গত ৭ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয়ে অবস্থিত কণা পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণাগার ফার্মিল্যাবে চলমান এক এক্সপেরিমেন্টের চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য প্রকাশ করা হয়, যা বর্তমান পদার্থবিজ্ঞানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্ট্যান্ডার্ড মডেলকে বদলে ফেলতে পারে। সন্ধান দিতে পারে প্রকৃতিতে বিদ্যমান নতুন আরও একটি মৌলিক বলের, অর্থাৎ এটি হতে পারে পঞ্চম মৌলিক বল। এমনকি অনেক বিজ্ঞানীর দৃঢ় বিশ্বাস- নতুন এই অনুসন্ধান ব্যাখ্যা দিতে পারবে এমন কিছু প্রশ্নের যার উত্তর বিজ্ঞান খুঁজে চলেছে যুগ যুগ ধরে।
মিউয়ন জি – ২ (জি মাইনাস টু) পরীক্ষাটির নাম, যেখানে মূলত কণা পদার্থবিজ্ঞানের মিউয়ন কণার ব্যতিক্রমী চুম্বক ভ্রামকত্ব ধর্মের উপর গবেষণা করা হয়। এসব গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য থেকেই অমিল দেখা দিতে শুরু করে পদার্থবিজ্ঞানের প্রচলিত স্ট্যান্ডার্ড মডেলের সাথে, যে মডেলের ব্যাখ্যা দেয়া আছে প্রকৃতির চার মৌলিক বলের।
১৯৫৯ সালে সার্নে (CERN) চালানো হয় প্রথম পরীক্ষা, পরবর্তীতে গবেষণার যন্ত্র স্থাপন করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের ব্রুকহ্যাভেন ন্যাশনাল ল্যাবে। সর্বশেষ ২০১১ সালে, ফার্মিল্যাবে স্থানান্তর করা হয় এই প্রকল্পের যন্ত্রাংশ। চালানো হয় একই গবেষণা যা ১০ বছর আগে ব্রুকহ্যাভেন ল্যাবে পরিচালনা করা হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল আরও নিখুঁত গবেষণার মাধ্যমে স্ট্যান্ডার্ড মডেলের সাথে মিউয়নের এই অমিলগুলো হয় একেবারেই বাতিল করা অথবা পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত করা। তিনটি পরীক্ষা চালানো হয় ২০১৫ সালের পর থেকে, চতুর্থটি চলমান রয়েছে। গত বছর পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ৭ এপ্রিল, ২০২১ তারিখে প্রকাশ করা হয় প্রথম পরীক্ষার ফলাফল।
মিউয়নের সেই গবেষণায় কী উঠে এসেছে সেসব জানার আগে পাঠকের সুবিধার জন্য আমরা প্রথমে খুব সহজে আর সংক্ষেপে জটিলতা এড়িয়ে জানার চেষ্টা করব প্রকৃতির চার মৌলিক বলগুলোর বিষয়ে। বোঝার চেষ্টা করবো স্ট্যান্ডার্ড মডেল কী বলে কণা পদার্থবিজ্ঞানের সাথে মৌলিক বলগুলোর সম্পর্ক নিয়ে। কী এই মিউয়ন কণা? আর স্ট্যান্ডার্ড মডেলে পরিবর্তনের ফলে আমরাই বা নতুন কী পাব?
সংক্ষেপে চার মৌলিক বল
মহাবিশ্বে এখন পর্যন্ত যেকোনো প্রকার বলকে এই চারটি মৌলিক বলের কোনো একটির কাতারে ফেলা যায়। আপনি যদি বিজ্ঞানের নিয়মিত পাঠক হয়ে থাকেন তবে প্রকৃতির চারটি মৌলিক বলের বিষয়ে শুনে থাকবেন। আর যদি না-ও শুনে থাকেন তাহলেও সমস্যা নেই, চলুন অল্প কথায় জেনে নেয়া যাক।
শুরুতেই আসা যাক মহাকর্ষ বল বা গ্র্যাভিটেশনাল ফোর্সের বিষয়ে, দুর্বলতম বল এটি। মহাবিশ্বের যেকোনো দুটি বস্তুর মধ্যে যে আকর্ষণ বল কাজ করে তার ব্যাখ্যা দেয় মহাকর্ষ বল। এই বলের প্রভাবেই আমরা লাফ দিলে আবার মাটিতে ফিরে আসি, কোনো বস্তু ছেড়ে দিলে নিচের দিকেই পড়ে। দুর্বল হলেও এর পাল্লা বা বলের কার্যকারিতা অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত, তবে দূরত্ব বাড়ার সাথে সাথে এই বলের মানও কমতে থাকে। তাই মহাশূন্যে একটি নির্দিষ্ট বেগে চললে পরে কোনো বস্তুই আর পৃথিবীতে ফিরে আসার জন্য পর্যাপ্ত বল অনুভব করে না।
অসীম পাল্লার বৈশিষ্ট্য আছে এমন দ্বিতীয় মৌলিক বল হলো তড়িচ্চুম্বক বল বা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফোর্স। মহাকর্ষ বলের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী এই বল। কতটা বেশি? প্রায় ১০^(৩৬) গুণ (অর্থাৎ ১ এর পর ৩৬টা শূন্য)। দুটি ধনাত্মক বা ঋণাত্মক চার্জে চার্জিত বস্তুর মধ্যে যে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল কাজ করে সেটিই তড়িচ্চুম্বক বল। সমধর্মী চার্জে বিকর্ষণ ঘটে, বিপরীতধর্মী চার্জে ঘটে আকর্ষণ। যদিও এই বল তড়িৎ বল এবং চুম্বক বলের সমন্বয়, তবে বাস্তবে দুটি একই বলকে নির্দেশ করে। পরমাণুর মধ্যে ইলেকট্রনকে কক্ষপথে আটকে থাকতে কাজ করে এই তড়িচ্চুম্বক বল। এছাড়াও আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মহাকর্ষ বলের প্রভাবটা বেশি থাকলেও ব্যবহারিক ক্ষেত্রে তড়িচ্চুম্বক বলের ব্যবহার অন্য তিনটির থেকে বেশি।
পরবর্তী দুটি বল আবার অত্যন্ত স্বল্প পাল্লার, অর্থাৎ তাদের কার্যকারিতার প্রভাব অতি ক্ষুদ্র জগতে- আণবিক পর্যায়ে। দুটির মধ্যে একটি তুলনামূলক কম শক্তিশালী, যাকে বলা হয় দুর্বল নিউক্লিয় বল বা উইক নিউক্লিয়ার ফোর্স। অপরটি অপেক্ষাকৃত বেশি শক্তিশালী, নাম সবল নিউক্লিয় বল বা স্ট্রং নিউক্লিয়ার ফোর্স। তড়িচ্চুম্বকীয় বলের থেকে অনেক কম শক্তিশালী দুর্বল নিউক্লিয় বল। অন্যদিকে তড়িচ্চুম্বকীয় বলের থেকে বেশি শক্তিশালী সবল নিউক্লিয় বল।
তেজস্ক্রিয় রশ্মির নাম আমরা কম-বেশি সবাই শুনেছি। এই তেজস্ক্রিয় ক্ষয়ের পেছনে কারণ দুর্বল নিউক্লিয় বল। প্রোটন ভেঙে এক পরমাণু থেকে আরেক পরমাণুতে রূপান্তরিত হওয়ার পেছনে কাজ করে এই দুর্বল বল। দুর্বল নিউক্লিয় বলের একটি পরিচিত উদাহরণ কার্বন ডেটিং প্রক্রিয়া। শত-সহস্র বছরের পুরনো কোনো বস্তুর বয়স বের করা সম্ভব হয় তার কারণ দুর্বল নিউক্লিয় বলের ক্রিয়া।
অন্যদিকে তড়িচ্চুম্বক বলের থেকে শক্তিশালী হওয়ায় পরমাণুর প্রোটনকে বেঁধে রাখার পেছনে কাজ করে সবল নিউক্লিয় বল। পরমাণুর প্রোটনগুলো ধনাত্মক চার্জযুক্ত হওয়ায় তারা পরস্পরকে বিকর্ষণ করে, কিন্তু তড়িচ্চুম্বকীয় এই বিকর্ষণধর্মী বল অপেক্ষা সবল নিউক্লিয় বলের মান বেশি হওয়ায় তারা পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে না।
নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টের পাশাপাশি এই দুই বলের একত্রে কাজ করার খুব সাধারণ উদাহরণ কিন্তু সকল প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য যে ঘটনাটি উল্লেখ করা যায় তা হলো সূর্যের জ্বালানি।
এবারে দেখা যাক কণা পদার্থবিজ্ঞানের স্ট্যান্ডার্ড মডেল কী বলে চার মৌলিক বলের বিষয়ে। আবারও আমরা পাঠকের সুবিধার জন্য চেষ্টা করব জটিলতা এড়িয়ে যেতে।
স্ট্যান্ডার্ড মডেল
মহাবিশ্বের সকল বস্তুরই একটি নির্দিষ্ট রাসায়নিক কাঠামো আছে, আর সেই রাসায়নিক কাঠামোকে ভাঙতে থাকলে ক্ষুদ্র যে একক আমরা পাই সেটি পদার্থের অণু। কিন্তু এই অণুকেও ভাঙা সম্ভব, যা থেকে আমরা পাই পরমাণু। পর্যায় সারণির মৌলগুলোর ক্ষুদ্রতম একক পরমাণু। এখানেই শেষ নয়, পরমাণুকে ভেঙে আমরা পাব ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন। প্রোটন আর নিউট্রন ভেঙে আবার আমরা পাই আরও একধরনের মৌলিক কণা, যাদের আমরা কোয়ার্ক নামে চিনি।
স্ট্যান্ডার্ড মডেল ব্যাখ্যা দেয় কীভাবে এই মৌলিক কণাগুলোর মিথস্ক্রিয়া বা ইন্টারঅ্যাকশন ঘটবে। কোনো বস্তু কীভাবে গঠিত হবে আর কোন কণা কোন মৌলিক বল বহন করবে, এ সবকিছু নিয়েই পদার্থবিজ্ঞানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুশৃঙ্খল মডেল- স্ট্যান্ডার্ড মডেল, যা দাঁড় করা হয়েছিল প্রায় ৫০ বছর আগে।
স্ট্যান্ডার্ড মডেল এই অতিপারমাণবিক কণাগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করে। একটি ফার্মিয়ন এবং অপরটি বোসন। ফার্মিয়ন হলো ম্যাটার পার্টিকলস। আর ফার্মিয়নের মৌলিক কণার একটি ভাগ হলো লেপটন। ইলেকট্রন, মিউয়ন, টাউ হলো লেপটন শ্রেণির চার্জযুক্ত মৌলিক কণা। এই তিনটি কণাকে ঠিক একই পরিবারের তিন ভাইয়ের মতো বলা চলে।
অন্যদিকে বোসন কণা হলো আমাদের সেই মৌলিক বলগুলোর বাহক। ভরবিহীন ফোটন কণা তড়িচ্চুম্বক বল বহন করে, গ্লুয়ন নামের কণাটি বহন করে সবল নিউক্লিয় বল এবং W+, W−, ও Z0।
এই তিনটি কণা দুর্বল নিউক্লিয় বলের বাহক। কিন্তু মহাকর্ষীয় বলের কথা বললাম না কেন? কারণ মহাকর্ষ বলের বাহক গ্র্যাভিটন কণা এখনও আবিষ্কৃত হয়নি, অর্থাৎ এই কণাকে এখনও কাল্পনিক কণা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নিচের চিত্র থেকে বুঝতে সহজ হতে পারে কিছুটা, তবে সবগুলো কণার কথা আমরা উল্লেখ করিনি।
তো, এবার আমরা ফিরে যাই আমাদের মিউয়ন জি – ২ এক্সপেরিমেন্টে।
মিউয়ন জি – ২
মিউয়ন কণা ইলেকট্রনের মতোই লেপটন পরিবারের একটি চার্জযুক্ত মৌলিক কণা। তবে ইলেকট্রনের চাইতে ২০০ গুণ ভারি। ইলেকট্রনের মতোই মিউয়নেরও স্পিন ধর্ম আছে এবং ইলেকট্রনের মতো চৌম্বক ভ্রামক ধর্ম প্রদর্শন করে। অল্প কথায় বললে, কোনো চৌম্বক ক্ষেত্রে একটি মিউয়ন কণা রাখলে তা একটি চুম্বকের মতো আচরণ করে এবং বৃত্তাকার পথে ঘুরতে থাকে।
কণার এই চুম্বক ভ্রামক ধর্ম পরিমাপ করা হয় জি ফ্যাক্টর নামক একটি সাংখ্যিক মানের সাহায্যে। এই মান যত বেশি হবে এই চৌম্বক ভ্রামক বৈশিষ্ট্য তত বেশি শক্তিশালী হবে। কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানে তাত্ত্বিকভাবে মিউয়নের এই জি ফ্যাক্টরের মান হওয়ার কথা ২। কিন্তু পরীক্ষার সময় ‘ভার্চুয়াল কণার’ সাথে মিথস্ক্রিয়া করায় সামান্য বেশি আসে এই মান। মডেলের কণাগুলোর মান সে হিসেবে ২.০০২৩৩১৮৩৬২০(৮৬) [বন্ধনীর শেষ দুটি অংক অনিশ্চয়তা হিসেবে ধরা হয়] এবং মিউয়নেরও সেই একই মান আসার কথা।
কিন্তু ব্রুকহ্যাভেন ল্যাবে চালানো এক্সপেরিমেন্টে তা বাধ সেধে বসে। পরীক্ষা থেকে দেখা যায়, এই মান সামান্য বেশি আসে: ২.০০২৩৩১৮৪১২২(৮২)। অর্থাৎ, দশমিকের আট ঘর পর এই মানে ভিন্নতা দেখা দেয়। এতটা নিখুঁতভাবে এই পরীক্ষা করা হয় যে এতে মানের ভিন্নতা আসার সম্ভাবনা থাকে না প্রায়।
পাঠক হয়তো বুঝতে পারছেন এখন কেন এই পরীক্ষার নাম জি মাইনাস ২ রাখা হয়েছে। যা-ই হোক, নিউইয়র্কের ব্রুকহ্যাভেন ল্যাবের পরীক্ষার ফলাফল পুনরায় বিবেচনা করতে ৪ গুণ বেশি নিখুঁত ফলাফলের জন্য এই পরীক্ষার মূল যন্ত্রটি নিয়ে আসা হয় শিকাগোর পাশেই ইলিনয়ের ফার্মিল্যাবে।
যন্ত্রটি ১৫ মিটার ব্যাসের অতিপরিবাহী একটি ফাঁপা বৃত্তাকার চুম্বক। এর মধ্য দিয়ে চালনা করে দেয়া হয় মিউয়ন কণাগুলোকে। একইসাথে তাদের নিজ অক্ষে ঘূর্ণনের দিকও পরিবর্তন করা হতে থাকে। এবং প্রতি ঘূর্ণনের সময় খুব নিখুঁত একটি ডিজিটাল ঘড়িতে মাপা হতে থাকে, যাকে বলা কম্পাঙ্ক বা ফ্রিকোয়েন্সি।
কিন্তু পক্ষপাতমূলক ফল যাতে না আসে সে জন্য এই পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য গোপন করে রাখা হয় বিজ্ঞানীদের থেকে, সেটি হলো ডিজিটাল ঘড়িটির কম্পাঙ্ক। এক্সপেরিমেন্টের সাথে যুক্ত নয় এমন দুজন বিজ্ঞানীর উপর দায়িত্ব দেয়া হয় সেই তথ্য গোপন রাখার।
পরবর্তীতে সকল পরীক্ষা শেষে গত ২৫ ফেব্রুয়ারিতে ৭টি দেশের ৩৫টি প্রতিষ্ঠানের ২০০ জনেরও বেশি বিজ্ঞানীর উপস্থিতিতে একটি টেলিকনফারেন্সে সেই কম্পাঙ্কের সংখ্যাটি জানানো হয়। বিজ্ঞানীরা কম্পিউটারে সেই মান বসিয়ে তাদের দীর্ঘ ক্যালকুলেশন শেষ করতেই কম্পিউটার পর্দায় যে মান প্রদর্শিত হয় তাতে সবাই হাততালি দিয়ে উঠেন একসঙ্গে, খুশিতে।
না, এবারও স্ট্যান্ডার্ড মডেলের সঙ্গে মেলেনি ফলাফল। তবে ব্রুকহ্যাভেন ল্যাবের প্রাপ্ত ফলাফলের খুব কাছাকাছি ফল আবারও পাওয়া গেছে।
জি ফ্যাক্টরের মান যত বেশি হবে কণার চৌম্বক ভ্রামকত্ব তত বেশি হবে। তত্ত্ব আর পরীক্ষা যখনই আলাদা তথ্য প্রদর্শন করে তখনই সেখানে অন্যকিছুর প্রভাব থাকে। যেহেতু স্ট্যান্ডার্ড মডেলের তুলনায় এই মান বেশি অর্থাৎ নতুন কোনো কণার সাথে মিথস্ক্রিয়তার ফলে নতুন কোনো বলের প্রভাবে এই মানের তারতম্য হচ্ছে, এই বিষয়ে অনেকাংশে একমত বিজ্ঞানীরা। কিন্তু এই মান কতটা গ্রহণযোগ্য বিজ্ঞানের কাছে?
পরিসংখ্যানের ভাষায় উত্তর হলো ৪.২ সিগমা। অর্থাৎ প্রায় এক লাখে একবার সম্ভাবনা আছে এই ফলাফল কাকতালীয় হবার। ব্রুকহ্যাভেন ল্যাবের ফলাফলের নিশ্চয়তা ছিল ৩.৭-সিগমা। কিন্তু কোনো এক্সপেরিমেন্টের গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন ৫ সিগমা। অর্থাৎ প্রতি ৩৫ লাখ বারে একবার সম্ভাবনা কাকতালীয় ফলাফল আসার।
অর্থাৎ নিশ্চয়তার খুব কাছাকাছিই রয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
“আমরা ফুটবল মাঠের একদম গোলপোস্টের খুব কাছে রয়েছি, রেড জোনে। যদি প্রতিপক্ষ ডিফেন্ড করে বসে তাহলে আমরা আবার দূরে সরে যাবো সেই স্ট্যান্ডার্ড মডেলেই, নতুবা গোল সুনিশ্চিত।”
– ডেভিড হার্জগ, বিজ্ঞানী, ইউনিভার্সিটি অভ ওয়াসিংটন
সম্ভাবনা
এখনও পুরোপুরিভাবে নতুন কণাটি আবিষ্কৃত হয়নি, জানা যায়নি নতুন বলটির আচরণ, বৈশিষ্ট্য কোনো কিছুই। তবে শক্ত ইঙ্গিত মিলেছে নতুন কিছুর। যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের পরীক্ষাগারে চালানো বেশ কিছু গবেষণা থেকেও একই রকমের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে এবং সার্নের লার্জ হ্যাড্রন কলাইডারের অন্য একটি পরীক্ষাতেও।
২০২২ সাল পর্যন্ত ফার্মিল্যাবে চলবে এই গবেষণা, ততদিনে বিজ্ঞানীরা আশাবাদী ৫ সিগমা ফলাফল নিশ্চিত করতে পারবেন তারা। আচ্ছা, যদি নতুন কোনো কণা আবিষ্কৃত হয়ও তবে কি ৫০ বছর ধরে প্রচলিত স্ট্যান্ডার্ড মডেল একেবারেই ভেঙে পড়বে?
অবশ্যই মডেলটি নতুন করে ভাবার প্রয়োজন পড়বে, সংযোজন হতে পারে অনেক কিছুই। এটিই বিজ্ঞানের পরিচিত আচরণ। তবে একেবারে বাদ দিয়ে দেয়ার মতো কিছুই এখনও জানা যায়নি, তাই সে ব্যাপারে কোনো প্রশ্নও আসছে না।
তবে হয়তো জানা যাবে অনেক প্রশ্নের উত্তর। মহাবিশ্বের অমিমাংসিত রহস্য ডার্ক ম্যাটার, অ্যান্টি ম্যাটারের প্রশ্নের উত্তর মিলতে পারে। কণা সৃষ্টির প্রশ্ন আসলেই আমাদের ফিরে যেতে হয় বিগ ব্যাংয়ের সময়ে। সেখান থেকে মহাবিশ্বের প্রসারণ ঘটে চলেছে। নতুন এই কণা আর বল বিগ ব্যাং সম্পর্কিত কোনো রহস্যের উন্মোচন করতে পারে বলেও আশাবাদী বিজ্ঞানীরা।
এখন পর্যন্ত চারটি বল আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোতোভাবে জড়িয়ে আছে, শুধু তা-ই নয়, এই বলগুলো আবিষ্কারের পর থেকে মানব সভ্যতার বিকাশে আর প্রযুক্তির উন্নয়নে প্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা রাখছে। তবে নতুন কোনো বল কি আমাদের জন্য এই যাত্রায় নতুন কোনো মাত্রা বয়ে আনবে?