নাটকীয় কোনো ব্যাপার কিংবা অলৌকিক কোনো ঘটনার প্রতি মানুষের আজন্ম দুর্বলতা। সত্য হোক, কাল্পনিক গল্প হোক, মিথ্যা হোক- এ ধরনের চমকপ্রদ গল্প মানুষ খুবই পছন্দ করে। মানুষের মুখে মুখে ফিরতে ফিরতে কাল্পনিক ও মিথ্যা গল্পগুলো একসময় সত্য ঘটনা বলে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। যেগুলোর মাঝে সামান্য সত্যতা আছে সেগুলোতে রংচং যুক্ত হয়ে মিথ্যার পর্যায়ে নিয়ে যায়।
মানুষ যখন অবাস্তব অলৌকিক গল্পগুলো বলে তখন সব ক্ষেত্রেই দেখা যায় ঘটনাটি তারা নিজের চোখে দেখেনি। তবে এমন বিশ্বস্ত একজনের কাছ থেকে শুনেছে যিনি কখনো মিথ্যা বলেন না। যিনি মিথ্যা বলেন না তিনিও আবার শুনেছেন অন্য আরেকজনের কাছ থেকে। আরেকজন আবার শুনেছে আরেকজনের কাছ থেকে। তিনি আবার শুনেছেন তার ভাশুরের ভাইয়ের সম্বন্ধীর খালাতো ভাই থেকে! অলৌকিক ঘটনার উৎস সন্ধান করতে গেলে এর চেইন এরকম লম্বা হতেই থাকবে। কিছু কিছু ঘটনার উৎপত্তি কোথায় তা জনার জন্য এগিয়ে গেলে তার কোনো তলা পাওয়া যাবে না।
কেউ যখন এরকম গল্প শোনে, তখন তার কাছে এটি একরকম থাকে। পরে সে যখন অন্য কারো কাছে গল্পটি বলে তখন গল্পটির মাঝে কিছু পরিবর্তন চলে আসে। এক মুখ থেকে আরেক মুখে যাবার সময় স্বভাবতই কথার হেরফের হয়। এভাবে একের পর এক মুখ আর কান বদল হলে অল্প অল্প পরিবর্তনের মাধ্যমে গল্পটি বিকৃত হয়ে যায়। সর্বশেষ ব্যক্তি যে গল্প শুনেছে তার সাথে মূল গল্পের আকাশ পাতাল ফারাক দেখা যায়। এরকম হলে এটা বের করা কঠিন যে এই গল্পের উৎপত্তি হয়েছিল কখন আর কে-ই বা ছিল এর জনক।
পশ্চিমের দেশগুলোতে একটা জিনিস প্রায়ই হয়। যদি কোনো নায়ক বা বড় কোনো শিল্পী মারা যায়, তার কয়েকদিন পর কেউ কেউ দাবী করে অমুক নায়ককে অমুক স্থানে জীবিত হেঁটে যেতে দেখেছে। অমুক শিল্পীকে ওখানে বসে বিড়ি খেতে দেখেছে। তিনি যদি মরেই গিয়ে থাকেন তাহলে এটা কীভাবে সম্ভব হলো? এই শুরু হয়। এক কান থেকে আরেক কান ঘুরতে ঘুরতে সারা দেশ হয়ে যায়। খবরের কাগজে মাতামাতি হয়ে যায়, টেলিভিশনের চ্যানেল থেকে লোক চলে আসে ঘটনাস্থলে। আর দেশটা যদি যুক্তরাষ্ট্র হয়, তাহলে তো কোনো কথাই নেই। এরকম আলতু ফালতু জিনিস নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ মত্ত থাকতে খুবই পছন্দ করে।
এরকম ঘটনা ঘটেছিল মেরিলিন মনরো, হিটলার, এলভিস প্রিসলি সহ অনেক তারকার ক্ষেত্রে। মানুষ কেন গুজব পছন্দ করে, কেন গুজবে কান দেয় তার রহস্য ভেদ করা বেশ কষ্টকর। তবে মূল কথা হচ্ছে গুজবের গল্প শুনতে এবং প্রচার করতে মানুষ খুবই পছন্দ করে। যার কারণে কোনো গুজব সুপারসনিক গতিতে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।
২০০৯ সালে বিশ্ববিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী মাইকেল জ্যাকসন মারা যান। টিভি চ্যানেলের এক সাংবাদিককে তার বাস ভবনে পাঠানো হয়েছিল সেখান থেকে রিপোর্ট করার জন্য। রিপোর্ট যখন টেলিভিশনে প্রচার করা হলো, তখন কয়েকজন দর্শক বলাবলি করতে শুরু করলো তারা মাইকেল জ্যাকসনের আত্মা বা ভূতকে দেখেছে তার বাসার করিডোরে। তার নিজের বাসা, নিজের করিডোর, টেলিভিশনের ভিডিও এগুলো হলে আর কী লাগে? মুহূর্তের মাঝে সারা দেশ চাউর হয়ে যেতে এর চেয়ে বেশি কিছু আর কী দরকার?
এরকম জিনিসগুলোতে মানুষ আগ্রহ পায় খুব। উদাহরণ হিসেবে নিচের ছবিটির কথা বলা যায়। একজন লোক তার গাড়ির উপরের এই ছবিটি তুলে, যেখানে একজন মানুষের অবয়ব ফুটে উঠেছে। এখান থেকে ছড়িয়ে গেল এটা মাইকেন জ্যাকসনের চেহারা। মুখে মুখে ছড়িয়ে গেল এই কথা। প্রাথমিকভাবে সকলে এটিকে মানুষের অবয়ব হিসেবেই দেখবে। কেউ কেউ একে মাইকেল জ্যাকসনের আত্মা বলে মেনে নেবে। কিন্তু একটু খেয়াল করে দেখলেই এর রহস্য উদ্ধার হয়ে যায়।
এটি আসলে আকাশের মেঘের প্রতিফলন। অবয়বয়ের আশেপাশেও মেঘের অস্তিত্ব আছে যা সহজেই দেখা যাচ্ছে। মেঘ কত শত আকৃতিই তো ধরতে পারে। এদেরই কোনো একটা আকৃতি ধরা পড়েছে গাড়ির পৃষ্ঠে এবং সকলে ধরে নিচ্ছে এটা অতিপ্রাকৃত কোনো মানুষের অবয়ব। প্রচুর মানুষ এরকম সস্তা বিচার-বুদ্ধি নিয়ে চলাফেরা করে, এমনটা একদমই মেনে নেয়া যায় না। এই ছবিটি ইউটিউবে ছিল এবং ২০১১ সাল নাগাদ ১৫ মিলিয়নেরও বেশি বার মানুষ ছবিটিকে দেখেছে। বর্তমানে (জুলাই, ২০১৭) এটি ২১ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে, অবিশ্বাস্য! অপ্রয়োজনীয় জিনিস এবং গুজবীয় জিনিসের প্রতি মানুষের আগ্রহ সীমাহীন।
লোকজন কেন এখানে ওখানে মানুষের অবয়ব খুঁজে পায় তার পেছনে মজার কিছু কারণ আছে। মানুষ সামাজিক প্রাণী হিসেবে বিবর্তিত হয়েছে। চেহারা শনাক্ত করা মানুষের সামাজিকতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। কেউ যখন সামনে আসে তখন সবার আগেই মানুষ চেহারা শনাক্ত করার কাজটি করে। এই কাজটি সম্পূর্ণ অবচেতনে হয় এবং এজন্য মস্তিষ্কে বিশেষ প্রোগ্রাম করা থাকে।
সবার আগে চেহারা, এই নীতিতে ভর করে দেখলে স্বাভাবিকভাবেই মানুষ কিছু কিছু ক্ষেত্রে চেহারা খুঁজে পাবে যেখানে আসলে কোনো মানুষ নেই। সত্যিকার চেহারা নেই কিন্তু চেহারা খুঁজে পাচ্ছে ঠিকই, মানুষের এই বৈশিষ্ট্যকে বলা হয় পেরিডোলিয়া। পেরিডোলিয়া নামক প্রক্রিয়ার উপস্থিতিতে মানুষ মেঘ, গাছের পাতা, দেয়াল, বিস্কুট, রুটি ইত্যাদির মাঝে অবয়ব খুঁজে পায়।
ভূতের গল্প? ভূত কি বাস্তব না অবাস্তব? শিরদাঁড়া কাপিয়ে দেয় এমন ভয়ানক ভুতের গল্প শুনতে অনেকেরই ভালো লাগে। ভয়ের চোটে কাপবে কিন্তু তারপরেও হরর মুভি দেখবে এমন মানুষের সংখ্যা গুনে শেষ করা যাবে না। এরকম ভৌতিক গল্পকে যদি কেউ বিশ্বাসযোগ্যভাবে উপস্থাপন করে সত্য বলে দাবী করে তাহলে তো কথাই নেই। মানুষ ক্ষুধার্তের মতো গিলবে এ ধরনের গল্প।
একজন জীববিজ্ঞানী তার বইতে ভূত সম্পর্কিত স্মৃতিকথা লিখছেন এভাবে-
“আমি যখন ছোট ছিলাম, আমার পরিবার প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো প্রাচীন একটি বাড়িতে বসবাস করতো। এরকম একটি পুরাতন বাড়িকে ঘিরে ভূত বা অতিপ্রাকৃত সত্ত্বার কোনো গল্প থাকবে না তা কি হয়? আমাদের বাড়িতেও গল্প ছিল। গল্প অনুসারে অনেক আগে মারা গিয়েছিল এমন একজন প্রেতাত্মা নাকি বববাস করে এই বাড়ির আশেপাশে। মাঝে মাঝে বাড়ির সিঁড়ি মাড়িয়ে উঠে এবং তার শব্দ শুনতেও পাওয়া যায়।
এই গল্প আমার ক্লাসের বন্ধুদের কাছে বলতাম। কিছুটা বাড়িয়েও বলতাম এবং ঘটনা সত্য বলেও দাবী করতাম। আর আনন্দ নিতাম কীভাবে তারা সবাই এগুলোকে সত্য বলে মেনে নিচ্ছে। গল্প শোনার আগ্রহে তারা এর সত্যতাও যাচাই করতো না। যেভাবে বলতাম তাতে গল্পে সত্যতা তেমন অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয় না। খুঁজলে একশো একটা ত্রুটি পাওয়া যাবে। কিন্তু তারপরেও মানুষ একে সত্য বলে ধরে নিচ্ছে।“
গল্পের নাটকীয়তার সামনে ত্রুটিগুলো তাদের চোখেই পড়ছে না। বাড়িটি পুরাতন ছিল, বাড়ির কেউ এখানে মারা গিয়েছিল, এই দুটি তথ্য হলেই এই বাড়িকে ঘিরে সকল অতিপ্রাকৃত গল্প তাদের কাছে সত্য। তারা গল্পের প্রতিই মনোযোগী হয়, এর সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের প্রতি নয়। অতিপ্রাকৃত গল্প শুনে মানুষ পুলকিত ও রোমাঞ্চিত হয়। পুলক ও রোমাঞ্চের একই কথা প্রযোজ্য গাড়ির ছবির মতো অলৌকিক গল্পগুলোতেও।
যদি কোনো গুজব কোনো গ্রন্থে লিপিবদ্ধ হয়ে যায় এবং সেই বইটি যদি হয় প্রাচীন তাহলে তাকে হটিয়ে সত্যিকার ব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে বোঝানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। লিপিবদ্ধ গুজব যথেষ্ট পুরাতন হয় তাহলে তো কোনো কথাই নেই, মানুষ একে নিজেদের সংস্কৃতি বলে গ্রহণ করে নেবে। তারপর একে আরো জোরালোভাবে বিশ্বাস করবে। সেজন্য প্রাচীনকালের অনেক গুজব ও মিথ্যা ঘটনা সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে।
মানুষের স্বপ্ন বিষয়ক অদ্ভুত গল্পগুলো? যেমন কেউ বললো আমি আমার অমুক চাচাতো ভাইকে চার-পাঁচ বছর ধরে দেখি না। কোনো যোগাযোগ নেই, কোনো খোঁজ খবর নেই। আজ রাতে তাকে স্বপ্নে দেখলাম এবং সকালেই খবর পেলাম সে নাকি রাতের বেলায় মারা গেছে। রাতে আমার স্বপ্ন দেখার সাথে কি তার মৃত্যুর কোনো সম্পর্ক আছে?
সত্যি কথা বলতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে আমাদের সাথে। এর মাঝে যে ঘটনাগুলো আমাদের কাছে ব্যতিক্রম বলে প্রতিভাত হয় সেগুলোকেই শুধু হিসাব করি। প্রতিনিয়ত মানুষ স্বপ্ন দেখছে, কোনো না কোনো ঘটনা ঘটছে। কেউ একজন স্বপ্নে অমুক আত্মীয়কে দেখলো এবং সকালে খবর পেলো যে সে বেঁচে আছে তাহলে তা আমাদের চোখে পড়ে না। কিন্তু এটিও তো একটি ঘটনা। মৃত্যুর ঘটনাটি যেমন মূল্যবান, বেঁচে থাকার ঘটনাটিও তো তেমনই মূল্যবান। বেঁচে থাকাটা স্বাভাবিক বলে আমরা তাতে কান দেই না। মরে গেলে এবং অন্যজন তাকে স্বপ্নে দেখলে মনে হয় কোনো না কোনো একটা আছে এর মাঝে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কেন থাকবে? কেউ যদি কাউকে স্বপ্নে দেখে এবং সে যদি বেঁচে থাকে তাহলে তাও তো গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা হতে পারতো। কারণ মরণ নামক কালো থাবা থেকে সে বেঁচে গেছে।
অশুভ ঘটনা ঘটে কারণ প্রকৃতিতে অসংখ্য ‘ঘটনা’ ঘটে। তেমনই স্বপ্নের এমন রহস্য দেখা যায় কারণ এরকম প্রচুর স্বপ্ন মানুষ দেখে। তাই মানুষের মৃত্যুর সাথে তাকে স্বপ্নে দেখার কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না। লক্ষ লক্ষ স্বপ্ন আর লক্ষ লক্ষ মৃত্যুর মাঝে কোনো কোনোটি তো মিলে যেতেই পারে। এটাকে পরস্পরের সাথে সম্পর্কযুক্ত করে ঘটনাটিকে অলৌকিকতার চাদরে মুড়ে ফেলার কী আছে?
এ ধরনের বিষয়গুলোতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, অলৌকিক গল্প বেড়ে উঠে মানুষের মুখে মুখে। এক মুখ থেকে আরেক মুখে গিয়ে একটু একটু করে রঙ-চং মাখিয়ে অন্যের মুখে যায়। কেউ যখন কোনো গল্প অন্যের কাছে উপস্থাপন করে, তখন চেষ্টা করে তুলনামূলকভাবে বেশি বিশ্বস্ত করে তুলতে। যে শুনেছে সে যখন আরেকজনের কাছে এটি উপস্থাপন করে তখন সেখানেও কিছু রং মিশিয়ে আরো সুন্দর করে উপস্থাপন করে।
এভাবে একটু একটু করে গল্পটিই পাল্টে যায় এবং একসময় গল্পের সমস্তটিই অলৌকিকতায় পর্যবসিত হয়। মাঝে মাঝে দেখা যায় কোনো গল্প শুনতে একটু অদ্ভুত মনে হতে পারে কিন্তু অলৌকিক নয়। এটিই যদি মানুষ নামক রেডিওর হাতে পড়ে, তাহলে অল্প সময়ের ভেতরেই তা রং-চং মেখে অলৌকিক হয়ে যায়।
রিচার্ড ফাইনম্যান নামে একজন বিখ্যাত পদার্থবিদ ছিলেন। দুঃখজনকভাবে তার স্ত্রী ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। হাসপাতালে স্ত্রীর কেবিনে একটি ঘড়ি ছিল। যে সময়ে মারা যান সে সময়ে ঘড়ির কাটা আটকে যায় এবং সকালে তার রুমে গিয়ে ঐ ঘড়িটিকে ঐ সময়ের পাঠ দিতে দেখা যায়। একদম অলৌকিক। তাই না? ব্যাপারটাকে অলৌকিক হিসেবে ধরে নেয়া যেতো এবং মানুষের কাছে চমৎকারভাবে উপস্থাপনও করা যেত। কিন্তু রিচার্ড ফাইনম্যান মাথায় গোবর নিয়ে ঘুরেন না। তিনি ছিলেন ইতিহাসের অন্যতম সেরা একজন পদার্থবিদ। তিনি এর পেছনের কারণ অনুসন্ধান করলেন এবং যৌক্তিক ব্যাখ্যা খুঁজতে লাগলেন।
ঘড়িটি ছিল ত্রুটিপূর্ণ। হাত দিয়ে ধরে একটু নাড়াচাড়া করলেই এর বন্ধ হয়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক। মিসেস ফাইনম্যান যখন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন, তখন নার্স হাসপাতালে রেকর্ড রাখার জন্য সময় লিপিবদ্ধ করেছিল। ডেথ সার্টিফিকেট প্রদান করার সময় মৃত্যুর সময় উল্লেখ করতে হয়। ঐ সময় কেবিনটি ছিল বেশ অন্ধকারাচ্ছন্ন। দূর থেকে সময় দেখা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই নার্স ঘড়িটা হাত দিয়ে ধরে জানালার দিকে তাক করে সময় দেখেছিল। ঐ সময় নড়েবড়ে ঘড়িটা নড়াচড়ার ফলে বন্ধ হয়ে যায় এবং এই অবস্থাতেই থাকে পরের দিন পর্যন্ত। এখানে অলৌকিকতার কিছু নেই, যান্ত্রিক ত্রুটিই মাত্র।
এরকম ঘটনার ক্ষেত্রে আমাদের কাছে যদি কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা না-ও থাকে, তাহলেও অলৌকিকতার আশ্রয় নেয়া যাবে না। যদি ঐ ঘড়িটির যান্ত্রিক অবস্থা ভালো থাকে এবং যদি ঘড়িটিকে কেউ স্পর্শ না করার পরেও এটি মৃত্যুর সাথে সাথে থেমে যায়, তাহলেও এখানে অলৌকিকতার কিছু নেই। কোনো সন্দেহ নেই যে তখনকার সময়ে প্রতি রাতেই এই বিশ্বে হাজার হাজার ঘড়ি বন্ধ হয়েছে। প্রতি রাতে হাজার হাজার মানুষ মারাও গেছে। এদের অধিকাংশের ক্ষেত্রে মানুষ মরার সাথে সাথে ঐ কক্ষের ঘড়ি নষ্ট হয়নি। ঘটনাক্রমে ফাইনম্যানের স্ত্রীর কক্ষের ঘড়ি নষ্ট হয়েছে। কোনো একভাবে মিলে গেছে আরকি, এই যা। ঘটনাটি ফাইনম্যানের স্ত্রীর বেলায় না হলে অন্য কারো বেলায় হতো। এখানে অবাস্তব কিছু নেই।
আগে বিজ্ঞানের বিকাশ ছিল না, অলৌকিকতা দিয়ে ব্যাখ্যা করাটা স্বাভাবিক কাজ ছিল মানুষের। এখন বিজ্ঞান পৌঁছে গেছে সকলের কাছে, তাই আমাদের সকলের উচিৎ কোনো ঘটনা ঘটলে সেটিকে অলৌকিক না ভেবে প্রথমেই সেটাকে যাচাই-বাছাই করে দেখা। সেখান থেকে কোনো ফলাফল বা সিদ্ধান্ত পাওয়া গেলে মেনে নেয়া আর না পাওয়া গেলে যৌক্তিক ব্যাখার জন্য অপেক্ষা করা।
Featured Image: Wallpaper Kid