ইউএন উইমেন-এর সহযোগিতায় এম জি মোটর ইন্ডিয়া এবং দ্য বেটার ইন্ডিয়া-র যৌথ প্রয়াস ‘চেঞ্জমেকার্স’ আপনাদের সামনে তুলে ধরছে সেই সমস্ত কৃতী নারীদের কাহিনী যারা তাদের অদম্য মনের জোরে ও ইচ্ছায় অসংখ্য মানুষের জীবনেও এনেছেন এক ইতিবাচক পরিবর্তন।
আজ আমাদের গল্পের নায়ক জাবনা চৌহান, যিনি মাত্র ২২ বছর বয়সে ভারতের সর্বকনিষ্ঠ সরপঞ্চ নির্বাচিত হন।
হিমাচল প্রদেশের মান্ডি জেলার থাৰ্জুন গ্রামের এক কৃষকের মেয়ে জাবনা দারিদ্র্য এবং পুরুষতান্ত্রিক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে তার নিজের গ্রামের প্রশাসনিক দায়িত্ব নেন। যদিও জাবনা ছোট থেকেই পড়াশোনায় ভালো ছিল, উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে তাকে যথেষ্ঠ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। জাবনার আরেকটি বোন এবং দৃষ্টিশক্তিহীন ভাইকেও প্রতিপালিত করতে গিয়ে তার দায়বদ্ধ পিতা জাবনাকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে সাহায্য করতে অক্ষম ছিলেন।
সাংবাদিকতার কাজ নেয় জাবনা আর তাতে তার জনসংযোগের কাজ আরও দৃঢ় হয়
সৌভাগ্যবশত, জাবনাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন তার কাকা। তার কলেজ শিক্ষার খরচ বহন করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। যদিও জাবনা তার কলেজ শিক্ষার সময়ে বেশ কয়েক মাস রোজ আঠারো কিলোমিটার হেঁটে বাড়ি ফিরত, কারণ দু’দিকের বাসের ভাড়া দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। সে নিজেও একটি সংবাদপত্রে স্ট্রিংগার হিসেবে কাজ নেয় যার ফলে সে সমস্ত মান্ডি জেলা থেকে খবর সংগ্রহ শুরু করে।
তার এই সাংবাদিকতার জীবনে সে যে শুধুমাত্র তার গ্রামের বিভিন্ন সমস্যার উপরে আলোকপাত করে তা-ই নয়, পাশাপাশি এই সমস্ত সমস্যার কথা যাতে প্রশাসনের কাছে পৌঁছয় সেটাও সুনিশ্চিত করে, যাতে তাদের সমাধানের ব্যাপারে প্রশাসন তৎপরতা দেখায়। এতে জাবনার পরিচিতি আরও ছড়ায়- সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সে আধিকারিকদের সংস্পর্শেও আসে আরও বেশিভাবে।
মদ্যপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে জাবনা এবং তাতে জয়লাভও করে
২০১৬ সালে যখন পঞ্চায়েত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, গ্রামের সকল মানুষ জাবনাকে বলে মনোনয়ন পেশ করতে। মাত্র ২২ বছর বয়সী জাবনা সেই পদক্ষেপ নিতে দ্বিধায় থাকলেও, সে বোঝে যে গ্রামের উন্নয়নের জন্যে কিছু করতে চাইলে এটাই সুযোগ। সে এরপর সফলভাবেই নির্বাচন লড়ে এবং পঞ্চায়েত প্রধান হওয়ার পরে সে মদ্যপানের নেশার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। এই সমস্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন গ্রামের মহিলারা এবং এর বিরুদ্ধে জোরদার জনমত তৈরি করার জন্যে জাবনা উদ্যোগী হয়।
নিজের এবং অন্যান্য গ্রামে নিযুক্ত সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গেও এই ব্যাপারে সে যোগাযোগ করে এবং মাদকদ্রব্যের ব্যবসার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করার অনুরোধ জানায়। জাবনার উদ্যোগে মাদকদ্রব্য এবং তামাকজাতদ্রব্যের বিক্রয় এবং ব্যবহার নিষিদ্ধ করার জন্যে গ্রামসভা একটি আইন পাশ করে যা বলবৎ হয় ২০১৭ সালের পয়লা মার্চ থেকে।
কাজটা যদিও সহজ ছিল না কিন্তু আমিও দাঁতে দাঁত চেপে এই সমস্যাকে নির্মূল করার জন্যে বদ্ধপরিকর ছিলাম। এর জন্যে মাদকাসক্ত বহু পুরুষ আমাকে গালাগালি দেন, এমনকি হুমকি পর্যন্তও। কিন্তু আমি তাদের সোজাসুজি জানিয়ে দিই যে আমি দমবার পাত্রী নই। আর এখন আমাদের গ্রামে প্রকাশ্যে কেউ মদ্যপান করার সাহস পায় না।
বেশ গর্বের সঙ্গেই জানায় জাবনা।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, রাস্তাঘাট মেরামতি এবং পথের বিজলীকরণ-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও জাবনার প্রচেষ্টা যথেষ্ঠ প্রশংসিত হয়।
অক্লান্ত পরিশ্রম করে আজ জাবনা ‘শ্রেষ্ঠ প্রধান’-এর শিরোপাও পেয়েছে
তার গ্রামের জীবন উন্নততর করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে জাবনা ‘শ্রেষ্ঠ প্রধান’-এর তকমা লাভও করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং হিমাচল প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিংহ, এমনকি প্রখ্যাত অভিনেতা অক্ষয় কুমারের কাছ থেকেও জাবনা পুরস্কার এবং প্রশংসা পেয়েছেন। তার পরবর্তী লক্ষ্য তার নিজের গ্রামে একটি কলেজ তৈরি করা, কারণ সে চায় না গ্রামের আজকের মেয়েরা তার মতো সমস্যার সম্মুখীন হোক। পাশাপাশি, জাবনা মহিলাদের জন্যে একটি অলাভজনিত সংস্থাও তৈরি করতে চায় যার মাধ্যমে তারা বাড়তি রোজগার করতে পারে।
ইউএন উইমেন-এর পূর্ণ সহযোগিতায় এম জি মোটর ইন্ডিয়া এবং দ্য বেটার ইন্ডিয়া ভারতের সেই সমস্ত কৃতী নারীদের সম্মান জানাচ্ছে যারা ভারতের সেই সমস্ত কৃতী নারীদের সম্মান জানাচ্ছে যারা প্রতিনিয়ত নিজেদেরকে বিশ্বের সামনে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে দেশকে এক সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
এই মহৎপ্রয়াসে আপনিও সামিল হতে আগ্রহী? পেটিএম বা ব্যাঙ্ক মারফত করতে চান আর্থিক অনুদান?
বিশদে জানতে ক্লিক করুন এখানে।
এম জি মোটর ইন্ডিয়া সম্পর্কে আরও জানতে তাদের ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম পেজগুলি দেখুন।
ফিচার ইমেজ: thebetterindia