Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

পানিই জীবন,পানিই মরণ!

পানি জীবন বাঁচায়,আবার পানি জীবন কেড়েও নেয়! পর্যাপ্ত পানি পান করার মাধ্যমে আমরা যেমন সুস্থ জীবন যাপন করতে পারি, তেমনি প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি পানে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। আবার অপর্যাপ্ত পানি পানের কারণেও নানা সমস্যায় পড়তে হয়। পানি পান করার ব্যাপারে তাই সতর্ক থাকা জরুরি। 

পানি কখন কতটুকু খাবেন?

প্রাপ্তবয়স্ক ও কর্মক্ষম ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা সাধারণত দৈনিক ২-৩ লিটার পানি পান করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে দিনে কতটুকু পানি পান করতে হবে তা মূলত আবহাওয়া, ব্যক্তির শারীরিক শ্রম, ঘামের পরিমাণ প্রভৃতি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। শীতকালের চেয়ে গরমকালে শরীরে পানির চাহিদা বেড়ে যায়। যারা কায়িক পরিশ্রম বেশি করেন, তাদের বেশি পানি পান করতে হয়। আবার যারা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ঘামেন, তাদের জন্য একটু বেশি পানি পান করা দরকার। 

Image Source: ISHN.com

এজন্য বিশ্বব্যাপী দৈনিক পানি পান করার নির্দিষ্ট কোনো মাপকাঠি নেই। একটি গবেষণায় দেখা যায়- যুক্তরাষ্ট্রের ব্যক্তিরা দৈনিক পানির চাহিদার প্রায় ২০% দৈনন্দিন খাবার থেকেই পেয়ে থাকে। বাকি ৮০% সরাসরি পানি পান কিংবা অন্যান্য পানীয়ের দ্বারা পূরণ করতে হয়।

ফলমূল ও শাকসবজিতে প্রচুর পানি থাকে। এছাড়া প্রতিদিন চা, দুধ, কফি এগুলো থেকেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পানির সরবরাহ হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড মেডিসিনের নির্দেশনা অনুসারে- খাবার থেকে প্রাপ্ত পানি ও সরাসরি পানকৃত পানি মিলিয়ে দৈনিক পানি গ্রহণের পরিমাণ একজন পূর্ণবয়স্ক পুরুষের ক্ষেত্রে ৩.৭ লিটার হওয়া উচিত, একজন পূর্ণবয়স্ক নারীর ক্ষেত্রে যার পরিমাণ ২.৭ লিটার। 

Image Source: CNN

মনে রাখা দরকার, এই পরিমাণের বেশ কিছু অংশ আমরা খাবার থেকেই পেয়ে থাকি। তাই খাবারের মাধ্যমে গৃহীত পানির পরিমাণ বাদ দিয়ে বাকি অংশ পানি পান করাই আমাদের জন্য যথেষ্ট। গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মহিলাদের জন্য দৈনিক পানির চাহিদা একটু বেশি। আবার শিশুদের ক্ষেত্রে বয়স বাড়ার সাথে সাথে দৈনিক পানির চাহিদাও বাড়ে।

পানি কম খেলে যেসব সমস্যা হয়

আমাদের দেহের প্রায় শতকরা ৬০ ভাগই পানি। তাই পর্যাপ্ত পানি পান না করলে দেহের স্বাভাবিক কার্যকলাপে ব্যাঘাত ঘটে। অল্পতেই ক্লান্তিভাব, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, পেশীতে টান ধরা, খিটখিটে মেজাজের পাশাপাশি ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যাওয়া এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যাগুলো দেখা দেয়। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদে পানির অপর্যাপ্ততা নানা জটিলতার সৃষ্টি করে। কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া, কিডনিতে পাথর, মূত্রনালিতে ইনফেকশন ও উচ্চরক্তচাপ দেখা দেয়। ২০২০ এ একটি গবেষণায় দেখা যায়- পর্যাপ্ত পানি পান না করলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। 

Image Source: Nashville Parent

অতিরিক্ত পানি পানের ক্ষতিকর দিক

পর্যাপ্ত পানি পানের কারণে শরীরের ভেতরের কোষগুলো সবল ও স্বাভাবিক থাকে, শরীরে রক্ত চলাচলও স্বাভাবিক থাকে। আমাদের পানকৃত পানির ছাঁকনি হিসেবে কাজ করে কিডনি! কিন্তু একটি নির্দিষ্ট মাত্রার উপরে এ ছাঁকনির কার্যক্ষমতা থাকে না। ঘণ্টায় প্রায় ১ লিটারের বেশি পানি পান করলে কিডনি এই অতিরিক্ত পানিকে আর মূত্রের মাধ্যমে দেহ থেকে বের করতে পারে না। বয়স্ক ও শিশুদের ক্ষেত্রে কিডনির এই কার্যক্ষমতা আরো কম। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাই ৩-৪ লিটারের বেশি পানি পান করলে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়। 

প্রাথমিকভাবে বমি বমি ভাব, ক্লান্তিভাব, মাথাব্যথার মতো সমস্যাগুলোই দেখা দেয়। অতিরিক্ত পানি পানের ফলে রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা অনেক কমে যায়- এই অবস্থাকে বলা হয় ‘হাইপোন্যাট্রেমিয়া’। এর ফলস্বরুপ দেহের কোষগুলো স্ফীত হতে শুরু করে। একপর্যায়ে মস্তিষ্ক কোষের স্ফীত হওয়ার কারণে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া বা কোমায় চলে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটে। এমনকি একপর্যায়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। অতিরিক্ত পানি পানের ফলে মৃত্যুর ঘটনা যদিও খুব বিরল, তবুও এটি অসম্ভব কিছু নয়!

Image Source: Kent

অতিরিক্ত পানি পানের কারণে মৃত্যুঝুঁকির এমন ঘটনা সাধারণত ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগীদের ক্ষেত্রে  কিংবা মিলিটারি প্রশিক্ষণের সময়ই বেশি দেখা যায়। মানসিক বিকারগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও অনেক সময় এমন হতে দেখা যায়। এছাড়া জোর করে কাওকে অতিরিক্ত পানি পান করিয়ে মৃত্যুঝুঁকির দিকে ঠেলে দেওয়ার নজিরও রয়েছে। 

পর্যাপ্ত পানি পান করার ব্যাপারে এজন্য আমাদের সচেতনতা জরুরি। আবহাওয়া, ব্যক্তির লিঙ্গ, বয়স, শারীরিক শ্রম প্রভৃতি বিষয় মাথায় রেখেই পানি পান করা দরকার। কিডনি, যকৃৎ ও হৃদরোগীদের চিকিৎসকরা পানি মেপে পান করতে বলেন, এসব ক্ষেত্রে অতিরিক্ত পানি পান করা বিপজ্জনক হতে পারে। শরীরের পানির প্রয়োজনীয়তা জানান দেওয়ার অন্যতম এক মাধ্যম হলো ‘তৃষ্ণা’। যখনই তৃষ্ণা অনুভব হবে তখনই পানি পান করে পানির এ ঘাটতি মেটানো উচিত।

পানি কখন কতটুকু পান করবেন- এমন দ্বিধাদ্বন্দ্বে প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শও নেওয়া যেতে পারে।

Language: Bangla
Topic: This article describes how much water we should drink in a day. It also describes the effect of both drinking too much & less water.
Featured Image: Pixabay

Related Articles