- ‘আনডকুমেন্টেড’ একটি সিরিয়ান-লেবানীজ মিনি সিরিজ, যা সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত।
- এটি আরবি ভাষায় নির্মিত বিশ্বের প্রথম ইন্টারঅ্যাকটিভ ওয়েব ভিত্তিক ড্রামা সিরিয়াল।
- প্রতিটি পর্ব ইউটিউব, ফেসবুক অথবা অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে বিনামূল্যে দেখা যাবে।
- ইউটিউবে প্রতিটি পর্বের সাথে ইংরেজি সাবটাইটেল যুক্ত করা আছে, ফলে আন্তর্জাতিক দর্শকরাও এটি উপভোগ করতে পারবেন।
إختر بنفسك كيف تشاهد، أول مسلسل تفاعلي من إنتاج Spring Entertainment اضغط وشاهد على الموقع : www.undocumented.xyzأو على قناة اليوتيوب : http://bit.ly/2pfvBU7
Posted by مسلسل بدون قيد on 5 जानेवारी 2018
২০১১ সালের আরব বসন্ত শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সিরিয়া ছিল মধ্যপ্রাচ্যের বিনোদন জগতের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। বিশেষ করে সিরিয়ান ধারাবাহিক নাটকগুলোর জনপ্রিয়তা ছিল আকাশ ছোঁয়া। এমবিসি (MBC) সহ মধ্যপ্রাচ্যের জনপ্রিয় টিভি চ্যানেলগুলোতে যে ধারাবাহিক নাটকগুলো প্রচারিত হতো, তার একটি বড় অংশই নির্মিত হতো সিরিয়ার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে। বিশেষ করে রমজান মাসে তারাবীর নামাযের পর প্রতি বছর এমবিসিতে যে অত্যন্ত সুনির্মিত এবং জনপ্রিয় ঐতিহাসিক ধারাবাহিক নাটকগুলো প্রচারিত হতো, সেগুলোর অধিকাংশই হতো সিরিয়া ভিত্তিক।
উদাহরণস্বরূপ, সমগ্র আরব বিশ্ব জুড়ে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ধারাবাহিক বাব আল-হারা ছিল সিরিয়ানদের নির্মিত, পরিচালিত এবং অভিনীত। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রা) এর জীবনীর উপর ভিত্তি করে নির্মিত আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ঐতিহাসিক ধারাবাহিক ‘ওমার’ যদিও সৌদি আরব এবং কাতারের যৌথ প্রযোজনা ছিল, কিন্তু এর পরিচালক হাতেম আলি সহ কলাকুশলীদের একটি বড় অংশই ছিল সিরিয়ান।
You get to choose how the story unfolds in this interactive Syrian drama pic.twitter.com/V0KPWRNH7l
— TRT World (@trtworld) February 21, 2018
কিন্তু এ সবই আরব বসন্তের আগের কথা। ২০১১ সালে বিদ্রোহ শুরুর পরপরই সিরিয়ার নাটক নির্মাণ শিল্প হুমকির মুখে পড়ে। সৌদি আরব সহ অধিকাংশ উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্র বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় এবং আসাদ সরকারের সাথে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করে। ফলে এমবিসি সহ মধ্যপ্রাচ্যের প্রধান প্রধান টিভি নেটওয়ার্কগুলো সিরিয়ান প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো কর্তৃক নির্মিত অনুষ্ঠানগুলো ক্রয় এবং প্রচার করা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। পরবর্তীতে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ ভয়াবহ আকার ধারণ করলে সিরিয়ানদের পক্ষে নাটক নির্মাণ করাই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। অনেক প্রযোজক-পরিচালক এবং কলাকুশলী পার্শ্ববর্তী দেশ লেবাননে গিয়ে আশ্রয় নেন। প্রচলিত পদ্ধতিতে টিভি চ্যানেলের জন্য অনুষ্ঠান নির্মাণ কঠিন হয়ে পড়ায় অনেকেই ঝুঁকে পড়েন বিকল্প মাধ্যমের দিকে।
“বেদুন ক্বেইদ” (بدون قيد) তথা “আনডকুমেন্টেড” (Undocumented) হচ্ছে সেরকমই একটি বিকল্প ধারাবাহিক নাটক। এটিকে বলা হচ্ছে আরব বিশ্বের প্রথম ইন্টারঅ্যাকটিভ ওয়েব ভিত্তিক ড্রামা সিরিয়াল। ধারাবাহিকটি কোনো টিভি চ্যানেলে প্রচারের জন্য নির্মিত হয়নি। এটি নির্মিত হয়েছে ইন্টারনেট ভিত্তিক দর্শকদের জন্য, যারা এর ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল অথবা ফেসবুক পেজ থেকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এটি দেখতে পারবেন। ইউটিউবে প্রতিটি পর্বের সাথে ইংলিশ সাবটাইটেল যুক্ত করা আছে, ফলে আন্তর্জাতিক দর্শকরাও সহজেই এটি উপভোগ করতে পারবেন।
আর দশটি ওয়েব ভিত্তিক ধারাবাহিকের সাথে আনডকুমেন্টেড এর পার্থক্য হচ্ছে, এর কাহিনীর ধারাবাহিকতা নির্দিষ্ট করা নেই। দর্শকরা নিজের মতো করে এর গতিপ্রবাহ বাছাই করতে পারবেন। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত এই ধারাবাহিকটিতে মোট ২৯টি পর্ব আছে। পর্বগুলো পাঁচটি গ্রুপে বিভক্ত- একটি ভূমিকা, একটি উপসংহার এবং তিনটি প্রধান চরিত্রের উপর নয়টি করে মোট (৩×৯ =) ২৭টি পর্ব। প্রতিটি পর্বের ব্যাপ্তি মাত্র দুই থেকে পাঁচ মিনিট করে। সমগ্র ধারাবাহিকটির মোট রান টাইম মাত্র ১০০ মিনিট (১ ঘন্টা ৪০ মিনিট)।
প্রথম পর্বটির নাম “বিদায়া” (البداية) বা প্ররম্ভ। মাত্র ২ মিনিট ৫৪ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের এই পর্বটিতে “রিম”, “কারিম” এবং “কর্নেল ওয়াফিক” নামের তিনটি চরিত্র পরস্পরের মুখোমুখি হয়, যাদের অতীত জীবনের কাহিনী পরস্পরের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত। এরপর কাহিনী তিনভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। পৃথক পৃথকভাবে নয়টি করে মোট সাতাশটি পর্বে এই তিন চরিত্রের অতীত জীবনের কাহিনী এবং তারা কীভাবে এখানে একত্রিত হলো, তা তুলে ধরা হয়।
প্রতিটি কাহিনী আপাতদৃষ্টিতে ভিন্ন ভিন্ন হলেও এর চরিত্রগুলো পরস্পরের সাথে সম্পর্কিত, অনেক ক্ষেত্রে নিজেদের অজান্তেই। তবে ধারাবাহিকতার দিক থেকে কাহিনীগুলো পরস্পরের উপর নির্ভরশীল নয়। এবং কাহিনীগুলো কোন ধারাবাহিকতায় দেখতে হবে, সেটিও নির্ধারণ করা নেই। ফলে আপনি নিজের ইচ্ছেমতো রিম (ريم), কারিম (كريم) বা ওয়াফিক (وفيق)– এদের যেকোনো একজনের কাহিনী আগে, অন্যজনের কাহিনী পরে দেখতে পারবেন। সবশেষে অবশ্য তিনজনের গল্প একবিন্দুতে এসে মিলিত হবে, যা আপনি দেখতে পারবেন শেষ পর্ব “নিহায়া” (النهاية) বা সমাপ্তিতে।
বিভিন্ন চরিত্রের মধ্যে ইন্টারকানেক্টিভিটি বা আন্তঃসংযোগ সাহিত্যে বা চলচ্চিত্রে নতুন কোনো ধারণা না। অনেক বিখ্যাত উপন্যাস এবং চলচ্চিত্র আছে এই ধারণার উপর নির্মিত। অস্কারজয়ী মেক্সিকান চলচ্চিত্রকার আলেহান্দ্রো গঞ্জালেস ইনিয়ারিতুর প্রথম চলচ্চিত্র “অ্যামোরেস পেরোস”কে এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে দেখানো যায়, যেখানে তিনটি আপাত ভিন্ন ভিন্ন গল্প বলা হয়। কিন্তু তিনটি গল্পেরই চরিত্রগুলো পরস্পরের সাথে সম্পর্কিত, যারা গল্পের শেষে একটি বিন্দুতে এসে একত্রিত হয়। অথবা বিখ্যাত মিসরীয় চলচ্চিত্র “কায়রো ৬৭৮” এর কথাও স্মরণ করা যেতে পারে, যার উপর আমাদের লেখা একটি বিস্তারিত রিভিউ আছে এই লিংকে। সেখানেও একইভাবে ভিন্ন ভিন্ন তিনটি ঘটনার চরিত্রগুলো পরবর্তীতে একটি বিন্দুতে মিলিত হয়।
অন্যান্য চলচ্চিত্রের বা নাটকের সাথে আনডকুমেন্টেড এর প্রধান পার্থক্য হলো, সেগুলো সিনেমা হলে বা টিভি চ্যানেলে মুক্তি পাওয়ায় নির্মাতারা যে ধারাবাহিকতায় কাহিনী পরিবেশন করেন, দর্শকরা ঠিক সে ধারাবাহিকতায়ই দেখতে বাধ্য হন। কিন্তু আনডকুমেন্টেড মিনি সিরিজটিকে যেহেতু ইন্টারনেটে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, তাই এখানে কোন ধারাবাহিকতায় কাহিনী এগিয়ে যাবে, সেটি নির্ভর করবে দর্শক হিসেবে আপনার ইচ্ছের উপর।
ওয়েবসাইট থেকে ধারাবাহিকটি দেখলে প্রথম পর্বটি শেষ হওয়ার পরেই আপনার সামনে পাশাপাশি রিম, কারিম এবং কর্নেল ওয়াফিকের ছবি আসবে। আপনি যার ছবির উপর ক্লিক করবেন, তার কাহিনীই আগে চালু হবে। আর আপনি যদি ইউটিউব চ্যানেল থেকে দেখেন, তাহলে দেখতে পাবেন, সেখানে তিনজনের কাহিনীকে তিনটি পৃথক প্লেলিস্টে স্থান দেওয়া হয়েছে। আপনি যে প্লে লিস্টের উপর ক্লিক করবেন, সেটিই আগে চালু হবে। ফেসবুক পেজেও তিনজনের কাহিনীকে পৃথক পৃথকভাবে রাখা হয়েছে।
তিনটি কাহিনীর চরিত্রগুলো পরস্পরের সাথে সম্পর্কিত হলেও তাদের কাহিনী সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্নভাবে এগিয়ে গেছে। ফলে আপনি যেভাবেই শুরু করেন না কেন, কাহিনী বুঝতে আপনার কোনো সমস্যা হবে না। তাছাড়া ভিন্ন ভিন্নভাবে দেখলে ধারাবাহিকটির মূল কাহিনী অথা ম্যাসেজের কোনো পরিবর্ত ঘটবে না। শুধুমাত্র দর্শক হিসেবে আপনার অভিজ্ঞতাটুকুই ভিন্ন হবে।
আনডকুমেন্টেড এর কাহিনী আবর্তিত হয়েছে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের পটভূমিতে। এতে সরাসরি যুদ্ধ দেখানোর পরিবর্তে যুদ্ধ সিরিয়ানদের জীবনযাত্রার উপর কী ধরনের প্রভাব ফেলেছে, তা তুলে ধরা হয়েছে। সচেতনভাবে রাজনীতি এড়িয়ে চলতে চাইলেও স্বাভাবিকভাবেই যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকার কাহিনী তুলে ধরতে গিয়ে কিছু রাজনৈতিক অনুষঙ্গ চলে এসেছে। যেমন, নাটকটির একটি প্রধান চরিত্র রিম, যে সরকার নিয়ন্ত্রিত দেরা’র অধিবাসী কৃষি প্রকৌশলী। ক্ষমতাসীনদের জমির পানি নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন তৈরি করায় সে চাকরি থেকে বহিষ্কৃত হয়। তার আইডি কার্ড চুরি হয়ে গেলে যখন সে রিপোর্ট করতে পুলিশের কাছে যায়, তখন পদে পদে হয়রানির শিকার হতে থাকে।
অন্য একটি প্রধান চরিত্র কারিম সেনাবাহিনীর হাতে বন্দী এবং নির্যাতনের শিকার হয়, কারণ তার বন্ধু ছিল একজন বিদ্রোহী রাজনৈতিক কর্মী। তাকে তার পরিচিতদের উপর গোয়েন্দাগিরি করার জন্য চাপ দেওয়া হলে সে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। তার কাহিনীর মধ্য দিয়ে সিরিয়ার একাধিক বিদ্রোহী দল, তাদের পরস্পরের মধ্যে দ্বন্দ্ব এবং সাধারণ মানুষের পাশাপাশি তাদের অনিশ্চিত জীবনের একটি হালকা চিত্রও উঠে আসে।
তৃতীয় আরেকটি প্রধান চরিত্র আইডি কার্ড ভেরিফিকিশন বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা কর্নেল ওয়াফিক। তার কাহিনীর মধ্য দিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার সরকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের কঠিন জীবনের একটি দিক ফুটে ওঠে। উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তাদের উপরেও কীভাবে গোয়েন্দাগিরি করা হয়, এবং তাদের জীবনও যে কতটা ঝুঁকিপূর্ণ, তারই একটি চিত্র উঠে আসে এই কাহিনী থেকে।
আনডকুমেন্টেড ধারাবাহিকটির কাহিনী রচনা করেছেন সিরিয়ান কাহিনীকার, অভিনেতা ও পরিচালক রাফি ওয়াহবি। আর এটি পরিচালনা করেছেন লেবানীজ পরিচালক আমিন দোরা। আমিন দোরা এর আগে ২০১১ সালে বিশ্বের প্রথম আরবি ওয়েব ভিত্তিক ড্রামা সিরিয়াল নির্মাণ করে আলোচনায় এসেছিলেন। ‘শাঙ্কাবুত’ নামের ঐ ধারাবাহিকটি ডিজিটাল এমি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছিল। তার নির্মিত চলচ্চিত্র ‘ঘাদি’ ২০১৪ সালে লেবাননের পক্ষ থেকে অস্কার নমিনেশনের জন্য প্রেরিত হয়েছিল।
আনডকুমেন্টেড ধারাবাহিকটি প্রযোজনা করেছে লেবাননের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান স্প্রিং এন্টারটেইনমেন্ট। ২০১৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর এটি অনলাইনে মুক্তি পায়। দর্শকপ্রিয়তার পাশাপাশি এটি সমালোচকদের প্রশংসাও অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
ফিচার ইমেজ- Undocumented