্গত।
জর্ডান উপত্যকার গুরুত্ব
পৃথিবীর সবচেয়ে নিচু এই ভূমি তথা উপত্যকা পশ্চিম তীরের মোট ভূমির ৩০ শতাংশ এবং কৃষি আবাদযোগ্য ভূমির ৫০ শতাংশ। এখানে রয়েছে প্রাকৃতিক পানির বৃহৎ উৎস। খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ এই উপত্যকায় সারা বছরই বিভিন্ন ফলমূল এবং শাকসবজি উৎপাদিত হয়। বিশ্ব ব্যাংকের এক রিপোর্টে দেখা গেছে, ফিলিস্তিন এই এলাকার খনিজ সম্পদকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারলে প্রতিবছর ৯১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থনীতিতে যোগ হবে। আরও দেখা গেছে যে, ফিলিস্তিনি কৃষকেরা ইসরায়েল নিয়ন্ত্রিত জমি এবং পানি ব্যবহার করতে পারলে প্রতিবছর আরও ৭০৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থনীতিতে যুক্ত হতো। উপত্যকার দক্ষিণে অবস্থিত মৃত সাগর এবং প্রাচীন শহর জেরিকোকে কেন্দ্র করে রয়েছে টুরিস্ট স্পট। এসকল বিষয় বিবেচনা করে জায়গাটির অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়।
এছাড়া জর্ডানের সাথে ৯৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত এবং সীমান্তে অবস্থিত দুইটি ক্রসিং- শেখ হুসেইন ব্রিজ এবং আল কারামেহ ব্রিজ এই উপত্যকার সামরিক কৌশলগত গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণে।
কতটুকু অ্যানেক্স করতে চায়?
ইসরায়েলের অ্যানেক্সেশন পরিকল্পনায় পশ্চিম তীরের জর্ডান উপত্যকা, মৃত সাগরের উত্তর পশ্চিমাংশ এবং পশ্চিম তীরে অবস্থিত ইহুদি বসতিগুলো রয়েছে যা সবমিলিয়ে পশ্চিম তীরের প্রায় ৩০ শতাংশ। তবে নেতানিয়াহু প্রাথমিকভাবে শুধুমাত্র ইহুদি বসতিগুলো অ্যানেক্স করতে পারেন যা পশ্চিম তীরের ৩ শতাংশ। বাকি ২৭ শতাংশ এলাকা ওয়াশিংটনের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে অ্যানেক্স করা হবে।
কেন করতে চায়?
প্রশ্ন জাগতে পারে, জর্ডান উপত্যকা এবং ইহুদি বসতিসহ পুরো পশ্চিম তীরের বেশিরভাগ এলাকাই তো ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে, তাহলে অ্যানেক্স করার কি দরকার। উত্তর হল, পশ্চিম তীর ইসরায়েলের দখলে (Occupied) এবং সেখানে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থাকলেও সেখানে ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব নেই। তাই সার্বভৌমত্বের মাধ্যমে উক্ত এলাকাগুলিতে ইসরায়েল তার নিয়ন্ত্রণ আরও পাকাপোক্ত করতে চাইছে। মূলত সেসব এলাকা অ্যানেক্সেশনের মাধ্যমে নেতানিয়াহু ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন করছেন। এছাড়া আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। সেসব নিয়ে আলোচনা করা দরকার।
প্রথমত, ইহুদিরা বিশ্বাস করে যে, বর্তমান পশ্চিম তীরে প্রাচীন ইসরায়েল রাজ্যের ‘জুডিয়া ও সামারিয়া’ অঞ্চল অবস্থিত। তাই তারা মনে করে, এই অঞ্চল ইসরায়েল রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত।
দ্বিতীয়ত, জর্ডান উপত্যকার অর্থনৈতিক এবং সামরিক গুরুত্ব অ্যানেক্সেশনের অন্যতম একটি কারণ। ইসরায়েল উপত্যকাটি অ্যানেক্স করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে চায়। একই সঙ্গে ইসরায়েল এই কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় একটি প্রতিরক্ষা বলয় তৈরি করতে চাচ্ছে, যাতে করে পূর্ব দিকের আরব রাষ্ট্রসমূহ থেকে আসা যেকোনো হুমকিকে সহজেই প্রতিহত করা যায়।
প্রশ্ন জাগতে পারে, এ বছরই কেন এই অ্যানেক্সেশন, ইসরায়েল এটি আগে কেন বাস্তবায়ন করতে চাইল না। তার উত্তর হল, এ বছরের জানুয়ারিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প Middle East Peace Plan নামক একটি বিতর্কিত পরিকল্পনা প্রকাশ করেন যেখানে জর্ডান উপত্যকাসহ পশ্চিম তীরের ৩০ শতাংশ এলাকার উপর ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব তথা অ্যানেক্সেশনের কথা বলা হয়েছে। তাই নেতানিয়াহু এবং অতি জাতীয়তাবাদী ইহুদিরা ভাবছে, উক্ত এলাকাগুলি অন্তর্ভুক্তির এটাই সুবর্ণ সুযোগ। ট্রাম্পকে ‘হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলের এযাবতকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু’ বলে নেতানিয়াহুর ঘোষণায়ও এর প্রতিফলন পাওয়া যায়। ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা অ্যানেক্সেশনের অন্যতম একটি কারণ।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে্র প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে যেখানে ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন জো বাইডেন, যিনি এই অ্যানেক্সেশন বিরোধী। নির্বাচনে যদি ট্রাম্প হেরে যান তাহলে ইসরায়েল অ্যানেক্সেশনে মার্কিন সমর্থন হারাবে। তাই নভেম্বরের আগেই অ্যানেক্সেশন বাস্তবায়নে ইসরায়েলের এত তাড়াহুড়া।
চতুর্থত, দখলকৃত ভূমিগুলোতে ইহুদি বসতি নির্মাণ করতে হলে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন লাগে যা সময়সাপেক্ষ। অ্যানেক্সেশনের মাধ্যমে উক্ত এলাকাগুলিতে অবস্থিত ইহুদি বসতিগুলো একদিকে যেমন ‘জায়েজ’ হয়ে যাবে অন্যদিকে ইসরায়েল খুব সহজেই আরও বেশি বেশী ইহুদি বসতি নির্মাণ করতে পারবে এবং সেসবের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে পারবে।
অ্যানেক্সেশনের ফলাফল
অ্যানেক্সেশন ইসরায়েলে ডানপন্থী রাজনীতিবিদদেরকে আরও সুবিধাজনক অবস্থানে পৌঁছে দেবে, তাদের ক্ষমতায়নে সহায়তা করবে এবং অবৈধ ইহুদি সেটেলারদের জন্য এটি আশীর্বাদ হয়ে আসবে। অন্যদিকে, পশ্চিম তীর চারদিক হতেই ইসরায়েল দ্বারা আবদ্ধ হয়ে পড়বে। একই সাথে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য বরাদ্দকৃত ভূমির পরিমাণও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। এই অন্তর্ভুক্তির ফলে ফিলিস্তিনের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কেননা মোট আবাদযোগ্য কৃষি জমির অর্ধেক জমি এবং জর্ডান নদীর পানি ফিলিস্তিনের হাতছাড়া হয়ে যাবে। এছাড়া, অ্যানেক্সেশন হলে অন্তর্ভুক্ত এলাকার ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলি নাগরিকত্ব পাবে কিনা তাও অনিশ্চিত, না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
সর্বোপরি, দ্বি-রাষ্ট্রিক সমাধানের সম্ভাবনা চিরদিনের জন্য হারিয়ে যাবে, যদিও অনেক বিশ্লেষক মনে করেন সে সম্ভাবনা অনেক আগেই হারিয়ে গেছে। আরেকটি বিষয় হল, ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনায় বলা আছে যে, শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ৪ বছর পর্যন্ত ইসরায়েল পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন করতে পারবে না। কিন্তু এখন যে বসতিগুলো রয়েছে সেগুলো অ্যানেক্স করতে পারবে। প্রশ্ন হলো, বিদ্যমান অবৈধ বসতিগুলোর স্বীকৃতি দিয়ে অবৈধ বসতি না নির্মাণের এই মার্কিন উপদেশ কি ইসরায়েল মানবে?
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় শুরু থেকেই ইসরায়েলকে অ্যানেক্সেশন সম্পর্কে সতর্ক করে আসছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, জর্ডান, মিশর প্রভৃতি দেশ এবং সংস্থা এর বিরোধিতা করে আসছে। এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইসরায়েলের উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাও জারি করতে পারে। জর্ডানের বাদশাহ ইঙ্গিত দিয়েছেন, এর ফলে জর্ডান এবং ইসরায়েলের মধ্যকার শান্তিচুক্তি ঝুঁকিতে পড়বে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন যে, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি অ্যানেক্সেশন আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের প্রতিনিধিত্ব করবে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস হুশিয়ারি দিয়েছেন যে, এমনটি হলে তিনি ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে করা সব চুক্তি ভঙ্গ করবেন। একই সঙ্গে গাজা এবং পুরো পশ্চিম তীর নিয়ে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ঘোষণাও করতে পারে তারা।
এই অ্যানেক্সেশনের বিরোধিতা করে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত ইউসেফ আল ওতাইবা ইসরায়েলি পত্রিকায় একটি নিবন্ধ লিখেছেন যেখানে তিনি বলেছেন, “এটি সহিংসতাকে উস্কে দেবে এবং চরমপন্থিদের উত্থান ঘটাবে”। অপরদিকে ইউরোপের এক হাজারের বেশি এমপি এই অ্যানেক্সেশনের তীব্র আপত্তি জানিয়ে এক চিঠি দিয়েছে যাদের মধ্যে ২৪০ জন ব্রিটিশ এমপি।
শেষকথা
ট্রাম্পের তথাকথিত ‘Deal of the century’ এবং ইসরায়েলের পশ্চিম তীর সংযুক্তিকরণের ফলে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সামনে উঠে এসেছে। প্রথমত, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ এবং পক্ষপাতদুষ্ট। পশ্চিম তীর সংযুক্তিকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে তা আরও একবার প্রমাণিত হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রের ছত্রছায়ায় আন্তর্জাতিক আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে ইসরায়েলের একের পর এক বসতি নির্মাণ এবং সেগুলো অ্যানেক্সেশনের পরে দ্বি-রাষ্ট্রিক সমাধানের সম্ভাবনা কতটুকু অবশিষ্ট থাকে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়।
যদি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পশ্চিম তীরের নির্দিষ্ট অংশে ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব আরোপ করার প্রতিশ্রুতি পূরণ করেন তাহলে তিনি শুধু এই অঞ্চলে দশকের পর দশক ধরে চলা বাস্তবতার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেবেন মাত্র। কেননা বাস্তবে ইসরায়েল পশ্চিম তীরকে বহু আগেই সংযুক্ত করে নিয়েছে। সুতরাং বহু আগেই মৃত দ্বি-রাষ্ট্রিক সমাধানকে ছুড়ে ফেলে ইহুদি এবং ফিলিস্তিনিদের জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করবে এমন ‘একক রাষ্ট্র’ সমাধানের কথা পর্যালোচনা করার এখনই উপযুক্ত সময় ।