মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যের টলেডো শহরে থাকেন মিসেস ট্রাসি কার্থ ও তার স্বামী কেভিন কার্থ। এই দম্পতির ঘরে এক মেয়েসন্তান রয়েছে। পরিবারের এই তিন সদস্যের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা ব্যক্তিগত গাড়ি রয়েছে। ট্রাসি বলছেন, বেশিরভাগ আমেরিকানের কাছে এটা বেশ স্বাভাবিক ব্যাপার। ২০১৯ সালের এক গবেষণা বলছে, ট্রাসি কার্থের মতো বিশ্বের ১০ শতাংশ ধনী তাদের নিজেদের ভাগের চেয়ে ১০ গুণ বেশি কার্বন নিঃসরণে ভূমিকা রাখছে।
কার্বন নিঃসরণ নিয়ে ভাবনা কেন?
আমরা সকলেই স্কুল-কলেজে গ্রীনহাউজ প্রভাব সম্পর্কে পড়েছি। গ্রীন হাউজ গ্যাস বলতে সাধারণত কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, ওজোন এবং জলীয়বাষ্পকে বোঝানো হয়। এরা সূর্যের তাপ বায়ুমণ্ডলে আটকে দেয়। ফলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পৃথিবী। এই গ্যাসগুলোর পরিমাণ বায়ুমন্ডলে ক্রমাগত বাড়তে থাকায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পৃথিবীর তাপমাত্রাও। তাপমাত্রা বাড়ার এই প্রবণতার নাম বৈশ্বিক উষ্ণতা। কার্বন নিঃসরণও একধরনের গ্রীণ হাউজ গ্যাসেরই নিঃসরণ বলা চলে। এই নিঃসরণ তখনই হয়, যখন মানুষের নানা কর্মকান্ডের ফলে কার্বন ডাইঅক্সাইড বায়ুমন্ডলে মিশে। এই গ্যাস নিয়ে ভাবনা বেশি, কারণ বায়ুমণ্ডলে এদের পরিমাণই সবচেয়ে বেশি। প্রতিনিয়তই এই পরিমাণ বাড়ছে ৷ মানুষের দৈনন্দিন কাজের ফলে এই কার্বন নিঃসরণের মাত্রাও তাই বাড়ছে আশঙ্কাজনকহারে। যুক্তরাষ্ট্রের এনভায়রনমেন্ট প্রটেকশন এজেন্সি (ইপিএ) কার্বন নিঃসরণ তথা গ্রীন হাউজ গ্যাস নিঃসরণের ছয়টি প্রধান উৎস ভাগ করে দেখিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, যানবাহন, বিদ্যুৎ উৎপাদন, শিল্পকারখানা, আর্থিক ও ব্যক্তিগত আবাসন, কৃষি এবং জমির যাচ্ছেতাই ব্যবহার থেকে সবচেয়ে বেশি নিঃসরণের ঘটনা ঘটছে।
জলবায়ুর বিপর্যয়কর প্রভাব এড়াতে ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনা প্রয়োজন মনে করে জাতিসংঘ। কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনা বলতে বোঝানো হচ্ছে, বায়ুমণ্ডলে গ্রিন হাউজ গ্যাস আর যুক্ত না করা। চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ভারত বায়ুমণ্ডলে সবচেয়ে বেশি কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস নিঃসরণ করে। নিঃসরণ বন্ধে তাই এই দেশগুলোরই ভূমিকা বেশি থাকা প্রয়োজন। চীন ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ২০৫০ সালের মধ্যেই একই লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সম্প্রতি ভারতও একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তবে তাদের সময়সীমা ২০৭০ সাল।
আলোচনায় ১ শতাংশ ধনীদের দায়
মিলিয়নিয়ার কিংবা বিলিয়নিয়ার ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত যারা, তাদের সাধারণত একাধিক বাড়ি থাকে, থাকে একাধিক গাড়িও। তাদের অনেকেরই ব্যক্তিগত বিমানও রয়েছে। কার্বন নিঃসরণে তাই তাদের দায়ও কম নয়। যে ব্যক্তি বছরে ১ লক্ষ ৭২ হাজার ডলার আয় করে থাকেন, তাকেই ধনী বলা হয়। এই আয়ের মানুষের সংখ্যা বিশ্বে ১ শতাংশ। এরাই মূলত শীর্ষ ধনী। এর বাইরে যারা অন্তত ৫৫ হাজার ডলার আয় করেন, তাদের সংখ্যা প্রায় ১০ শতাংশ। গবেষণা বলছে, এই ১০ শতাংশ ব্যক্তিরা নয় গুণ বেশি কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী। সময়ের সাথে সাথে অবশ্য এই শ্রেণীর লোকদের কার্বন নিঃসরণের হার তেমন একটা বাড়েনি।
১৯৯০ সালের সাথে তুলনা করলে দেখা যায়, সেই বছর এই ১০ শতাংশের ব্যক্তিগত কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ ছিল জনপ্রতি ২১ টন। ২০৩০ সালে যখন পৌঁছাবে পৃথিবী, তখনও খুব একটা পার্থক্য আসবে না এই হারে। তবে সবচেয়ে বড় লাফ দেবে ১ শতাংশ শীর্ষ ধনীরা। ১৯৯০ সালে তাদের যেখানে জনপ্রতি কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ ছিল ৫৬ টন, ২০৩০ সালে গিয়ে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে ৭০ টনে। বিবিসি জানিয়েছে, নিঃসরণ ২০১৫ পর্যন্ত যে হারে বাড়ছিল, তাতে শঙ্কাই দেখা দিয়েছিল জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার পদক্ষেপে। সে বছর প্যারিস জলবায়ু চুক্তির ফলে অস্বাভাবিক এই বৃদ্ধিতে লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হয়। এরপরও ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের ১ শতাংশ শীর্ষ ধনী পুরো পৃথিবীর ১৬ শতাংশ কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী হবেন। আন্তর্জাতিক সংস্থা অক্সফাম ও স্টকহোম এনভায়রনমেন্ট ইনস্টিটিউট তাদের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য দিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সাল পর্যন্ত শীর্ষ এক শতাংশ ধনীরা যে পরিমাণ কার্বন ব্যবহার করেছেন, তা গরীব বিশ্বের অর্ধেক জনসংখ্যার ব্যবহারের দ্বিগুণ। সংস্থা দুটি বলছে, ২০৩০ সালে এই শ্রেণির মানুষের কার্বন ব্যবহারের মাত্রা ১৯৯০ সালের মাত্রার চেয়ে ২৫ ভাগ বেড়ে যেতে পারে। শঙ্কার ব্যাপার হচ্ছে, এই মাত্রা প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে অনুমিত মাথাপিছু মাত্রার চেয়ে ৩০ গুণ বেশি।
ধনীদের প্রভাব কীভাবে?
২০১৮ সালে সুইডেনের লিনিয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্রমণ বিষয়ক অধ্যাপক স্টিফান গসলিং এবং তার দল বেশ কয়েকজন ধনী তারকার সামাজিক যোগযোগমাধ্যমের প্রোফাইল বিশ্লেষণ করেন। এই ধনীদের তালিকায় প্যারিস হিলটন থেকে শুরু করে ছিলেন অপরাহ্ উইনফ্রে পর্যন্ত। গসলিং ও তার দল দেখতে চাচ্ছিল- তারা ঠিক কতবার বিমানে চড়েন। তারা যে ফলাফল পেয়েছে তা প্রকৃতপক্ষেই শঙ্কাজাগানিয়া। মাইক্রোসফট সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস ২০১৭ সালে ৫৯ বার বিমানে চড়েছেন। গসলিং বলছেন, তার হিসেবে এই ভ্রমণের দূরত্ব প্রায় ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৫০০ কিলোমিটার। এই দূরত্বে যেতে সাধারণত ১,৬০০ টন গ্রীনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ হয়। এই পরিমাণ ১০৫ জন আমেরিকানের বার্ষিক গড় নিঃসরণের সমান।
গসলিংয়ের লক্ষ্য ছিল, শীর্ষ ধনী ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত খরচের মাত্রা উন্মোচন করার চেষ্টা করা, যাদের জীবনধারা প্রায়শই গোপনীয়তায় ঘেরা থাকে। তার দলের এই গবেষণা গ্রেটা থুনবার্গের (সুইডিশ কিশোরী, যিনি জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন) নেতৃত্বে ক্রমবর্ধমান পরিবেশ আন্দোলনের সাথে মিলে যায়, যা ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতার উপর আলোকপাত করে। বিমানযাত্রাকে দেখা হয় কার্বন নিঃসরণের সবচেয়ে উচ্চ মাত্রার একটি হিসেবে।
গসলিং বলছেন, “আপনি বিমান চড়ছেন, এর মানে আপনি অভিজাত শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলেন।” তার মতে, ৯০ শতাংশেরও বেশি মানুষ কখনও বিমান চড়ে নি। আর বাকি ১০ শতাংশের মধ্যে অন্তত ১ শতাংশই পৃথিবীর অর্ধেক কার্বন নির্গমনের জন্য দায়ী। লিনিয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বলেছেন, বিশ্বজুড়ে ব্যবসায়িক অভিজাত ব্যক্তি থেকে শুরু করে সেলিব্রিটি, যারা ভ্রমণকে তাদের ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডের অংশ বানিয়েছেন, তাদের আচরণ উচ্চ কার্বন জীবনযাত্রাকে উচ্চাকাঙ্খী এবং পছন্দসই করে তুলতে সাহায্য করেছে।
এ তো গেল আকাশযাত্রার বিশ্লেষণ। ধনীদের এমন আরো দুটি বিষয় চিন্তার ভাঁজ ফেলছে পরিবেশ বিজ্ঞানীদের কপালে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিশ্বের নানা রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, ব্যবসায়িক ম্যাগনেট, সেলিব্রিটি, এমনকি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে দেখা গেছে স্পোর্ট ইউটিলিটি ভেহিকল বা এসইউভি (SUV) গাড়িকে। ব্যক্তিগত গাড়ি হিসেবে পছন্দের শীর্ষে উঠে আসা এই এসইউভি কীভাবে কার্বন নিঃসরণে ভূমিকা রাখছে তা বোঝাতে একটি তথ্য দিতে চাই আপনাদের। এই মুহূর্তে রাস্তায় যেসব এসইউভি চলছে, তারা সকলে মিলে প্রতি বছর গড়ে ৭০০ মেগা টন কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমন করে। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির ভাষ্যমতে, ২০১০ সাল থেকে এই এসইউভিগুলো বায়ুমন্ডলে কার্বন নিঃসরণে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখছে। সবচেয়ে আশঙ্কার তথ্য হচ্ছে, এসইউভি-ই একমাত্র সেক্টর যেখানে ২০২০ সালে নিঃসরণের উচ্চহার দেখা গেছে।
নিঃসরণের ভয়াবহতায় আবাসনকে দায়ী করছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। প্রয়োজনের তুলনায় বৃহৎ এবং চাকচিক্যপূর্ণ বাড়ি পরিবেশের জন্য বিপদ ডেকে আনছে। সুইডেনের লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী কিম্বারলি নিকোলাস ও তার সহ-লেখকদের প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত বাড়ি এখন শুধু থাকার প্রশ্নে তৈরি হচ্ছে না, এটি হয়ে উঠছে সামাজিক মর্যাদা এবং প্রতিপত্তি প্রকাশের হাতিয়ার। ইউরোপের ১১ শতাংশ নিঃসরণের জন্য দায়ী করা হচ্ছে ব্যক্তিগত বাড়িকে, যাদের ১ শতাংশেরই প্রয়োজনের তুলনায় বৃহৎ এবং একাধিক বাড়ি রয়েছে।
অনুকরণীয় হতে পারবো আমরা?
সব দেশেই যে ধনীদের নিঃসরণ নিয়ে মাথাব্যথা নেই, এমন ভাবলে অবশ্য ভুলই করবেন। সুইডেনকে টানা যায় উদাহরণ হিসেবে। ২০১৯ সালে দেশটিতে ‘ফ্লাইট শেম’ (Flight Shame) নামে একটি ট্রেন্ড চালু হয়। এই ট্রেন্ড অনুসরণের মাধ্যমে অসংখ্য সুইডিশ যাত্রার জন্য বিমানে অনুৎসাহিত হতে শুরু করে। বিকল্প হিসেবে বেছে নেয় ট্রেন। সে সময় বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ৩৭ শতাংশ সুইডিশ জনগণ সম্ভব হলে ফ্লাইটের পরিবর্তে ট্রেনই বেছে নিচ্ছে, যা মাত্র ১৮ মাস আগেও ২০ শতাংশের ঘরে ছিল।
মহামারীর দিনগুলোয় অফিস যাওয়ার পরিবর্তে ঘরে বসেই অফিস করার প্রতি জোর দিতে দেখা গেছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানকে। জরুরি সভার জন্য বেছে নিতে দেখা গেছে ভিডিও কল সেবাকে। এটি প্রমাণিত হয়েছে যে ভিডিও কল বা ঘরে বসে কাজ আগামীর দিনগুলোর জন্য কার্যকর এক মাত্রা দেবে পেশাগত ক্ষেত্রে। একইসাথে এটি যাতায়াত ব্যবস্থার উপরও চাপ কমানোয় কমবে নিঃসরণ হারও।
মানুষ তাদের খাদ্যের প্রভাব নিয়েও ভাবতে শুরু করেছে। যার ফলে উদ্ভিদভিত্তিক মাংস এবং দুগ্ধ সংস্থাগুলোর উপর চাপ বাড়ছে। ইউনিভার্সিটি অব সাসেক্সের অধ্যাপক পিটার নিওয়েল অবশ্য এই পরিবর্তনকে খুবই নগণ্য বলছেন। তার মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতা এত দ্রুতগতিতে দৃশ্যমান হচ্ছে যে ছোট ছোট অভ্যাস পরিবর্তন দিয়ে এত বড় প্রভাবকে মোকাবিলা করা দুঃসাধ্যই বটে।
অ-টেকসই আচরণ, যেমন- ঘন ঘন বিমান চড়া এবং প্রাণীজ মাংসের অত্যধিক ব্যবহারের মতো বিষয়গুলোয় উচ্চ ভ্যাট বসালে মানুষ কম কার্বন নিঃসরণে ঝুঁকবে। এতে প্রকৃতির প্রতি নিজেদের আচরণ পরিবর্তনের গতিও বৃদ্ধি করতে সাহায্য করতে পারে। নিওয়েল বলছেন, বিশেষ করে যদি দূষণকারী আচরণের শাস্তি এবং বিনিয়োগের মধ্যে সরাসরি যোগসূত্র থাকে সেটি অনেকাংশে উপকার বয়ে আনবে। অর্থাৎ নিঃসরণকারী হিসেবে আপনার উপর যে জরিমানা বর্তাবে সেটি ব্যয় করতে হবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায়।
ব্যক্তিগত কার্বন ভাতা (PCA) নামে একটি ধারণাও প্রচলিত রয়েছে। যেখানে ব্যক্তিদের একটি সমান, বাণিজ্যযোগ্য কার্বন ভাতা বরাদ্দ করা হয়। মানুষ যদি আরও বেশি নির্গত করতে চায় তবে তাদের অবশ্যই অন্যের অবাঞ্ছিত ভাতা কিনতে হবে। আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স এবং ক্যালিফোর্নিয়ায় এই ধারণার প্রয়োগ দেখেছে বিশ্ব। এমন নানান ধারণা নিয়েই কাজ চলছে বিভিন্ন দেশে। লক্ষ্য একটাই, কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা। আগামী প্রজন্মের জন্য পৃথিবীকে অন্তত বসবাসের উপযোগী করে রাখা।