করোনার লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ডাক্তারদের পাশে অগমেডিক্স

আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে আড়াই কোটি; মৃতের সংখ্যা সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে ছাড়িয়ে যাবে সাড়ে চার লক্ষের ঘর— এই পরিসংখ্যান কোভিড-১৯ এর এককভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্রের। সামরিক সক্ষমতায় সকলকে ছাড়িয়ে, বাণিজ্য-অর্থনীতি আর বিশ্বরাজনীতির মাঠে দাপিয়ে বেড়ানো পরাক্রমশালী যুক্তরাষ্ট্র করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আর মৃতের তালিকাতেও অনাকাঙ্খিতভাবে সকলের চেয়ে এগিয়ে। উন্নত প্রযুক্তি আর সর্বাধুনিক চিকিৎসাসেবা নিয়েও করোনা ঠেকাতে নাভিঃশ্বাস অবস্থা দেশটির স্বাস্থ্যখাতের। আর এই নাজুক অবস্থায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশকে স্বাস্থ্যসেবায় সহায়তা দিচ্ছে তালিকার ৩৫ তম স্থানে থাকা উন্নয়নশীল দেশ, ‘বাংলাদেশ’; আরো নির্দিষ্ট করে বললে বাংলাদেশেরই একটি প্রতিষ্ঠান, অগমেডিক্স বাংলাদেশ লি:।

Image Courtesy: Augmedix

২০২০ সালকে যদি এক শব্দে বর্ণনা করতে হয়, তাহলে শব্দটি হবে ‘কোভিড-১৯।’ চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাল রোগটি পৃথিবী নামক গ্রহটিকে একরকম স্থবির করে দিয়েছে। বিশ্ব বাণিজ্যে মন্দা, কোটি মানুষের চাকরিচ্যুতি, দারিদ্র আর বেকারত্বের হার অস্বাভাবিক গতিতে বাড়ন্ত- এর মাঝে সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা হয়ে আছে মানুষের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার লড়াই। বাজারে টিকা আসতে শুরু করলেও করোনা ইতোমধ্যেই বিশ্বব্যাপী কেড়ে নিয়েছে ১৭ লক্ষাধিক প্রাণ। আর এ তালিকায় ৩ লক্ষাধিক নামই যুক্তরাষ্ট্রের; সেখানকার স্বাস্থ্যখাতের কর্মকর্তাদের কপালে দুঃশ্চিন্তার ভাঁজ পড়াটাও তাই স্বাভাবিক। এমতাবস্থায় একটি বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান তাদেরকে চিকিৎসাসেবায় সহায়তা দিচ্ছে- এ সংবাদটি চমকে দিয়েছিল অনেককেই। বাংলাদেশি মেডিক্যাল ডকুমেন্টেশন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ‘অগমেডিক্স বাংলাদেশ’ কোভিড সংকটের মাঝে হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের ডাক্তারদের পরম বন্ধু।

যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশী দূতাবাস তাদের একটি ফেসবুক পোস্টে জানায় অগমেডিক্স সম্পর্কে তাদের সন্তোষজনক মনোভাবের কথা।

“কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ডাক্তারদের লড়াইয়ে বাংলাদেশী রিয়েল টাইম রিমোট মেডিকেল ডকুমেন্টেশন সেবা প্রদানকারী কোম্পানি অগমেডিক্স বাংলাদেশের সহায়তা পেয়ে আমরা গর্বিত। কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র অংশীদার হয়ে কাজ করছে, এটি তার উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত।”

যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশী দূতাবাস থেকে করা সেই টুইটার বার্তা; Image Courtesy: U.S. Embassy Dhaka/Twitter

স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, অগমেডিক্স বাংলাদেশ লি: কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকদের সহায়তা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় ডাক্তারদের জন্য একটি বাধ্যতামূলক দায়িত্ব হলো প্রত্যেক রোগীর চেকআপের সময় তার বিস্তারিত মেডিক্যাল রিপোর্ট তৈরি করা। এতে করে ডাক্তারদের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে, পাশাপাশি রোগী দেখতেও সময় ব্যয় হয় অনেক। এ কাজটিকে ভীষণ সহজ করে এনেছে অগমেডিক্স। বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে বসেই অগমেডিক্সের দক্ষ স্ক্রাইবরা যুক্তরাষ্ট্রের ডাক্তারদের চোখে চশমার মতো পরিধান করা গুগল গ্লাসের মাধ্যমে সরাসরি দেখতে পায় রোগীকে, শুনতে পায় রোগী ও ডাক্তারের মাঝের কথোপকথন, আর ডাক্তারের হয়ে লিখে ফেলে রোগীর মেডিক্যাল রিপোর্ট।

অগমেডিক্সের এই সৃজনশীল কর্মপন্থায় যুক্তরাষ্ট্রের ডাক্তারদের লাভ হচ্ছে বহুমুখী। একদিকে তারা অল্প সময়ে রোগীর চেকআপ সারতে পারছেন, অন্যদিকে যথার্থ মনোযোগ সহকারে নিজেদের কাজটি করতে পারছেন; পাশাপাশি রিপোর্ট লিখবার জন্য অ্যাসিস্ট্যান্ট নিয়োগের ব্যয় থেকেও নিষ্কৃতি পাচ্ছেন।

তবে সবচেয়ে বড় সুফলটা এসেছে কোভিডের এই দুর্যোগের মাঝেই। কোভিড মোকাবিলায় যারা প্রতিনিয়ত লড়ে যাচ্ছেন, ডাক্তাররাই তাদের মাঝে প্রথম সারির। প্রতিটি রোগীর চেকআপের সময় একজন ডাক্তার আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে। আর রোগী দেখতে দেখতে রিপোর্ট তৈরিতে সময় বৃদ্ধি পেলে সে সম্ভাবনা বেড়ে যায় বহুগুণ। অগমেডিক্স এখানে কিছুটা হলে ডাক্তারদের স্বস্তির কারণ হয়েছেন। আবার পূর্বে তৈরি চার্ট থেকে তথ্য প্রক্রিয়া করে রোগীর জন্য রুটিন সেবার কথা ডাক্তারকে স্মরণও করিয়ে দিচ্ছে স্ক্রাইবরা। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তৈরি ওয়ার্কফ্লো গাইড অনুযায়ী কাজ করতেও ডাক্তারদের সহায়তা করে থাকে স্ক্রাইবরা।

অন্যদিকে প্রথাগত ডাক্তারের চেম্বারে রোগীর চেকআপের বাইরেও অগমেডিক্স তাদের সেবা প্রসারিত করেছে অনেকগুলো খাতে, যা করোনার সম্মুখযোদ্ধাদের, অর্থাৎ ডাক্তারদের জীবনের নিরপত্তা বাড়াতে কার্যকরী ভূমিকা রাখছে। টেলিমেডিসিন ভিজিটের পাশাপাশি সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় অগমেডিক্স নিয়ে এসেছে রেস্পিরেটরি আর্জেন্ট কেয়ার ক্লিনিক, পপ-আপ ক্লিনিক, ড্রাইভ-থ্রু হেলথ সার্ভিসসহ একাধিক উদ্ভাবনী সেবা।

Image Courtesy: Augmedix

এতো সব উদ্ভাবনীয় সেবার মাঝে সেবাপ্রদানকারীদের নিরাপত্তার ব্যাপারটিও দেখা হচ্ছে গুরুত্ব দিয়েই। বিশ্বের নানাপ্রান্ত থেকে কাজ করা কর্মীদের শারীরিক সুস্থতা ও নিরাপত্তার বিষয়টি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। স্ক্রাইব, আইটি ডেভলপার কিংবা প্রশাসনিক পর্যায়ের কর্মকর্তা- সকলেই রয়েছে এই পর্যবেক্ষণের আওতায়, যাদের জন্য মানসম্মত স্যানিটাইজেশন ও জীবাণুমুক্তকরণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে অগমেডিক্স বাংলাদেশ।

এখানেই শেষ নয়। অগমেডিক্স তাদের কর্মীদের জন্য ‘পারসোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুয়িপমেন্ট’ (পিপিই)- এর ব্যবস্থাও করেছে। অফিসে কর্মীদের সুরক্ষার জন্য কঠোরভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি প্রয়োগের দিকেও নজর রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। এছাড়াও ‘হেলথ ইনস্যুরেন্স পোর্টেবিলিটি অ্যান্ড একাউন্টেবিলিটি এক্ট’ (HIPPA) এর মাধ্যমে বাড়তি সুরক্ষা নিশ্চিত করেছে অগমেডিক্স।

Image Courtesy: Augmedix

অন্যদিকে, সংক্রমণ রোধে অনেক কর্মীকে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ অর্থাৎ বাসা থেকেই কাজের সুযোগ দেয়া হয়েছে। বিশেষকরে প্রোগ্রামার, সফটওয়্যার ডেভলপার আর আইটি প্রফেশনালরা ভার্চুয়ালি নিজেদের মাঝে যোগাযোগ ও কাজের সমন্বয় রক্ষা করছেন। তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা ও শ্রমের ফলেই প্রতিনিয়ত প্রাযুক্তিকভাবে সমৃদ্ধ হচ্ছে অগমেডিক্স, বাড়ছে প্রতিষ্ঠানটির ‘ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং’ সক্ষমতা।

মাত্র ৬ বছর আগে পূর্ণরূপে যাত্রা শুরু করা অগমেডিক্সের প্রাসঙ্গিকতা ও তাৎপর্য ইতোমধ্যে বেড়েছে বহুগুণে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ডাক্তারদের ২-৩ ঘন্টা মূল্যবান সময় বাঁচিয়ে অগমেডিক্স তাদের কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে দিচ্ছে ৩০ শতাংশ। আর এতে করে কাজের সন্তুষ্টি বৃদ্ধি পায় প্রায় ৪০ শতাংশ। এসবই সম্ভব হয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি আর উদ্ভাবনে জোর দেয়ার জন্য। আর করোনার মহামারী পৃথিবীতে প্রযুক্তিনির্ভর সেবার প্রয়োজনীয়তা আরো বেশি করে অনুভব করিয়েছে। তাই আগামীতে অগমেডিক্স যে উত্তরোত্তর সাফল্য অর্জন করবে, সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না।

This article is written on the introduction of Augmedix and its scribes.

Featured Image Source: Augmedix

Related Articles

Exit mobile version