গত বছর ৩০শে নভেম্বর ‘চ্যাটজিপিটি’ আনুষ্ঠানিকভাবে বাজারে আনে যুক্তরাষ্ট্রের সান-ফ্রান্সিসকোভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ওপেন এআই। এরপর থেকে ইন্টারনেট দুনিয়ার সবচেয়ে আলোচিত বিষয়ের নাম ‘চ্যাটজিপিটি বনাম গুগল’।
চ্যাটজিপিটি কি গুগলের একচ্ছত্র সার্চ ইঞ্জিন ব্যবসায় ভাগ বসাবে? চ্যাটজিপিটি কি গুগলের চেয়ে অধিক কার্যকর? তবে কি গুগলের দিন শেষ? এরকম নানা জল্পনা-কল্পনায় মুখর এখন নেটিজেনরা। তবে প্রযুক্তি বিশারদরা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর পূর্বে একটু ঠান্ডা মাথায় ভাবার পরামর্শ দিচ্ছেন, আশ্বস্ত করছেন যে ‘চ্যাটজিপিটি বনাম গুগল’ আলোচনার সময় এখনও আসেনি। কেন আসেনি সেই ব্যাখ্যায় যাবার পূর্বে জেনে নিতে হবে চ্যাটজিপিটি কী।
চ্যাটজিপিটি হলো একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন চ্যাটবট যা কথোপকথনের মাধ্যমে যেকোনো প্রকার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকে। সহজভাবে দেখলে, বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রশ্নোত্তরের জন্য বিদ্যমান চ্যাটবটগুলোর মতোই একটি চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি, যার পরিসর অনেক বড় এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রদর্শনে অধিক পারদর্শী।
এতটুকু জেনে চ্যাটজিপিটিকে সাধারণ মনে হতে পারে। কিন্তু বিস্ময় তখনই জাগবে, যখন আপনি জানতে পারবেন যে চ্যাটজিপিটিকে সঠিক কিওয়ার্ডের মাধ্যমে কমান্ড দিতে পারলে তা আপনাকে যেকোনো বিষয়ের উপর আস্ত আর্টিকেল লিখে দিতে পারবে! স্থান, কাল, পাত্র আর অন্যান্য অনুষঙ্গ বলে দিলে চ্যাটজিপিটি লিখে দেবে গল্প, ছড়া, কবিতা, গানও!
ভাবছেন- সেসব বিভিন্ন অনলাইন সোর্স থেকে ধার করা? ভুল ভাবছেন। চ্যাটজিপিটির তৈরি করা লেখাগুলো চৌর্যবৃত্তির পরীক্ষায় ফেললে সেগুলো শতভাগ মৌলিক লেখা হিসেবেই প্রমাণিত হয়!
আপাত বড় সমস্যা কেবল দুটিই। একটি হলো- চ্যাটবটটিকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে ২০২১ সাল পর্যন্ত। আরেকটি হলো- মাঝে মাঝেই ভুল তথ্য দিতে পারে এই চ্যাটবট। অবশ্য, দুটো সমস্যাই সমাধানযোগ্য।
তাহলে কি গুগলে একটি একটি করে তথ্য না খুঁজে চ্যাটজিপিটিতে সরাসরি চাহিদামতো আর্টিকেলটিই খুঁজে নেয়া যাবে? আর যদি যায়, তাহলে গুগলের প্রয়োজনীয়তা কি ফুরিয়ে এলো? কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা এখনই বলা মুশকিল হলেও এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই ‘না’। চলুন জেনে নিই কেন।
ভিজ্যুয়ালের অভাব
চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীর যেকোনো প্রশ্নের উত্তর কেবল টেক্সটের মাধ্যমে দিতে সক্ষম। কোনো ছবি বা ভিডিও চ্যাটজিপিটি দিতে পারে না যেখানে গুগল কিওয়ার্ডের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ সকল প্রকার ছবি/ভিডিও উপস্থাপন করতে সক্ষম।
বাছাইয়ের সুযোগ
চ্যাটজিপিটিতে কিছু সার্চ করলে চ্যাটবটটি নিজের মতো করে উত্তর সাজিয়ে একটি আর্টিকেল আকারে উপস্থাপন করবে। অর্থাৎ, প্রশ্নটির কেবল একটিই উত্তর পাওয়া যাবে। কিন্তু গুগল ওয়েবে থাকা সকল উৎসের সন্ধান দেবে যেখান থেকে নিজের ইচ্ছা ও প্রয়োজনমতো বাছাই করে নেয়া যাবে।
নির্ভরযোগ্যতা
চ্যাটজিপিটির দেয়া উত্তরে কোনো উৎসের উল্লেখ থাকে না। তাতে সত্য মিথ্যা যাচাইয়ের উপায় থাকে না। কিন্তু গুগলে সার্চ করলে অসংখ্য অপশন আসবে যেখান থেকে বাছাই করে তথ্য নেয়া যাবে উৎসের নির্ভরযোগ্যতার উপর ভিত্তি করে।
গতি
গতিতেও চ্যাটজিপিটি থেকে যোজন এগিয়ে গুগল। যেকোনো প্রশ্নের উত্তর গুগল হাজির করতে পারে এক সেকেন্ডেরও কম সময়ে যেখানে চ্যাটজিপিটি এআইয়ের যেকোনো উত্তর তৈরি করতে খানিকটা সময়ের প্রয়োজন হয়।
সার্চের সীমাবদ্ধতা
সার্চ ইঞ্জিন গুগল এখন এতটাই শক্তিশালী যে- কোনো কিওয়ার্ড ভুলভাল লিখলে কিংবা আংশিকভাবে লিখলেও গুগল সাজেশনে ব্যবহারকারী তার প্রয়োজনীয় সাজেশন দেখতে পায়, কিংবা সঠিক ফলাফল চলে আসে। চ্যাটজিপিটিতে কোনো সাজেশন নেই, ভুল কিওয়ার্ড দিলে সঠিক ফলাফলও আসবে না।
বর্তমান থেকে বিচ্যুত
গতিশীল এই সময়ে প্রতি মুহূর্তেই ইন্টারনেটে যুক্ত হচ্ছে অপরিমেয় পরিমাণ তথ্য, যেগুলো সম্পর্কে গুগল ওয়াকিবহাল এবং সার্চ করলে সর্বশেষ আপডেটগুলোই শুরুতে দেখায়। আর এখানেই চ্যাটজিপিটি সবচেয়ে পিছিয়ে পড়ে, কেননা এই চ্যাটবটটি কাজ করে কেবল সংরক্ষিত ডেটাবেজের উপর ভিত্তি করে। হালনাগাদ তথ্য দেয়া এর পক্ষে এখনও সম্ভব নয়।